৫৯ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৮ জুলাই, ২০২২ / ২৩ আষাঢ়, ১৪২৯
পঞ্চায়েতকে উদ্ধার করে মানুষের হাতে ফেরাতে সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির আহ্বান
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতগুলিতে শাসকদলের নেতৃত্বে লুঠ চলছে। গ্রামের মানুষ একশো দিনের কাজ পাচ্ছে না। কৃষকের ফসলের দাম নেই, বেকারের কাজ নেই। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামবাসীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গঠনের মধ্যদিয়ে লুটেরাদের হাত থেকে পঞ্চায়েতকে গরিব মানুষের হাতে ফেরাতে হবে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। ৬ জুন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির বৈঠক থেকে এই আহ্বান ধ্বনিত হয়। রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এখন গ্রামের মানুষ কাজ পাচ্ছেন না। বামপন্থীদের দাবিতে প্রথম ইউপিএ সরকার ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু করে। তৃণমূল নেতারা কাজ পাইয়ে দেবার নাম করে নিয়োগের জন্য টাকা তুলেছে। চলছে বেলাগাম চুরি। বিজেপি তৃণমূলের কাগুজে বিরোধিতা করে, তাই মানুষের স্বার্থে লড়াইতে বামপন্থীদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, পঞ্চায়েতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্লকে এবং জেলা স্তরে গ্রামের মানুষকে নিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করতে আমরা মানুষের কাছে যাব, তাঁদের কাছ থেকে রসদ সংগ্রহ করে লড়াই সংগঠিত করবো। তৃণমূল এবং বিজেপি’র কোনো ধর্মীয় মেরুকরণকে সফল হতে দেব না।
নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের পার্টির ‘পাহারায় পাবলিক’ কর্মসূচিতে অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলি নিয়ে আমরা আদালতে যাব। নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা যেসব খণ্ড খণ্ড আন্দোলন করছেন সেগুলিকে সংযুক্ত করে বৃহত্তর আন্দোলন করা হবে।
ফরাক্কায় আইন না মেনে জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যেভাবে আম্বানি আদানিদের স্বার্থে গ্রামের মানুষের অধিকার হরণ করছে তার প্রতিবাদ করে রাজ্য সম্পাদক বলেন, বিজেপি সরকার আদিবাসীদের পুড়িয়ে মারছে, বুলডোজার দিয়ে তাঁদের জমি থেকে উচ্ছেদ করছে। এরাজ্যে তৃণমূল সরকার জমি অধিগ্রহণ আইন অনুসারে জমি না নিয়ে জমি মাফিয়াদের সাহায্যে জমি হাতিয়ে নিচ্ছে। ভাঙরে, ফরাক্কায়, দেউচায় তাই হচ্ছে। আইনের বদলে এভাবে জমি নিলে তার দায় জেলাশাসকদের নিতে হবে। আমরা জোর করে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে গ্রামের মানুষের আন্দোলনের পাশে থাকবো, সংহতি জানিয়ে সারা রাজ্যে চোখে চোখ রেখে আন্দোলন করব।
সাংবাদিক মহম্মদ জুবেইর থেকে তিস্তা শীতলবাদ সহ নাগরিক অধিকারের পক্ষে সংগ্রামরতদের গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহম্মদ সেলিম বলেন, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের সমন্ব্য়বাদী ধারণাকে অস্বীকার করতে ইতিহাস মুছে দেওয়া হচ্ছে। অসত্যের বাজারে মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে বিজেপি। যারা সত্য প্রকাশ করছেন, মানুষের অধিকারের কথা বলছেন, তাঁদের আক্রমণ করা হচ্ছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এটা দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে বড়ো বিপদ। অসীমানন্দকে বাংলায় পাঠানো হয়েছে হিন্দু সংহতির দায়িত্ব দিয়ে। এক হাতে তালি বাজে না, হিন্দু এবং মুসলিম দুই দিকেই এভাবে সন্ত্রাসবাদী তৈরি করা হচ্ছে যাতে ধর্মীয় মেরুকরণে উসকানি দেওয়া যায়।
মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, আমরা চাই মুখ্যমন্ত্রী নিরাপদে থাকুন, তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে যখন ল্যান্ডমাইনে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল তখন মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, মাওফাও কিছু নেই। জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের হাতে শহিদ পরিবারগুলো আজও বিচার পায়নি, হত্যাকারীদের সরকার সিভিকে চাকরি দিয়েছে। অপর একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রান্নার গ্যাস সহ জিনিসপত্রের দাম যখন আকাশে, তখন মানুষকে ধর্ম নিয়ে চর্চায় আটকে রাখতে বিভিন্ন বিষয় সামনে আনা হচ্ছে।
সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটিতে বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রবীণ তিন নেতা বিমান বসু, মৃদুল দে এবং অশোক ভট্টাচার্যকে। পার্টির রাজ্য কমিটির দু’দিনের অধিবেশনের পরে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সংগঠনে এবং আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন তিন প্রবীণ নেতা বিমান বসু, মৃদুল দে এবং অশোক ভট্টাচার্যকে আমন্ত্রিত সদস্য হিসাবে রাজ্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।