৬০ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৭ জুলাই, ২০২৩ / ২১ আষাঢ়, ১৪৩০
ভোট-সমীক্ষা - তথ্য, অ-তথ্য এবং উত্তর-সত্য
উদ্দালক আচার্য
।। এক ।।
পশ্চিমবঙ্গবাসীকে পঞ্চায়েত ভোটের ফল জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ভোটগ্রহণের আগেই! আপনি এখনও ভোট দেননি, আঙুলে কালি লাগাতে কত কাঠখড় পোড়াতে হবে তাও জানেন না; কিন্তু আপনারই মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ভোটের ফল আপনার টিভি-রিমোট ধরা আঙুলেরই ডগায় অপেক্ষমান!
।। দুই ।।
পশ্চিমবঙ্গে এবারের পঞ্চায়েত ভোট শুধুমাত্র শাসকদল বনাম বিরোধী দলের মধ্যে লড়াই নয়। লড়াইয়ের এক দিকে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা, অন্যদিকে তৃণমূল ও তার অতি-সুবোধ সরকারি ভোটবাবু বাহিনী। জনগণ নিজেই নিজের পঞ্চায়েতকে রক্ষার স্বার্থে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ রাখার অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। গ্রামের পর গ্রাম এ যেন এক অতন্দ্র সংগ্রামের মহাআখ্যান।
এ লড়াইয়ে মিডিয়াও বিরাজমান। বাজার-সিদ্ধ ব্রেকিং নিউজের ঝাঁপি খুলে। বিচিত্র রূপে ও রসে।
এমনিতে, শাসকের মতো,ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ধারণার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বাণিজ্যিক মিডিয়ারও মৌলিক বিরোধ। পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার সঙ্গে ভূমিসংস্কারের আন্তঃসম্পর্কেও তাদের বিস্তর অস্বস্তি। ফলে তাদের সংকটটাও সৃষ্টিছাড়া।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কারের কোনো পদক্ষেপই মিডিয়া সমর্থন করেনি। একটিও না। ভূমি সংস্কার, বর্গা রেকর্ড, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েতে তপশিলি জাতি, উপজাতি, মহিলাদের সংরক্ষণ - একটিবারের জন্য তারা কোনো একটি পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে এমন কেউ দেখাতে পারবে না। শুধুই বিরোধিতা করেছে। ফলে গণতান্ত্রিক কাঠমোর ক্ষয়ক্ষতি যাই হোক, বামপন্থীদের প্রতিপক্ষের ভূমিকায় থাকা ছাড়া তারা নিরূপায়।
।। তিন ।।
গত বারো বছরে বামপন্থীরাই কি শুধু আক্রান্ত হয়েছে? না। আক্রান্ত সর্বস্তরের মানুষ। এমনকী তৃণমূল সমর্থকও। চরম বেকারত্ব, নজিরবিহীন দুর্নীতি, হিংস্র ক্ষমতা-লিপ্সা রেহাই দেয়নি কাউকেই।
বিরোধী-মুক্ত পঞ্চায়েতের নিদান দিয়ে এমনকী নিজের দলীয় টিকিটে জেতা সদস্যদের সঙ্গেও তৃণমূল সরকার প্রশাসনিক ক্ষমতা ভাগ করতে চায়নি। ক্ষমতা কার্যত তুলে দেওয়া হয়েছে দাসখত-লেখা ধূর্ত আমলাকুলের হাতে।
বামফ্রন্ট আমলে এমনকী তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত বোর্ড যে স্বশাসন ভোগ করত তার ছিঁটেফোঁটাও এখন নেই। কয়েক দিন আগে স্বয়ং নেত্রী বলেছেন, এবার থেকে পঞ্চায়েত তিনিই চালাবেন। চালাবেন কেন? তিনিই তো চালান। পঞ্চায়েত একটা বাসস্ট্যান্ড বানালেও মানতে হয় ‘অনুপ্রেরণা’র ফতোয়া।
ন্যূনতম সামাজিক কাজের অভ্যাসহীন লুম্পেনদের হাতেই পঞ্চায়েতের দখল সর্বাংশে তুলে দিতে শাসক এখন মরিয়া। তৃণমূল মারছে তৃণমূলকে! কাঠামোগতভাবেই পঞ্চায়েতকে পঙ্গু করা হয়েছে - ছক কষে।
।। চার ।।
আক্রান্ত কি মিডিয়াও নয়? কিন্তু, বাম আমলে প্রতিদিন সরকারের অবাধ মুণ্ডপাতে অত্যুৎসাহী কুশীলবরা এখন নবান্নের নীচ তলার গেটে হেঁটমুণ্ড ঊর্ধ্বপদ। দারোগা বাবু তলব পাঠালেও মুখে কুলুপ!
