E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২১শ সংখ্যা / ৮ জানুয়ারি ২০২১ / ২৩ পৌষ ১৪২৭

কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে উত্তর দিনাজপুর জেলায় প্রতিবাদ আন্দোলন জোরালো হচ্ছে


সংবাদদাতাঃ প্রিয়রঞ্জন পাল

চলমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে এবং জন‍‌জীবনের স্বার্থের বিষয়গুলি নিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার সর্বত্রই সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী দলগুলির নেতৃত্বে সভা সমাবেশ মিছিল ক্রমশই গতি‍‌বেগ সঞ্চয় করছে। ছাত্র-যুব-মহিলা প্রভৃতি বামপন্থী গণ সংগঠনের উদ্যোগেও নিজ নিজ ক্ষেত্রের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনও সাধারণ মানুষের মনে সাহস ও উদ্যম তৈরি করছে।

ডিসেম্বর মাস জুড়েই জেলায় বিজেপি এবং তৃণমূল দল ও সরকারের জনবিরোধী ও স্বৈরতান্ত্রিক নীতি, দুর্নীতি ইত্যাদির বিরুদ্ধে মিছিলে মিটিংয়ে মানুষ সোচ্চার হ‍‌য়েছেন। মানুষের এই প্রতিবাদ আন্দোলন নতুন বছরে আরও সংগঠিত, আরও জোরালো হয়ে উঠবে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।

হেমতাবাদ বিধানসভা কেন্দ্রের মহারাজা মোড়ে রায়গঞ্জ উত্তর লোকাল কমিটির আহ্বানে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৩ই ডিসেম্বর। সভার মূল বক্তা ছিলেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ও প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তিনি কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী কালাকানুন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের লড়াই আন্দোলনের কথা তুলে ধরে এখানেও কৃষকদের জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী আনোয়ারুল হকও বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন কৃষক নেতা সজল লৌহ। স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে আয়োজিত সভায় জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রাক্তন ও বর্তমান সদস্যদের মেলবন্ধনে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন, উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটি উদ্‌যাপন করলো সংগঠনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উৎসব। জেলা সদর রায়গঞ্জ ছাড়াও এই উপলক্ষে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে ইসলামপুর, ডালখোলা ও কালিয়াগঞ্জে। ২৭ ডিসেম্বর রায়গঞ্জের ইনস্টিটিউট মঞ্চে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে প্রাক্তন ছাত্রনেতৃত্বকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সংগঠনের ইতিহাস ও বর্তমান সময়ে কর্তব্য বিষয়ে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সোমনাথ ভট্টাচার্য। সংগঠনের নেত্রী গীতশ্রী সরকার ও ঋতুপর্ণা মিত্র সভায় উপস্থিত ছিলেন। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও জাতীয় শিক্ষানীতির বিপদ বক্তারা বিশদে তুলে ধরেন তাঁদের বক্তৃতায়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা সভাপতি শুভঙ্কর কর্মকার ও স্বাগত ভাষণ দেন সম্পাদক গোপাল দাস।

উত্তর দিনাজপুর জেলা জুড়ে ইউনিট ও লোকাল স্তরের সম্মেলন চলছে ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের, রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৬০টিরও বেশি ইউনিট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং লোকাল সম্মেলন হয়েছে চারটি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সব থেকে উল্লেখযোগ্য সমাবেশটি হয়েছে চোপড়া দক্ষিণ লোকাল কমিটির সম্মেলনে, লালবাজারে। এই সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম ও সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র। কেন্দ্র ও রাজ্যের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। চোপড়া উত্তর লোকাল কমিটির প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় ভইষপিঠায়। দীর্ঘ দশ বৎসর পর এই এলাকায় বামপন্থী কোনও সংগঠনের পক্ষে কোনো প্রকাশ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হলো। সমাবেশে বন্ধ চাবাগান খোলার পক্ষে নেতৃবৃন্দ জোরালো সওয়াল করেন।

লক ডাউন-পরবর্তী অর্থনৈতিক দুরবস্থার শিকার হওয়া শ্রমজীবী মানুষকে কিছুটা সুরাহা দিতে রায়গঞ্জের ১৩নং ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট শাখা কমিটির উদ্যোগে চালু হয়েছিল রায়গঞ্জ শ্রমজীবী ক্যান্টিন। গত ৩ জানুয়ারি ছিল এই ক্যান্টিনের ১২৫তম দিন। এই উপলক্ষে সহায়তাকারীদের ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটি সুসজ্জিত মিছিল পার্টির এরিয়া কমিটির দপ্তর থেকে শহর পরিক্রমা শেষে মণি মাস্টার স্মৃতি দপ্তরের ক্যান্টিনে আসে এবং সেখানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা সম্পাদক অপূর্ব পাল, এরিয়া কমিটির সম্পাদক তীর্থ দাস, ক্যান্টিন সম্পাদক গৌতম দত্ত প্রমুখ। আয়-ব্যয়ের হিসেব পেশ করেন ক্যান্টিন কোষাধ্যক্ষ মানবেন্দ্র সরকার। সভায় বক্তারা কেন্দ্র ও রাজ্যের জনবিরোধী নীতির বিপদ উল্লেখ করে সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে শামিল হবার আহ্বান জানান। এদিনের সভায় কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে রায়গঞ্জ শ্রমজীবী ক্যান্টিনের তরফে সারা ভারত কৃষক সভার তহবিলে ১০ হাজার টাকা সাহায্য করা হয়।