E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৮ এপ্রিল, ২০২২ / ২৪ চৈত্র, ১৪২৮

সুদীপ্ত গুপ্ত সহ ছাত্র শহিদ স্মরণে ছাত্র সমাবেশ

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথ


সন্তানসম শহিদ সুদীপ্তর প্রতিকৃতিতে রাধিকা ভেমুলার স্নেহস্পর্শ।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রায় দশ বছর পেরিয়ে গেলেও তৃণমূলী জমানায় কলকাতার বুকে রাষ্ট্রীয় খুনের অন্যতম কালো অধ্যায় পুলিশ হেফাজতে এসএফআই নেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর বিরুদ্ধে আজও একইরকম প্রতিবাদ এবং ক্ষোভে সোচ্চার এরাজ্যের ছাত্র সমাজ। ৯ বছর ন্যায় বিচারের দাবিতে লড়াই করছে এসএফআই সহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল সরকারের অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নেমে প্রকাশ্য রাজপথেই খুন হতে হয়েছিল ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তকে। ৩ এপ্রিল রাজ্যের বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলির ডাকে কলকাতায় আয়োজিত শহিদ স্মরণের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সেই প্রতিবাদ জারি থাকল বরাবরের মতো।

শহিদ স্মরণ সমাবেশের এই অনুষ্ঠান বানচাল করে দেবার মরিয়া চেষ্টা মমতা ব্যানার্জির পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হলেও দমানো যায়নি ছাত্রদের। কলকাতার একটি হলে অনুষ্ঠান করার অনুমতি প্রদান শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়। পুলিশি চক্রান্তের আঁচ পেয়ে দ্রুত সভাস্থল পরিবর্তন করে শ্রমিক ভবনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বিপুল সংখ্যায় এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন। হলের একাংশের চেয়ার সরিয়ে দিয়েও স্থান সঙ্কুলান করা যায়নি। ছাত্রদের জমায়েত মাদার হাউস সংলগ্ন এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। এদিন ছাত্রসংগঠনগুলির আহ্বানে সাড়া দিয়ে শহিদ রোহিত ভেমুলার মা রাধিকা ভেমুলা ও শহিদ আনিস খানের দাদা সাবির খানও এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন। ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। ছাত্রদের লড়াই, সংগ্রামকে তাঁরা কুর্নিশ জানানোর পাশাপাশি তাদের এই লড়াইতে পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন।

শহিদ স্মরণ সমাবেশের শুরুতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর সময় শহিদ রোহিত ভেমুলার মা রাধিকা ভেমুলার হাত আদরের ভঙ্গিতে সন্তানসম সুদীপ্তের প্রতিকৃতির চিবুক ছুঁয়ে যায়। উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রীদের এই মর্মস্পর্শী ঘটনা আবেগ বিহ্বল করে তোলে।

এই সমাবেশে ছিলেন হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রথম মহিলা সভাপতি শিরিষা বেফুর, এসএফআই’র সর্বভারতীয় নেত্রী দীপ্সিতা ধর সহ এসএফআই, এআইএসএফ, পিএসইউ, এআইএসবি প্রমুখ বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলির নেতাকর্মীরা। সমাবেশ পরিচালনা করেন এসএফআই’র রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমান।

এরাজ্যে সুদীপ্তকে খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি তৃণমূল। স্বৈরাচারী তৃণমূলের হাতে খুন হয়েছেন সইফুদ্দিন মোল্লা, মইদুল মিদ্দা, আনিস খান সহ আরও বহু ছাত্র-যুব আন্দোলনের কর্মী। একই সঙ্গে আরএসএস-বিজেপি’র সরাসরি আক্রমণ ও অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে দেশের অন্য প্রান্তের ছাত্রদের। ২০১৬ সালে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের লড়াকু ছাত্রনেতা রোহিত ভেমুলাও প্রাণ দিয়েছিলেন। এই সব হত্যার ন্যায় বিচার আজও অধরা। এই সমাবেশ কেন এই দেরি সে প্রশ্নও তুলেছে।

সমাবেশে শহিদ রোহিত ভেমুলার মা বলেন, আজ সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর কথা ভেবে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার ছেলের মতো ওকেও খুন করা হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে মিছিলে গিয়ে খুন হতে হয়েছিল সুদীপ্ত গুপ্তকে। ঠিক তেমনই ক্যাম্পাসে ছাত্রদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে অংশ নেওয়ায় উচ্চবর্ণের জাতপাতের রাজনীতির বলি হতে হয়েছে আমার ছেলে রোহিতকেও। বর্তমানে বিজেপি-আরএসএস জাত-ধর্মের জিগির তুলে মানুষকে ভাগ করছে। মানুষের ওপর হামলা আক্রমণ চালাচ্ছে। খুন করছে। কেন্দ্রের শাসকদল, যেভাবে ছাত্রদের কথা বলার অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, নির্বিচারে খুন করছে, ঠিক একই কাজ করে চলছে এরাজ্যের সরকারও। ব্যাপক অংশের মানুষকে শামিল করে ধারাবাহিক সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ন্যায় বিচার পাবার এই লড়াইয়ে আমিও একজন শরিক।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা শহিদ আনিস খানের দাদা সাবির খান এদিন বলেন, ‘‘তৃণমূল আমাদের অনেক প্রলোভন দেখাচ্ছে। ভয় দেখানোর চেষ্টাও করছে। কিন্তু, আমরা ওই প্রলোভনের ফাঁদে পড়ব না। আমরা বিক্রি হবো না। আর আপনারা যাঁরা আনিসের জন্য লড়ছেন তাদের মাথা আমরা কোনও মতেই নত হতে দেব না।’’

সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এদিন সমাবেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যারা নিজের শ্রম দিয়ে রাষ্ট্রের বুনিয়াদি ভিতকে শক্ত করে চলেছে, মোদী সরকার তাঁদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করছে। জীবন-জীবিকার প্রশ্নে পিষে মারছে। কিন্তু রুখে দাঁড়াচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন। এরাজ্যের স্বৈরাচারী তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেও দিকে দিকে জনরোষ আছড়ে পড়ছে। পালটা প্রতিরোধ, বিক্ষোভের মুখেই পড়তে হয়, তা সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন ঘটনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এরাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, সর্বোপরি ছাত্র, যুবরা এই স্বৈরাচারী তৃণমূলের সরকারকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। এই লড়াইকে আরও এগিয়ে যেতে হবে।

এদিন এসএফআই’র রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, আজ অস্থি দিয়ে বজ্র বাঁধার দিন। শপথ নেবার দিন। যে গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে সুদীপ্ত গুপ্ত, আনিস খান খুন হন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খুন হন রোহিত ভেমুলা সেই সব কথা বলার অধিকার সাংবিধানিক অধিকার। যা কেড়ে নিতে চায় তৃণমূল-বিজেপি। আজকের সভা তার প্রতিবাদে একত্রিত হবার সভাই শুধু নয় বার্তা নিয়ে যাওয়ার সভা। বিকল্পের কথা ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে পৌঁছে দেবার শপথ নিয়ে আমাদের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। গণতন্ত্রের দাবিতে লড়াইয়ে থাকতে হবে। হলের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনের অসহযোগিতার প্রসঙ্গে সমাবেশে সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূল ভয় পেয়েছে। ছাত্রদের লড়াকু মেজাজ যেভাবে রাজ্যের দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে তৃণমূল আতঙ্কিত। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। আমরা দায়িত্বশীল ছাত্র সংগঠন হিসেবে এ নিয়ে পথে নামিনি। কিন্তু এই ন্যক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।