কিন্তু,ভবি ভোলার নয়! পশ্চিমবঙ্গে নৈরাজ্যের চাষে সার জোগানোর হ্যাঙ্গওভার বারো বছরেও গেল না? মিডিয়া - যাপিত বিরাজনীতিই এখন শাসকের ব্র্যান্ডেড ক্রূরতার বাহারী মুখোশ।
তৃণমূল জমানা সম্পর্কে মানুষের ক্ষোভ যখন অভূতপূর্ব; তখন মিডিয়ার তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিসরের সাম্প্রতিক সবচেয়ে বড়ো আবিষ্কার তৃণমূল বনাম বিজেপি’র ম্যানুফ্যাকচারড (বানানো) দ্বৈরথ! সাজানো দ্বৈরথের দ্বিমাত্রিক তাই তৃণমূলকে স্বস্তিতে রাখে। ধামাচাপা দেয় বিকল্প কর্মসূচির জরুরি প্রশ্নটি।
পঞ্চায়েত মানে নীতির লড়াই নয় - বোঝানো হচ্ছে। সাজানো দ্বৈরথেই চাপা দেওয়া হচ্ছে, জনস্বার্থ রক্ষার মৌলিক প্রাক শর্তগুলি। বামপন্থীদের লড়াই-সংগ্রামে সাধারণ জনতার ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণের রাজনৈতিক সারবত্তা।
তৃণমূল-বিজেপি সম্পর্ক এক অদ্ভুত মিথস্ক্রিয়া। একে অন্যের দ্বিতীয় সত্তা। ‘বিরোধ’-র খেলায় তাই দুপক্ষেরই জিত।
তৃণমূল আর বিজেপি কেন রাজনীতিকে ‘খেলা’ বলে, আর মিডিয়া কেন সে খেলার মুগ্ধ-প্রাণ আম্পায়ার - তা বোঝা মোটেই শক্ত নয়। দুর্নীতিতে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন তৃণমূল-শাসিত পশ্চিমবঙ্গে একটি ঘটনাও মিডিয়ার অনুসন্ধানের ফল নয়। বিপন্ন ভুক্তভুগীদের আদালতে যাওয়ার ফল।
কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসকের মধ্যে পঞ্চায়েত পরিচালনার রাজনৈতিক প্রশ্নে কোনো মৌলিক ফারাক যখন অদৃশ্য, তখন শাসক তৃণমূলের একটা ফেক বিকল্প মানুষের সামনে দৃশ্যমান করে তোলো। অদৃশ্য হবে প্রকৃত বিকল্পের সচেতন সন্ধান। এও এক খেলা,বড়ো নির্মম। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে নির্বাচকমণ্ডলীর অসামান্য ইতিবাচক লড়াইয়ের চাক্ষুস বাস্তবকে এরা ঠেলে সরাতে চায় ‘ম্যানুফ্যাকচারড বাস্তব’-এর নিত্যনতুন ফাঁদে।
।। পাঁচ ।।
স্থিতাবস্থার সাধনায় এরা আদতে শাসকের সঙ্গী। নির্বাচন যদি হয় মত-বহুত্ব উদযাপনের উৎসব, তাহলে ভোটগ্রহণ পর্বের প্রায় পক্ষকাল আগেই ফল পেড়ে হাতে ধরিয়ে দেওয়ার মিডিয়া-দৃশ্যায়ন আসলে নির্বাচকমণ্ডলীর বহুমত প্রতিষ্ঠার স্বীকৃত স্বতন্ত্রতায় অনিবার্য অন্তর্ঘাত। ভোটারকে এখানে ধরেই নেওয়া হচ্ছে দৃশ্যায়িত বাস্তবের (স্পেক্টাকল) নিষ্ক্রিয় নির্বোধ ভোক্তা।
মিডিয়া এখানে অবাঞ্ছিতভাবে হস্তক্ষেপ করছে ভোটারের স্বাধীনভাবে পছন্দের দলকে বেছে নেবার প্রক্রিয়াকে। কেউ বলতে পারেন, নির্বাচনী প্রচারটাও তো এক অর্থে হস্তক্ষেপ। প্রথমত, প্রচারও অবাধ নয়। সেখানেও কিছু বিধি আছে। যেমন, নতুন কোনো সরকারি প্রকল্প ঘোষণা করা যায় না ভোটের বিজ্ঞপ্তি ঘোষণার পর। সাম্প্রদায়িক প্রচার করা যায় না। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী আইন বা নীতিমালা সব কিছুরই একটা সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে। নির্বাচকমণ্ডলীর সার্বভৌম অধিকারের সীমানা টপকানোর কোনো অনুমোদিত অধিকার নেই।
ভোট ‘সমীক্ষা’ ভোটারদের এমন কোনো প্রাসঙ্গিক বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের জোগান দেয় না যা তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে;অথবা যা ভোটারদের মধ্যে পারস্পরিক মত ও অভিজ্ঞতার বিনিময়কে উৎসাহ দেয়।
