E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৭ জুলাই, ২০২৩ / ২১ আষাঢ়, ১৪৩০

মতাদর্শের চর্চা

ভারতীয় দর্শন প্রসঙ্গে (আঠেরো)

শ্রীদীপ ভট্টাচার্য


● ভক্তি আন্দোলনের দর্শন সমসাময়িক সমাজ কাঠামোয় এক বৈপ্লবিক ভাবনা যুক্ত করল। একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। কিন্তু এটাও সঠিক যে ভক্তি আন্দোলনের প্রথম ঢেউ (খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দী থে‍‌কে দ্বাদশ শতাব্দী) ভারতীয় সমাজে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব খর্ব করে হিন্দু সমাজের মধ্যে সংহতি আনতে সাহায্য করেছিল। ভক্তি আন্দোলনের দ্বিতীয় ঢেউও এসেছিল; এই দ্বিতীয় ঢেউ দেখা যায় খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী থেকে সপ্তদশ শতাব্দী এই কালপর্বে।

● মধ্যযুগের ভারতে এক শক্তিশালী ধর্মীয় আন্দোলনের ধারা হিসাবেই ভক্তি আন্দোলনের সূচনা হয়। মুক্তির লক্ষ্যে ভক্তির পদ্ধতিতে সংস্কার নিয়ে এল ভক্তি আন্দোলন সমাজের সমস্ত অংশের মানুষের স্বার্থে। দক্ষিণ ভারতে এই আন্দোলনের সূচনা হলেও পরবর্তীকালে তা পূর্ব ও উত্তর ভারতে প্রসারিত হলো। একটি কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, অঞ্চলভেদে ঈশ্বর-ঈশ্বরীদের যে পার্থক্য তাকে ঘিরেই এই ভক্তি আন্দোলন গড়ে ওঠে। শিব, বিষ্ণু, শক্তি দেবী - এদের ঘিরেই এই ভক্তি আন্দোলন গড়ে ওঠে। ভক্তি আন্দোলন জনগণের গ্রহণীয় ভাষায় বার্তা নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। তবে ভক্তি আন্দোলন যে দর্শন দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল তার মধ্যে আস্তিক দ্বৈতবাদী‍‌ দর্শন যেমন ছিল, আবার অদ্বৈত বেদান্তের চূড়ান্ত অদ্বৈতবাদও ছিল। এই আন্দোলন প্রত্যেক মানুষের মধ্যে, অর্থাৎ পুরুষ-নারী নির্বিশেষে, কে কোন ঘরে বা জাতে জন্মগ্রহণ করেছেন তা নির্বিশেষে ব্যক্তিকে প্রাধান্য আধ্যাত্মিকতার বিকল্প পথ উপস্থিত করল। গবেষক ও বিদগ্ধজনের মধ্যে এই প্রশ্ন অনেক সময়ে ঘুরপাক খায় যে, ভক্তি আন্দোলন ‘সংস্কার’ না ‘বিদ্রোহ’? অনেকে বলেনঃ প্রাচীন বৈদিক ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন হলো ভক্তি আন্দোলন।

● খ্রিস্টীয় দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে অর্থনীতি ও বাণিজ্যের বাড়বাড়ন্তের সময়ে দ্রুত নগরায়ণের মধ্য দিয়ে তৃতীয় নগর বিপ্লব শেষ হয়। এর ফলে কৃষক, কারুশিল্প শ্রমিক সহ ব্যবসায়ীদের বড়ো অংশের সামাজিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। এই সময়ে সামন্ততান্ত্রিক জমিদার শ্রেণি কৃষি জমি ও পণ্য সামগ্রীতে অতিরিক্ত কর ধার্য করায় জনমনে গভীর অসন্তোষ দেখা দেয়। স্বাভাবিক কারণেই ভুক্তভোগী গোষ্ঠীগুলি সামাজিক উন্নয়নে ও অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষায় ভক্তি আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। ভারতে মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠা পর্ব থেকেই সুফি সাধকদের ইসলাম ধর্মের প্রচার গুরুত্ব পায়। তবে সুফিবাদ নিয়ে আলোচনা পরে করা হবে। একটি কথা বলা আবশ্যক, সুফিবাদ হিন্দু ও মুসলমান ঐক্যের উপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছিল।

