৬১ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ / ২১ ভাদ্র, ১৪৩০
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রসিকতা কবে বন্ধ হবে
সুপ্রতীপ রায়
২৩ আগস্ট মিজোরামের আইজল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে, সাইরাং এলাকায় কুরুং নদীর উপরে একটি নির্মীয়মাণ রেলসেতু ভেঙে মালদহের ২৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এবছরের আগস্ট মাসেই মুম্বাইয়ে পাঁচতলা ছাদ থেকে পড়ে নিহত হন বীরভূমের রাজগ্রামের নির্মাণ শ্রমিক উত্তম মাল। গত ৩১ জুলাই মুম্বাইয়ের কান্দিভালিতে একটি বহুতলে কাজ করার সময় মাচা ভেঙে মারা যান বীরভূমের মুরারই ২নং ব্লকের দু’জন বাসিন্দা। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর আসে। এরা পরিযায়ী শ্রমিক। বাংলায় কাজ নেই। তাই ওদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই ভিন রাজ্যে কাজে যেতে হয়। প্রতি ৬ দিনে অন্য রাজ্যে নিহত হচ্ছেন পশ্চিমবাংলার একজন পরিযায়ী শ্রমিক। এ মৃত্যু মিছিল কবে থামবে?
কোভিডের সময় বেশ কয়েকটি শব্দ খুব পরিচিত হয়েছিল। এগুলির মধ্যে অন্যতম ‘পরিযায়ী শ্রমিক’। দেশের শ্রমশক্তির সব থেকে দুর্বল অংশ এই পরিযায়ী শ্রমিকরা। আমাদের দেশে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কত? সঠিক হিসেব নেই। কিন্তু সংখ্যাটি বিশাল। আবার দেশের মধ্যে যে রাজ্যগুলি থেকে বিপুল পরিমাণে মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে ভিন রাজ্যে কাজ নিয়ে চলে গেছেন এর মধ্যে পশ্চিমবাংলা অন্যতম। কোভিড-১৯-এর সময় লকডাউন না হলে আমরা পরিযায়ী শ্রমিকদের খবর পেতাম না।
পরিযায়ী শ্রমিকেরা অত্যন্ত কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন। এদের শ্রম নিংড়ে নেওয়া হয়। কোনোরকম সামাজিক সুরক্ষা ছাড়াই কঠিন কাজ করতে হয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নেই, খাদ্য নিরাপত্তা নেই, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জীবন যাপন করতে হয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশন কার্ড তাঁদের পরিবারের কাছে থাকার ফলে যে রাজ্যে তাঁরা কাজ করেন সেখানে সরকারি ভরতুকি যুক্ত অল্পমূল্যের খাবার পান না। রেশনকার্ড অন্যস্থানে ব্যবহার করার নিয়ম না থাকার কারণে পরিযায়ী শ্রমিকেরা ‘বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত হন।
অসংগঠিত ক্ষেত্রে যুক্ত হওয়ার কারণে পরিযায়ী শ্রমিকেরা খুবই কম মজুরিতে ও প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য হন। এঁদের জীবিকা সংক্রান্ত কোনো সুরক্ষা নেই, কারণ পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান আইনি চুক্তি ভিত্তিক নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকরা সময়মতো প্রাপ্য মজুরি পান না। পরিযায়ী শ্রমিকদের মজুরি এত কম যে, পরিবারের জন্য অর্থ পাঠাবার পর কার্যত নিজেদের হাতে যে টাকা থাকে তাতে জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে বেঁচে থাকার খরচ জোগাতে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজেদের প্রাপ্য সম্মান পর্যন্ত পান না।
