৫৮ বর্ষ ৩৮ সংখ্যা / ৭ মে, ২০২১ / ২৩ বৈশাখ, ১৪২৮
আসাম এবং পুদুচেরিতে এনডিএ জিতলেও বিজেপি নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পায়নি
তামিলনাডুতে জয়ী ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোট
মোট তিনটি আসনে জয়ী সিপিআই(এম)
গানডারভাক্কোটাই কেন্দ্রে জয়ী এম চেন্নাদুরাই।
কিলভেলুর কেন্দ্রে জয়ী ভি পি নাগাইমালি।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের মোট পাঁচটি রাজ্যে একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনের ফল ২ মে ঘোষিত হয়েছে। কেরালা, তামিলনাডু, আসাম এবং পণ্ডিচেরির নির্বাচনী ফলাফলে সামগ্রিকভাবে বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে মানুষের প্রত্যাখ্যান করার ইঙ্গিত স্পষ্টতর হয়েছে। এরমধ্যে বিজেপি জোট অসমে জয়ী হলেও কেরালায় কোনো আসন পায় নি। প্রত্যাশিতভাবেই সেখানে সিপিআই(এম) নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট নজির গড়ে জয়ী হয়েছে।
অসমে বিজেপি জোট কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ৫ দলের মহাজোটকে, নবগঠিত অসম জাতীয় পরিষদ এবং রাইজর দলের দ্বিদলীয় জোটকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতাসীন হলো। প্রথম অকংগ্রেসী দল হিসেবে বিজেপি অসম বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বার ফেরার নজির গড়ার ক্ষেত্রে ৬০টি আসনে জয়ী হয়েছে। ৩৩ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেলেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। গতবারের তুলনায় ৩টি আসন কম পেয়েছে বিজেপি জোট। বিজেপি’র এনডিএ জোটের অসম গণপরিষদ ন’টি আসন পেয়েছে এবং ইউপিপিএল ছ’টি আসন পেয়েছে। বিজেপি জোটের মোট আসন সংখ্যা ৭৫। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোট ৫১টি আসন পেয়েছে। কংগ্রেস পেয়েছে ৩০টি ইউডিএফ পেয়েছে ১৬টি, বিপিএফ চারটি এবং সিপিআই(এম) একটি আসন পেয়েছে। সিপিআই(এম)’র মনোরঞ্জন তালুকদার সরভোগ কেন্দ্র থেকে জিতেছেন ১১ হাজার ৮৬৮ ভোটে। মনোরঞ্জন তালুকদার পেয়েছেন ৯৫ হাজার ৭২৬ ভোট। উল্লেখ্য গত ১০ বছর ধরে এই কেন্দ্রটি বিজেপি’র দখলে ছিল।
অন্যদিকে নবগঠিত অসম জাতীয় পরিষদ এবং রাইজর দলের জোট জিতেছে মাত্র একটি আসনে। প্রসঙ্গত, প্রথমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন কৃষক আন্দোলনের নেতা, রাইজর দলের প্রতিষ্ঠাতা অখিল গগৈ। শিবসাগর আসনে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন অখিল গগৈ। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গত দেড় বছর ধরে জেলে তাঁকে আটকে রেখেছে এনআইএ। তিনি কারাবন্দী অবস্থায় রাইজর দল নামে নতুন দল গঠন করেন।
অসমে ক্ষমতায় আসতে না পারলেও মহাজোট গঠনের ফলে বিরোধীদের আসন বেড়েছে। বাংলাভাষী প্রধান বরাক উপত্যকায় মোট ১৫টি আসনের মধ্যে বিজেপি’র মিত্র জোট পেয়েছে ছ’টি আসন। উজান আসামে কংগ্রেসের ও বোড়োল্যান্ড-এ বিপিএফ’র ফল খারাপ হওয়ায় পিছিয়ে পড়ে মহাজোট।
২৩৪ আসন বিশিষ্ট তামিলনাডু বিধানসভায় এবার জয়ী হলো ডিএমকে নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ জোট। এই জোটেই ছিল কংগ্রেস, সিপিআই(এম) এবং সিপিআই। ডিএমকে নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ জোট পেয়েছে ১৫৬টি আসন। অন্যদিকে এডিএমকে নেতৃত্বাধীন বিদায়ী শাসক জোট এনডিএ পেয়েছে মাত্র ৭৮টি আসন। সিপিআই এবং সিপিআই(এম) এবারের নির্বাচনে দু’টি করে কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে। গানডারভাক্কোটাই কেন্দ্র থেকে সিপিআই(এম) প্রার্থী এম চেন্নাদুরাই জয়ী হয়েছেন প্রায় ১২ হাজার ভোটে। আর কিলভেলুর কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৬ হাজার ভোটে সিপিআই(এম) প্রার্থী ভি পি নাগাইমালি জয়ী হয়েছেন। দু’জনের প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ যথাক্রমে ৪৪ এবং ৪৭.৫ শতাংশ।
তামিলনাড়ুতে সরকার গঠনের জন্য দরকার ১১৮টি আসন। উল্লেখ্য, ২০১১ সাল থেকে তামিলনাডুতে টানা ক্ষমতায় ছিল এডিএমকে জোট। বিজেপি-কে সঙ্গী করে এডিএমকে জোট ২০১৬ সালে সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে ২৩৪টি আসনের মধ্যে পেয়েছিল ১৩৬টি। পাশাপাশি ডিএমকে ৮৯ এবং কংগ্রেস আটটি আসনে জয়ী হয়।
এছাড়াও টি টি ভি দিনাকরনের এএমএমকে এবং অভিনেতা কমল হাসানের এমএনএম’র নেতৃত্বে আরও দু’টি জোট তামিলনাডুর নির্বাচনে থাকলেও কোনো সুবিধা করতে পারেনি, পালাবদলের ধারা বজায় থাকল সেই ডিএমকে এবং এডিএমকে’র মধ্যেই। এবারই প্রথম তামিলনাডুর রাজনীতির দুই প্রয়াত কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব ডিএমকে নেতা করুণানিধি এবং এআইডিএমকে নেত্রী জয়ললিতার দলের পরবর্তী প্রজন্মের নেতারা বিধানসভা ভোটে লড়াই করলেন। তামিলনাডুর নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন করুণানিধির পুত্র ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন।
পুদুচেরি বিধানসভার ৩০টি আসনের মধ্যে ১৬টি আসন পেয়েছে এনআর কংগ্রেস-বিজেপি জোট। এনআর কংগ্রেস জিতেছে ১০টি আসন এবং বিজেপি ছ’টি। উল্টোদিকে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক জোট জয়ী হয়েছে আটটি আসনে। কংগ্রেস জোটের সঙ্গী ডিএমকে পেয়েছে ছ’টি আসন এবং কংগ্রেস দু’টি। বাকি ছ’টি আসনে জয়ী হয়েছেন অন্যান্যরা। বিজেপি জোট পেয়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে কংগ্রেসের জোট পেয়েছে প্রায় ৩৩ শতাংশ ভোট।