● মহারাষ্ট্রে ভক্তিবাদের প্রচারক ছিলেন নামদেব, তুকারাম প্রমুখ। বিশেষভাবে স্মরণে রাখতে হবে যে, ভক্তি আন্দোলনের নেতৃত্বস্থানীয় অনেকেই তথাকথিত নিচু জাতের মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসেছেন। বিশেষ উল্লেখযোগ্য নামগুলি হলো - চর্মকার সম্প্রদায়ের হরলয়া, নারীবাদী আক্কা মহাদেবী, যুক্তিবাদী বিমান, অন্ধ্রের কাঠমিস্ত্রি বীরব্রহ্ম, দারজি নামদেব, গ্রাম্য ভৃত্য চোক্কামেলা, মুদি তুকারাম, মহারাষ্ট্রের সবজি চাষি সাবতা মালি, তাঁতি কবির, মুচি রুইদাস, সুতো কর্মী দাদু দয়াল, রাজকন্যা মীরা, খত্রি নায়ক গোরা, উত্তর ভারতের নাপিত সেনা ইত্যাদি।

● ভক্তি আন্দোলনে নারীদের উল্লেখ‍‌যোগ্য অংশগ্রহণ ছিল। সামনের সারিতে থেকে যে সমস্ত নারী ভক্তি আন্দোলন প্রচার করছিলেন তার মধ্যে মীরা ও মাক্কুবাঈয়ের নাম পাওয়া যায়। চরম রক্ষণশীল ও পুরুষতান্ত্রিক মনুস্মৃতি স্বামীকে ঈশ্বরের আসনে তুলে ধরেছে। মীরা এই ভাবনার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের কাছে স্বামীই আমার ঈশ্বর, আমি বলি ঈশ্বরই আমার স্বামী।’ অন্ধ্রের মাক্কুবাঈ ও মোল্লার মতো অনেকেই এই দাবি করেছিলেন। মাক্কুবাঈ উঠে এসেছিলেন ‘অস্পৃশ্য’ যাদের বলা হতো তাদের মধ্য থেকে।

● মোল্লার দাবি ছিল যে, প্রভু রাম তার সাথে দেখা করেছেন ও বিয়ে করেছেন। সেই জন্য তিনি অন্য কারও আদেশ মানেন না। সাধারণ কুমোর পরিবার থেকে উঠে এসে তিনি একটি জনপ্রিয় রামায়ণ লিখেছিলেন। ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরকে নিয়ে আন্নামাঈয়ের সঙ্গীত শুধু ভক্তির প্রসার ঘটায়নি, সামাজিক কুসংস্কারেরও নিন্দা করেছেন। স্ত্রোত্র ও মন্ত্র থেকে ভজন, অভঙ্গ (তুকারাম), দোহা (তুলসীদাস), নামগান (জয়দেবের গীতগোবিন্দ), ত্যাগরাজুর কীর্তন, ক্ষেত্রয়-এর পদম্‌ সৃষ্টির পথ করে দিয়েছিল। এটাও সঠিক যে বেশিরভাগ মানুষই এই স্ত্রোত্র মন্ত্রগুলির অর্থ অনুধাবন করতে সমর্থ হলেন না, তবে সাধারণ কথ্য ভাষায় রচিত এই প্রার্থনা সঙ্গীতের ভাষা বুঝতে তাদের অসুবিধা হয়নি।

সুফিবাদ

● ইসলাম ধর্ম ও দর্শনের প্রতিষ্ঠা হয় সপ্তম শতাব্দীর একেবারে শুরুতে। আরব দে‍‌শে এ‍‌ই ধর্মীয় ভাবনা ও দর্শনের প্রতিষ্ঠা হলেও অতি স্বল্পকালের মধ্যে তা ভারতে প্রসার লাভ করে। আরবের যারা সমুদ্রপথে বাণিজ্য করতেন তাদের মাধ্যমে মালাবার উপকূল ও শ্রীলঙ্কায় প্রথমে ইসলাম ধর্ম প্রবেশ করে। সুফিবাদ হলো ইসলাম ধর্মের রহস্যময় রূপ যেখানে শব্দ ও স্তব্ধতাকে ব্যবহার করে প্রার্থনার ভক্তিমূলক দিকটিতে জোর দেওয়া হয়েছে। ভারতে এই সুফিবাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। সুফি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্নতা ভারতে লক্ষ করা যায়। মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে সুফিবাদ গড়ে উঠলেও, সুফিবাদের মধ্যে অন্যান্য ধর্মের উপাদানও রয়েছে। যার ফলে সুফিবাদের মধ্যে একদিকে সহনশীলতা ও অপরদিকে সকলকে অন্তর্ভুক্ত করার শক্তিশালী প্রবণতা রয়েছে। সুফিবাদ বিশ্বাস করে, প্রেম ও ভক্তিই হলো ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর সেরা উপায়, কোনো নিয়মবিধির বেড়াজাল নয়। ইসলামীয় আধ্যাত্মিক ধারায় সুফিবাদ গড়ে ওঠে অষ্টম শতাব্দীতে। সুফিবাদ বিশ্বাস করে, ঈশ্বর সকল ব্যক্তির মধ্যে বাস করেন। তপস্যার পথ ধরেই ঐশ্বরিক শক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব। ভারতে সুফিবাদের প্রচারে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বরা হলেন, বুল্লেহ্‌ শাহ্‌, দাতা গঞ্জ বক্স, খাজা মঈনুদ্দিন চিস্তি, নিজামুদ্দিন আউলিয়া প্রমুখ। ভারতে এদের প্রত্যেকেই তাঁদের ভূমিকার জন্য শ্রদ্ধার আসনে রয়েছেন।

