E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৭ বর্ষ ৫০ ও ৫১ সংখ্যা / ৭ আগস্ট ২০২০ / ২২ শ্রাবণ ১৪২৭

হিমাচল সরকারের বাস ভাড়া এবং নানা কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গণসংগঠনগুলির প্রতিবাদ


হিমাচল প্রদেশ সরকারের বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালো সিআইটিইউ। গত ২৩ জুলাই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে হিমাচল জুড়ে ভাড়া ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোন কোন ধাপে এই বৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ। ন্যূনতম বাস ভাড়া ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ টাকা। সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারকে অবিলম্বে এই বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের করতে বলা হয়েছে। তা না হলে মানুষকে সংগঠিত করে এই জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে শ্রমিকশ্রেণি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে ব্লক স্তরে এবং জেলাসদর এর সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হবে সরকার এক্ষেত্রে তার অবস্থান বদল না করলে।

সিআইটিইউ রাজ্য সভাপতি বিজেন্দ্র মেহরা এবং সাধারণ সম্পাদক প্রেম গৌতম বিজেপি সরকারের বাস ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, নজিরবিহীনভাবে বিজেপি সরকার রাজ্যে ভাড়া বাড়িয়েছে। কোথাও কোথাও ২০০ শতাংশ পর্যন্ত। এই ভাড়া বৃদ্ধির নামে কার্যত লুট চলছে। এই সরকার আসার পর কিলোমিটার পিছু ভাড়ার হার ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আড়াই টাকা করা হয়েছে। গোটা পৃথিবী জুড়ে যেখানে জ্বালানি তেলের দাম কমছে দ্রুতগতিতে সেখানে উঁচু হারে কর বসিয়ে চলেছে দেশ এবং রাজ্যের বিজেপি সরকার। দেশের মানুষের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে আর্থিক বোঝা। অন্যদিকে বিভিন্ন বৃহৎ পরিবহণ মালিকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দহরম মহরম চলছে। যেখানে কোভিড মহামারীর জেরে বেসরকারি ক্ষেত্রে রাজ্যের ৭০ শতাংশ মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছেন সেখানে এই বোঝা চাপানো অমানবিক। বিজেপি সরকার যে গরিব মানুষের বিরোধী সে কথা মানুষের সামনে এই ঘটনায় আবার প্রকাশ্যে এলো। অবিলম্বে এই ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত অসংবেদনশীল সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

এদিকে সিমলা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের সামনে ১৬জুলাই সিমলা নাগরিক সভার (এস এন এস) পক্ষ থেকে জল কর, জঞ্জাল কর, বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষোভ সভার শেষে এসএনএস-এর পক্ষ থেকে এক নাগরিক প্রতিনিধিদল মিউনিসিপ্যাল কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবিপত্র পেশ করে। বিক্ষোভস্থলে বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে শহরের সাধারণ এবং শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশার নিদারুণ চিত্র এবং রাজ্য সরকারের অমানবিক ভূমিকার কথা।

করোনা সংক্রমনের সময়কালে রাজ্যের সরকার এবং শিল্পসমূহের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে কোনরকম আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়নি। রাজ্যের প্রায় ৭০শতাংশ মানুষ পূর্ণ এবং আংশিক কাজ হারিযেছেন এই পর্বে। সিমলা শহরের হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট শিল্প এই সময়ে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। এর ফলে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক সরাসরি কাজ হারান। পর্যটন সংক্রান্ত কাজ যা পাওয়া যেত তাও এই সময় বন্ধ হয়ে যায়। পর্যটনের সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে যুক্ত হাজার হাজার ট্যাক্সি চালক, মোট বাহক, গাইড এবং ট্যুর ট্রাভেলস অপারেটরদের জীবিকা সম্পূর্ণভাবে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। একই কারণে সিমলা শহর অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বাণিজ্য অচল হয়ে পড়ে। সিমলা এবং সন্নিহিত অঞ্চলের প্রায় ৪০শতাংশ শিল্প বিভিন্ন ভাবে যুক্ত পর্যটন শিল্পের সঙ্গে। পর্যটন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবার দরুন এর ওপরে নির্ভরশীল ওই শিল্প ব্যবস্থা সম্পূর্ণতই ধ্বংস হয়ে গেছে। ছোট ব্যবসায়ী এবং রাস্তার হকারদের জীবন-জীবিকা চূড়ান্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। বিভিন্ন দোকানে কর্মরত বিপণন কর্মীরা তাদের কাজ হারিয়েছেন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা কাজ হারিয়েছেন লে-অফ এর ফলে। নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা যারা ব্যক্তিগত নির্মাণ ক্ষেত্রেও কাজ করতেন তা একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার দরুন তারাও কাজ হারিয়েছেন। সিমলা শহরের অর্ধেকের বেশি মানুষ দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোগাড় করার ক্ষেত্রে চরম অনিশ্চয়তা এবং কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। সিমলা নাগরিক সভার পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এবং তার আগেও সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয় সহায়তার। সংগঠনের পক্ষ থেকে সিমলা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন-এর কাছে এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বোর্ডের কাছেও সহায়তার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল, কিন্তু তারা কেউই মানুষের জীবন-জীবিকার এই সমস্যা সঙ্কুল পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেনি, উল্টে দূরে সরে গেছে। মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে নির্বাচিত মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলও। এই পরিস্থিতিতে জল এবং বিদ্যুতের হাজার হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে জনগণকে। ত্রুটিপূর্ণ এই ধরনের বিলগুলি চার মাস বাদে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিল পরিশোধ করবার জন্য মানুষকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি। এসএনএস-এর পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যে তাদের ত্রুটির বোঝা কেন জনগণ বহন করবে। জনগণের এই দুর্দশাকে আরো বাড়িয়েছে বিদ্যুৎ সহ অন্যান্য বিলের ক্ষেত্রে মাশুল কয়েকগুণ বৃদ্ধি করার বিষয়টি। গত চার মাসের করোনা সংক্রান্ত বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে এভাবে মাশুলের পরিমাণ বৃদ্ধি করার বিরুদ্ধে সিমলা নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে স্থানীয় মানুষ ফুঁসে উঠেছেন।

বিক্ষোভ থেকে সম্পদ কর এবং জঞ্জাল করের বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তুলেছেন মানুষ। জীবিকার অনিশ্চয়তার এই পরিস্থিতিতে কেন সরকার এবং পুরসভা মানুষকে ছাড় দিচ্ছে না সে প্রশ্নও উঠেছে। কেন মার্চ থেকে জুন-এই চার মাসের বিভিন্ন কর এক লপ্তে দিতে হবে সেই কৈফিয়ত দাবি করা হয়েছে। শহরের ব্যবসায়ীরা এই অবস্থায় রেহাই চাইছেন করের বোঝা থেকে, উল্লিখিত হয়েছে সে কথাও।

সিমলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি ছাত্রছাত্রীদের থেকে যেভাবে টিউশন ফি ছাড়াও বহুগুণ ফি আদায় করছে তার প্রতিবাদে ছাত্র-অভিভাবক মঞ্চের পক্ষ থেকে ১৯ জুলাই উচ্চশিক্ষা দপ্তরের সামনে এক সুবিশাল জমায়েতের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। ওই প্রতিবাদ সভা থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফি আদায় সরকারি নির্দেশের উল্লঙ্ঘন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। অবিলম্বে এই পরিস্থিতির প্রতিকার চাওয়া হয়েছে ওই সভা থেকে।