৫৭ বর্ষ ৫০ ও ৫১ সংখ্যা / ৭ আগস্ট ২০২০ / ২২ শ্রাবণ ১৪২৭
নিভে গেল জ্বলন্ত যুক্তির মশাল
দেবেশ দাস
এঙ্গেলসের মৃত্যু হয় ৫ আগস্ট, ১৮৯৫। সেই সময় তাঁর বয়স প্রায় ৭৫। এঙ্গেলস আগে থেকেই বলে গিয়েছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর পর যেন খুব হইচই না হয়, তাঁর বিপ্লবী বন্ধুরাই শুধু যেন থাকেন। তাঁর শবদেহ রেখে দিয়ে খবর দেওয়া হয় দেশে দেশে। ১০ আগস্ট লন্ডনের ওয়াটারলু স্টেশনে জড়ো হয় মাত্র ৮০ জন। লাল ফিতে মোড়া ফুলমালায় সজ্জিত তার কফিন নিয়ে আসা হয় সেখানে। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, বেলজিয়াম, হল্যান্ড, রাশিয়া, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া থেকে আগত সমাজতন্ত্রীরা একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জন্মসূত্রে এঙ্গেলস খ্রিস্টান। মৃত্যুর পর এঙ্গেলসের কথামতোই তাঁকে কবরও দেওয়া হয় না। তাঁর শবদেহ পোড়ানো হয়। সেই ছাই এঙ্গেলসের ইচ্ছামতোই সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। মৃত্যুর পর, তাঁর সমাধিস্থলে এসে ফুলমালা দিয়ে বিপ্লবীরা সেই সমাধিস্থলকে তীর্থস্থানে পরিণত করুক এঙ্গেলস তা চান নি।
এঙ্গেলস জন্মেছেন প্রুশিয়ার (বর্তমানে জার্মানি) বারমেন শহরে এক ব্যবসায়ী, ধর্মপ্রাণ পরিবারে। তারপরে ভবিষ্যৎ জীবনে এইরকম ঈশ্বর বা ধর্মে বিশ্বাসহীন এক মানুষে পরিণত হলেন কীভাবে? নিশ্চয়ই তা একদিনে হয়নি। আসলে তা হওয়ার পিছনে ছিল তাঁর আজীবন অনুশীলন ও চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে নিজের মধ্যে নিজের নিরন্তর লড়াই। ছোটোবেলা থেকেই ধর্মীয় অনুশাসনের নানা চাপ। স্কুলে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার সাথে কড়া শৃঙ্খলা। এঙ্গেলসের প্রাণবন্ত ও উদ্যোগী মন বিদ্রোহী হয়ে উঠত। ধর্মীয় রীতিনীতি ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের বাদ দিয়ে সরাসরি ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগের কথা ভাবত এঙ্গেলস।
হাইস্কুল পড়া শেষ করার আগেই বাবা তাঁকে পড়া থেকে ছাড়িয়ে দিয়ে ব্যবসার কাজে শিক্ষানবিশিতে ঢোকান, তখন বয়স ১৬ বছর কয়েক মাস। পরের বছর শিক্ষানবিশিতেই পাঠানো হলো আরেকটা শহর ব্রেমেনে। সুবিধা হয়ে গেলো এঙ্গেলসের। নানা ধরনের বই পড়তে শুরু করেছিলেন স্কুল ছাড়ার পর থেকেই, এখন তা আরও বেড়ে গেল। পড়লেন ডেভিড স্ট্রাসের লেখা যিশুর জীবনী। চিন্তায় ধাক্কা লেগে গেলো। বইটাতে লেখা ছিল - যিশুর উপদেশাবলি বলে যা আছে, তা স্বর্গীয় কোনো অনুপ্রেরণার ফসল নয়, পূর্বতন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের শ্রুতি থেকে এসেছে। কী সাংঘাতিক, ভগবানের মুখ নিঃসৃত বাণী নয় সেগুলো! মানে ভগবানের অলৌকিকতাকে অস্বীকার করা, খ্রিস্টান গোঁড়ামিকে বোকামি বলা!
