E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২১ সংখ্যা / ৭ জানুয়ারি, ২০২২ / ২২ পৌষ, ১৪২৮

সিপিআই(এম) উত্তরাখণ্ড রাজ্য সপ্তম সম্মেলন


উত্তরাখণ্ড রাজ্য সপ্তম সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য মিছিলে রয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি সহ নেতৃবৃন্দ।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বর দেরাদুনে অনুষ্ঠিত হলো সিপিআই (এম) উত্তরাখণ্ড রাজ্য সপ্তম সম্মেলন। এই সম্মেলন থেকে রাজ্য পার্টিকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা এবং গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাস্ত করার আহ্বান জানানো হয়।

সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় দেরাদুনের জৈন ধর্মশালায়। সম্মেলন স্থলের নাম রাখা হয় কমরেড বীরেন্দ্র ভান্ডারী নগর এবং সম্মেলন মঞ্চের নাম কমরেড সত্যপ্রকাশ মঞ্চ।

দেরাদুন শহরে পার্টি সম্মেলন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য মিছিল সংগঠিত হয়। মিছিলে অংশ নেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সহ পার্টি নেতৃবৃন্দ। এই মিছিল শহর পরিক্রমা করে সম্মেলনস্থলে পৌঁছলে শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হয় রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশন পর্ব।

প্রকাশ্য অধিবেশন পর্বের উদ্বোধন করেন সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি তাঁর বক্তব্যে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়সমূহ তুলে ধরে মোদি সরকারের সাম্প্রদায়িক এবং জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মোদি সরকার তার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করছে এবং সংবিধানের মূল মর্মবস্তু নিয়ে ছেলেখেলা করছে। উত্তরাখণ্ড রাজ্যের বিজেপি সরকারের সাম্প্রদায়িক নীতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকার হরিদ্বারে ধর্ম সংসদ আয়োজন করেছে যা সংবিধানের বুনিয়াদি ধারণার বিরোধী এবং যা দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করেছে। সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা দৃঢ়ভাবে লড়াই করছে এর বিরুদ্ধে। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পরাস্ত করতে হবে বিজেপি-কে।

প্রকাশ্য সমাবেশে এছাড়াও সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম এল) রাজ্য সম্পাদক রাজা বহুগুণা এবং বামপন্থী নেতা ইন্দ্রেশ মাইখুরি।

এরপর সম্মেলনস্থলে রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ পার্টিনেতা বাচিরাম কাউনসাল। প্রকাশ্য সমাবেশের পর প্রতিনিধি অধিবেশন পর্বের শুরুতে গঙ্গাধর নওটিওয়াল, ইন্দু নওদিয়াল এবং শিবপ্রসাদ দেবীকে নিয়ে প্রেসিডিয়াম গঠিত হয়।

প্রতিনিধি অধিবেশন পর্বে যোগ দিয়েছেন দশটি জেলা থেকে মোট ১৫০ জন প্রতিনিধি। রাজ্য সম্পাদক রাজেন্দ্র নেগী সম্মেলনে খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন। এই রিপোর্টের ওপর মোট ৩৫ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনীসহ রিপোর্টটি সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। সম্মেলন থেকে মোট ৯ টি প্রস্তাব পাস হয়। এই প্রস্তাবগুলির মধ্যে রয়েছে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধিতা, শ্রমআইন পরিবর্তন বিরোধিতা, মহিলাদের সমস্যা, দলিতদের সমস্যা, কৃষকদের সমস্যা এবং নয়া শিক্ষানীতি বিরোধিতার বিষয়গুলি। ২৩ এবং ২৪ ফেব্রুয়ারি সারা ভারত ব্যাপী ধর্মঘটের সমর্থনে প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সম্মেলনে ১৫০ জন প্রতিনিধির মধ্যে ২১ জন মহিলা, ৫৮ জন কৃষক, ৪৯ জন শ্রমিক, ৬ জন ছাত্র, ৭ জন যুব এবং ৯ জন মহিলা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। সামাজিকভাবে দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত ১৭ জন, আদিবাসী সম্প্রদায়ের ৪ জন এবং ৭ জন পিছড়েবর্গের এবং ৮ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত এই সম্মেলনে যোগ দেন।

সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতিতে ২৫ সদস্যের রাজ্য কমিটি নির্বাচিত হয়। রাজেন্দ্র নেগী রাজ্য সম্পাদক হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। সাতজনের সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে। পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন চারজন।

প্রতিনিধি অধিবেশন পর্বে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিজু কৃষ্ণান সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন একটি বিপ্লবী পার্টির সদস্য হিসেবে শৃঙ্খলাপরায়ণ হওয়াটা জরুরি। এই সম্মেলন থেকে উত্তরাখণ্ডে একটি শৃংখলাবদ্ধ পার্টি গড়ে উঠবে যা রাজ্যের গণআন্দোলনকে নতুন উৎসাহে দিশা দেখাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সম্মেলনের সমাপ্তি পর্বে পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য তপন সেন সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, পুঁজিবাদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একচেটিয়া শর্ত আরোপ করতে চাইছে। তাই তারা রাজনীতির ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে তা পেতে উন্মুখ। উত্তরাখণ্ডে পার্টি বহু লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে কিন্তু এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি রয়েছে তা অভূতপূর্ব। তাই চাই আরও সংগঠিত লড়াই আন্দোলন। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে ইস্পাত দৃঢ় পার্টি সংগঠন গড়ে তোলা জরুরি।

তিনি বলেন, বৃহৎ পুঁজিপতির গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে দেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অশুভ আঁতাত গড়ে উঠেছে কায়েমি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। এর জেরে দেশে ধনী এবং দরিদ্রের ব্যবধান আরও বেড়েছে। বেসরকারিকরণ তীব্র হয়েছে এর ফলে।

সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতিতে ধর্ম সংসদে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বলা উস্কানিমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।