৫৯ বর্ষ ২১ সংখ্যা / ৭ জানুয়ারি, ২০২২ / ২২ পৌষ, ১৪২৮
৫৬তম বর্ষে গণশক্তি
শাসককে প্রশ্ন করার সাহস নিয়েই এগিয়ে চলার অঙ্গীকার
গণশক্তি পত্রিকার ৫৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে বলছেন সূর্য মিশ্র। মঞ্চে বিমান বসু সহ নেতৃবৃন্দ।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আমাদের দেশে লুঠেরা পুঁজির উগ্র উদারবাদ রূপায়ণের জেরে সংকট বহুমাত্রিক। সেটাই সবচেয়ে বড়ো বিপদ। এর বিরুদ্ধে নিচুতলা থেকে দাবি আদায়ের লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে এগোতে হবে। বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে। লড়াইয়ের ময়দানে সমবেত করতে হবে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে। এটাই দিশা। ৩ জানুয়ারি গণশক্তি পত্রিকার ৫৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ। এদিন করোনাবিধি মেনে পার্টির কলকাতা জেলা অফিসের সভাঘর থেকে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্প্রচার হয়। এই অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু এবং সূর্য মিশ্র। অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন বিমান বসু।
গণশক্তি ৫৫ বছর পূর্ণ করে এদিন ৫৬-তে পা দিয়েছে। এই অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের দুনিয়াজোড়া পরিস্থিতি সম্পর্কে এবং লুঠেরা পুঁজির পাহারাদার উগ্র উদারবাদের পোষক আরএসএস’র রাজনৈতিক শক্তি বিজেপি’র ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের পথ সম্পর্কে সূর্য মিশ্র বলেন, বিজেপি ২০১৯-এ আবার ক্ষমতায় আসার পর ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশন, সিবিআই, রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সেনাবাহিনী সহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঢুকে পড়েছে। এই পর্বে এরা শক্তি সংহত করেছে। আক্রান্ত সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন বিদেশনীতি। তাই রুখতে হবে বিজেপি’কে।
এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সূর্য মিশ্র বলেন, রাজ্যে বিজেপি’কে ডেকে এনেছিল তৃণমূল। তার আগে সঙ্ঘ পরিবারের সাহায্যেই তৃণমূল তৈরি হয়েছে। আর এই চক্রান্তের পিছনে ছিল সিআইএ, সাম্রাজ্যবাদ। এখন সঙ্ঘও তাদের মুখপত্রে এদের বোঝাপড়াকে ‘রহস্যজোট’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
রাজ্য সরকারের করোনা নির্দেশিকা প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে সূর্য মিশ্র বলেন, মেলা হবে। খেলা হবে। পানশালাও খোলা থাকবে। কিন্তু পাঠশালা, স্কুল সব বন্ধ থাকবে? কোনও বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তি আছে এসবের? দেউচা পাঁচামীতে খোলামুখ কয়লাখনির কথা তুলে তিনি বলেন, এই উদ্যোগে রাজ্য সরকারের বক্তব্যে কোনও স্বচ্ছতা নেই।
গণশক্তিকে সংগ্রামের শক্তি হিসেবে বর্ণনা করে দিল্লির কৃষক আন্দোলনের লড়াইয়ের উদাহরণ তুলে সূর্য মিশ্র বলেন, আদায় করার মতো দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের পথ নিতে হবে। পঞ্চায়েত, পৌরসভা থেকে কলকাতা - ঘিরে বসে থাকতে হবে। তৃণমূল, বিজেপি বিরোধী সব শক্তিকে লড়াইয়ের ময়দানে সমবেত করতে হবে। সেটাই আমাদের ভবিষ্যৎ। সমবেত করতে হবে তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলিকে। গড়তে হবে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট।
এদিন বিমান বসু বলেন, জন্মলগ্ন থেকে গণশক্তি সত্য খবরের পক্ষে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। গণশক্তি শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুরের আন্দোলনকে, মধ্যবিত্ত, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবির আন্দোলনকে, ছাত্র-যুব-মহিলাদের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে মানুষের চেতনা বৃদ্ধির আন্দোলনকে তুলে ধরবে।
তৃণমূল প্রসঙ্গে বিমান বসু বলেন, এবারে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি কম আসন পাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের আরএসএস’র মোহন ভাগবত বলেছিলেন, যিনি জিতেছেন তিনি আমাদেরই কাজ করছেন। আরএসএস’র জঠরে জন্ম তৃণমূলের। আরএসএস নির্ধারিত কর্মসূচি মেনে তৃণমূল কাজ করছে।
রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, রাজ্যে সংক্রমণ বাড়ল ১৪ গুণ। কীভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় জমায়েত করা হয়েছে দেখা গিয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর, ১ জানুয়ারি কী হয়েছে? গিজ গিজ করেছে মানুষ। উৎসব হবে। নিশ্চই হবে। কোন সময়ে তা হবে আর কখন তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সরকারের তা দায়িত্ব। সরকার সেই দায়িত্ব পালন করেনি।
বিমান বসু বলেন, যে নির্বাচনগুলি ২০২০-র জানুয়ারিতে হতে পারত, সেগুলি এখন হবে। কেন তখন হয়নি। এর জবাব রাজ্য সরকার, শাসক দলকেই দিতে হবে। এখন রাজ্য সরকার মিথ্যা কথা বলে প্রচার করছে যে, কোভিডের কারণে নির্বাচন করা যায়নি। অথচ ২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে কোথায় কোভিড, কোথায় মহামারী? বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বলেন, খবরের মিথ্যা রূপ দিয়ে, মিথ্যার বাতাবরণ তৈরি করে প্রতিদিন সত্যকে হত্যা করা হচ্ছে। কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনেও সত্যকে গোপন করে মিথ্যা খবর পরিবেশন করা হয়েছে।
এদিন অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক উপস্থাপন করেন গণশক্তি পত্রিকার সহকারী সম্পাদক অতনু সাহা। স্বাগত ভাষণ দেন গণশক্তির সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বহু ঝড় ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে যে পথ পূর্বসূরিরা তৈরি করেছেন সেই রাস্তাতেই আছি আমরা। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আছি। আবার এই সময়েই অনেকে পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন। এই সংহতি আমাদের শক্তি। হিন্দুত্বের বর্ম পরা ফ্যাসিবাদী শক্তির মিথ্যা নির্মাণের বিরুদ্ধে আমরা। আমাদের রাজ্যে বাণিজ্যিক সংবাদ মাধ্যমের মৌনব্রত পালনের পর্ব চলছে। শাসককে প্রশ্ন করার অধিকারই বিপন্ন। লুঠের রাজত্বে কালীঘাটের রাজপ্রাসাদের দিকে গণশক্তি আঙুল তুলেছে। আমরা সেই প্রশ্ন করার সাহস নিয়েই থাকতে চাইছি। আমরা সুখী সাংবাদিকতা করি না। আমরা, শ্রমজীবী মানুষের জীবনযন্ত্রণায়, তাঁদের প্রতিরোধের মরিয়া লড়াইয়ের বুকে থাকতে চাই।