● ভক্তি আন্দোলনের ও সুফি আন্দোলনের আলোচনায়‌ ‘কবির’-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ হওয়া প্রয়োজন। কবির ছিলেন পঞ্চদশ শতাব্দীর ভারতীয় কবি দার্শনিক। ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর জন্ম। শতাধিক বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। ১৫১৮-তে তাঁর মৃত্যু। তবে ১৪৪৮-এ তাঁর মৃত্যু, একটি মত রয়েছে। তাঁর বহু কবিতা, ‘দোহা’ গুরু গ্রন্থ সাহেব, শিখ ধর্মের ধর্মগ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ধর্ম বিশেষকরে সংগঠিত ধর্ম সম্পর্কে তাঁর গুরুতর সমালোচনা ছিল। হিন্দু ও মুসলিম ধর্মাচরণের মধ্যে বহু কিছু সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট সমালোচনা ছিল ও তা নিয়ে তিনি যথেষ্ট মুখর ছিলেন। জীবিতকালে তিনি হিন্দু ও ইসলামী মৌলবাদীদের দ্বারা বারে বারে চরম হুঁশিয়ারি পেয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর হিন্দু ও মুসলিম উভয়েই কবিরকে তাদের বলে দাবি করেছিলেন। আত্ম অহমিকা থেকে বেরিয়ে এসে, ‘আমি’র স্থানে ‘আমরা’ স্থাপন করতে পারলে ‘সত্য’-কে জানা সম্ভব। ‘কবির পন্থ’-এর মধ্য দিয়ে কবির-এর মতবাদের অস্তিত্ব রয়েছে। ঐতিহাসিক ইরফান হাবিবের মতে, বিভিন্ন নথি অনুযায়ী কবির রামানন্দ’র অনুগামী ছিলেন। কবিরের যুগে সম্প্রদায়‌-সম্প্রদায় তত্ত্বের মধ্যে সমন্বয়বাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রথম প্রবক্তা ছিলেন রামানন্দ। আধুনিক ব্যাখ্যাকারেরা অনেকেই কবিরকে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের সংশ্লেষক বলে অভিহিত করেছেন, কিন্তু গবেষকদের অনেকেই, কবিরকে এই দুই ধর্মবিশ্বাসের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ‍‌‍‌ছিলেন - এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন। এই দুই ধর্মবিশ্বাসের যে ত্রুটিগুলি তাঁর দৃষ্টিতে এসেছে, কবির সেগুলির কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি স্বাধীনভাবে নিজের মত ব্যক্ত করেছেন, এমনকী ধর্মবিশ্বাসের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

● ভক্তি আন্দোলনের ধারার পরিণামে খ্রিস্টীয় পনেরো শতকে শিখ ধর্মের উত্থান হয়। এই কারণেই শিখ ধর্ম, বৈদিক ধর্ম ও ইসলাম ধর্ম থেকে আলাদা। শিখ ধর্ম মূর্তি পূজা ও বর্ণব্যবস্থার বিরুদ্ধে। শিখ ধর্মগুরুরা বিভিন্ন সামাজিক স্তর থেকে এসেছেন। তুলনামূলকভাবে অনেক-পরে (পনেরো শতকে) এই ধর্মবিশ্বাস ও দর্শনের উদ্ভব ঘটে। গুরু নানকের আধ্যাত্মিক শিক্ষাকে ভিত্তি করে ‘শিখ বাদ’-এর উদ্ভব ঘটে। শিখবাদের নামে যে শিক্ষা বা উপদেশ উপস্থিত করা হলো তার মূল কথা হলো - ‘সক্রিয়, সৃজনশীল, ব্যবহারিক জীবনের ক্ষেত্রে সততা, বিশ্বস্ততা, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং শুদ্ধতার মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন।’

● গুরু নানক সতীপ্রথা, পুরুষতান্ত্রিকতা, অস্পৃশ্যতা ইত্যাদির তীব্র বিরোধিতা করেন। শিখ মতবাদে খালসা (সম্প্রদায়), পরিচ্ছন্নতা, আত্মসম্মান, সহমর্মিতা ইত্যাদি মানবিক মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

