৫৮ বর্ষ ৩৮ সংখ্যা / ৭ মে, ২০২১ / ২৩ বৈশাখ, ১৪২৮
মোদী-শাহ জুটির ক্ষমাহীন অপরাধেই দেশে করোনায় মানবিক বিপর্যয়
সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত
বিশ্ববিখ্যাত স্বাস্থ্য গবেষণা সংস্থা ‘ল্যানসেট কোভিড ১৯ কমিশন ইন্ডিয়া টাস্ক ফোর্স’ তাদের ভারতের সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছে,‘ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের থেকে অনেক পার্থক্য। গত ফেব্রুয়ারিতে ১০ হাজার সংক্রমণ থেকে এপ্রিলের প্রথমে ৮০ হাজারে পৌঁছাতে লেগেছে ৪০ দিন। গত বছর সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যায় সংক্রমণ পৌঁছাতে লেগেছিল ৮৩ দিন। টেস্ট রেট পজিটিভিটি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ছিল ২.৮ শতাংশ, ১০ এপ্রিল তা দাঁড়ায় ১০.৩ শতাংশ। করোনা টেস্টের জন্য ভারতের ৭.৮বিলিয়ন ডলার এবং স্বাস্থ্য কেয়ারে ১.৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা প্রয়োজন বলে তারা সুপারিশ করেছে। ল্যানসেট আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বর্তমানে দৈনিক ১,৭৫০ জনের মৃত্যু জুন মাসে ২,৩২০ জনে পৌঁছাবে’।
এখানে মনে রাখা প্রয়োজন ল্যানসেটের এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। তাদের আশঙ্কা ছাপিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ এপ্রিলই পৌঁছে গিয়েছে ৩,৫৭০-এ। আবার বর্তমান রেট পজিটিভিটি প্রায় ২৫ শতাংশ। গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর একদিনে করোনার প্রথম ঢেউয়ে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছিল ৯৭,৮৯৪। সেখানে দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় ৪ লাখের মতো। এর প্রধান কারণ মোদী সরকারের অকর্মণ্যতা। হাসপাতালে বেড নেই,অক্সিজেন নেই,ভরতি হয়ে চিকিৎসার কোনো আশা নেই। রাস্তায় সার সার করোনা রোগী শুয়ে আছেন চিকিৎসার অপেক্ষায়। অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন হাজার হাজার রোগী। শ্মশানে লম্বা লাইনে সার সার মৃতদেহ পড়ে আছে শেষকৃত্যের আশায়। এই চিত্র ভারতের সর্বত্র দেখা গেলেও খোদ রাজধানী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর আবাস থেকে কিছুটা দূরে পরপর দু’দিনে গঙ্গারাম হাসপাতাল এবং দিল্লির জয়পুর গোল্ডেন হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ২৫ জন করে করোনা রোগীর মৃত্যু আরএসএস প্রচারক নরেন্দ্র মোদীর স্বৈরাচারী শাসনের বীভৎস রূপকে সামনে এনে দিয়েছে। দেশভাগের বীভৎসতার পর এইরকম বেনজির মানবিক বিপর্যয় দেশ আর প্রত্যক্ষ করেনি। মৃত্যুপুরী রাজধানী দিল্লি এখন নরককুণ্ড।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশের সাধারণ মানুষকে এক শ্বাসরোধকারী অবস্থার মধ্যে টেনে এনেছে। ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি কেরালায় আমাদের দেশে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান মিললেও মোদী সরকার এর গুরুত্ব উপলব্ধিতে তখনই ব্যর্থ হয়েছিল। মোদী সরকারের কেষ্ট-বিষ্টুরা সেইসময় ব্যস্ত ছিলেন সংবিধানবিরোধী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন পুলিশ এবং আরএসএস বাহিনী দিয়ে ভেঙে দিতে। ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী চলেছিল ‘নমস্তে ইন্ডিয়া’-র নামে ভারত বিদ্বেষী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে স্বাগত জানাবার সর্বাত্মক প্রস্তুতি। এর সাথে তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন মধ্যপ্রদেশে শত শত কোটি টাকায় গোরু-ছাগলের মতো বিধায়ক কিনে কংগ্রেসের সরকার ভেঙে দেওয়ার অনৈতিক কাজে। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস সরকার ফেলে দিয়ে বিজেপি সরকার গঠনের ঠিক পরেই নরেন্দ্র মোদী ভারতবাসীকে কোনোরকম প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে ২১ দিনের জন্য লকডাউন জারি করেন। তাঁর ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ জয়ে লেগেছিল ১৮ দিন, আর করোনা জয়ে লাগবে ২১ দিন’। অজ্ঞতাপ্রসূত এইসব কথাবার্তা বা মোমবাতি জ্বালিয়ে ও কাসর ঘণ্টা বাজিয়ে যে করোনা মহামারী মোকাবিলা করা যায় না,তা ভারতবাসী করোনার প্রথম ঢেউয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন।
