৬০ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৭ জুলাই, ২০২৩ / ২১ আষাঢ়, ১৪৩০
অবাধ ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত করতে ‘পাহারায় পাবলিক’
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ যাতে গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এবং নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও অবাধ হতে পারে সেই লক্ষ্যে ‘পাহারায় পাবলিক’ শীর্ষক অনলাইন ব্যবস্থা চালু করলো সিপিআই(এম)। এর মাধ্যমে গ্রামবাংলার মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার রক্ষার স্বার্থে সমস্তরকম অন্যায়-অপরাধজনিত ঘটনা অভিযোগ আকারে জানাতে পারবেন। গত ৪ জুলাই সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ‘পাহারায় পাবলিক’ শীর্ষক অনলাইন ব্যবস্থার সূচনা করেন পার্টির রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এর উদ্বোধন করে তিনি বলেন, মানুষকেই ভোটাধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। বুথ থেকে গণনা কেন্দ্র - কেউ যাতে ভোট লুট করতে না পারে তারজন্য পাবলিককে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বিভিন্ন জেলায় বামপন্থী কর্মীদের কাছে তো বটেই, বামপন্থী-সহযোগী, তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী সিভিল সোস্যাইটির সব অংশের মানুষের কাছে আবেদন করছি - অবাধ ভোটগ্রহণে বাধা এলেই আমাদের এই ‘পাহারায় পাবলিক’-এর অনলাইন ফরমে অভিযোগ জানান। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে তার নজরদারি করব।
মহম্মদ সেলিম এদিন এই অনলাইন ব্যবস্থাটির সূচনা করে বলেন, মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের জন্য আমরা লড়াই করছি। নির্বাচন আমাদের কাছে একটি রাজনৈতিক সংগ্রাম। কিন্তু সাধারণ প্রশাসন, পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূল দুর্নীতি ও দুষ্কৃতীতন্ত্র কায়েম রাখতে সেটাকেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরিণত করেছে। প্রতিদিন বোমা ফেটে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। আর তৃণমূল পুলিস দিয়ে মিথ্যা মামলা চাপাচ্ছে বিরোধীদের উপরে। এই অবস্থায় নিরাপত্তা চাইছেন মানুষ, নিরাপত্তা চাইছেন বিরোধী দলের কর্মী, ভোটকর্মী ও ভোটাররা। রাজ্যে এতোই যদি উন্নয়নের জোয়ার তবে কেন এতো বোমা ফাটছে?
তিনি বলেন, স্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় স্বামীকে জেলে আটক করা হয়েছে। বিরোধী দলের প্রার্থী থেকে কর্মীদের নামে নির্বিচারে গাঁজা কেস, পানি কেসে মিথ্যা মামলা করা হচ্ছে। এসব সত্ত্বেও মানুষ অদম্য জেদে লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন। আমরা এই লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। তিনি বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্থবির হয়ে বসে আছে নবান্নের নির্দেশে। তাই পাবলিক পাহারায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।
মহম্মদ সেলিম বলেন, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ সর্বত্র বিরোধীদের উপর হামলা হচ্ছে। কিন্তু যতো হামলা হচ্ছে ততো মানুষ জেদি মনোভাব নিয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে এগিয়ে আসছেন। মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ জাগাতে হবে। ভোটের দিন ভোটকর্মী, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট সবাইকে নিরাপত্তা দিতে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব নিতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যতো মৃত্যু হয়েছে, প্রতিটি মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে নির্বাচন কমিশন। বিজেপি-তৃণমূলের যেখানে যেখানে ভোট পাবার সম্ভাবনা, সেসব জায়গায় নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। বাকি সমস্ত স্পর্শকাতর বুথের তালিকা করে আমরা নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছি। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তারা চাইছেন দুর্নীতি-দুষ্কৃতীতন্ত্র থেকে মুক্ত হতে। গত নির্বাচনে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। আমরা চাই এবার মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটুক।
সাধারণ মানুষ কীভাবে ‘পাহারায় পাবলিক’-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করবেন? লেফট স্কোয়াডের সাইটের লিঙ্কে (https://www.leftsquad.in/paharaypublic/) গিয়ে অথবা পাহারায় পাবলিক-এর ফেসবুক পেজের লিঙ্কে গিয়ে (https://www.facebook.com/PaharayPublic) অথবা মোবাইল ব্রাউজারে (https://surl.li/isiwe) টাইপ করে অথবা পার্টির তরফে দেওয়া একটি কিউআর কোড স্ক্যান করলেই অভিযোগ জানানোর জন্য একটি অনলাইন ফরম পাওয়া যাবে। সহজ-সরল এই ফরমে সামান্য কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জায়গা হয়েছে, যাতে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের স্থান, সময়, ঘটনার সংক্ষিপ্ত উল্লেখ এবং কী ধরনের সাহায্য প্রয়োজন তা উল্লেখ করে পাঠাতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, এরফলে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে ‘রিয়েলটাইম’ অভিযোগ জানাতে পারব এবং সেগুলির চরিত্র অনুযায়ী ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারব। সেই অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব। কোথায় আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, কোথায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ইত্যাদি দ্রুত জানা যাবে। সেই সঙ্গে অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে পাঠানো হবে। জানানো হবে সংবাদ মাধ্যমকেও।
তিনি বলেন, ভোট লুটের চেষ্টা হলে প্রতিরোধ হবেই। আমরা মানুষের কাছে বলছি, তৃণমূল-বিজেপি দূর করো, লুঠতরাজ বন্ধ করো, জনগণের পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠা করো।