৫৯ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৮ এপ্রিল, ২০২২ / ২৪ চৈত্র, ১৪২৮
শুধুমাত্র আপসহীন ধর্মনিরপেক্ষতাই হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতাকে পরাস্ত করতে সক্ষম
২৩তম পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধনী ভাষণে সীতারাম ইয়েচুরি
পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধনী ভাষণ দিচ্ছেন সীতারাম ইয়েচুরি। মঞ্চে বিমান বসু সহ পলিট ব্যুরোর সদস্যরা।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সিপিআই(এম)’র ত্রয়োবিংশতিতম কংগ্রেসের উদ্বোধনী ভাষণে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আমন্ত্রিত অতিথি সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা সহ সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধি ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের স্বাগত জানান। আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন দলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য অনিবার্য কারণে সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে না পারলেও তাঁরা সকলেই ২৩তম কংগ্রেসের সাফল্য কামনা করে অভিনন্দন বার্তা পাঠান। সীতারাম ইয়েচুরি তাঁদের শুভেচ্ছা জানান।
ইয়েচুরি বলেন, বর্তমানে দেশের শ্রমজীবী মানুষ, ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং সাংবিধানিক শাসন যে ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, তার মোকাবিলার জন্য সমস্ত বামপন্থী দলগুলির ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাম ঐক্যকে শক্তিশালী করা গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হয়ে দেখা দিয়েছে।
প্রতিনিধি এবং সম্মানীয় অতিথিদের সম্বোধন করে ইয়েচুরি বলেন, বহু সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধারক-বাহক ঐতিহাসিক কান্নুরে এই সম্মেলনের জন্য আমরা মিলিত হয়েছি। কান্নুর হলো কেরালার কমিউনিস্ট আন্দোলনের ধাত্রীভূমি।
তিনি বলেন, মানুষেরা বিভিন্ন মন্দিরে আশীর্বাদ পেতে তীর্থযাত্রা করেন। কিন্তু একটি বিপ্লবী তীর্থযাত্রা কখনোই সম্পূর্ণ হতে পারে না যদি বীর কায়ুর এবং কারিভেল্লুর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করা হয়। এই কান্নুর থেকেই আমরা বিপ্লবী আন্দোলনের শক্তি অর্জন করতে অনুপ্রাণিত হব।
তিনি বলেন, এই কান্নুরেরই পিনারাই গ্রামে কেরালায় প্রথম কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলন হয়েছিল। পি কৃষ্ণ পিল্লাই, ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ, এ কে গোপালনের মতো কিংবদন্তী নেতা সহ আরও অনেকেই ওই সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হিসাবে কমরেড পি কৃষ্ণ পিল্লাই এই কান্নুরে বহু নির্যাতনের মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট আন্দোলন বিস্তারের কাজ শুরু করেছিলেন। পার্টি নিষিদ্ধ থাকাকালে তিনি গোপনে থেকেই পার্টির নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। এই সকল আত্মউৎসর্গীকৃত কমরেডদের বিপ্লবী সংগ্রাম কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভিত্তিকে শক্ত করেছে এবং কেরালার প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এইসব কমিউনিস্ট নেতার দূরদর্শিতা এবং আত্মোৎসর্গীকৃত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কেরালায় কমিউনিস্ট আন্দোলন জনগণের বিপুল আস্থা অর্জন করেছে এবং ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে কেরালাকে অদম্য প্রহরী করে তুলেছে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত পলিট ব্যুরোর সদস্যরা।
কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি কান্নুরের বিপ্লবী ঐতিহ্যকে স্মরণ করে বলেন, বর্তমানে দেশ এবং জনগণ যে পরিস্থিতি এবং দুবির্ষহ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে কান্নুরে ২৩তম পার্টি কংগ্রেস অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কান্নুরের জনগণ যে উৎসাহ-উদ্দীপনায় এই কংগ্রেসকে সফল করতে উদ্যোগী হয়েছেন, ইয়েচুরি তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিগত ২২তম কংগ্রেসের পর চার বছরের মধ্যে বিগত দু’বছর গোটা বিশ্ব কোভিড-১৯ অতিমারীর কবলে পড়েছিল। এই অতিমারী লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে। তিনি বলেন, অতিমারীর আগে থেকেই বিশ্ব অর্থনীতি ও তার সাথে ভারতীয় অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হতে শুরু করেছিল এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি মন্দায় পর্যবসিত হয়েছিল। অতিমারী সেই পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছিল। সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য পুঁজিবাদের যে লালসা এই অতিমারীকালে তা আরও বীভৎস রূপ নিয়েছিল। জনগণের সর্বজনীন স্বাস্থ্য রক্ষায় অবহেলা চূড়ান্তভাবে দেখা দেয়। বিপরীত দিকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি এই অতিমারীর মোকাবিলা করে তাদের অর্থনীতিকে যে আবার বিকাশশীল করে তুলেছে ইয়েচুরি সে কথা উল্লেখ করেন। ভারতে কেরালার এলডিএফ সরকার যেভাবে এই অতিমারী পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে, তা দেশে এবং বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। কোভিডের তীব্র আক্রমণ এবং অর্থনৈতিক মন্দার ফলে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রবঞ্চনা এক ভয়ংকর দূরবস্থার মধ্যে মানুষকে ফেলেছে। একই সঙ্গে শ্রমজীবী জনগণের ওপর শোষণের মাত্রা তীব্র হয়েছে। এই সময়কালে বিশ্বের অতি ধনী কিছু মানুষের সম্পদ ২০২০ সালে নতুন উচ্চতায় উঠে ১০.২ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। ২০২১ সালে বিশ্বের প্রথম ১০ জন ধনীর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪১৩ বিলিয়ন ডলার। ভারতের দশজন সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি দেশের সম্পদের ৫৭ শতাংশের মালিক। এবং সবচেয়ে নিচের অর্ধেক মানুষ জাতীয় সম্পদের মাত্র ১৩ শতাংশ ভোগ করতে পারেন।