অক্সিজেনের হাহাকার কতটা তীব্রতা বোঝা যাবে বিশেষজ্ঞদের করা একটি তথ্য থেকে। করোনা আক্রান্তদের ৮১ মিলিয়ন এসওএস টুইটার বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে, তার মধ্যে ৩৬.৯ মিলিয়নই (৪৫.৫ শতাংশ) অক্সিজেনের জন্য। অক্সিজেনের অভাবে যখন দমবন্ধ হয়ে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন তখন এই মহামারীর মধ্যেই অত্যাবশ্যক আইন জারি করে চলছে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সেন্ট্রাল ভিস্তার এবং হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সংসদ ভবন নির্মাণের কাজ। করোনাকালেই ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে কেনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ব্যবহারের জন্য বিলাসবহুল বিমান।
কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা আইসিএমআর গত বছর সেরো সমীক্ষায় জানিয়ে দিয়েছিল, ভারতের জনসংখ্যার প্রতি পাঁচজনের একজন করোনায় আক্রান্ত। স্বাভাবিকভাবেই ১৩০ কোটি দেশের বাকি ১০০ কোটি মানুষের দ্বিতীয় ধাক্কায় করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। গত নভেম্বরে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের স্থায়ী কমিটি হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনযুক্ত শয্যা, আইসিইউ-তে শয্যা সংখ্যা ও ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল। তাদের আরও সুপারিশ ছিল, জিডিপি’র অন্তত ২.৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের। এর কোনোটাই মোদী সরকার মানেনি। মানলে আজ এই অবস্থা হতো না। বিপরীতদিকে দেখা গেল প্রাক করোনা আর্থিক বর্ষ ২০১৯-২০-তে যেখানে মোদী সরকার বিদেশে অক্সিজেন রপ্তানি করেছিল ৪৫০২ মেট্রিক টন, সেখানে অতিমারীর মধ্যে এপ্রিল’২০ থেকে গত জানুয়ারি’২১ পর্যন্ত দ্বিগুণ রপ্তানি করেছে - ৯৩০১ মেট্রিক টন। ২০২০ সালে অক্টোবর মাসে অক্সিজেন উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মাত্র ২০১ কোটি টাকায় ১৬২টি প্ল্যান্ট গড়ার টেন্ডার হলেও সরকারের অকর্মণ্যতায় এ পর্যন্ত স্থাপিত হয়েছে মাত্র ৩৩টি। ফলে অক্সিজেনের অভাবে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটছে।
করোনা ভাইরাসের ভারতীয় প্রথম মিউট্যান্টের সন্ধান মিলেছিল ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বিভিন্ন রাজ্যে আরও নতুন স্ট্রেইনের সন্ধান মিলেছিল। আমাদের দেশে অতিমারীর এই ভয়ঙ্কর দ্বিতীয় তরঙ্গে কোভিডের অনেকগুলো স্ট্রেইন একসঙ্গে ঘুরছে। এই সবক’টা স্ট্রেইনের বিপজ্জনক দিক হলো এগুলি আগের তুলনায় অনেক বেশি সংক্রামক। ফেব্রুয়ারি থেকে কয়েকটি রাজ্যে হু হু করে বাড়তে শুরু করে করোনার প্রকোপ। বিভিন্ন দেশের করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মারাত্মক আকারের কথা চিন্তা করে দেশের বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসকরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বহুদিন আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেছিল মোদী সরকার। সংক্রমণের প্রথম ঢেউ থেকে কোনো শিক্ষাই নেয়নি মোদী সরকার। খুলে দেওয়া হয়েছিল সিনেমা হল,শপিং মল,সুইমিং পুল,ট্রেন