৫৯ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৮ এপ্রিল, ২০২২ / ২৪ চৈত্র, ১৪২৮
বিপুল উৎসাহ ও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হলো পার্টি কংগ্রেস
শংকর মুখার্জি
বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রেড ভলান্টিয়ারদের অভিবাদন, আতসবাজির সমারোহের মধ্যদিয়ে ৬ এপ্রিল কান্নুরে শুরু হলো সিপিআই(এম)’র ত্রয়োবিংশতিতম কংগ্রেস। এই কংগ্রেস হচ্ছে ই কে নায়নার একাডেমির প্রাঙ্গণে। পার্টি কংগ্রেস স্থলের নামকরণ করা হয়েছে কমরেড ই কে নায়নার নগর । ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দশটায় কংগ্রেসের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে রক্তপতাকা উত্তোলন করেন পার্টির পলিট ব্যুরো’র সদস্য এস আর পিল্লাই। পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, এস আর পিল্লাই সহ পলিট ব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা শহিদ বেদিতে ফুলমালা দিয়ে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন। পতাকা উত্তোলন ও শহিদ বেদিতে মাল্যদানের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এস আর পিল্লাই । কংগ্রেসের উদ্বোধন করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। উদ্বোধনী অধিবেশন ছিল প্রকাশ্য। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। প্রসঙ্গত, এদিন সারা দেশে পার্টি কংগ্রেসে পতাকা উত্তোলনের সময়ধরে পার্টির প্রতিটি শাখা এলাকায় ঠিক সকাল দশটায় রক্তপতাকা উত্তোলন ও শহিদ বেদিতে মাল্যদানের কর্মসূচি পালিত হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনের শুরুতে শহিদ স্মরণে এবং শোকপ্রস্তাব পেশ করেন মানিক সরকার। কংগ্রেসে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ৮১৫ জন প্রতিনিধি ও দর্শক উপস্থিত আছেন।
২৩তম পার্টি কংগ্রেসে রক্তপতাকা উত্তোলন করলেন এস আর পিল্লাই। রয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি।
ত্রয়োবিংশতিতম কংগ্রেসের প্রতিনিধি অধিবেশন চলবে ১০ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত। প্রতিনিধি অধিবেশন শেষে ওইদিন বিকাল ৫টায় কান্নুরের জওহর স্টেডিয়ামে হবে প্রকাশ্য সমাবেশ। প্রকাশ্য সমাবেশ কেন্দ্রের নামকরণ করা হয়েছে কমরেড এ কে গোপালন নগর। প্রকাশ্য সমাবেশের আগে ই কে নায়নার নগর থেকে এ কে গোপালন নগর পর্যন্ত রেড ভলান্টিয়ারদের পদযাত্রা হবে। প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন সীতারাম ইয়েচুরি,প্রকাশ কারাত, এস আর পিল্লাই, পিনারাই বিজয়ন, মানিক সরকার, বৃন্দা কারাত, কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণান এবং এম এ বেবি।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সিপিআই, সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক, বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দল এবং সিপিআই(এম এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা উপস্থিত ছিলেন এবং কংগ্রেসকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস, বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য তাঁদের সাংগঠনিক কাজ থাকার জন্য কংগ্রেসে আসতে পারেননি। তবে প্রত্যেকেই কংগ্রেসের সাফল্য কামনা করে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। বিজেপি-কে প্রতিরোধ করতে বামঐক্যকে আরও জোরদার করার আকাঙ্ক্ষাও প্রকাশ পেয়েছে তাঁদের সেই বার্তায়। উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রতিনিধিদের অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সমাজের বিশিষ্ট জনেদের। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে কংগ্রেস উপস্থিত ছিলেন লেখক টি পদ্মনাভন, বিশপ ডক্টর অ্যালেকস ভাদাক্কুমর্থালা, প্রখ্যাত গীতিকার কাই থাপরাম দামোদরন, অভিনেতা ও পরিচালক মধুপাল। চলচ্চিত্র নেপথ্য সঙ্গীত শিল্পী সায়োনারা ফিলিপ, মিডিয়া এক্সপোনেট এম ভি নিকেশকুমার প্রমুখ।