অনুসন্ধিৎসু মন ও প্রচুর জীবনীশক্তি নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঈশ্বর ও ধর্মের ধ্বজাধারীদের প্রতি বিমুখ হয়ে ওঠেন এঙ্গেলস। দেখেন চারিদিকে ধর্ম ও ঈশ্বরের চিন্তায় মানুষ নিজের সমস্যা ভুলে যাচ্ছে, আর রাষ্ট্রশক্তি ধর্মকে ব্যবহার করেই শাসন চালাচ্ছে। ভাইকে চিঠিতে লিখলেনঃ “সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে অজ্ঞানতায় রেখে ও ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তাকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে”। ছোটোবেলায় তার বাড়ির পাশের কারখানাগুলিতে শ্রমিকদের উপর শোষণ দেখেছেন। বহু নারী ও শিশু শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছে, তাতে ধর্মপ্রাণ কারখানার মালিকদের কিছু আসে যায় নি। লিখলেনঃ “ধনী মালিকগুলো ভগবানকে ভয় পায়, কিন্তু কোনো শিশুর মৃত্যুতে তারা নরকে যাবে বলে ভাবে না। - যে বেশি ধর্মপ্রাণ সে শ্রমিকদের প্রতি সবচেয়ে খারাপ আচরণ করে।’’ পরিবার ও বারমেনের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন, চার্চের প্রভাব থেকে মুক্ত, ব্রেমেনে প্রায় তিন বছরের জীবন বন্ধুদের ও পরিবারের চিন্তাভাবনার থেকে তাকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে নিয়ে আসে, ক্রমশ নাস্তিকতার দিকে চলে গেলেন এঙ্গেলস।
১৯ বছরের শেষের দিকে পড়তে শুরু করলেন দর্শনের অধ্যাপক হেগেলের লেখা। ভালো লেগে গেল। হেগেলের দ্বন্দ্বতত্ত্বকে প্রয়োগ করে চারপাশের জার্মানির সামাজিক-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহকে ব্যাখ্যা করে কিছু লিখলেন। কিন্তু গোল বেধে গেল আরেক জায়গায়। হেগেল ছিলেন ভাববাদী। তাঁর কথা ছিল- দুনিয়ার কেন্দ্রে এক পরমভাব আছে, যার থেকে তৈরি হয়েছে প্রকৃতি, মানুষের চেতনা, ইতিহাস। এই পরমভাবই যদি সবকিছু করে, তাহলে মানুষের তো আর বিশেষ কিছু করার থাকে না। হেগেলের দ্বন্দ্বতত্ত্বের প্রভাবে এঙ্গেলস তখন লিখছেন ঠিকই, কিন্তু হেগেলের সামাজিক-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিকটা এলে এঙ্গেলস এড়িয়ে যাচ্ছেন। হেগেলের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় শ্রদ্ধা। কিন্তু হেগেলের দ্বন্দ্বতত্ত্ব অনুসরণ করতে গিয়ে সামাজিক ঘটনাবলির মধ্যে দ্বন্দ্বকে খুঁজে পেলেন, কিন্তু সেই দ্বন্দ্বের সমাধানের রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে তিনি পৌঁছলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন, আমূল পরিবর্তনকামী রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। হেগেলের দর্শন পরিবর্তনের বিরোধী।
সেই সময়ে আরেক দার্শনিকের চিন্তার প্রভাব এঙ্গেলসের উপর পড়ে - তিনি জার্মান দার্শনিক ফয়েরবাখ। তাঁকে অনুসরণ করে এঙ্গেলস একটা পুস্তিকায় নাস্তিকতার পক্ষে লিখলেন। হেগেলপন্থীদের একটা অংশ তখন পরিবর্তনের কথা বলতে শুরু করেছেন (ইয়ং হেগেলিয়ান), কিন্তু কোনো পরিবর্তনের জন্য সাধারণ মানুষের কোনো ভূমিকার কথা তারা ভাবতেই পারত না, তারা কোনো অ্যাকশনের ডাক দিত না। এঙ্গেলস সেই ডাক দিয়ে লিখলেনঃ “আসুন লড়াই করি, রক্ত ঝরাই”।