ও বাসের ভিড় নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা। তারপর পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিজেপি’র নির্বাচনী সভাগুলিতে করোনাবিধি উপেক্ষা করে জনসমাগম, কুম্ভমেলায় এক কোটি মানুষের উপস্থিতি,দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের অনুমোদন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের আগাম প্রতিরোধী কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া ইত্যাদি কারণে দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এই কারণেই ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জাতীয় সহ-সভাপতি নরেন্দ্র মোদীকে সুপারস্প্রেডার চিহ্নিত করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপর্যয়ের জন্য দায়ী করেছেন।
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণ ছিল ১১,৭৯৮ এবং মৃত্যু ছিল ১১৬। ১৭ এপ্রিল সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে ২,৩৪,৬৯২ ও ১,৩৪১। ওই দিনই আসানসোলে নির্বাচনী জনসভাকে তাঁর জীবনের বৃহত্তম সমাবেশ বলে অভিহিত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর দুইদিন আগে ১৫ এপ্রিল ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা এই প্রথম ২ লক্ষ অতিক্রম করে করোনাকালে রেকর্ড করেছিল। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তাঁদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন না করে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের লিপ্সায় করোনাবিধি শিকেয় তুলে একের পর এক জনসভা করে করোনা সংক্রমণে উৎসাহিত করে গিয়েছেন। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও একই দোষে দুষ্ট।
২৯ জানুয়ারি ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘কোভিড সামলে বিশ্বকে বিরাট বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে ভারত’ বলে আজগুবি দাবি করে বসেন। আবার মার্চের প্রথমদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘ভারত করোনা মহামারী শেষ করে ফেলেছে’ উক্তি শুধু দায়িত্বজ্ঞানহীন নয়, অপরাধমূলক। আরএসএস-এর অবতার প্রতিষ্ঠার ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর ‘ভারত আজ মহাগুরুর ভূমিকায় অবতীর্ণ’ বলা আর এক বাস্তবজ্ঞানশুন্য নির্বোধ উক্তি। আসলে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে মোদী সরকারের কোনো সুস্পষ্ট ধারণার অভাবেই আজ ভারত বিপর্যয়ের মুখে।
করোনা মোকাবিলায় মোদী সরকারের অকর্মণ্যতা নিয়ে সামান্যতম সমালোচনাও সহ্য করতে রাজী নয় কেন্দ্রের স্বৈরাচারী সরকার। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মাধ্যম থেকে বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের পোস্ট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হ্যাসট্যাগ # দেওয়া লক্ষ লক্ষ ‘রিজাইন মোদী’ পোস্টও কয়েক ঘণ্টার জন্য আটকে দিয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। দাদুর জন্য অক্সিজেন চেয়ে টুইট করার অপরাধে আমেথি পুলিশ এফআইআর করেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। যদিও কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, তথ্যের মুক্ত প্রবাহ বন্ধের উদ্যোগকে আদালত অবমাননাই গণ্য করা হবে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের মুখ তো বন্ধ করা যাচ্ছেনা। নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, গার্ডিয়ান, বিবিসি সহ খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে - মোদী সরকারের অপদার্থতা ও অপরিণামদর্শিতা কিভাবে ভারতকে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমান ভারতের চিত্রটি গার্ডিয়ান পত্রিকায় ফুটে উঠেছেঃ ‘‘সমস্ত ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়েছে,ভারতের শোভনতা এখন কোভিড নরকে... ভারতে কোভিড বিপর্যয়ের পিছনে রয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর আত্মম্ভরিতা’’।
