E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৮ জুলাই, ২০২২ / ২৩ আষাঢ়, ১৪২৯

কলকাতায় চিটফান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ অবিলম্বে টাকা ফেরতের দাবি


কলকাতায় চিটফান্ড কাণ্ডে প্রতারিতদের সভায় বক্তব্য রাখছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ৪ জুলাই ধর্মতলায় এক বিশাল সমাবেশ থেকে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন - অবিলম্বে টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু না হলে ইডি, সিবিআই দপ্তর ও নবান্ন ঘেরাও করবেন চিটফান্ড কাণ্ডে সর্বস্ব হারানো ক্ষতিগ্রস্ত, বিপন্ন আমানতকারী ও এজেন্টরা। চিটফান্ড সাফারার্স ইউনাইটেড ফোরামের ডাকে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিনের এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে রাজ্যপালকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই ব্যাপক কেলেঙ্কারির জন্য সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরপর ৮ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। লক্ষ করা গেছে, তৃণমূল এবং বিজেপি’র আঁতাত এবং বোঝাপড়ার রাজনীতিতে যেমন তদন্তের গতি আটকে গেছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরতের প্রক্রিয়াও আটকে যায়। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি ফাঁস হবার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরতের দাবির পালটা বলেছিলেন - ‘যা গেছে তা গেছে’। এদিন ধর্মতলার বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা তাঁর কাছে ডেপুটেশন দিতে চাইলেও তিনি কোভিড সংক্রমণের অজুহাতে এড়িয়ে যান।

এদিনের বিক্ষোভ সমাবেশে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, কৃষক আন্দোলন পথ দেখিয়েছে। সেই পথে হেঁটেই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন জারি রাখতে হবে। তিনি অভিযোগ করেছেন, বিজেপি’র সঙ্গে স্পষ্ট আঁতাতের পথে হেঁটেছে তৃণমূল। তাই ইডি, সিবিআই, সেবি সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তৎপরতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে।

এই বিক্ষোভ সমাবেশে আইনজীবী ও সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমান সরকার চিটফান্ড সংস্থার সম্পত্তি বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত, প্রতারিতদের টাকা ফেরতের প্রক্রিয়াও আটকে দিয়েছে। হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট সারদা, রোজভ্যালি সহ চিটফান্ডগুলির সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সেই কাজেও বাঁধা দিচ্ছে রাজ্য সরকার। আসলে এই সরকার চিটফান্ডের টাকায় তৈরি। রাজ্য সরকারের তৈরি করা সিট তদন্তের নামে আসলে প্রমাণ লোপাট করেছে। ইডি, সিবিআই সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তরফেও প্রতারিতদের সঙ্গে সহযোগিতা করা হচ্ছে না।

তিনি বলেছেন, চিটফান্ডের টাকাতেই মমতা ব্যানার্জির ছবি কেনা হয়েছে। অ্যালকেমিস্টের মতো সংস্থা তাঁর হেলিকপ্টার যাত্রার খরচ জু‍‌‍গিয়েছিল। এই কেলেঙ্কারি সামনে আসতেই মমতা ব্যানার্জি ছবি আঁকা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই দুর্নীতির ক্ষেত্রে আদালত রায় দিয়েছে ৫৪টি চিটফান্ড কোম্পানির সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে। তারজন্য আদালত এসপি তালুকদার কমিটিও গঠন করে দিয়েছে। কিন্তু কমিটির সঙ্গে কোনোরকম সহযোগিতা করছে না রাজ্য সরকার। তার ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া আটকে আছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের মতোই কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। ইডি, সেবি, সিবিআই-এর মতো সংস্থাগুলি দীর্ঘসূত্রিতা করছে। সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র দাবি করেছিল চিটফান্ডের যাবতীয় সম্পত্তি অপরাধের সম্পত্তি (প্রসিডস অফ ক্রাইম)। তাই এগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের কোষাগারে জমা পড়ার কথা। যদিও আদালত এই দাবি খারিজ করে দিয়েছে। ফলে স্বল্প হলেও কিছু আমানতকারী টাকা পেতে শুরু করেছেন। এই অবস্থায় দুই সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। রাস্তায় নামা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

এদিনের সমাবেশে কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, চিটফান্ডের তদন্ত করতে গিয়ে ২০১৪ সালে সিবিআই কয়েকজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। যদিও বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সিবিআই তদন্ত ঠান্ডাঘরে গিয়েছে। সিট’র প্রধান রাজীব কুমারের গ্রেপ্তারি এড়াতে রাস্তায় নেমেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজীব কুমারকে আজও হেপাজতে নিতে পারেনি সিবিআই। চিটফান্ড কাণ্ডে সর্বস্বান্ত হয়ে সারা দেশে ৩০০’র বেশি এজেন্ট এবং আমানতকারী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। রাজ্যে এই সংখ্যা ২০০’র বেশি।

প্রতারিতদের অর্থ ফেরতের দাবিতে সমাবেশের ডাক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে।

এদিনের সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিজেপি নেতা কল্যাণ চৌবে, আইনজীবী লোকনাথ চ্যাটার্জি, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, আইনজীবী অরিন্দম দাস, গোপালকৃষ্ণ সরকার, পার্থ মৈত্র প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন অরুণ চক্রবর্তী, সঞ্চালনা করেন কিঞ্জল ভট্টাচার্য।

এদিনের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ৪ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল রাজ্যপালের কাছে যে স্বারকলিপি তুলে দিয়েছেন, তাতে দাবি জানানো হয়েছে - এজেন্ট এবং আমানতকারীদের উপর পুলিশি নির্যাতন বন্ধ করতে হবে; ইডি, সিবিআই, সেবি ও রাজ্যের হেপাজতে থাকা যাবতীয় চিটফান্ডের সম্পদ হাইকোর্ট নিযুক্ত অ্যাসেট ডিসপোজাল কমিটির হাতে তুলে দিতে হবে ইত্যাদি।