৬১ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ২১ ভাদ্র, ১৪৩০
রাজ্যকে বেআইনি বাজির জতুগৃহে পরিণত করার বিরুদ্ধে পথে নামলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মানুষ
বেআইনি বাজি কারখানার মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে দত্তপুকুরে প্রতিবাদ মিছিলে মহম্মদ সেলিম সহ নেতৃবৃন্দ।
৪ সেপ্টেম্বর ব্যারাকপুর বারাসত রোডের জগন্নাথপুর মোড় থেকে সিপিআই(এম)’র আহবানে এক সুবিশাল মিছিলে শামিল হয়ে বাংলাকে বেআইনি বাজির জতুগৃহে পরিণত করার বিরুদ্ধে পথে নামলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মানুষ। ২৭ আগস্ট দত্তপুকুরের মোচপোলের বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িতদের মাথাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেবার দাবিতে আগাগোড়া সোচ্চার এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন সিপিআই(এম)-র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ, জেলা পার্টির আত্রেয়ী গুহ প্রমুখ। পুলিশ ও তৃণমূল দুষ্কৃতীদের অবৈধ আঁতাতের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে। জগন্নাথপুর অঞ্চলের সদরপুর কাঠুরিয়া হয়ে মোচপোল অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোড় ঘুরে জগন্নাথপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনের মোড়ে এসে মিছিল শেষ হয়।
বেআইনি এই বাজি কারখানাটি ছিল উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর থানার জনবহুল মোচপোল এলাকায়। গ্রামবাসীরা অধিকাংশই বলেছেন, বিস্ফোরণে নিহত বাড়ির মালিক শামসুল আলি স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের তত্ত্বাবধানে এই মারণ ব্যাবসা চালাত দাপটের সঙ্গে। বাজির আড়ালে ওই কারখানায় বোমা তৈরি হতো। পুলিশ জানেও সেকথা। প্রতিবাদ করে লাভ হয় নি। মাসিক ‘বন্দোবস্ত’র জেরে অভিযোগকারীকেই পুলিশি হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ২৮ আগস্ট ঘটনাস্থলে যান এবং আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিন মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। মোচপোল বিস্ফোরণে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করে মহম্মদ সেলিম বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে বাজি ও বারুদের কারখানা আইনত কখনোই চালানো সম্ভব নয়, পুলিশের সাহায্যে তৃণমূল নেতারা এই কারবার চালায়। পাশাপাশি চলে মাদকের কারবার। বিস্ফোরণে যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পুলিশ প্রশাসন তা আইন মোতাবেক নথিভুক্ত করেনি। ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব তো পালনই করছে না প্রশাসন। তিনি বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে বারাসত অঞ্চলে আর মমতা ব্যানার্জির আমলে এখন বোমা কারখানা তৈরি হচ্ছে।
সভায় সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, পুলিশ চোখে দেখেনা, কানে শোনে না। কাজেই অপরাধীদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূর্ণ করার আদায় করতে হলে মানুষকে নিয়েই আন্দোলন করতে হবে।
পলাশ দাশ বলেন, পঞ্চায়েত এবং সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে বিরোধীশূন্য করতে তৃণমূল পুলিশের মধ্যে এই কারবার চালিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপারের অফিসের কাছেই অদূরে নাকের ডাগায় বোমা এবং মাদকের কারবার চলে কী করে এতদিন!
সংক্ষিপ্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পার্টির সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার পর প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য না করলেও যথাসাধ্য সাহায্য করেছে সিপিআই(এম) কর্মীরা।
এই ঘটনায় বিজেপি’র যোগও স্পষ্ট। উত্তরপ্রদেশের হাথরসের বাসিন্দা ভাস্কর পণ্ডিত এই বেআইনি কারখানায় বিস্ফোরক সরবরাহ করত বলে জানা গেছে এনআইএ তদন্ত সূত্রে। ব্যাপক পরিমাণ টাকা লেনদেন হয়েছে ঘটনায় জড়িত মোচপোল বিস্ফোরণের অন্যতম মাথা জিরাট শেখের সঙ্গে। তার মাধ্যমে মুর্শিদাবাদের ঘাঁটি গেড়েছিল ওই ভাস্কর পণ্ডিত। তৃণমূল-বিজেপি যোগসাজশের জেরেই এতদিন বিস্ফোরক তৈরির কাঁচামাল উত্তরপ্রদেশের হাথরস থেকে বিহারের পাটনা হয়ে সোজা ডানকুনি আসত। পথে কোথাও ধরা পড়েনি। অভিযোগ, তদন্তে তাই ঢিলেমি দিয়েছে এনআইএ।