পরিযায়ী শ্রমিকদের বসবাসের জায়গা ঘিঞ্জি এবং তাঁদের বসবাসের জায়গাতে ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা পর্যন্ত নেই। বাসস্থানের জায়গাতে পরিষ্কার জলের ব্যবস্থা থাকে না। অনেককে রাস্তাতেই থাকতে হয়। বাড়িভাড়া মেটাতে না পারার জন্য অনেককে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়,রাত কাটান রেল স্টেশনে, ফুটপাতে, বাসস্ট্যান্ডে। পরিযায়ী শ্রমিকরা অন্যরাজ্য থেকে আসার কারণে কর্মক্ষেত্রে বসবাসকারী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পান না । মহিলা পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে গর্ভবতী মহিলারা চিকিৎসার সুযোগ পান না বললেই চলে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘বহিরাগত’ বলে চিহ্নিত করে সামাজিক নিপীড়নেরও সম্মুখীন হতে হয়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নেই। দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নিয়েই কাজ করতে বাধ্য হন এঁরা। বেঘোরে মৃত্যু ঘটে চলেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কিছু আইন থাকলেও তার প্রয়োগ কোথায়? অন্যরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের জন্য আমাদের দেশে ‘Inter State Migrant Act’ নামে একটি আইন আছে । এই আইনে বলা আছে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যত শ্রমিক কাজ করতে যান তাঁদের নাম নথিভুক্ত করাতে হয়। কার মাধ্যমে কাজে গেছেন তাও জানাতে হয়। কিন্তু এই আইনকে মান্যতা দেওয়া হয় না বললেই চলে। আমাদের দেশে দাস ব্যবস্থা বেআইনি। কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের দাস শ্রমিকদের মতোই খাটানো হয়। ১৯৭৯ সালের আন্তঃরাজ্য পরিযায়ী আইনকে অকেজো করে রাখা হয়েছে কেন?
আমাদের রাজ্য থেকে ভিন রাজ্যে কাজের সন্ধানে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে মমতা ব্যানার্জির সরকার উদাসীন। গত জুন মাসে ওডিশার বালেশ্বরের কাছে এক ভয়াবহ ট্রেন দূর্ঘটনা ঘটে। বাহানাগায় নিহত ও আহতদের বেশিরভাগ ছিলেন পরিযায়ী শ্রমিক। এঁদের অনেকে ছিলেন পশ্চিমবাংলার মানুষ। রাজ্যে কাজ না থাকায় এঁরা কাজের জন্য ভিন রাজ্যে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কোভিড পর্বে লক ডাউনের সময় আমরা দেখেছিলাম, যে রাজ্যগুলিতে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি তার মধ্যে পশ্চিমবাংলা অন্যতম। কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, কোভিডের সময় পশ্চিমবঙ্গে কাজ খুঁইয়ে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখেরও বেশি। পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি উত্তরপ্রদেশে, পশ্চিমবাংলা তিন নম্বরে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা সস্তায় শ্রমের জোগান নিশ্চিত করেন। লকডাউনের সময় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন - আর কাউকে ভিন রাজ্যে যেতে দেবেন না। কিন্তু সে ঘোষণার কী হলো?
কোভিডের সময় মমতা ব্যানার্জি পরিযায়ী শ্রমিকদের এক হাজার টাকা এককালীন দেওয়ার প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। প্রকল্পটির নাম ছিল ‘স্নেহের পরশ’। ৩ জুন ’২০ মুখ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন - তাঁর সরকার পরিযায়ীদের অর্ধেককেও ‘স্নেহের পরশ’ দিতে পারেনি। ৩ জুন ’২০ মমতা ব্যানার্জি একটি নতুন ব্যাঙ্কের ঘোষণা করেছিলেন। নাম ছিল ‘স্কিল ব্যাঙ্ক’। এই ঘোষণায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, “জেলাগুলিকে বলেছি যাঁরা ফিরে এসেছেন তাঁদের তালিকা বানান। তাঁরা কে কী পারেন তারও তালিকা করুন। কেউ ১০০ দিনের কাজ পাবে। কেউ সোনার কাজ বা জরির কাজ। একটা ‘স্কিল ব্যাঙ্ক’ করার পরিকল্পনা করেছি আমরা। ছোটো, মাঝারি এবং ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরের মাধ্যমে এদের কাজে লাগানো হবে।” ঘোষণার পর ঘোষণা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী করেন। কিন্তু তার বাস্তবায়ন ক’টি ক্ষেত্রে হয়? এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কটির কী হলো?