গণতন্ত্রের মর্মবস্তু যদি মুখ্যত মতভিন্নতার অধিকার হয় তাহলে বিরাজনীতিকরণের এই প্রদোষকালে দৃশ্যায়িত ‘সমীক্ষা’ শেষ পর্যন্ত শাসকের অ্যাডভান্টেজ। শাসকও এখানে নাগরিকের নিষ্ক্রিয়তার ভরসায়। যে শাসক যত স্থিতাবস্থাবাদী প্রতিক্রিয়ার শক্তি, নাগরিক নিষ্ক্রিয়তায় তার ভরসা তত বেশি।
তৃণমূল-বিজেপি’র সাজানো দ্বৈরথের স্বাভাবিক প্রবণতাতেই এসেছে ‘সমীক্ষা’ দৃশ্যায়ন। ‘সমীক্ষা’-ই ফলোআপ সাজানো দ্বৈরথের।
‘সমীক্ষা’লব্ধ ‘তথ্য’ ঠিক না বেঠিক - এটাই শুধু প্রশ্ন নয়। প্রশ্নের মুখে আসলে ‘সমীক্ষা’। ‘তথ্য’ ঠিক, না বেঠিক - এই দ্বিমাত্রিক বিতর্ক উল্টে বৈধতা দেয় দৃশ্যায়িত ‘সমীক্ষা’কেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ কোন পক্ষে তা এখানে নিরর্থক।
এবাংলায় মিডিয়ার স্বভাবসিদ্ধ বাম বিরোধিতার বলি হতে হচ্ছে বিকল্পের জরুরি চর্চাকে।
।। ছয় ।।
আমাদের দেশে ভোট ‘সমীক্ষা’ নিয়ে আলোচনা বিতর্ক শুরু যত সম্ভব ১৯৯৬ সাল থেকে। ভারতীয় রাজনীতিতে নয়া উদারবাদী বাজার-সর্বস্বতা যখন জাঁকিয়ে বসছে। ভোটসমীক্ষা নামক নির্বাচনকালীন মিডিয়া-বিনোদন বিপণন আমাদের শোবার ঘরেও ঢুকে পড়তে শুরু করে। নির্বাচনী বিরাজনীতির ভয়ঙ্কর প্রকোপের সঙ্গে ভারতীয় ক্রেতাকুলের সেই প্রথম পরিচয়।
১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল ‘ভোট-সমীক্ষা’ প্রচার নিয়ে বিস্তর আলোচনা-বিতর্ক হয়েছে। ভোটদান-পূর্ব (প্রি-পোল) সমীক্ষা ও বুথফেরত (এক্সিট পোল) সমীক্ষা দুটি বিষয়েই। ১৯৯৮ সালে নির্বাচন কমিশন প্রথম একটি গাইডলাইন প্রকাশ করে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে। প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া নির্বাচনী খবরাখবর সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করে ১৯৯৬-এ।
উভয় ক্ষেত্রেই বুথফেরত (এক্সিট পোল) সমীক্ষা নীতির স্পষ্ট উল্লেখ সকলেরই জানা। নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন বুথফেরত (এক্সিট পোল) সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করায় সুনির্দিষ্ট আপত্তি রয়েছে।যেমন, তিন দফায় যদি ভোট গ্রহণ হয় তাহলে তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ হবার পরেই বুথফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারে মিডিয়া। এবিষয়ে সব পক্ষই মোটামুটি সহমত। অন্তত এখনও পর্যন্ত।
এক্সিট পোল প্রকাশে এমন নিয়ম কেন? কারণ তা ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে - এবং তা অবাঞ্ছিতভাবে।
বুথফেরত সমীক্ষা নমুনা-নির্ভর পূর্বাভাস হলেও সংকলিত মতামত অন্ততপক্ষে ভোটদান-উত্তর পর্বের নির্মাণ। বুথফেরত সমীক্ষাই যেখানে ভোটদান পর্বে অবাঞ্ছিত সেখানে প্রি-পোল পূর্বাভাস কী করে পেশাদারি সাংবাদিকতার নীতি-মানদণ্ড অনুমোদনযোগ্য হয়? বিশেষত করপোরেট পুঁজির বন্ধনে কেন্দ্রীভূত একচেটিয়া মিডিয়া ব্যবস্থায়।
অনুমোদনযোগ্য হয় - যদি রাজনীতি হয় ‘খেলা’। যদি ভোক্তা-নির্বাচকমণ্ডলী অসমর্থ হন বাঞ্চিত আর অবাঞ্ছিতের মধ্যে ফারাকে। প্রি-পোল নমুনা সমীক্ষার ফল কী আদৌ ‘তথ্য’, নাকি আদতে পরিপ্রেক্ষিতহীন ‘অ-তথ্য’?