সীতারাম ইয়েচুরি দেশের রাজনীতি যেভাবে দক্ষিণপন্থায় মোড় নিয়েছে সেকথা উল্লেখ করে বলেন, সর্বোচ্চ মুনাফাকামী দেউলিয়া নয়া উদারবাদী নীতি অনুসরণ করে চলার তাগিদে সরকারগুলির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের জন্য শাসক শ্রেণিগুলি অনেক দেশেই দক্ষিণপন্থী রাজনীতি অনুসরণ করছে। এই দক্ষিণপন্থী রাজনীতি নানাভাবে সাধারণ মানুষের আবেগকে উসকে দিয়ে বিভেদকামী প্রচার চালিয়ে এবং জাতিবাদ, ধর্মীয় সংকীর্ণতাবাদ, মৌলবাদ ইত্যাদির আশ্রয় নিয়ে শ্রমজীবী জনগণের গড়ে ওঠা ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকে বিপর্যস্ত করছে। ভারতের ক্ষেত্রে এই দক্ষিণপন্থী রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নিচ্ছে। তিনি বলেন, এতদসত্ত্বেও বিশ্বের দেশে দেশে বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে দক্ষিণপন্থী রাজনীতি ক্রমশই বেশি বেশি করে প্রতিরোধের সামনে পড়ছে। লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বামপন্থী ও অন্যান্য প্রগতিশীল শক্তিসমূহ নির্বাচনে বিজয় অর্জন করছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রতিবাদ এবং সংগ্রাম তীব্র হচ্ছে।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কীভাবে বিশ্বজোড়া আধিপত্য কায়েম করতে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে, সেকথা উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেন, কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তারে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। চীনকে তারা বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে রণকৌশল স্থির করছে। নিজেদের এই আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার মিত্র দেশগুলিকেও সমবেত করছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে ইয়েচুরি বলেন এই যুদ্ধের আজ ৪২ তম দিন। বাস্তবে এই যুদ্ধ হলো রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র / ন্যাটোর মধ্যে। ন্যাটো ক্রমাগত পূর্ব দিকে সম্প্রসারণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি চলে এসেছে। রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটো / মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১ লক্ষ ৭৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। এটাই হলো এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা চায় ইউক্রেনকে ন্যাটো সদস্যভুক্ত করতে। এরফলেই যুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের এখনই অবসান হওয়া দরকার।
ইয়েচুরি বলেন, এই যুদ্ধকালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জে উত্থাপিত প্রস্তাবগুলি ভারত বিরোধিতা করছে। এই ঘটনাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, মোদী সরকার এতদিন যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অনুগত মিত্র হয়ে ভারতকে চালিত করতে চাইছিল, তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ভারতের কর্তব্য হলো নিজের স্বার্থরক্ষায় স্বাধীন বিদেশনীতি অনুসরণ করে চলা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বাধীন ‘কোয়াড’-এর থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনা।
সীতারাম ইয়েচুরি দেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, বিগত চারবছর বিশেষ করে ২০১৯-এর নির্বাচনে আবার বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠা হবার পরে লক্ষ করা গেছে, মোদী সরকার ফ্যাসিস্তধর্মী আরএসএস’র হিন্দুত্ব কর্মসূচিকে আগ্রাসীভাবে ব্যবহার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আরএসএস’র এই ফ্যাসিস্তপন্থী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বহুমুখী আক্রমণ চালানো হচ্ছে। জঘন্য নয়া-উদারবাদী সংস্কারসমূহ অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক করপোরেট চক্রকে শক্তিশালী করা হচ্ছে, একইসাথে নির্জজ্জভাবে ধান্দার পুঁজিবাদকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। জাতীয় সম্পদের অবাধ লুট, রাজনৈতিক দুর্নীতিকে আইনসঙ্গত করা এবং পুরোপুরিভাবে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করা হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদি সরকারের কর্মসূচি।
