৬১ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ২১ ভাদ্র, ১৪৩০
ধূপগুড়ি উপনির্বাচন
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উত্তরবঙ্গের মানুষ এখন ভাদ্র মাসের গরমে নাজেহাল। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যে শেষ হল ধূপগুড়ি বিধানসভার উপ নির্বাচন। সকাল সাতটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে শহরের বৈরাতীগুড়ি হাই স্কুলের ১৫/১৮২ নম্বর বুথের ইভিএম বিকল হয়ে যাওয়ায় প্রায় দুই ঘণ্টা ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। ১৫/১১০, ১৫/ ১১২, নম্বর বুথেও ইভিএম খারাপ হয়। দুপুরের দিকে বানারহাট হিন্দি হাইস্কুলের একটি বুথে ইভিএম পর পর তিনবার ইভিএম বিকল হলে ভোটদাতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। বিকালের দিকে ডাউকিমারি এলাকায় ৫৯ নম্বর বুথের যন্ত্র খারাপ হয়। যন্ত্র বিকল ছাড়া অন্য কোনো বিভ্রাট দেখা যায়নি। দিনের শেষে মোট ভোট পড়েছে ৮২ শতাংশের বেশি। নিরাপত্তার কাজে ৩০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগানো হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বহর দেখে অনেক ভোটদাতার মন্তব্য ছিল, রাজ্য সরকার গাজোয়ারি না করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করলে অনেক প্রাণ বেঁচে যেত এবং গ্রামের সরকার গঠনের হিসেব অন্যরকম হতো।
ভোটদান শেষ হবার পর মানুষ বলেন, দীর্ঘ এগারো বছর পর এরকম স্বস্তির ভোট হলো।নির্বিঘ্নে ভোট পর্ব মিটলেও এই উপনির্বাচনে ধূপগুড়ি বিধানসভা এলাকার মানুষ দেখলেন টাকা আর প্রতিশ্রুতির বন্যা চমক ঠমক দিয়ে চোখ ধাঁধানো প্রচারের বহর। তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দল প্রতিযোগিতায় নেমেছিল দেদার বিপুল অর্থ খরচে। বিজেপি বুথ প্রতি খরচ বিলি করেছে দুই লক্ষ সেখানে তৃণমূল তাদের খরচ বিলি করেছে সম পরিমাণ। শহরের বুথগুলিতে ভোটের সাত দিন আগে থেকে এই বিলি বণ্টন শুরু হলেও গ্রাম এলাকায় আরও কয়েকদিন আগে থেকে শুরু করে। চা বাগান এলাকা দিয়ে দেওয়া হয় চুক্তিতে। এই ভোট বামপন্থীদের অন্য এক দিশা দেখাবে বলেই সকলের ধারণা। রাজ্য জাতীয় স্তরের নেতা, মন্ত্রী, চিত্রাভিনেতা গ্রামের আনাচে কানাচে রোড শো, সভা করে দুই দল নজরকাড়ার চেষ্টা আপ্রাণ চালালেও অতি উদ্দীপনা জাগাতে পারেনি ভোটারদের মধ্যে। শেষ দিকে দুই দল দু'জন দলবদলু নিয়ে দেওয়া নেওয়া সারলেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। বরঞ্চ মানুষ বলেছেন বাম আমলে এসব দেখার অভিজ্ঞতা হয়নি আমাদের। এসবের সাথেই দুই দল চেষ্টা করে গেছে জাতপাতের বিষয় নিয়ে প্রভাব ফেলতে। বিজেপি শেষ বেলায় চেষ্টা করেছে তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী উগ্রপন্থীদের কাজে লাগাতে। এত কিছুর পরেও একাংশ বাজারি মিডিয়ায় অনবরত বামপন্থীদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চলছে। আগে রাম পরে বাম - এই ‘মন্ত্র’ অবশ্য এবারের নির্বাচনে শোনা যায়নি। বিভিন্ন গ্রামে ভোটাররা ভোট দিয়ে বের হয়ে এসে বলেছেন, শাসানি দিয়েছে ওদের দিকে (শাসকদল) না গেলে নাকি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে নাম বাদ যাবে, কেউ বলেন, ওদের তাঁবুতে একবার না গেলে সমাজে থাকা মুসকিল হবে। আবার কেউ বলেন, আগে যারা জঙ্গী ছিল তাদের ভয় রয়ে গেছে, আবার অনেকে পুলিশের ভয় আছে বলে মনে করেও বলেছেন, এবার একটু অন্য দিকে গেলাম। এই সব টুকরো টুকরো কথাবার্তা গ্রামাঞ্চলে শোনা গেছে।
ভোটের দিনে দেখা গেছে, তৃণমূল-বিজেপি দুই দলেরই তাবড়ো তাবড়ো নেতাকে বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউসে ঘাঁটি গেড়ে থাকতে। বিজেপি একমাস ধরে আস্ত একটা ভবন কবজা করে ছিল। ভোটের দিন বিজেপি'র অনেক নেতা ১২ কিলোমিটার দূরে গয়েরকাটায় পি.ডবলিউ.ডি.’র অতিথিশালায় থেকে ভোট পরিচালনা করেছেন। এই অতিথিশালা এত দিন তৃণমূলের দখলে ছিল। সারাদিন ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ঘুরে এসে সিপিআই(এম)প্রার্থী ঈশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তৃণমূল-বিজেপি'র ওপেন কুস্তি মানুষ বুঝেছেন। তাই দুই দল চিন্তায় আছে। আমরা অনেক নতুন মানুষের সমর্থন পেয়েছি, তাদের আশ্বাস আমাদের লড়াইয়ে সাহস দিয়েছে। আগামীদিনের নতুন লড়াইয়ে আরও অনেক নতুন মানুষ লালঝান্ডার তলে এসে শামিল হবেন - এই ঈঙ্গিত বহন করছে ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচন।