৬০ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৭ জুলাই, ২০২৩ / ২১ আষাঢ়, ১৪৩০
“ভগবান বৃদ্ধ হয়েছেন/ দায়ভার বইতে পারেন না”
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
“বাঃ! বা-বা-বা-বাঃ! যখনই আসবে, ঘুমুচ্ছে! আমরা মরছি নাকের জলে চোখের জলে... হাত পা ভেঙে ন্যাজে-গোবরে - আর দেবকুলের মাথা... নাকে তেল ঢুকিয়ে... উঃ...”। এটা যমের উক্তি। নারদকে বলা। পিতামহ ব্রহ্মাকে উদ্দেশ্য করে। কারণ কিছুক্ষণ আগেই নারদ গান গাইছিলেন, ‘কথা বোলো না কেউ শব্দ কোরো না/ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন/গোলোযোগ সইতে পারেন না।” এ যুগের পিতামহ ঘুমান কিনা জানা নেই। আইটি সেল এবং ‘তিনি’ তো বলে থাকেন যে, ঘর ছেড়ে, পরিবার ছেড়ে, সবকিছু ছেড়ে দেশের জন্য সারাদিন তিনি নাকি এত কাজ করেন যে তাঁর ঘুমোনোর সময়টুকুও নেই। খোদায় জানে। তবে ক্ষণে ক্ষণে পোশাক পালটিয়ে সাজগোজ করতে দিনের অনেকটা সময়ই বহুরূপীর যে এমনিই চলে যায় তা ঠিক। কাজেই দিনভর এত কাম সেরে তারপর আর ‘আকাম’ করার জন্য হাতে কতটুকু সময় বেঁচে থাকে তা অবশ্যই গুরুতর ভাববার বিষয়। অতএব সে প্রসঙ্গ থাক। নারদ তো কবেই নরক গুলজারে বলে দিয়েছেন, “অকাজের গোঁসাই তারা কাজের বেলা না।/...ভগবান বৃদ্ধ হয়েছেন/দায়ভার বইতে পারেন না।”
এই বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহ। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে তখন খুবই ব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেইসময়েই মণিপুরে শুরু রক্তক্ষয়ী জাতিদাঙ্গার। মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায়ের তফশিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত হবার দাবি জানিয়ে এক মিছিলকে কেন্দ্র করে যে জাতিদাঙ্গার শুরু। এর আগে মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফশিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি বুধবার থেকে তার বিরোধিতায় পথে নামে। মেইতেই সম্প্রদায়ের এই দাবির বিরোধিতা করে ৩ মে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, মণিপুর। এরপরেই প্রথম সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে চূড়াচাঁদপুর জেলায়। এরপর কয়েকঘণ্টার মধ্যেই মণিপুর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে হিংসা। মাত্র কয়েকদিনে মৃত্যু হয় শতাধিক মানুষের। আহত হন ৫০০-র বেশি মানুষ। নিজেদের তফশিলি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তির জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে ‘মেইতেই সম্প্রদায়’। আর, তাদের দাবির বিরোধিতা করে আসছে কুকি-সহ অধিকাংশ আদিবাসী সংগঠন। তাদের বক্তব্য, মেইতেইরাও যদি তফশিলি উপজাতির স্বীকৃতি পেয়ে যায়, তাহলে আদিবাসীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে।
অবশ্য এই সংঘর্ষের পেছনে ধর্মও একেবারে নেই সেকথা বলা হয়তো ঠিক হবেনা। কারণ কুকি জনগোষ্ঠীর মানুষজন যেমন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তেমনই অন্যদিকে মেইতেইদের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে কথিত। যদিও এই সংঘর্ষ নিছকই হিন্দু বনাম খ্রিস্টানদের বলে দাগিয়ে দেওয়াও ঠিক হবেনা। আসলে সমস্যার শিকড় অনেকটাই গভীরে, যা দীর্ঘদিনের। সেই সমস্যাকে খুঁচিয়ে ঘা কে করল তা নিয়ে বরং ময়নাতদন্ত করা প্রয়োজন। এত ওপর ওপর খুঁজতে বসে এই হিংসা, ঘৃণা মেটানো সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের এক মন্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মণিপুরে হিংসা শুরু হবার পর তিনি জানিয়েছিলেন, “মণিপুর