৫৭ বর্ষ ৫০ ও ৫১ সংখ্যা / ৭ আগস্ট ২০২০ / ২২ শ্রাবণ ১৪২৭
মুজফ্ফর আহ্মদ স্মৃতি পুরস্কার ঘোষিত
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ৫ আগস্ট কমরেড মুজফ্ফর আহ্মদ-এর ১৩২তম জন্মদিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর নামাঙ্কিত স্মৃতি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এদিনের এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে এবারে পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনটি বই এবং লেখকদের সম্পর্কে সংক্ষেপে পরিচয় তুলে ধরেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃদুল দে। তিনি তাঁর বক্তব্য উল্লেখ করেন, এবারে এক নজিরবিহীন অবস্থায় এই অনুষ্ঠান হচ্ছে। তাই যাতায়াতের অসুবিধার জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকরা আসতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে তাঁদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
এবারে মুজফ্ফর আহ্মদ স্মৃতি পুরস্কারের জন্য তিনটি বই মনোনীত হয়েছে। এই তিনটি বই হলো - ডাঃ শঙ্করকুমার নাথ রচিত ‘অক্ষয়কুমার দত্তঃ বিজ্ঞান ভাবনার পথিকৃৎ’, অধ্যাপক মানবেন্দ্রনাথ সাহার লেখা ‘মৃণাল সেনঃ চলচ্চিত্রের সন্ধানে’ এবং সুচেতনা চট্টোপাধ্যায়ের ইংরেজি ভাষায় লেখা বই ‘ভয়েস অব কামাগাতামারুঃ ইম্পিরিয়াল সারভেইলেন্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ফ্রম পাঞ্জাব ইন বেঙ্গল’।
এদিন মৃদুল দে এই তিনটি বই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরে বলেন, অক্ষয়কুমার দত্ত-র দ্বিশত বর্ষে তাঁর সম্পর্কে নানা তথ্য সংবলিত এই বই রচনা করেছেন লেখক। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। অক্ষয়কুমার দত্ত বিদ্যাসাগরের অভিন্নহৃদয় বন্ধু ছিলেন এবং একই বছরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি কুসংস্কার ও ধর্মীয় অন্ধত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তিনি মনে করতেন স্বদেশি ভাষা শিক্ষা ছাড়া জ্ঞানার্জন সম্ভব নয়। তিনি বাংলায় বিজ্ঞান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি বাংলায় বিজ্ঞানের অনেক পরিভাষা রচনা করেছেন। অক্ষয়কুমার দত্ত তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে বিজ্ঞান বিষয়ক নানা বিষয় তুলে ধরেছেন। তিনি বিজ্ঞান চর্চার জন্য বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা করেছেন।
মৃদুল দে মৃণাল সেন সম্পর্কিত বইটির বিষয়ে বলেন, মানবেন্দ্রনাথ সাহা তাঁর বইয়ে মৃণাল সেনের দর্শনকে তুলে ধরেছেন। মৃণাল সেন ২৮টি সিনেমা তৈরি করেছেন। তাঁর প্রথম ছবি রাতভোর। তিনি বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, আমি প্রশ্নবিলাসী এবং তর্কপ্রিয়। তিনি ছিলেন প্রগতি দর্শনে বিশ্বাসী, যা তাঁর শিল্প সৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে। তিনি বাংলা ছাড়াও ওডিয়া, তেলুগু, হিন্দি প্রভৃতি নানা ভাষায় সিনেমা তৈরি করেছেন। তাঁর চলচ্চিত্রে নাগরিক জীবনের স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গ, জীবনযন্ত্রণা ইত্যাদি ফুটে উঠেছে। মানুষ যাতে প্রতিবাদে উদ্বুদ্ধ হন সেই লক্ষ্যেই তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
কামাগাতামারু সম্পর্কে ইংরেজি বইটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, এ সম্পর্কে চলচ্চিত্র হয়েছে, অনেক বই আছে। কিন্তু এই বইটিতে মহাফেজখানা থেকে অনেক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গদর পার্টির আন্দোলন, ভগৎ সিং-এর নওজোয়ান ভারত সভা এবং পাঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ যাঁরা শ্রমিক হিসেবে এখানে এসেছিলেন, পরবর্তীকালে স্বাধীনতা সংগ্রামে, বিপ্লবী আন্দোলনে কাজ করেছেন এবং যাঁদের অনেকেই পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন - সে সব বিস্তৃত বিষয় বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
মৃদুল দে বলেছেন, আজকের দিনে মোদী সরকারের জমানায় যখন বিজ্ঞান, প্রগতিদর্শন ও ইতিহাসকে ধ্বংস করা হচ্ছে, তখন এই সমস্ত বইয়ের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।