অন্য কেউ নয়, স্বয়ং প্রেস কাউন্সিল প্রকাশিত নীতিমালাই প্রি-পোল সমীক্ষা নিয়ে বলেছে, কোনো আগ্রহী পক্ষের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়া সংবাদপত্রের পক্ষে অনুচিত। সংবাদপত্র নিজে যেন নির্বাচনকে বিকৃত করার ও কারসাজির কাজে ব্যবহৃত না হয়।... সাম্প্রদায়িক এবং রাষ্ট্রদ্রোহী প্রোপাগান্ডা বহু ক্ষেত্রেই শনাক্ত করা কঠিন নয়। তবে প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষার পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যবহার শনাক্ত করা মোটেই সহজ কাজ নয়।
জার্মান-আমেরিকান ইতিহাসবিদ শ্রীমতি হানা আর্নেট যেমন পুঁজি-তাড়িত মিডিয়ার তথ্য-পণ্যায়নের প্র্যাকটিস প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন ‘ডিফ্যাকচুয়ালাইজেশন’-র ধারণা। ‘ফ্যাকচুয়ালাইজেশন’ যদি তথ্যায়ন হয়, তাহলে ‘ডিফ্যাকচুয়ালাইজেশন’ একধরনের ‘তথ্য-নিষ্কাশন’ প্রক্রিয়া। ‘তথ্য’ যেখানে আপাত ‘তথ্য’, তথ্যের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নির্মাণ, আসলে ‘অ-তথ্য’।‘তথ্য’ থেকে নিপুণ হাতে খুবলে নেওয়া হয়েছে প্রকৃত তথ্য, দুধ থেকে উৎপাটিত সরের মতন।
অভিজ্ঞতা যদি এরকমই হয়, তাহলে ‘অ-তথ্য’ই মিডিয়া-দৃশ্যায়নের মধ্যবর্তীতায় ‘উত্তর-সত্য’ যুগের ‘তথ্য’।
।। সাত ।।
মজার ব্যাপার হলো, মিডিয়া ‘সমীক্ষা’র অন্তর্লীন সংকট এমনকী এই ‘সমীক্ষা’তেও অধরা নয়।
আপনি মাটিতে দেখছেন, তৃণমূল বর্জনের হিড়িক। ‘সমীক্ষা’ও বলছে, তৃণমূলের দুর্নীতি, ব্যর্থতা, স্বৈরাচারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ ভীষণই ক্ষুব্ধ। দুর্নীতি তদন্তে খুশি ৫৬ শতাংশ। তৃণমূল-বিজেপি সেটিং মনে করছেন ৫৩ শতাংশ। এখনও মতামত দেননি ১৩ শতাংশ। কিন্তু সেই একই মতদানকারীরা যদি তৃণমূলের জয়, আর বিজেপি’র দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত করেন তাহলে ভোট-সমীক্ষা পদ্ধতির রহস্যময়তা সব প্রশ্নকেই ছাপিয়ে যায়।পশ্চিমবঙ্গবাসীর পরিণত মনস্কতার প্রতি এত অনাস্থা দেখাবেন না!
সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেল নিজেই ওয়েবসাইটে লিখেছে, ‘‘পঞ্চায়েতে ভোটের ফলাফলে আসলে কী হবে, তা জানাও যেমন এই সমীক্ষার মধ্যে দিয়ে সম্ভব নয়’’। যদি নাই জানা যায় তাহলে করছেন কেন?
‘সমীক্ষা’ যদিও বলে প্রকৃত ফলাফল জানা সম্ভব নয়, কিন্তু দৃশ্যায়িত ‘সমীক্ষা’-র বিপণন সেই অসম্ভবের উপরই নির্মিত সম্ভাব্যতা আরোপ করে চলে অনায়াসে! তার ওপরই চলে সংলাপ! নিস্ফলা সম্ভাব্যতার দৃশ্যায়নই কুশলী বিপণনে হয়ে উঠে অবশ্যম্ভাবী। অদৃশ্য করে দেয় ‘তথ্য’ আর ‘অ-তথ্য’-র নিয়ন্ত্রণ-রেখা!
তাই মিডিয়া-দৃশ্যায়িত ‘সমীক্ষা’র ‘অ-তথ্য’ নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো মানেই হয় না। তথ্য থেকে সত্যের সন্ধানে নিমগ্ন সচেতন মানুষের চাক্ষুষ বাস্তবই প্রকৃত বাস্তব। বিকল্পের নির্মাণে ‘নিষ্ক্রিয় ভোক্তা’র কোনো স্থান নেই।