জ্বলছে। বিজেপি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে এবং মণিপুরের মতো সুন্দর রাজ্যের শান্তি নষ্ট করেছে”। ৬ মে এক বিবৃতিতে পলিটব্যুরো জানায়, ‘রাজ্যের বিজেপি সরকার পরিস্থিতির পরিবর্তন আন্দাজ করতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে, তেমন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় হস্তক্ষেপে দেরি করেছে। পাহাড়ি এলাকায় বনাঞ্চল সংরক্ষণের নামে বিরাট সংখ্যক মানুষকে উচ্ছেদ করার ও ‘বহিরাগত’দের বিতাড়িত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের নীতি জনগণের মধ্যে আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলেছে।’
৪ মে মাঝরাতে এক ট্যুইট করে মণিপুরকে বাঁচানোর আবেদন জানান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রীড়াবিদ মেরি কম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংকে ট্যাগ করে অলিম্পিক পদকজয়ী বক্সার লেখেন, ‘আমার রাজ্য মণিপুর জ্বলছে। দয়া করে সাহায্য করুন।’ রাজ্যে শান্তি ফেরানোর দাবি নিয়ে ৮ মে রাজ্যপাল অনুসুয়া উইকে’র সঙ্গে দেখা করে এক বাম প্রতিনিধিদল। যে প্রতিনিধিদলে ছিলেন সিপিআই(এম) মণিপুর রাজ্য কমিটির সম্পাদক কে সান্টা, শরৎ সালাম, সিপিআই নেতা এল সোটিনকুমার, আরকে আমুসানা, আরএসপি’র রাজ্য সম্পাদক কাংজাম মনোরঞ্জন এবং ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক খমদ্রাম জ্ঞানেশ্বর। যদিও মণিপুরে হিংসা তাতেও থামানো যায়নি।
২৯ মে থেকে ১ জুন - চার দিনের মণিপুর সফরে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রশাসনের আধিকারিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। অবিলম্বে রাজ্যে শান্তি ফেরানোর আরজি জানান তিনি। যদিও তাতে তেমন সাড়া মেলেনি। উলটে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজ্য ছাড়ার পরে নতুন করে অশান্ত হয়ে ওঠে মণিপুর।
১৪ জুন মণিপুর শান্তি কমিটি থেকে ইস্তফা দেন প্রখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব রতন থিয়াম, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য মণিপুর শান্তি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। ইস্তফা দেবার পর ১৯৮৭ সালে সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার বিজয়ী রতন থিয়াম জানান, শুধুমাত্র কেন্দ্রের হস্তক্ষেপেই মণিপুর সংকট সমাধান করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, “এক মাস ধরে জাতিগত সংকট চলা সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) এই বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব। দু’হাজার বছর ধরে ৩৫টি সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে একত্রে বসবাস করে আসছে। আমরা খুবই শান্তিপ্রিয় মানুষ।” “মণিপুরে বিদ্যমান জাতিগত সংকট নিরসনে আন্তরিক রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।” রতন থিয়ামের ইস্তফার একদিন আগেই এক গুরুত্বপূর্ণ মেইতেই নাগরিক সমাজ সংগঠন শান্তি কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করে।
‘বুকের ছাতি ৫৬ ইঞ্চি। অন্ধ ও বধির। শেষ বার দেখা গিয়েছিল নির্বাচনের সময়ে’। মণিপুরে দীর্ঘদিন ধরে চলা হিংসার পরেও প্রধানমন্ত্রীর অস্বাভাবিক নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জুন মাসের মাঝামাঝি নাগাদ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল এই ধরণের পোস্টার। ১৮ জুন প্রধানমন্ত্রী নিজের মনের কথা শোনান দেশবাসীকে। ১০২-তম সংস্করণ। যে ‘মন কী বাত’-এ প্রায় ৩০ মিনিট ধরে বহু কথা বললেও সেখানে ছিলনা মণিপুর নিয়ে একটি শব্দও। এমনকী বিদ্রোহীরা তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য বিদেশ প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিং-এর বাড়ি পুড়িয়ে দিলেও তা নিয়ে কোনও কথা তোলেননি প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই নীরবতায় ক্ষুব্ধ মণিপুরবাসী প্রধানমন্ত্রীর মাসিক রেডিয়ো প্রোগ্রাম ‘মন কী বাত’ চলাকালীনই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখান। রাজপথে আছাড় মেরে ভাঙেন ট্রানজিস্টার রেডিয়ো। পোস্টার হাতে স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন, মশাল নিয়ে মানববন্ধন করেন। এমনকি ‘মন কী বাত’ শুনবেন না বলে কানে হাত দিয়েও বিক্ষোভ দেখান রাজ্যবাসী। রাস্তায় নেমে প্ল্যাকার্ড ও মশাল হাতে মানববন্ধন করেন মেইতেই গোষ্ঠীর মহিলারা। রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কী বাত’ শুনতে চাই না, আমরা ‘মণিপুর কী বাত’ শুনতে চাই। এইসব ভাষণ না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আমাদের মণিপুরের এই সমস্যার সমাধান নিয়ে কথা বলা উচিত।” কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের নমোর উদ্দেশ্যে বক্তব্য, “মণিপুর নিয়ে আপনি মৌন থাকলেন কেন? আপনার ‘মন কী বাত’ এ অবশ্যই মণিপুরের সমস্যার কথা থাকা উচিত ছিল।”
২৪ জুন দিল্লিতে মণিপুর প্রসঙ্গে দিল্লিতে এক সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে জানিয়েছেন, “প্রায় ৫০ দিন ধরে চলা সংঘর্ষ ও এত মৃত্যুর পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বৈঠকের কথা মনে হয়েছে। মণিপুরের জন্য এই বৈঠক ডাকতে একটু দেরিই হয়ে গেল। মণিপুরের মানুষের উদ্দেশ্যে সোনিয়াজির দেওয়া বার্তার পরেই জেগে উঠেছে সরকার।”
কংগ্রেস নেতার আরও দাবি, “এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুপস্থিতি এই ধরনের সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে তাঁর ব্যর্থতা ও কাপুরুষতার প্রমাণ দেয়। এমনকী যখন বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসার জন্য অনুরোধ করেন, তখনও তাঁর সময় হয়নি।”
মণিপুরের গুরুতর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এক বছর পিছিয়ে গেলে বিষয়টা বুঝতে কিছুটা সুবিধে হবে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে দু’দফায় মণিপুর বিধানসভা নির্বাচন হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ৫ মার্চ। ১০ মার্চ ফলাফল ঘোষিত হয়। যে নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৩৭.৮৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩২টি আসনে জয়লাভ করে। এনপিপি জয়ী হয় ৭ আসনে এবং কংগ্রেস জয়ী হয় ৫ আসনে। এছাড়াও জেডিইউ এবং নাগা পিপলস ফ্রন্ট জেতে যথাক্রমে ৬ ও ৫ আসনে। কুকি পিপলস অ্যালায়েন্স জয়ী হয় ২টি আসনে। জেলাগত হিসেবে ইম্ফল পূর্ব জেলায় বিজেপি জয়ী হয় ৭ আসনে, ইম্ফল পশ্চিমে ১০ আসনে, বিষ্ণুপুরে ৪ আসনে চান্দেল-এ ২ আসনে এবং চূড়াচাঁদপুরে ৩ আসনে। এছাড়াও থৌবালে ৪ আসনে, সেনাপতি এবং তামেংলঙ জেলায় ১টি করে আসনে বিজেপি জয়লাভ করে। একমাত্র উখরুল জেলায় কোনো আসনে জেতেনি বিজেপি। নির্বাচনী ফলাফল থেকে এটা স্পষ্ট যে সেইসময় মণিপুর জুড়ে বিজেপি'র একচ্ছত্রাধিপতিত্ব হয়েছিল। যদিও বিষয়টা এখানে নয়। সম্পূর্ণ অন্য জায়গায়।
