E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৯ সংখ্যা / ৮ অক্টোবর, ২০২১ / ২১ আশ্বিন, ১৪২৮

সিপিআই(এম) উত্তরপ্রদেশ রাজ্য ১৬তম সম্মেলন


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মানুষদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরিবর্তে দেশের সরকার পুঁজিবাদীদের পকেট ভরতি করছে। কর্পোরেট স্বার্থের দিকে তাকিয়ে বঞ্চিত করা হচ্ছে দেশের মানুষকে। বিজেপি-আরএসএস’র এই চক্রান্তকে রুখতে হবে। বিকাশ ঘটাতে হবে পার্টির স্বাধীন শক্তির। সরকারকে বাধ্য করতে হবে শ্রমিক-কৃষক বিরোধী কালা কানুন প্রত্যাহার করতে। সিপিআই(এম) উত্তরপ্রদেশ রাজ্য ২৩তম সম্মেলন থেকে উচ্চারিত হলো এই শপথ।

২ অক্টোবর থেকে এলাহাবাদের শংকর লাল মেমোরিয়াল হলে শুরু হয় ৩ দিন ব্যাপী সিপিআই(এম) উত্তর প্রদেশ রাজ্য ২৩তম সম্মেলন। সম্মেলনের শুরুতে পতাকা উত্তোলন করেন প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা ডি পি সিং।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রকাশ্য সমাবেশে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত বলেন, বিজেপি-আরএসএস’র নতুন ভারত কর্পোরেট ও সাম্প্রদায়িকতার জোট মাত্র। কোভিড মহামারীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ সরকারের অপদার্থতায় যখন প্রাণ হারিয়েছেন তখন এর ভ্যাকসিনটিকে বাণিজ্যিক স্বার্থ পূরণে ব্যবহার করা হয়েছে। মোদীর নয়া ভারত নাকি অনেক মাইলফলক তৈরি করেছে, যেমন নতুন সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্প। এটা তৈরি হলে বর্তমান সংসদ ভবন নাকি মিউজিয়াম হবে। দেশের গণতন্ত্রকেও কী মিউজিয়ামে পাঠানো হচ্ছে? মোদী সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করে এই প্রশ্ন তোলেন প্রকাশ কারাত।

বেসরকারিকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের কোনো অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব থাকছে না। তার ফলে আমরা কোনো রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বও আশা করতে পারি না।

স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধীর ভূমিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে গান্ধীজি সমাজের প্রান্তিক মানুষদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন সেখানে আমাদের দেশের সরকার পুঁজিপতিদের পকেট ভরতি করছে। কর্পোরেট স্বার্থের কারণে কেন্দ্র ও উত্তরপ্রদেশ সরকার অনেক দূরে চলে গেছে গান্ধীজির দেখানো পথ থেকে। স্বাধীন ভারতে গান্ধীজির পথ ধরেই দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ ও নারীদের জন্য নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ আমরা এখন দেখছি নির্লজ্জের মত কৃষি আইন ও শ্রমিক বিরোধী শ্রম কোড বাস্তবায়িত করা হয়েছে। কৃষক-শ্রমিক দলিত আদিবাসী ইত্যাদি বিভিন্ন অংশের সংগ্রামকে সম্মিলিত করে আরএসএস-বিজেপি’র শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে।

উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রকাশ্য সমাবেশে পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য কমরেড সুভাষিণী আলি বলেন, ভারতের সংবিধানের ওপর মনু-স্মৃতি চাপানোর চেষ্টা করছে সঙ্ঘ পরিবার। বিজেপি-আরএসএস সরকারের আমলে দেশে বিশেষত উত্তরপ্রদেশের প্রেক্ষাপটে সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণভিত্তিক হিংসা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নারী, দলিত ও সংখ্যালঘুদের ওপর বাড়ছে হামলা। গান্ধীজি বর্ণ ভিত্তিক বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী ছিলেন। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য তার জীবন ও চিন্তাধারা নিবেদিত। গান্ধীর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।

এরপর সম্মেলনের প্রতিনিধি অধিবেশন পর্বের উদ্বোধন করেন প্রকাশ কারাত। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল গণসংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধিরা ও বহু বিশিষ্ট মানুষ রাজ্য সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা জানান সম্মেলনকে।

প্রতিনিধি অধিবেশন পর্বে সম্পাদকীয় রাজনৈতিক-সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন রাজ্য সম্পাদক হীরালাল যাদব। সম্মেলনে উপস্থিত উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা প্রতিবেদনের উপর আলোচনা করেন। সম্মেলনে উপস্থাপিত রাজনৈতিক সাংগঠনিক প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে জবাবি ভাষণ দেন রাজ্য সম্পাদক হীরালাল যাদব। এরপর সর্বসম্মতিতে রিপোর্টটি গৃহীত হয়। এই পর্বে সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জে এস মজমুদার।

রাজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশনে পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার দেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব কর্পোরেটদের কাছে বন্ধক রেখেছে। এর পাশাপাশি দেশে আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সাম্প্রদায়িকতাকে অবলম্বন করে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, করোনাকালে একদিকে পুঁজিবাদীদের সম্পত্তি অনেক গুণ বেড়েছে, অন্যদিকে সাধারণ জনগণ গরিব হয়ে যাচ্ছে। ১০ মাস ধরে চলা কৃষক আন্দোলনের প্রতি স্বৈরাচারী সরকারের মনোভাব একনায়কসুলভ, দমনমূলক। এই সময়ে দেশে উপজাতি ও অ-উপজাতিদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ক্রমাগত বাড়ছে। আরএসএস ভারতে ফ্যাসিস্ট মনুবাদী ব্যবস্থার বাস্তবায়ন চায়। এই কর্মসূচি রূপায়ণ করতে বিজেপি দেশের সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করছে। সিপিআই(এম) কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করতে এবং বিজেপি’কে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে সক্রিয় ভূমিকা পালনে সচেষ্ট থাকবে।

সম্মেলনে লখিমপুর খেরিতে নৃশংসতা ও কৃষকদের গণহত্যার বিরুদ্ধে, কালা কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে, মূল্যবৃদ্ধি, নারীদের প্রতি হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা, তপশিলি জাতি, উপজাতিদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং বেসরকারিকরণ ও শ্রম সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রস্তাবসমূহ গৃহীত হয়।

সম্মেলন থেকে পার্টির ২৯ জনের নতুন রাজ্য কমিটি এবং ৭ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলী নির্বাচিত হয়। সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হন হীরালাল যাদব।

পার্টির স্বাধীন শক্তিবৃদ্ধি, সম্প্রসারণের আহ্বান জানিয়ে স্লোগানের মধ্য দিয়ে ২৩তম রাজ্য সম্মেলন সমাপ্ত হয়। সম্মেলন উপলক্ষে গান্ধীজির সম্পর্কে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।