৬০ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৭ এপ্রিল, ২০২৩ / ২৩ চৈত্র, ১৪২৯
পিছিয়ে পড়া মানুষদের কল্যাণে বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্য
১৯৭৭ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার পর তপশিলি জাতি, উপজাতি ও আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের জীবনের মান, আত্মসম্মান, মর্যাদা ও জীবিকার সন্ধানের অভিমুখ পরিবর্তন হয়। রাজ্য সরকারের বিকেন্দ্রীকৃত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা রূপায়ণে মানুষের সংযোগ, বিশেষ করে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও ভূমিসংস্কারের মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া অন্ত্যজ মানুষদের জীবনমানের প্রভূত অগ্রগতি হয়েছিল।
অনেক সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা ছিল। তবুও রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত, কৃষি, শিল্প, মৎস্য, পরিবহণ সহ বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ে এই মানুষদের সামাজিক মর্যাদা প্রদানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল রাজ্য সরকারের।
● পঞ্চায়েতের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশের ফলে রাজ্যে পিছিয়ে পড়া মানুষদের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, পঞ্চায়েত, ভূমিসংস্কার, সেচের সম্প্রসারণ, সার সহ উন্নত বীজের মিনিকিট, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের অগ্রাধিকার দিয়ে সমবায় ব্যবস্থা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে যেমন কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি হয়েছিল, তেমনি কৃষক সহ গ্রামীণ শ্রমজীবী জনগণের আয় বৃদ্ধিতে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছিল।
● সবচেয়ে বড়ো সাফল্য হলো, জাতীয় নমুনা সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী ১৯৭৭-এর আগের তুলনায় সর্বশেষ রিপোর্ট (২০১১-১২)-এ দেখা গেছে গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ছিল প্রথম স্থানে।
● সাধারণ মানুষের সঞ্চয় বাড়ার ফলে স্বল্প সঞ্চয়ে পশ্চিমবঙ্গ ছিল সব রাজ্যের মধ্যে অগ্রগণ্য।
● মহিলা, তপশিলি জাতি, আদিবাসীদের জন্য আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে চালু হয়েছিল। যা পরে ৭৩তম সংবিধান সংশোধনের পর দেশের অন্যত্র চালু হয়।
● বামফ্রন্ট সরকার ২০০৫ সালে রাজ্যের ৪৬১২টি গ্রামকে পিছিয়ে থাকা বা ব্যাকওয়ার্ড হিসেবে চিহ্নিত করে। তারপর থেকে প্রতিবছর ওই গ্রামগুলির জন্য গড়ে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। রাজ্যের ২৩৯টি পঞ্চায়েতে অবস্থিত ওই সমস্ত গ্রামে ২০০৮-এ পঞ্চায়েত দপ্তরের সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৪৫ লক্ষ ৬৮ হাজার মানুষ বসবাস করতেন। বামফ্রন্ট সরকারের ধারাবাহিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় ওই গ্রামগুলির অনেকটাই উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয়েছিল।
● পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রতিবন্ধী ভাতা, বার্ধক্য ভাতা,আদিবাসী বার্ধক্য ভাতা, মৎস্যজীবীদের ভাতা, কৃষক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি প্রদানের ব্যবস্থা করে। সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে এরকম সব ক'টি ক্ষেত্রেই দেয় ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,০০০ টাকা করে দেবার ব্যবস্থা করে। ভাতা প্রাপকদের সংখ্যাও বাড়ানো হয় অনেকগুণ।
● ভূমিহীন কৃষকদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রকল্পেও (প্রফলাল) উপকৃতদের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বাড়ানো হয়। বামফ্রন্ট সরকার থাকা পর্যন্ত প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রকল্পে এবং আম আদমি যোজনায় ২৫ লক্ষ ভূমিহীন খেতমজুরকে আনার বন্দোবস্ত হয়। বয়স সীমাও ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ বছর করা হয়।
● সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ইন্দিরা আবাস যোজনায় ২০০৮-২০০৯ সালে নির্মিত হয় ১,১১,৫১২টি বাড়ি। আর ২০০৯-২০১০ সালে তৈরি হয় প্রায় দ্বিগুণ ২,১৪,৮২৭টি বাড়ি।
● দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়েপড়া মানুষের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবাসন দপ্তর ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে 'আমার বাড়ি' নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে মাসে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় এবং নিজের পাকা বাড়ি নেই, এমন দরিদ্র মানুষের জন্য এই প্রকল্পের মাধ্যমে পাকা বাড়ি তৈরি করে দেবার উদ্যোগ নেয়। রাজ্যের মৎস্য, বন, সুন্দরবন বিষয়ক দপ্তর সহ সংখ্যালঘু, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দপ্তর, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর প্রভৃতির মাধ্যমে এই প্রকল্প রূপায়ণ শুরু হয়।
● কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী (২০১০) গ্রামাঞ্চলে গরিবদের জন্য বাড়ি তৈরিতে তখন পশ্চিমবঙ্গ ছিল দেশের মধ্যে প্রথম তিনটি রাজ্যের একটি। একইসঙ্গে সংখ্যালঘু গরিব পরিবারগুলির বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রে সে সময় পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান ছিল দেশের মধ্যে দ্বিতীয়।
● একশো দিনের কাজের প্রকল্প (এমজিএনরেগা) রূপায়ণে বামফ্রন্ট সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছিল। এই প্রকল্পে ২০০৮-২০০৯ সালে রাজ্যে শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছিল ৭৮৬কোটি ৬২ লক্ষ। ২০০৯-২০১০ সালে তৈরি হয় ১৫৫১ কোটি ৭১ লক্ষ শ্রমদিবস। গড়ে পরিবার পিছু কাজ ছিল ২০০৮-২০০৯ সালে ২৬ দিন, ২০০৯-২০১০ তা সালে বেড়ে হয় ৪৫ দিন।
● এভাবেই নানাভাবে বামফ্রন্ট সরকার পিছিয়েপড়া বিশেষকরে আদিবাসী, তপশিলি সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে বহুমুখী ভূমিকা পালন করেছিল। আর এখন তৃণমূল সরকার গরিব পিছিয়েপড়া মানুষদের সাহায্য তো দূরের কথা, তাদের নানাভাবে বঞ্চিত করে লুঠ, দুর্নীতির রেকর্ড তৈরি করেছে রাজ্যে।