E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৯ সংখ্যা / ৮ অক্টোবর, ২০২১ / ২১ আশ্বিন, ১৪২৮

সিপিআই(এম) হরিয়ানা রাজ্য ১৬তম সম্মেলন


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আজ দেশ বাঁচানোর লড়াই। এদেশের সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। বিজেপি-আরএসএস’র কর্পোরেটমুখী এই কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের দেশের প্রগতিশীলতা ও গণতন্ত্র ধ্বংস করতে উদ্যত। এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। হিসারের বারবালায় ২ থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সিপিআই(এম) হরিয়ানার রাজ্য ১৬তম সম্মেলন থেকে এই আহ্বান উচ্চারিত হলো।

সম্মেলনের উদ্বোধন করে প্রকাশ্য সমাবেশে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তির বেসরকারিকরণ সম্পর্কে বলেন, দেশের সম্পত্তির মালিক দেশের জনগণ। কেন্দ্রীয় সরকার হলো তার ম্যানেজার। ম্যানেজার যদি মালিকের সম্পত্তি বেচে দেয় তাহলে তাকে বরখাস্ত করতে হবে। আজ দেশের সামনে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হলো মেহনতি মানুষের ভারতকে বাঁচাতে হবে।

১৯১৬ সালের বিহারের চম্পারনে কৃষক আন্দোলনের কথা এবং সেই আন্দোলনে গান্ধীজির ভূমিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, একশ’ বছর আগে ইংরেজ সরকার দেশের কৃষকদের নীল চাষ করতে হুকুম দিয়েছিল, চেয়েছিল দেশের কৃষি এবং কৃষকদের ধ্বংস করতে। আর আজ দেশি-বিদেশি বড়ো কর্পোরেটরা ঠিক করে দিতে চাইছে আমরা কোন্‌ ফসল চাষ করব, তার দাম কত হবে। একশ’ বছর আগেও আমাদের জয় হয়েছিল। আজকের কৃষক আন্দোলনেও আমরা জয়ী হব। কৃষক আন্দোলনের ৭০০ জন শহিদের আত্মবলিদান বৃথা যাবে না এবং জনগণ এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থাকে শিক্ষা দেবে। যদি গান্ধীজির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করতে হয়, তাহলে দেশের সামনে আজকের চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে হবে। স্বাধীনতা আন্দোলন ও সংবিধানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মূল্যবোধ রক্ষা করতে হবে।

সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ১৯২০ পরবর্তী স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রীয় চরিত্র ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হবে তার ধারণা স্থির হয়েছিল। বাবাসাহেব আম্বেদকর সংবিধান প্রণয়নের সময় বলেছিলেন, ভাষা ধর্মের বৈচিত্র্য সম্পন্ন এই দেশে সবাইকে সমান অধিকার দিতে হবে তবেই দেশ ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বিজেপি-আরএসএস দেশের মানুষের সাম্য, সমানাধিকার চায় না। তাই দেশকে বাঁচাতে গেলে এদের সরাতে হবে।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তিনি সংবিধান, সংসদ, বিচারালয় ইত্যাদি সাংবিধানিক সংস্থাসমূহ ধ্বংস করার অভিযোগ তুলে বলেন, সংসদে আলোচনা বিতর্ক ছাড়াই বিল পাশ করানো হচ্ছে। তিন বছর হয়ে গেল সিএএ-এনআরসি মামলার শুনানি শুরু হয়নি, কেউ বিজেপি সরকারের ভুল নীতির বিরোধিতা করে সমালোচনা করলে তাকে ইউএপিএ’র মতো আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ৭৩০০ কোটি টাকা তোলা হয়েছে ইলেক্টোরাল বন্ডের নামে, আইনি পথে যার হিসাব পাবার উপায় নেই।

তিনি বলেন, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাট্টার ক্রমাগত বলছেন, কৃষক আন্দোলনের পিছনে লাল পতাকার লোক আছে, আমরা তাদের নির্মূল করব। বিজেপি জানে যে তাদের ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী নীতির জবাব দিতে পারে একমাত্র লাল পতাকা, তাই তারা আমাদের উপর হামলা নামিয়ে আনছে। ত্রিপুরাতে আমাদের পার্টি দপ্তরগুলিকে বিজেপি আক্রমণ করছে। কিন্তু আমরা বলতে চাই যে, জার্মানির স্বৈরাচারী হিটলারকে লালঝান্ডা পরাস্ত করে তার ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার ধ্বংস করে জার্মান সংসদে লালঝান্ডা তুলেছিল। জরুরি অবস্থায় এদেশে বামপন্থীদের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু জরুরি অবস্থার পরেই আমাদের সরকার গঠিত হয় বাংলায়, পরে কেরালা, ত্রিপুরায়। নির্বাচনী ফ্রন্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, জনগণের আন্দোলন থেকে ফ্রন্ট উঠে আসবে এবং জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে সে সম্পর্কে।

সম্মেলনে খসড়া রাজনৈতিক সাংগঠনিক প্রস্তাব পেশ করেন রাজ্য সম্পাদক সুরেন্দ্র মালিক। প্রতিনিধিদের আলোচনার পর এই প্রস্তাব পাশ হয় সর্বসম্মতিতে। তিনদিন ব্যাপী রাজ্য সম্মেলন শেষে ২৮ জনের রাজ্য কমিটি নির্বাচিত হয়েছে। সম্মেলন থেকেই ৯ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়। রাজ্য সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন সুরেন্দ্র মালিক।

সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন পলিট ব্যুরো’র সদস্য নীলোৎপল বসু এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কে হেমলতা। তাঁরা বলেন, বিজেপি সরকার দেশের মেহনতি মানুষের সাথে শত্রুর মতো আচরণ করছে। দরিদ্র পরিবারগুলির রেশন বন্ধ করা হয়েছে। ডিজেল পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের থেকে ৫ লক্ষ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। বর্বরভাবে গণআন্দোলনকে দমন করছে। গত প্রায় দেড় বছরের করোনাকালে দেশের জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশের আয় কমে গেলেও দেশের ১০০ জন বৃহৎ পুঁজিপতির সম্পদ দ্বিগুণ হয়েছে। শ্রমিক-কৃষক ঐক্য গড়ে দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক-কর্পোরেট জোটকে উৎখাত করতে হবে। তবেই ৯৯ শতাংশ জনসংখ্যার অবস্থার উন্নতি হবে।

সম্মেলনে লখিমপুর খেরিতে বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদে, নারী নির্যাতন বন্ধ, তিন কৃষি আইন ও শ্রমিক বিরোধী শ্রম কোড বাতিল, পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাসের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার, রেশন বণ্টন ব্যবস্থা সর্বজনীন করা, বেসরকারিকরণ বন্ধ, সরকারি শূন্য পদে স্থায়ী নিয়োগ, এমএনরেগাতে ২০০ দিনের কাজ ও ৬০০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করা সহ বিভিন্ন দাবিতে প্রস্তাব গৃহীত হয়।