স্বাধীনতার পর থেকে সরকারি অর্থে ও ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে সর্বজনীন টিকাকরণ চলে এসেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কর্পোরেট সেবক মোদী সরকার চালু এই গণমুখী ব্যবস্থাকে তুলে দিয়ে দেশে কর্পোরেট মুনাফার অভিমুখী টিকানীতি চালু করেছে। সর্বজনীন বিনামূল্যে টিকাকরণের মাধ্যমে গুটিবসন্ত, ম্যালেরিয়া, যক্ষা, পোলিও ইত্যাদি অনেক রোগ হয় নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে বা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি সংস্থাকে বাদ দিয়ে মোদীর এই জনবিরোধী নীতি সরাসরি দুই টিকা উৎপাদককে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা লোটার পথকে সুগম করেছে। বিশ্বব্যাপী করোনা প্রতিষেধক টিকাকরণ যখন রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে, তখন ভারতে কোভিশিল্ডের একই টিকার দাম নির্ধারিত করা হলো প্রতি ডোজ কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য ১৫০ টাকা, রাজ্যগুলির জন্য ৪০০ টাকা (৫ ডলার) আর বেসরকারি হাসপাতালের জন্য ৬০০ টাকা (৮ ডলার)। অথচ আমেরিকা, ব্রিটেন, ব্রাজিল,বাংলাদেশে এই কোভিশিল্ডের দাম যথাক্রমে ৪,৩,৩.১৫ ও ৪ ডলার। কেন্দ্রের নতুন টিকা-নীতি শুধু বৈষম্যমূলকই নয়, এতে দেশবাসীর জীবনের বিনিময়ে বেসরকারি কোম্পানির মুনাফা স্ফীত করতে চাওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে টিকা উৎপাদক কর্পোরেট মালিকদের গোপন বোঝাপড়া উন্মোচিত হয়েছে। প্রত্যেক ভারতবাসীর বিনামূল্যে সর্বজনীন টিকা পাবার অধিকার আছে। মোদী সরকার ও টিকা উৎপাদক সংস্থার গোপন বোঝাপড়ায় প্রথম ডোজ তো বটেই টিকার দ্বিতীয় ডোজও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদিও টিকার তিন রকম দামের প্রসঙ্গ প্রশ্ন তুলে শীর্ষ আদালত কেন্দ্রের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে। সর্বজনীন টিকাকরণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবা উচিত বলে সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছে। সর্বপ্রথম সিপিআই(এম)-ই এই দাবি উত্থাপন করেছিল।
একজনকে দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পরই বলা যেতে পারে সেই ব্যক্তির পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে। সরকারের কোউইন ওয়েবসাইট জানাচ্ছে, ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৫৪ লক্ষ মানুষকে। সেই হিসাবে মাত্র ১.৯৫ শতাংশ মানুষের পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে। অথচ আমেরিকায় ২৬.৫ শতাংশ, ব্রিটেনে ১৫.৯ শতাংশ, ব্রাজিলে ৪.৩ শতাংশ পূর্ণ টিকাকরণ সমাপ্ত হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ৬টি হাইকোর্ট করোনা নিয়ন্ত্রণে মোদী সরকারের ব্যর্থতা দেখিয়ে কিছু কড়া নির্দেশ দিয়েছে। চেন্নাই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করে প্রশ্ন করেছেন, ‘১৪ মাস কি করছিলেন?’ করোনা চিকিৎসায় রাষ্ট্র পুরোপুরি ব্যর্থ - দ্ব্যর্থহীন ভাষায় একথা জানিয়ে দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চ। ‘দেশ চালাচ্ছে ভগবান’ বলে মন্তব্য করে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি বলেছেন, ‘একে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ বলা হচ্ছে। কিন্তু আসলে এটা সুনামি’। করোনা সুনামির আঘাতে বিপর্যস্ত ভারতীয়দের জীবন। আর এই মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ জুটি।