শহিদ স্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিমান বসু।
প্রকাশ্য সমাবেশ স্থল এ কে গোপালন নগরে বিরাট সমাবেশে ৫ এপ্রিল পতাকা উত্তোলন করেন পিনারাই বিজয়ন। কেরালার উত্তর ও দক্ষিণ থেকে দুটি জাঠা কংগ্রেসের বার্তা নিয়ে দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করে ওইদিনই এ কে গোপালন নগরে পৌঁছায়। রাজ্যের দক্ষিণ থেকে আসা জাঠাটি পার্টির পতাকা এবং উত্তর থেকে আসা জাঠাটি ফ্ল্যাগপোল বহন করে নিয়ে আসে।। পতাকাবহনকারী জাঠা যাত্রা শুরু করে ভায়ালার শহিদদের ভূমি আলাপ্পুঝা থেকে। সেখানে পার্টির রক্তপতাকা জাঠার ক্যাপ্টেন সিপিআই(এম) কেরালা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এম স্বরাজের হাতে তুলে দেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য এম এ বেবি। এই পতাকা বহনকারী জাঠা কান্নুরে পৌঁছনোর পথে এর্নাকুলাম, ত্রিচুর,পালাক্কাড,মালাপ্পুরম এবং কোঝিকোড জেলার বিভিন্ন স্থানে উষ্ণ অভ্যর্থনা গ্রহণ করে। জাঠার এই দীর্ঘপথ পরিক্রমায় বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার স্থানীয় মানুষ, অ্যাথলেটরা এবং শত শত গাড়ি যুক্ত হয়েছিল। এ কে গোপালন নগরে অভ্যর্থনা কমিটির পক্ষ থেকে এই ফ্ল্যাগ গ্রহণ করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কেরালা সরকারের মন্ত্রী এম ভি গোবিন্দন। অন্যদিকে ফ্ল্যাগপোল নিয়ে জাঠা শুরু হয় কেরালার আরেক শহিদভূমি কায়ুর থেকে। কায়ুরে এম ভি গোবিন্দন এই ফ্ল্যাগপোলকে তুলে দেন জাঠার ক্যাপ্টেন পি কে শ্রীমথির হাতে। এ কে গোপালন নগরে এই ফ্ল্যাগপোল পার্টির রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণাণের উপস্থিতিতে জাঠার কাছ থেকে গ্রহণ করেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কে কে শৈলজা।
ত্রয়োদশ পার্টি কংগ্রেসের বার্তা কান্নুরের প্রতিটি পরিবারে পৌঁছে দিতে ১ মার্চ থেকে মিছিল, ছোটো ছোটো সভার মতো প্রচলিত প্রচার কর্মসূচির সাথেই আলোচনাসভা, বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক মেগা কুইচ, শর্ট ড্রামা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিজ্ঞান মেলা, আন্তর্জাতিক বইমেলা, নানা প্রদর্শনী সংগঠিত হয়েছে। এই কর্মসূচিগুলিতে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে ২৯ মার্চ ফ্ল্যাগ ডে এবং ১ এপ্রিল রেড ফ্ল্যাগ ডে পালিত হয়। ২৯ মার্চ কান্নুর জেলার প্রতিটি পার্টি সদস্য, সমর্থকের বাড়িতে এবং পার্টি দপ্তরগুলিতে পতাকা উত্তোলন হয়। ১ এপ্রিল বিকাল ৫টা থেকে ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত কারিভেলুর শহিদ নগর থেকে মাহে চেরুকালায়ি শহিদ গেট (থালাসারি থেকে জওহরঘাট থেকে কান্নুর শহর) পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার জাতীয় সড়কের ধারে হাজার হাজার মানুষ টানা লাল পতাকা ধরে দাঁড়িয়ে এক বিরল নজির তৈরি করেছেন।
সভাপতিমণ্ডলী
কংগ্রেসের প্রতিনিধি অধিবেশন পরিচালনার জন্য সাত জনের সভাপতিমণ্ডলী গঠন করা হয়েছে। সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান মানিক সরকার। অন্যান্য সদস্যরা হলেনঃ কে হেমলতা, পি কে বিজু, অশোক ভট্টাচার্য, নরেশ জামাতিয়া, এম এইচ সেখ এবং ইন্দরজিত সিং। মানিক সরকার ছাড়া বিদায়ী পলিট ব্যুরোর বাকি সদস্যদের নিয়ে কংগ্রেসের স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তাব কমিটি, পরিচিতি কমিটি এবং কার্যবিবরণী কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রস্তাব কমিটিতে রয়েছেন সাতজন। এই কমিটির চেয়ারম্যান নীলোৎপল বসু। পরিচিতি কমিটি পাঁচ জনকে নিয়ে গঠিত হয়েছে। এই কমিটির চেয়ারম্যান শ্রীদীপ ভট্টাচার্য।