E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২১ সংখ্যা / ৭ জানুয়ারি, ২০২২ / ২২ পৌষ, ১৪২৮

সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা সম্মেলনের আহ্বান

মানুষের সাথে সম্পর্ককে নিবিড় করে আদায়যোগ্য দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে এলাকায় এলাকায় আদায়যোগ্য দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এজন্য একেবারে নিচুতলা থেকে নাছোড় ভঙ্গিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে দিল্লির কৃষক আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা ২৩তম সম্মেলনে এই আহ্বান জানিয়েছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র। গত ৪ ও ৫ জানুয়ারি এই সম্মেলন বহরমপুরে রবীন্দ্র সদনে অনুষ্ঠিত হয়। এই উপলক্ষে সম্মেলনস্থলের নাম রাখা হয়েছিল কমরেড মৃগাঙ্গ ভট্টাচার্য নগর এবং সম্মেলন মঞ্চের নাম রাখা হয়েছিল প্রয়াত কমরেড আবুল হাসনাত খান, কমরেড তিমির ঘোষ ও কমরেড টগর দে’র নামে।

সম্মেলনের রক্তপতাকা উত্তোলন করেন সূর্য মিশ্র।

সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে সূর্য মিশ্র বলেছেন, আমাদের সম্মেলনগুলিতে মুখ্য আলোচ্য বিষয় মূলত চারটি - মতাদর্শ, রাজনীতি, সংগঠন ও সংগ্রাম। এগুলি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের মতাদর্শের ভিত্তি মার্কসবাদ। মার্কসবাদ একটি বিকাশমান বিজ্ঞান, সেটা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে নেই। রাজনীতি হলো নির্দিষ্ট পরিস্থিতির নির্দিষ্ট বিশ্লেষণ করে এই মতাদর্শের প্রয়োগ। এটা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হলে দরকার সংগ্রাম ও সংগঠন, যে দু’টিকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না। তিনি বলেন, সংগঠন ছাড়া সংগ্রাম হয় না। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও হয় না। স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্ষোভ প্রকাশিত হলেও তাতে দিশা থাকে না, এতে কেবল নৈরাজ্য হতে পারে, দাবি আদায় হয় না। অন্যদিকে সংগ্রাম ছাড়া সংগঠন বিকশিত হয় না। এইজন্যই আমরা পার্টি সংগঠনকে নিষ্ক্রিয়তামুক্ত করার কথা বলেছি।

তিনি শাসকদলের ভোট লুটের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, মানুষ দুর্দশায় রয়েছেন, প্রতিবাদ করতে চাইছেন। অথচ ভোটের দিন তৃণমূল ভোট লুট করে নিচ্ছে। আমরা যদি বুথ রক্ষা করতে না পারি তাহলে মানুষের রায় প্রকাশিত হবে কী করে? বুথ রক্ষার জন্য তাই শক্তি চাই। সেই শক্তি অর্জন করতে হলে বুথ স্তর থেকেই তা অর্জন করতে হবে। তার জন্য শ্রেণি ও গণসংগঠনগুলির একেবারে নিচুতলা থেকে প্রাথমিক ইউনিটগুলিকে সক্রিয় করে গরিব মানুষকে সংগঠিত করতে হবে। তিনি লাগাতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গ্রামের খেতমজুর, কৃষক, সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার পাশাপাশি শহরের গরিবদের ঐক্যবদ্ধ করার ডাক দিয়ে বলেন, এর মধ্য দিয়েই ভোটের দিন ভোট লুট রুখে দেওয়া যাবে।

সম্মেলনে খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায়ী জেলা সম্পাদক নৃপেন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, জেলায় আন্দোলন-সংগ্রাম বিকশিত করার লক্ষ্যে জেলার বৈশিষ্ট্য ও নির্দিষ্ট পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখতে হবে। সীমান্ত লাগোয়া এই জেলায় নানা প্রতিক্রিয়ার শক্তি যেমন সক্রিয়, তেমনি বিএসএফ’র সমস্যাও রয়েছে। জেলায় কৃষি থেকে মানুষ উচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছেন। রোজগারের আশায় ছোটো দোকান বা অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করছেন কিংবা পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছেন। বাইরে গিয়ে বিপদে পড়ছেন, প্রাণ হারাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, এই জেলায় বড়ো কোনো শিল্প নেই। বিড়ি শিল্পের শ্রমিকদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগে বিড়ি মালিকরা নিজেদের সহায়ক রাজনৈতিক শক্তিকে টাকা দিয়ে সাহায্য করত, এখন পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে। এখন বিড়ি শ্রমিকরা নিজেরাই রাজনীতিতে প্রকাশ্যে নেমে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন এবং জেতার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছেন। তিনি বলেন, জেলায় কংগ্রেস ক্ষয়িষ্ণু, অন্যদিকে তৃণমূল শক্তিশালী হয়ে উঠছে। বিজেপি-আরএসএস সক্রিয় হয়েছে। কিছু মুসলিম সংগঠনের শাখাও এখানে তৎপর। এই পরিস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে আটকে না থেকে গণআন্দোলনকে তীব্র করার উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রতিবেদনের উপর আলোচনায় প্রতিনিধিরাও জেলার মানুষের সমস্যা ও ক্ষোভের কথা এবং তা নিয়ে আন্দোলনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁরা জেলায় দারিদ্র্য, নারী পাচার, কৃষি সমস্যা, সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলির সক্রিয়তা বৃদ্ধি, তৃণমূলের সন্ত্রাস ও পুলিশ দিয়ে দমনপীড়নের কথা উল্লেখ করেছেন। কোভিড পরিস্থিতিতে এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথাও তুলে ধরেন তাঁরা। এছাড়াও তাঁরা উল্লেখ করেছেন, এই পরিস্থিতিতেও যেখানে প্রতীকী কর্মসূচি পালনের বদলে নাছোড় আন্দোলন সংগঠিত করা গেছে, সেখানে সাফল্য এসেছে।

সম্মেলনে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেছেন, আরএসএস-বিজেপি ভারতের যে সংবিধানকে ধ্বংস করতে চাইছে, সেই সংবিধানকে হাতিয়ার করেই গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামে সমস্ত বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একজোট করে সংগ্রাম পরিচালিত করতে হবে। কোভিড পরিস্থিতিতে রেড ভলান্টিয়াররা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং পীড়িত-দুর্গতদের সাহায্য করেছেন, তাদের সেই অনন্য ভূমিকার কথা তিনি তুলে ধরেন।

দু’দিনের এই সম্মেলন পরিচালনা করেন বদরুদ্দোজাহা খান, তুষার দে, সচ্চিদানন্দ কাণ্ডারি, আবু বক্কর, শেখ হাসিনা ও পল্টন হাঁসদাকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী। সম্মেলনের সূচনায় শহিদ স্মরণে ও শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন সচ্চিদানন্দ কাণ্ডারি। আয়-ব্যয়ের হিসাব পেশ করেন জামির মোল্লা।

এই সম্মেলন থেকে জেলায় আগামী দিনের সম্মেলন পরিচালনার জন্য ৬০ জনের জেলা কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়েছে। এর মধ্যে দুই জন মহিলা রয়েছেন। তিনজনকে পরে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

জেলা কমিটির প্রথম সভা থেকে জামির মোল্লা পার্টির সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া পার্টির রাজ্য সম্মেলনের জন্য ১৭ জন প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করা হয়েছে।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুমিত দে, রাজ্য কমিটির সদস্য রমা বিশ্বাস এবং পরেশ পাল।