E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৮ এপ্রিল, ২০২২ / ২৪ চৈত্র, ১৪২৮

রুখতে হবে আরএসএস-বিজেপি’র করপোরেট তোষণ ও সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি

সিপিআই(এম) আন্দামান ও নিকোবর রাজ্য ১১তম সম্মেলনের আহ্বান


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ২৭ মার্চ আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে দক্ষিণপন্থী আরএসএস-বিজেপি’র করপোরেট তোষণের মধ্যদিয়ে সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি চাপিয়ে দেবার নীতি রুখে দেবার আহ্বান জানিয়ে সিপিআই(এম) রাজ্য ১১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো স্থানীয় বাঙালিদের ক্লাব অতুল স্মৃতি সমিতি প্রাঙ্গণে। সম্মেলনের পতাকা উত্তোলন করেন রাজ্য সাংগঠনিক কমিটির সম্পাদক কে জি দাস। এরপর শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রতিনিধিরা। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন টি এস শ্রীকুমার।

প্রসঙ্গত, দেশ এবং বিদেশের মানুষের কাছে পর্যটন স্থল হিসেবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অন্যতম আকর্ষণ হলেও গত শতাব্দীর ছয়ের দশকের শুরু থেকেই বামপন্থী শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম উর্বর ভূমি হিসেবে এই দ্বীপপুঞ্জ পরিচিতি পেতে শুরু করে। ১৯৮৩ সালে পোর্ট ব্লেয়ার-এ এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দ্বীপপুঞ্জে সিপিআই(এম)’র ইউনিট গঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কিংবদন্তি নেতা কমরেড হরকিষেন সিং সুরজিৎ। এরপর থেকেই কংগ্রেস বিরোধী শক্তির মূল ভরকেন্দ্র হিসেবে দ্বীপপুঞ্জে সিপিআই(এম)’র প্রভাব-পরিচিতি আরও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনের শুরুতে ডি লক্ষণ রাও, বি চন্দ্রচূড় এবং পি ব্যানার্জিকে নিয়ে সভাপতিমণ্ডলী গঠিত হয়। এরপর স্বাগত ভাষণ দেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ডি আয়াপ্পান। তিনি দেশজুড়ে চলা বিভিন্ন রাজ্যের পার্টি সম্মেলনের উল্লেখ করে দ্বীপপুঞ্জের পরিস্থিতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করে পলিট ব্যুরো সদস্য জি রামকৃষ্ণান বলেন, দুনিয়াজুড়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতি দক্ষিণদিকে মোড় নেওয়া সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি দেশে, মূলত লাতিন আমেরিকার দেশগুলি শাসক হিসেবে বেছে নিচ্ছে বামপন্থীদের। বামপন্থী সরকার গড়ে উঠেছে ওই দেশগুলিতে যা উল্লেখযোগ্য। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ সম্পর্কে তিনি বলেন, যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। এর পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনকে ন্যাটো গোষ্ঠীভুক্ত করার চেষ্টার প্রসঙ্গ, যা রাশিয়ার কাছে হুমকি স্বরূপ।

দেশের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ রুখতে বিজেপি-কে ক্ষমতা থেকে সরানোর ডাক দিয়ে সাভারকর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রামকৃষ্ণান বলেন, আজ গান্ধীজির ছবির সঙ্গে সাভারকরের ছবি পাশাপাশি টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে। সাভারকরকে একজন স্বাধীনতা যোদ্ধা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলেও বাস্তব হলো, তিনি ব্রিটিশ হুকুমতের কাছে ক্ষমা চেয়ে জেল থেকে বেরিয়েছিলেন। ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও আরএসএস কখনো দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়নি।

তিনি দেশের পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, সরকারি দপ্তরগুলি প্রথমে করপোরেটকরণ করা হচ্ছে, তারপর সেগুলি ব্যক্তিমালিকানায় তুলে দেওয়া হচ্ছে। দেশের সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বেচে দেওয়া হচ্ছে কপোরেটদের হাতে। তিনি আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নির্বাচিত বিধানসভা গড়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এখানে কোনো আধিকারিক দ্বারা পরিচালিত সরকার নয়, গণতান্ত্রিকভাবে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার গড়তে হবে। এই দাবি নিয়ে লড়ছে সিপিআই(এম)। যতদিন না বিধানসভা তৈরি হচ্ছে, ততদিন পুরনো প্রদেশ কাউন্সিলকে পুনর্গঠন করতে হবে, তার হাতে আরও ক্ষমতা দিতে হবে। তিনি বলেন, এখানকার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মীরাও এই দ্বীপপুঞ্জের মানুষকে এখানকার বিভিন্ন ইস্যুকে জোরদারভাবে তুলে ধরে সমাধানের স্বার্থে সিপিআই(এম)-কে সমর্থন করার কথা বলছেন।

সম্মেলনে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক খসড়া প্রস্তাব পেশ করেন বিদায়ী সম্পাদক কে জি দাস। আয়-ব্যয়ের প্রস্তাব পেশ করেন পি ব্যানার্জি। খসড়া রিপোর্টের ওপর ১২ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন। তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন সমস্যা এবং সমস্যার প্রেক্ষিতে আত্মসমালোচনা এবং পার্টির ভূমিকার কথা। কে জি দাসের জবাবি ভাষণের পর সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয় রিপোর্ট।

সম্মেলনে তিন জন মহিলা সহ ৬৩ জন প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। প্রতিনিধিদের অধিকাংশেরই বয়স ৩১ থেকে ৪০-র মধ্যে। পেশাগতভাবে কৃষক ৫ জন, বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ৭ জন, ছোটো দোকানদার, শ্রমিক কর্মচারী সহ অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্তরাও। রাজনৈতিক কারণে পুলিশের দ্বারা অত্যাচারিত - এমন প্রতিনিধির সংখ্যা ২।

সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতিক্রমে ১৫ সদস্যের রাজ্য সাংগঠনিক কমিটি এবং সাত সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়। নতুন কমিটিতে ডি আয়াপ্পান সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।