কোভিড পর্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে নির্মম রসিকতা করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। ৩ জুন ’২০ মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন - পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্যই রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। বিভিন্ন সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নিয়ে আসা ট্রেনকে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ বলে মুখ্যমন্ত্রী কটাক্ষ করেছিলেন। ১৮ মে ’২০ নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে বাড়িতে ফেরত আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘মারণ ভাইরাসে’র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ২ জুন ’২০ রাজ্য খাদ্য দপ্তর নিজ বাড়িতে ফেরা পরিযায়ীদের জন্য একটি ‘অমানবিক’ নির্দেশিকা জারি করে বলেছিল - অন্য রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ীদের রেশন কার্ড দেওয়া হবে না, দেওয়া হবে অস্থায়ী ফুড কুপন। এই কুপনের বিনিময়ে রেশন কার্ড দাবি করা যাবে না। যদিও এই ফুড কুপন বিরাট সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক পাননি।
লক ডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকেরা গ্রামে ফিরলেও কাজের অভাবে আবার ভিন রাজ্যেই ফিরে যেতে হয়। আমাদের রাজ্যে কাজের সুযোগ না পেয়ে গ্রাম থেকে দলে দলে যুবক ভিন রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অনেক গ্রাম প্রায় যুবক শূন্য। তৃণমূলী আমলে শিল্প-কৃষি উভয়েরই সর্বনাশ করা হয়েছে। তাই কাজের সুযোগ নেই। কাজ নেই গ্রাম বাংলাতে। রাজ্যে জীবিকার অভাব। মমতা ব্যানার্জির রাজত্বে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে বিদ্যুৎ গতিতে। রাজ্যে আয়ের পথ দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে।
তৃণমূলী আমলে রাজ্যের শিল্পের অবস্থা বেহাল। ফলে কাজের বাজারে হাহাকার। যদিও শিল্প নিয়ে অনেক বড়ো বড়ো কথা মুখ্যমন্ত্রী বলে থাকেন। ৩০ অক্টোবর ’২০ বলেছিলেন - “আগামী একমাস বাংলার শিল্পায়ন ছুটতে ছুটতে দৌঁড়াবে। আটকে থাকা সমস্ত শিল্প প্রস্তাব ছয় মাসের মধ্যে ছাড় দেওয়া হবে। বাংলার ছেলে-মেয়েদের সামনে চাকুরির প্রচুর সুযোগ তৈরি হবে। এটাই আমার দীপাবলির উপহার।” মমতা সরকারের এক দশকে বাংলা গোটা দেশে শিল্প বিকাশে ২৮তম। যদিও ১৯৯১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়কালে পশ্চিমবঙ্গ শিল্প বিকাশে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছিল।
বিপুল পরিমাণ অর্থখরচ করে শিল্প সম্মেলন হলেও নতুন শিল্প তৈরি হয়নি। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে শূন্যপদের সংখ্যা পাঁচ লক্ষেরও বেশি। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল পরিমাণ শূন্যপদ। যেটুকু কাজ হচ্ছে তা চুক্তিপ্রথায় ও ঠিকা প্রথায়। রাজ্য সরকার কর্মসংস্থানের বিষয়ে দায়বদ্ধতা এড়িয়ে চলেছেন।
পশ্চিমবাংলায় কৃষি সংকট ক্রমবর্ধমান। তৃণমূলী আমলে কৃষি অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে কাজের যে সুযোগ ছিল তা কমেছে। গ্রামীণ বাংলা থেকে বিপুল পরিমাণ মানুষ ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন - তার অন্যতম কারণ এটি। তৃণমূলের জমানায় কৃষিজীবী পরিবারগুলি দ্রুত জমি হারাচ্ছেন। ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের ২০১৯-২০ সমীক্ষা অনুসারে পশ্চিমবাংলার গ্রামাঞ্চলে ৬৫.২ শতাংশ পরিবারের হাতে কৃষি জমি নেই।
ক্ষুদ্র জোতের কারণে কৃষি থেকে আয় কমে যাচ্ছে। ২০২০ সালের পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে রিপোর্ট অনুসারে, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ৮০ শতাংশ কৃষি জোতের আকার হলো ০.৫ শতাংশ হেক্টরের কম। গড়ে ০.২ হেক্টর। ক্ষুদ্র জোতে চাষ করে বেঁচে থাকার মতো আয় ওই জমি থেকে অসম্ভব। কৃষি অর্থনীতিতে গভীর সংকট নেমে এসেছে। গ্রাম বাংলায় দারিদ্র্যতা বাড়ছে। তাই বিরাট সংখ্যক শ্রমশক্তি পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্যরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন।
