E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬১ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ২১ ভাদ্র, ১৪৩০

একাধিক দুর্নীতি মামলায় আদালত সরগরম


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ রাজ্যের একাধিক দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা ঘিরে গত এক সপ্তাহ জুড়েই ঘটেছে নানা তাৎপর্যপুর্ণ ঘটনা। বিচারপতিদের একাধিক মন্তব্য ও পদক্ষেপ এবং শুনানিতে সিবিআই প্রতিনিধির ইঙ্গিত ঘিরে ব্যাপক চাপে পড়ে গেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতানেত্রীরা। শুধু বিচারপতিরাই নন, সিবিআই’র আইনজীবী হাইকোর্টে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সালের টেট দুর্নীতি আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের মতো সুবিশাল বড়ো। ১১ই সেপ্টেম্বর তারা এই বিশাল দুর্নীতির খতিয়ান প্রকাশ করবেন। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, দুর্নীতি যদি ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সমান হয় তাহলে সেটা অবিলম্বে ভেঙে ফেলা দরকার।

এমনিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দু’টি মন্তব্য করে ত্রাসের সঞ্চার করেছেন তাঁর নিজের দলের মধ্যেই। ২২ আগস্ট লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থায় ইডি’র তল্লাশি অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, অভিষেক ব্যানার্জির বাড়িতে তল্লাশি মানে ‘তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানো’। আবার ২৮ আগস্ট দলের ছাত্র-যুবদের এক সভায় বলেছেন আসন্ন ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি গ্রেপ্তার হবেন।

স্বাধীনতার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের বুকে সব থেকে বড়ো শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ধৃত পার্থ চ্যাটার্জি ও অর্পিতা মুখার্জির যৌথ সংস্থা এপিএ ইউটিলিটি সার্ভিস থেকে ‘কালীঘাটের কাকু’র এসডি কনসালটেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড নামক সংস্থার নাম বারবার এসেছে তদন্তে। গ্রেপ্তার হয়েছেন পার্থ চ্যাটার্জি থেকে ‘কালীঘাটের কাকু’ সুজয় ভদ্র সহ তৃণমূলের নেতা ও ঘনিষ্ঠ সহ প্রায় ২৫-২৬ জন। উঠে এসেছে ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির নাম এবং তাঁর পারিবারিক সংস্থার নানা গরমিলের দিক। তাই সব মিলিয়ে টেনশন গোপন করতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রীও।

ইতিমধ্যে ৩০ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা ইডি এবং সিবিআই’র তদন্তের অগ্রগতি দেখে উষ্মা প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন, পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেক ব্যানার্জিকে সমন পাঠানো হচ্ছে না কেন। তাতেই নবান্ন থেকে কালিঘাটে চাপ বেড়েছে। আদালত মন্তব্য করেছে, যেভাবে তদন্ত এগোচ্ছে তাতে সবাই সন্দেহ করছে। সব কিছু নাগালের মধ্যে পেয়েও যথাযথ পদক্ষেপ হচ্ছে না কেন? ২০২১ সালের জুলাই মাসে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। এখনও ধীর গতিতে তদন্ত চলছে। প্রাথমিক শিক্ষক এবং পৌরকর্মী নিয়োগে ঠান্ডা মাথায় ওপর থেকে দুর্নীতি হয়েছে। তদন্তের কাজ হচ্ছে নিচ থেকে ওপরে যাওয়া। ওপর থেকে নিচে নামা হচ্ছে না কেন? এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ইডি’র দেওয়া ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ড’স নিয়ে প্রেস বিবৃতিকে সামনে রেখেই তদন্তকারী সংস্থাকে প্রশ্ন করেছেন।

এই মামলায় উঠে আসে ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ড’স ইডি’র তল্লাসি প্রসঙ্গ। এ প্রসঙ্গে আদালতে ইডি’র দেওয়া তথ্য সামনে আনেন আইনজীবী ফিরদৌস শামিম। তিনি বলেন, ওই সংস্থায় প্রথমে চিফ অপারেটিভ অফিসার ছিলেন সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র। অভিষেক ব্যানার্জি ওই কোম্পানির প্রথমে ডিরেক্টর, এখনও তিনি সিইও পদে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে গ্রেপ্তার করলেও অভিষেক ব্যানার্জি এখনও বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এখন পর্যন্ত মাত্র ১২৬ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গেছে। এখান থেকেই আরও অনেক বেশি টাকা নিয়োগ দুর্নীতিতে লেনদেন হয়েছে।

আদালত নির্দেশ দিয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সিবিআই’র সিট যেভাবে তদন্ত করছে পৌরকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই সিট’ই তদন্ত করবে। আদালতের পর্যবেক্ষণে এই তদন্ত চলবে। অভিষেক ব্যানার্জির ক্ষেত্রে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট ইডি ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে জমা দেবে।

আবার ফ্ল্যাটের টাকা প্রতারনা কাণ্ডে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানকে তলব করেছে ইডি। ২৪ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান ও তাঁর রিয়েল এস্টেট সংস্থার বিরুদ্ধে! অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মীদের ফ্ল্যাট দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা তুলে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ‘৭ সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড’। যে সময়ে এই দুর্নীতির কারবার চলেছিল তখন এই সংস্থার বোর্ড অব ডিরেক্টরস’র অন্যতম সদস্য ছিলেন তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। অভিযোগ জানানো হয়েছিল কলকাতা পুলিশের কাছেও। প্রতারিতরা আদালতেও মামলা করেছিলেন। আদালত সমন পাঠিয়েছিল নুসরত জাহানকে।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এর জবাবে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ৪ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি বলেছেন, শিক্ষক দিবসে মুখ্যমন্ত্রী ওঁর মনের কথাই বলেছেন। ওঁর যে শিক্ষামন্ত্রী এখন জেলে বসে আছে সেও এরকম হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘মাইনেটা তো আমিই দিই’। আসলে ওঁরা শিক্ষকদের গোলাম মনে করে।

মহম্মদ সেলিম বলেন, রাজ্যের শাসকদলের নেতা মন্ত্রীরা চুরি দুর্নীতি করে শিক্ষা ব্যবস্থাকে লাটে তুলছে, আর রাজ্যপাল সেই সুযোগ নিয়ে বেআইনিভাবে উপাচার্য নিয়োগের নামে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছেন। উভয়ে মিলেমিশে রাজ্যের সরকারি শিক্ষা পরিকাঠামোকে তছনছ করে দিয়ে দেশি বিদেশি বেসরকারি ব্যবসায়ীদের শিক্ষার দোকান খোলার পথ করে দিচ্ছেন। তাহলে গরিব ঘরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার কী হবে?