১৮৪৪তে হেগেলের ভাববাদী দর্শনের বিরোধিতা করে সরাসরি জবাব এলো মার্কসের সাথে তাঁর লেখা বইতে -‘পবিত্র পরিবার’। বইটিতে ‘প্রকৃত মানবতা’ কথাটা ব্যবহৃত হয়েছে, বইটার মুখবন্ধের শুরুতেই আছেঃ ‘‘জার্মানিতে প্রকৃত মানবতার কাছে আধ্যাত্মবাদ বা কল্পনাপ্রিয় ভাববাদ ছাড়া বিপজ্জনক শত্রু আর কেউ নেই।’’ এরপরে মার্কস-এঙ্গেলস দুজনে মিলে যে বইটি লেখেন, তার নাম ‘দি জার্মান ইডিওলজি’। তাতে আরও স্পষ্ট করে লেখা হয়ঃ ‘‘ধারণা, মতবাদ ইত্যাদির স্রষ্টা মানুষ, বাস্তব, ক্রিয়াশীল মানুষ। চেতনা তাদের সচেতন অস্তিত্ব ছাড়া অন্য কিছু নয়।’’ অর্থাৎ, মানুষ সচেতনভাবেই তার চেতনা দ্বারা সব কিছু ঘটাচ্ছে, কাকতালীয়ভাবে কিছু ঘটছে না। কোনো অতি প্রাকৃতিক শক্তি বা ঈশ্বরের সেখানে কিছু করার নেই। বস্তুবাদী ফয়েরবাখের দুর্বলতার দিকটাও তুলে ধরে বইটি। বস্তুবাদী হয়েও ইতিহাসকে বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারেন নি ফয়েরবাখ, ইতিহাস তৈরিতে মানুষের কোনো ভূমিকা সেখানে নেই।
ইতিহাস রচনাতে মানুষের চেতনার এই যে ভূমিকা, সেই চেতনাই বা কোথা থেকে এলো? এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর আসে আরও পরে, যখন দর্শনের অধ্যাপক ইউগেন কার্ল ডুরিং-র বক্তব্যের জবাবে ১৮৭৮ সালে এঙ্গেলস ‘আন্টি ডুরিং’ লেখেন। ডুরিং বলেছিলেন, কোনো বিষয়ে নীতি বা কোনো মতবাদ তৈরি হয় চিন্তা থেকে, কিন্তু সেই চিন্তার সাথে বহির্বিশ্বের কোনো সম্পর্ক নেই। এঙ্গেলস জবাবে লিখলেনঃ ‘‘কিন্তু চিন্তা কিভাবে নীতি ঠিক করে? নিজে নিজেই? ...যদি আরও প্রশ্ন তোলা হয় যে চেতনা, চিন্তা আসলে কী, কোথা থেকে এরা এলো, এটা বাস্তব যে তারা মানুষের মস্তিষ্কের ফসল।’’
কিন্তু মানুষের মস্তিষ্ক কী? এঙ্গেলস তা বলতে গিয়ে প্রথমে বললেন - মানুষ কী? ‘‘মানুষ নিজেই প্রকৃতির ফসল, প্রকৃতির মধ্যে, চারপাশের পরিবেশ থেকেই তার বিকাশ।’’ আজকের মানুষ চিরকাল ছিল না। যে সমস্ত গাছপালা, প্রাণিজগৎ আমরা দুনিয়ায় দেখি, তা অনেক পরিবর্তন হয়েই আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে। এঙ্গেলস এখানে ডারউইনকে টেনে আনছেন - ‘‘ডারউইন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে গাছপালা ও প্রাণিজগৎ অপরিবর্তনীয় নয়, ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে’’ (প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা)। ডারউইনের কথা অনুযায়ী এক ধরনের বানর থেকেই মানুষের বিকাশ। ফলে প্রকৃতির ফসল মানুষ। মানুষও বস্তু। আর বস্তু মানেই তার গতি আছে। এঙ্গেলস বললেনঃ ‘‘বস্তুর অস্তিত্বের প্রকাশ হচ্ছে গতি। গতি ছাড়া কোনো বস্তু কোনদিন ছিল না, কোনদিন হতেও পারে না।’’ এই গতিই পরিবর্তন নিয়ে আসে বস্তুর।
এবার কীভাবে এই পরিবর্তন একদিন মস্তিষ্ক তৈরি করল, আর তার মাধ্যমে বানর মানুষে পরিণত হলো তার ব্যাখ্যা এসেছে এঙ্গেলসের লেখায়। ‘‘ডারউইন আমাদের পূর্বপুরুষ সম্বন্ধে একটা মোটামুটি ধারণা দিয়েছেন... তারা দলবদ্ধভাবে গাছে বসবাস করত। গাছে চড়তে হাত ও পায়ের উপর বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব অর্পিত হলো... এই বানররা ধীরে ধীরে হাতের ব্যবহার বদলে ফেলল ও আরও বেশি করে খাড়া হয়ে দাঁড়াতে লাগল। বানর থেকে মানুষ হওয়ার পথে এটা ছিল নির্ণায়ক পদক্ষেপ।... হাত শুধুমাত্র শ্রমের যন্ত্র নয়, হাত শ্রমেরও ফসল... শ্রম ও তার প্রক্রিয়া থেকে ভাষার উদ্ভব... প্রথমে শ্রম, তারপরে তার সাথে কথা - এরা হচ্ছে সবথেকে প্রয়োজনীয় দুটি উদ্দীপক যার প্রভাবে বানরের মস্তিষ্কের বিকাশ হয়ে ধীরে ধীরে পরিণত হলো মানুষের মস্তিষ্কে।’’ অনবরত গতির মাধ্যমে যেমন সব বস্তুই পরিবর্তিত হয়ে যায়, নানা পরিবর্তনের ধাপ পেরিয়ে মানুষের আজকের মস্তিষ্ক তৈরি হয়েছে। ‘‘ধাপে ধাপে হাতের বিকাশ পরিণত হলো মস্তিষ্কের বিকাশে।’’ ‘‘মস্তিষ্কের শক্তিশালী বিকাশ, মানুষ ও বানরের মধ্যে দুর্লঙ্ঘ্য সাগর তৈরি করে দিল।’’ সেই মস্তিষ্কই চিন্তা করে, প্রভাব ফেলে সমাজে, ঘটনা ঘটায়, ইতিহাস রচনা করে। মস্তিষ্কও আসলে এই প্রকৃতিরই ফসল।
তাহলে প্রাণ কী? ডুরিং বলেছিলেন, প্রাণ হচ্ছে একটি জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া। সে কালের বিজ্ঞানের অগ্রগতির সম্বন্ধে সমস্ত পড়াশুনা এঙ্গেলস করেছিলেন, পৃথিবীতে প্রাণের আবির্ভাবের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে আরও অনেক আবিষ্কার বিংশ শতাব্দীতে হয়েছে, তা এঙ্গেলসের জানা সম্ভব ছিল না। ডুরিং-র বক্তব্য এগিয়ে নিয়ে গিয়ে এঙ্গেলস বললেন বাড়তি কথাঃ ‘‘প্রাণ হচ্ছে অ্যালবুমেন জাতীয় দ্রব্যগুলির অস্তিত্বের প্রকাশ, ও এই অস্তিত্বের প্রকাশ অবশ্যই নিহিত থাকে এই দ্রব্যগুলির রাসায়নিক উপাদানের অবিরত স্ব-পুনর্নবীকরণের মধ্যে।’’ এই স্ব-পুনর্নবীকরণ, নিজেই নিজের মধ্যে বারে বারে পরিবর্তন হয়ে যাওয়া কীভাবে হয়? তা হয়, তার মধ্যে অবিরত চলতে থাকা দ্বন্দ্বের মাধ্যমে। ‘‘প্রাণও বস্তুর মধ্যে থাকা একটা দ্বন্দ্ব, ...যার অবিরত জন্ম হচ্ছে ও নিজের মধ্যেই সমাধান হচ্ছে; যখন দ্বন্দ্ব শেষ, তখন প্রাণ শেষ, মৃত্যু প্রবেশ করে।’’
আমাদের মধ্যে প্রাণে চলছে অবিরত দ্বন্দ্ব, সেই দ্বন্দ্বের শেষে প্রাণ শেষ হয়ে মৃত্যু আসে। তাতে বস্তুর রূপান্তর ঘটে, প্রকৃতিতেই আমরা মিশে যাই। যতক্ষণ প্রাণ, ততক্ষণ চলা, দ্বন্দ্বের শেষে প্রাণের শেষ হয়ে এই চলার শেষ, তারপরে শেষ বিশ্রাম প্রকৃতিতেই। মার্কসের স্ত্রী জেনির মৃত্যুতে, জেনিকে কবর দেওয়ার সময় জেনি সম্বন্ধে বলতে গিয়ে একজন বস্তুবাদী হিসাবে জেনি কীভাবে মৃত্যুকে দেখতেন সেকথা বলেছিলেন এঙ্গেলসঃ ‘‘মৃত্যু পর্যন্ত তিনি (জেনি) নাস্তিক বস্তুবাদের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখেছেন। মৃত্যুতে তাঁর আতঙ্ক ছিল না। তিনি জানতেন, যে প্রকৃতির থেকে তিনি জন্ম নিয়েছেন, দেহ ও মন নিয়ে একদিন তাঁকে ফিরতে হবে সেই প্রকৃতির কোলে। আর আমরা তাঁকে তাঁর শেষ বিশ্রামের স্থানে শুইয়ে দিলাম।’’
এঙ্গেলসের দেহের প্রাণে দ্বন্দ্ব শেষ হয়ে গেলে, মৃত্যু এসেছে, বস্তু পরিণত হয়েছে আরেক বস্তু শবদেহে। পোড়ানোর ফলে তা পরিণত হয়েছে আরেক বস্তু ছাইতে। সেই ছাই জলে ভেসে এঙ্গেলস মিলিয়ে গেছেন প্রকৃতির কোলে। শুধু তাঁর কীর্তি রয়ে গেছে। আমরাও সকলে প্রকৃতির অংশ, প্রকৃতিতেই মিশে যাবো। নিছক এক নাস্তিক, ঈশ্বর ও ধর্মের বিরোধী মানুষ নন, একের পর এক যুক্তি দিয়ে এঙ্গেলস মার্কসের সাথে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বস্তুবাদকে। সেই বস্তুবাদ শুধু ঈশ্বর বা ভাববাদকে পূজা করে না তাই নয়, কোনো মানুষের ব্যক্তিপূজাকেও প্রশ্রয় দেয় না, কোনো মানুষকে ঈশ্বরও বানায় না। তাঁর মৃত্যুতে রাশিয়ান কবি নেক্রাসভ লিখেছিলেনঃ
‘‘নিভে গেল জ্বলন্ত যুক্তির মশাল
থেমে গেল চলন্ত হৃদয় মহান’’।