পশ্চিমবঙ্গে কৃষকদের আয় কমছে। ২০২২ সালে নাবার্ড প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, আমাদের রাজ্যে কৃষিজীবী পরিবারের মাসিক গড় আয় ৭,৭৫৬ টাকা। যদিও ২০১৮ সালের জুন মাসে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, বাংলায় কৃষিজীবী পরিবারের গড় আয় ছিল ২ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর এই তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। মজুরির হারও নিম্নগামী। ২০১২-২০১৬-তে মজুরির হার ৮.২ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৭-২১ সালে ৫.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০২১ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃক প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে, পশ্চিমবাংলায় গ্রামীণ জনসংখ্যায় দৈনিক মজুরির হার মাত্র ২৮৮.৬০ টাকা, যা জাতীয় হার ৩০৯.৯০ টাকা থেকে কম।
১০০ দিনের কাজ বন্ধ আমাদের রাজ্যে। এই প্রকল্প থেকে গ্রামীণ মানুষ কাজ পেতে পারতেন। বামফ্রন্ট সরকার ‘অপারেশন বর্গা’ মারফত বর্গাদারদের জমির অধিকার দিয়েছিল। মমতা ব্যানার্জির সরকারের আমলে বর্গা উচ্ছেদ হচ্ছে। ল্যান্ড মাফিয়ারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
তৃণমূলের আমলে ঠিকাচাষ, ভাগচাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠিকা বা ভাগচাষিদের সংকট বেড়ে চলেছে। এঁদের আর্থিক অবস্থায় কোনো উন্নতি হয়নি। ঠিকাচাষি, ভাগচাষিদের কৃষকের স্বীকৃতি নেই। কারণ, এদের কাছে জমির কাগজ থাকে না। ফলে এরা কোনো সরকারি সহায়তা পান না।
পশ্চিমবাংলায় কৃষকদের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রাপ্তি কমছে। তৃণমূল আমলে কৃষি-সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে ধ্বংস করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষক ঋণ পান না। ‘কিষান ক্রেডিট কার্ড’ কোনো কাজে আসছে না। ফলে গ্রামাঞ্চলে মহাজনি ঋণের দাপট বেড়েছে। মাইক্রোফিনান্সের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন গ্রামাঞ্চলের মানুষ। ‘ট্রেন্ডস অ্যান্ড বিহেভিয়ারিয়াল প্যাটার্নস অব ক্রেডিট-ডিপোজিট রেশিওস অব সিডিউলড কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক’ শীর্ষক রিপোর্টে বলা হয়েছে- “পশ্চিমবাংলায় ব্যাঙ্কে টাকা জমা এবং টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ধার পাওয়া দুটোই কমেছে। তবে টাকা জমা হারের থেকে ঋণ পাওয়ার হার কমেছে বেশি”। কাজের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ার ফলেই ব্যাঙ্কে টাকা রাখা কিংবা সঞ্চয়ের সুযোগ কমেছে।
রাজ্যের কৃষি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে তৃণমূল। ফলে ব্যাপক মানুষের জীবিকাও ধ্বংস হয়েছে। গ্রামীণ বাংলায় অন্যান্য জীবিকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাপকভাবে। কৃষি সংকট ও শিল্প সংকট থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে মানুষের হাতে কাজ আসবে না। পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়বে।
১ সেপ্টেম্বর থেকে ‘দুয়ারে সরকার’ শুরু হয়েছে। এবারে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আবেদনের সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণের কাজ চলছে। এতদিন পর্যন্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করেনি রাজ্য সরকার। কিন্তু নাম নথিভুক্তকরণের পদ্ধতিতে গলদ আছে। অন্যরাজ্যে চলে যাওয়া শ্রমিকদের পক্ষে সেপ্টেম্বর মাসে পুনরায় রাজ্যে এসে নাম নথিভুক্ত করা সম্ভব নয়। সুতরাং, এটা পরিষ্কার যে, তৃণমূল কখনই পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি আন্তরিক নয়।