● বর্তমান ভারতে ভক্তিবাদী আন্দোলনের নানা ধারা প্রচলিত রয়েছে। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে দেখা যাবে, ভক্তিবাদী মতবাদ (সমস্ত ধরনের) ভাববাদী দর্শনের অন্য এক রূপ। বর্তমান ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা দেশ শাসন করছে। দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সতীপ্রথাসহ নানা সামাজিক কুসংস্কার, কূপমণ্ডুক ধারণাগুলিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। ভক্তি আন্দোলনের বিভিন্ন ধারাগুলিকে একত্রিত করেই এই আগ্রাসী হিন্দুত্বকে পরাস্ত করতে হবে। আমাদের বস্তুবাদী বৈজ্ঞানিক ধারণার পাশাপাশি, ঐতিহ্যপূর্ণ ভক্তি আন্দোলনের ধারার বহু উপাদানকে হিন্দুত্ববাদী শক্তির একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে বিনষ্ট করার কাজে ব্যবহার করতে হবে।

কয়েকটি বিশেষ শব্দের ব্যাখ্যা

● ইতিমধ্যে বিভিন্ন আলোচনায় বারে বারে কয়েকটি শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ (যদিও এটা নিয়ে একটি পৃথক অধ্যায় লেখা হয়েছে।) - সংক্ষিপ্ত আকারে এগুলির ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।

অদ্বৈতবাদ

এটি একটি বৃহত্তর শব্দ। যে কোনো তত্ত্ব যার মূল কথা হলো - শেষ পর্যন্ত সমস্ত কিছুই এক অথবা সমস্তই একই ধরনের - তাকেই অদ্বৈতবাদ বলে। সত্য ও বিশ্বাস একটাই - এই কথাও অদ্বৈতবাদের বক্তব্য। ‘বহুত্ববাদ’ এটাই বৃহত্তর শব্দ। অদ্বৈতবাদের বিপরীত শব্দ বহুত্ববাদ। শংকরাচার্যের অদ্বৈতবাদী দর্শনে সত্য, জ্ঞান ‍‌ও ন্যায়ের প্রশংসা করা হয়েছে। আবার বলা হয়েছে শোষিত গুণাবলী (exploited virtues) সত্য, জ্ঞান ও ন্যায় - এই সমস্ত কিছুই একই আলোকিত বুদ্ধির সৃষ্টি।

দ্বৈতবাদ

● দর্শনের ক্ষেত্রে দ্বৈতবাদের অর্থ হলো দুই ভিন্নধর্মী ও অপরিবর্তনীয় নীতির ব্যবহার। বহুত্ববাদের সথে দ্বৈতবাদের পার্থক্য হলো - বহুত্ববাদে বহু ভিন্নধর্মী, অপরিবর্তনীয় নীতির ব্যবহার হয়। কিন্তু দ্বৈতবাদে দুই ভিন্ন ধর্মী ও অপরিবর্তনীয় নীতির কথা বলা হয়েছে। সত্য ও বিশ্বাস - একটি নই দুইটি। চেতনা ও দৈহিক অস্তিত্ব - দুইটি সত্তা।

ঔপনিবেশিক সময়কাল

● সংস্কারবাদী আন্দোলন সপ্তদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে মুঘল সাম্রাজ্য যখন ক্রমশই ক্ষ‌য়িষ্ণু রূপ ধারণ করেছে, সেই সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশ ধীরে ধীরে খণ্ডিত হচ্ছিল, বিভক্ত হয়ে পড়ছিল। বিভক্ত হওয়ার পরিণতিতে সামন্তপ্রভু শাসিত ছোটো ছোটো রাজ্যগুলি ব্যক্তিগত স্বার্থে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হচ্ছিল। ব্রিটিশ, ফরাসি, ওলন্দাজ প্রভৃতি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলিও এই সময়ে ভারতীয় বাজার দখল তথা নিয়ন্ত্রণের অধিকার পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। দেশের বিভিন্ন সামন্তরাজাদের অভ্যন্তরীণ কলহের সুযোগে তারা সুবিধামত বিভিন্ন প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছিল। এদের মধ্যে ব্রিটিশরা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে ও ক্রমান্বয়ে সমগ্র ভারত ব্রিটিশ শাসনাধীন হয়। ভারতে তাদের শাসন ব্যবস্থার প্রয়োজনে ব্রিটিশরা অনুভব করে যে, স্থানীয় বাসিন্দাদের ইংরেজি শিক্ষা, আইনকানুনে প্রশিক্ষিত করার প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় একটি উচ্চবর্ণের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে।

(ক্রমশ)