৩ মার্চ ২০২২ তারিখে এক ট্যুইটে বিজেপি’র বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ এনেছিলেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। যেখানে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, মণিপুরের বিজেপি সরকার ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে ঘুষ দিয়েছে। ওই সময় মণিপুরের দায়িত্বে থাকা রমেশ লেখেন, নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধির একটি ‘‘দুর্ভাগ্যজনক এবং স্পষ্ট লঙ্ঘন’’ করেছে মণিপুরের বিজেপি সরকার। ‘সাসপেনশন অফ অপারেশন’-এর আওতায় থাকা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনকে গত ১ ফেব্রুয়ারি ১৫.৭০ কোটি টাকারও বেশি এবং গত ১ মার্চ ৯২.৬৫ লক্ষ টাকার বেশি ছাড় দেওয়া হয়েছে৷ দুই ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকার এতে অনুমতি দিয়েছে।
কংগ্রেস নেতা মিডিয়াকে জানান, “এই অর্থপ্রদানের কারণেই ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম পর্বে চুরাচাঁদপুর এবং কাংপোকপি জেলায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। সাসপেনশন অফ অপারেশন-এর অধীনে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে ঘুষ দেওয়া টেংনুপাল এবং চান্দেলের নির্বাচনেও প্রভাব ফেলবে। ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফায় এই জেলাগুলিতে ভোট হবে।” চেকের নম্বর এবং অন্যান্য ব্যাঙ্কের বিবরণ শেয়ার করে তিনি বলেনঃ “এইভাবে বিজেপি মণিপুরে নির্বাচন কিনছে, ভয় ছড়াচ্ছে এবং ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছে। এভাবেই বিজেপি ক্ষমতায় থাকার জন্য দুর্নীতিতে লিপ্ত হচ্ছে।”
কাট টু জুন ২০২৩। মেইতেইদের ছ’টি ছাত্র সংগঠন সেদিন অভিযোগ করে, কুকি জঙ্গি নেতারা খোলাখুলি বলছে, তারা বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে। সেইকারণেই কি বিজেপি সরকার এই বিষয়ে চুপচাপ? একইসঙ্গে তারা আরও বলে, কেন্দ্র যদি এর ব্যাখ্যা না দেয় তাহলে মণিপুরবাসী বিজেপি’কে বয়কট করে রাজ্য থেকে উৎখাত করবে। এই বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য না করলেও হয়তো হবে।
মণিপুর নিয়ে নড়েচড়ে না বসলেও এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের তৎপরতা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে। যে প্রধানমন্ত্রী মণিপুর হিংসা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের মুখে সেই তিনিই গত ২৭ জুন ভোপালে বিজেপি’র এক কর্মসূচিতে বলেন, “দেশের এক একটি সম্প্রদায়ের জন্য যদি এক এক রকম আইন থাকে, তা হলে দেশ এগোতে পারে না। সংবিধানেও সকলের জন্য সমান আইনের কথা বলা আছে।” আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে বিভিন্ন ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর স্বাধিকার খর্ব হবে। ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলবীর সিংহ চৌহানের নেতৃত্বাধীন ২১তম আইন কমিশন বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক সংগঠনের মতামত নিয়ে রিপোর্টে জানিয়েছিল, হিন্দু, মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান, পারসি, জৈনদের জন্য একই আইন চালু করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু গত ১৪ জুন (মণিপুরে তখনও হিংসা চলছে) কেন্দ্র-নিযুক্ত ২২তম আইন কমিশনের তরফে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর বিষয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন এবং আমজনতার মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।
ব্রহ্মা কখন ঘুমিয়ে থাকবেন আর কখন জেগে উঠবেন সেটা তিনিই জানেন। সযত্ন লালিত দাড়ি আর পোশাক টোশাক সামলে কখন তাঁর সময় হবে সেটাও তিনিই জানেন। তবে মানুষকে ‘তাঁর’ ঘুম ভাঙার অপেক্ষা করলে বোধহয় আর হবে না। ঘুম ভাঙিয়ে দিতে হবে। আর সেই প্রস্তুতিই শুরু করার সময় এসে গেছে। অতএব পিতামহ, দিন এগিয়ে আসছে... এবার মানুষের গোলযোগ সইবার জন্য প্রস্তুত হোন...