ভারতীয় সংবিধানকে কীভাবে খর্ব করা হচ্ছে, সে কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ইয়েচুরি বলেন, ভারতীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে খর্ব করার লক্ষ্য নিয়েই মোদী সরকার পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয়বাদ, সামাজিক ন্যায় এবং অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব - আমাদের ভারতীয় সংবিধানের এই চারটি মৌলিক স্তম্ভকে প্রচণ্ডভাবে খর্ব করার অপচেষ্টা চলছে। ফ্যাসিস্তপন্থী আরএসএস’র হিন্দুত্ব কর্মসূচি অনুসরণ করার জন্যই তাদের দরকার হলো ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় চরিত্রকে বাতিল করে দিয়ে একটি একীভূত রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণ করা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংসদ, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, সিবিআই, ইডি ইত্যাদি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলির কর্তৃত্ব নস্যাৎ করে দিয়ে সেগুলির স্বাধীন ভূমিকা খর্ব করা হচ্ছে।
সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর বক্তব্যে বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের কষ্ট লাঘব করার কোনো চেষ্টা তো করছেই না, উলটে জনগণের ওপর ক্রমাগত অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে চলেছে। প্রতিদিন যেভাবে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছে, তার ফলে মুদ্রাস্ফীতির হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কর্মহীনতা, দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা জনজীবনকে ধ্বংস করছে।
তিনি বলেন আরএসএস-বিজেপি জনগণের মধ্যে হিন্দুত্ব পরিচিতির ভাষ্য প্রচারে সফল হয়েছে। ঘৃণা, বিষ এবং হিংসা ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে তারা তীক্ষ্ণ করে তুলছে। এইভাবে তারা ভারতীয় সমাজের মেরুকরণ ঘটাচ্ছে। রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী সমাবেশ ঘটাতে আরএসএস-বিজেপি এই মেরুকরণকে তীব্র করছে।
সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, এই পরিস্থিতিতে উন্নত জীবনের জন্য ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষায় এবং ভারতীয় সংবিধানকে রক্ষার জন্য বিজেপি-কে বিচ্ছিন্ন করা এবং পরাস্ত করা আমাদের অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধুমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে আরএসএস-বিজেপি-কে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না, রাজনৈতিক-মতাদর্শগত-সাংস্কৃতিক এবং সমাজ জীবনে সর্বত্রই বিজেপি-কে পরাস্ত করার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। এই প্রসঙ্গেই তিনি সিপিআই (এম)’র স্বাধীন শক্তি বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সক্ষমতা অর্জনের ওপর জোর দেন। এর ভিত্তিতেই শ্রেণি এবং গণসংগ্রামগুলিকে তীক্ষ্ণ করে তুলে বামপন্থী শক্তিগুলিকে শক্তিশালী করার কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ভারতের শাসকশ্রেণিগুলির অনুসৃত নীতির বিরুদ্ধে বিকল্প কর্মসূচি তৈরি করে তার ভিত্তিতেই বাম এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তিনি একথাও বলেন, বিজেপি-কে পরাস্ত করার জন্য হিন্দুত্ব সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির যথাসম্ভব বৃহত্তর ফ্রন্ট আমাদের গড়ে তুলতে হবে। বিজেপি-কে পরাস্ত করার জন্য তিনি সমস্ত বাম ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ বলে ঘোষিত সমস্ত রাজনৈতিক দলের কর্তব্য হলো এই পরিস্থিতিতে তাদের দেশপ্রেমিক কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসা। কংগ্রেস পার্টি সহ অন্যান্য কিছু আঞ্চলিক দলের প্রতি তাঁর আবেদন হলো - তারা যেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষায় তাদের সুদৃঢ় অবস্থান নির্ণয় করেন।
সীতারাম ইয়েচুরি সতর্ক করে বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় ওই সব দলের দোদুল্যমান ও আপসকামী মনোভাব দলত্যাগ ঘটাতে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলিকে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, আপসহীন ধর্মনিরপেক্ষতাই শুধুমাত্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতাকে পরাস্ত করতে সক্ষম।
সীতারাম ইয়েচুরি তাঁর বক্তব্যের সমাপ্তিতে বলেন, কেরালায় সিপিআই (এম) এবং বাম-গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট আপসহীনভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে রেখেছে। জাত, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের প্রতি সাম্যের নীতি অনুসরণ করে চলেছে, তারই সঙ্গে নয়া উদারবাদী কর্মসূচির বিকল্প হিসাবে জনমুখী নীতি সমূহ রূপায়ণ করে চলেছে। মানবোন্নয়নে কেরালার সূচক বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করেছে।
পরিশেষে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, একটি শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার জন্য, শক্তিশালী বাম ঐক্য গড়ে তোলার জন্য এবং বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলার জন্য সিপিআই (এম) সর্বতোভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। সমস্ত দেশপ্রেমিক ভারতীয় জনগণের প্রতি সহযোগিতার আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র রক্ষা এবং বৃহত্তর ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিসমূহের ফ্রন্ট গড়ে তুলে বিকল্প জনমুখী নীতি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এগিয়ে আসুন।