E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২১ সংখ্যা / ৭ জানুয়ারি, ২০২২ / ২২ পৌষ, ১৪২৮

সিপিআই(এম) ছত্তিশগড় রাজ্য সপ্তম সম্মেলন


সিপিআই(এম) ছত্তিশগড় রাজ্য সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন তপন সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মতাদর্শ চর্চা, গণসংগঠনের সম্প্রসারণ এবং গণসংগ্রামের মধ্যদিয়ে আগামী দিনে রাজ্যে পার্টি এবং বামপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধি ও বিস্তার ঘটাতে হবে। পরাস্ত করতে হবে উদারনীতির পৃষ্ঠপোষক কর্পোরেটবান্ধব সাম্প্রদায়িক বিভাজনের শক্তি আরএসএস-বিজেপি’কে। সিপিআই(এম) ছত্তিশগড় রাজ্য সপ্তম সম্মেলন থেকে ধ্বনিত হলো এই আহ্বান। ২১ এবং ২২ ডিসেম্বর ছত্তিশগড়ের কোরবা জেলার বলগি কয়লা খনি ক্ষেত্রে এই সম্মেলন আয়োজিত হয়।

সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত প্রকাশ্য সমাবেশের শুরুতে সিআইটিইউ নেতা ভি মনোহর শ্রমিক-কৃষকের ঐক্য সুদৃঢ় করার আহ্বান জানান। এরপর সম্মেলনের উদ্বোধন করে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য তপন সেন। তিনি বলেন, কৃষক আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা পাল্টে দিয়েছে। এই আন্দোলন দেখিয়েছে কর্পোরেট লুট বন্ধ করা যায়, কিন্তু এর জন্য শ্রমিক-কৃষক ঐক্যকে শক্তিশালী করে শ্রেণি সংগ্রামকে তীব্রতর করতে হবে। শ্রেণি সংগ্রাম সমাজের মৌলিক পরিবর্তনের অস্ত্র। অতীতেও আমরা জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়েছি। এখন এই লড়াইকে রাজনৈতিক পরিণতিতে নিয়ে যেতে হবে এবং পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনে আরএসএস নিয়ন্ত্রিত বিজেপি’র পরাজয় নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, শাসকশ্রেণি যখন জনবিরোধী নীতির কারণে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন সাধারণ মানুষকে বিভক্ত করার চেষ্টা করে। আজ সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করে একই খেলা খেলছে বিজেপি-আরএসএস, তাই সাম্প্রদায়িকতা ও হিন্দুত্বের আক্রমণের বিরুদ্ধে তৃণমূলস্তরেও মতাদর্শগত লড়াই করতে হবে।

তপন সেন বলেন, ছত্তিশগড়ের বাম আন্দোলনের তাৎপর্য হলো, তুলনায় দুর্বল শক্তি হওয়া সত্ত্বেও এখানে পার্টি রাজ্য এবং দেশের রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করছে এবং জনগণের প্রতিরোধকে সংগঠিত করে সামাজিক পরিবর্তনের লড়াইকে তীব্রতর করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে সিপিআই(এম) তার জনস্বার্থবাহী নীতি ও সংগ্রামের মধ্যদিয়ে আগামী দিনে রাজ্যে প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে আসবে।

সম্মেলনের প্রতিনিধি অধিবেশনের উদ্বোধনী পর্বের শুরুতে পার্টির প্রবীণ নেতা গজেন্দ্র ঝা রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর শহিদ বেদিতে পার্টি নেতৃত্ব এবং প্রতিনিধিরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর এম কে নন্দী, বাল সিং এবং আর ভি ভারতীকে নিয়ে সভাপতিমণ্ডলী গঠিত হয় সম্মেলন পরিচালনার জন্য।

প্রতিনিধি অধিবেশন পর্বের শুরুতে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় পারতে। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে বর্তমান রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে গণসংগঠন ও পার্টি কর্মীদের মতাদর্শগত শিক্ষা, চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ এবং পার্টির রাজনৈতিক ভিত্তি সম্প্রসারিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, রাজ্যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার পরিস্থিতি অনুকূল। রিপোর্টে কংগ্রেসের নরম হিন্দুত্বের নীতিকে সমালোচনা করে কংগ্রেসের কর্পোরেট প্রীতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। রাজ্যের আদিবাসী বহুল অংশে রামের নামে আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া, বন অধিকার আইন লঘু করা ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্পাদকীয় রিপোর্টের ওপর নটি জেলা থেকে আসা প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। প্রতিনিধিদের আলোচনায় পার্টি সংগঠন ও গণআন্দোলনকে শক্তিশালী করার বিষয়গুলি উঠে এসেছে। প্রতিনিধিদের আলোচনার শেষে সম্পাদকের জবাবী ভাষণের পর সর্বসম্মতিতে রিপোর্টটি গৃহীত হয়।

রাজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি পর্বে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য যোগেন্দ্র শর্মা বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, জনগণের সংগ্রামকে সংগঠিত না করে সংগঠন গড়ে উঠতে পারে না। সংগঠন যত শক্তিশালী হবে, গণ-সংগ্রাম তত দ্রুত প্রসারিত হবে। ছত্তিশগড়ে সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীদের শক্তিশালী করতে হবে। এটাই মূল চাবিকাঠি। এইভাবেই ছত্তিশগড়ের রাজনৈতিক মানচিত্রে সিপিআই(এম)-কে স্থান দেওয়া যেতে পারে। তাঁর ভাষণে তিনি রাজ্যে গণসংগঠনের সম্প্রসারণের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, আমাদের গণসংগঠনের চরিত্র এমন হওয়া উচিত যাতে সাধারণ জনগণের প্রতিটি অংশ নির্বিঘ্নে সংগঠনে কাজ করতে পারে। গরিব মানুষ উদারীকরণ ও বেসরকারিকরণের জেরে জীবনজীবিকার ক্ষেত্রে যে অসহনীয় অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন, তার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিয়মিত ধারাবাহিক সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।

আদিবাসীদের ওপর গুলি চালানোর বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গরিব মানুষকে বাসভূমি থেকে উচ্ছেদ, আদিবাসীদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ, বন অধিকার, এমএন রেগা, আদিবাসীদের নিপীড়ন, ইত্যাদি যা আমরা চিহ্নিত করেছি, এই প্রতিটি সমস্যাই দেশের বৃহৎ অংশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এসব স্থানীয় ইস্যুতে আরও সংগঠিত সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। ইতিবাচক ফল লাভ করতে হবে।

সম্মেলনে মোট ৭৩ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাদের মধ্যে ১১ জন মহিলা। প্রতিনিধিদের মধ্যে শ্রমিক ৩১ জন এবং অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছে কৃষক ও অন্য পেশার বিভিন্ন প্রতিনিধি। রাজনৈতিক কারণে কারাবাস করেছেন ৩০ প্রতিনিধি এবং দুজন প্রতিনিধি আত্মগোপনে থেকেছেন।

সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতিক্রমে ২৩ জনের রাজ্য কমিটি নির্বাচিত হয়েছে। সঞ্জয় পারতে সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন। সম্মেলন থেকে পার্টি কংগ্রেসের জন্য সঞ্জয় পারতে, এম কে নন্দী, ধর্মরাজ মহাপাত্র, প্রশান্ত ঝা চারজন প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। বিকল্প প্রতিনিধি হিসেবে সুরেন্দ্রলাল সিং, সমীর কুরেশির নাম ঘোষণা করা হয়।