৫৮ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৯ এপ্রিল, ২০২১ / ২৬ চৈত্র, ১৪২৭
কামারহাটি
বাম ঐতিহ্য মেনেই কামারহাটির মানুষ সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সায়নদীপ মিত্রকে বিধানসভায় পাঠাবেন এবার
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়
বেলঘরিয়ার দেশপ্রিয়নগরে প্রচারে সায়নদীপ মিত্র।
রথতলার মোড়ে বেলঘরিয়া স্টেশনগামী অটোতে বসেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন ওই বয়স্ক যাত্রী। একটু দূরে তারস্বরে মাইকে বেজে চলেছে তৃণমূল প্রার্থীর নিজের গলায় নিজের তারিফের ফিরিস্তি। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে এভাবে নির্বাচনী বিধির তোয়াক্কা না করে সকাল থেকেই শব্দবিধি পেরনো প্রচারে ক্ষুব্ধ মানুষটি ব্যঙ্গের স্বরে বলছিলেন, গরিবের টাকা চুরি করে আর টিভিতে বসে খেউড় করে জননেতা হওয়া যায়া না!
এ প্রসঙ্গে সংযুক্ত মোর্চার সিপিআই(এম) প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র বলছিলেন, কামারহাটির সংস্কৃতি নষ্ট করেছেন মদন মিত্র। কামারহাটির রাজনৈতিক সংস্কৃতি জ্যোতি বসুর হাতে লালিত। সেই সংস্কৃতির হাত ধরেই বামপন্থার শিকড় মানুষের মনের গভীরে। সেই ঐতিহ্যকে বজায় রেখেই মানুষ আবার জবাব দেবেন তৃণমূলকে এই ভোটে।
কামারহাটির প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক মানস মুখার্জিকে উন্নয়নের কাজ করতে বাধা দিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। এলাকার সুপার স্পেশালিটি সাগর দত্ত হাসপাতাল এখন সিন্ডিকেট আর দালাল রাজে পরিণত হয়েছে। এ সমস্ত অভিযোগ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সায়নদীপ ভোটারদের উদ্বেগের উত্তরে বলছেন, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট পানীয় জল এবং নিকাশি ব্যবস্থার অবনতি পুরসভার অপদার্থতার জন্য। আগামীদিনে সংযুক্ত মোর্চার নির্বাচিত প্রার্থী হিসেবে তিনি পুরসভাকে বাধ্য করবেন ত্রুটি সংশোধনে।
সংযুক্ত মোর্চার ইস্তাহার অনুযায়ী, রাজ্যের সমস্ত শূন্যপদে নিয়োগ হবে। চাকরি হবে বেকারদের। কামারহাটিতে বন্ধ কারখানার জমিতে নতুন শিল্প গড়তে হবে, প্রোমোটারি নয় - বলছেন সায়নদীপ। মেট্রো স্টেশনে ফুট-ওভারব্রিজ করার বিষয়টিও তাঁর পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এখানকার উদ্বাস্তু আন্দোলনের ঐতিহ্য থাকলেও একটা বড়ো অংশের মানুষ জমির দলিল পাননি। এখানে চলছে তৃণমূলের প্রোমোটার-সিন্ডিকেট রাজ। তাই সায়নদীপ বলছেন দলিলটা জরুরি। মানুষ আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা উচ্ছেদ হতে পারেন। তৃণমূলীরা দখল নিতে পারে জমির। কারণ তৃণমূল চলে প্রোমোটারদের পয়সায়। তাঁর আরও অভিযোগ মানুষকে দলিল বলে যা দেওয়া হচ্ছে তা প্রতারণা।
কামারহাটিতে থাকা সংখ্যালঘু মানুষ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তৃণমূল প্রার্থীর সাম্প্রতিক কাজকর্মে। এখানকার মানুষ সিপিআই(এম) প্রার্থীকে বলছেন, মানুষ যখন রুজির প্রশ্নে, জীবন-জীবিকার প্রশ্নে, রান্নার গ্যাস থেকে পেট্রোল ডিজেল কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধিতে নাজেহাল, তখন উনি বিজেপি প্রার্থীদের সঙ্গে দোল খেলেছেন সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিতে। যেকোনো দিন বিজেপি’তে চলে যেতে পারেন তিনি।
আবার মনোনয়ন দাখিল করার দিন মদন মিত্রের সঙ্গে এলাকার মান্যগণ্য বিশিষ্ট মানুষ নন, ছিলেন তৃণমূলের পার্টি অফিস আলো করে বসে থাকা দুষ্কৃতীরা। এলাকায় এদের দিয়ে সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি করতে চাইছে টিএমসি। এ প্রসঙ্গে সায়নদীপ বলছেন, এই সংস্কৃতির বাইরে আনতে হবে কামারহাটিকে।
সিপিআই(এম) প্রার্থীর প্রচারসঙ্গী হয়ে অদ্ভুত সমস্ত দৃশ্য চোখে পড়ল। কামারহাটি, বেলঘরিয়া, আড়িয়াদহ মানে বামপন্থী আন্দোলনের অন্যতম ঘাঁটি - সেটা বোঝা যাচ্ছিল বারবার। লকডাউনে শ্রমজীবী ক্যান্টিন সহ অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথাও উঠে আসছিল প্রার্থীর সঙ্গে আলাপচারিতায়। তরুণ প্রজন্মের স্লোগানের সঙ্গে সায়নদীপের প্রচার মিছিল বেলঘরিয়ার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিক্রমার জন্য ঢুকতেই এগিয়ে আসছিলেন প্রবীণ থেকে কলেজ পড়ুয়ারা। এদের কারোর কাছে প্রার্থী আদরের সন্টাই, কারো সহপাঠী বা কারো সায়নদীপদা। বেলঘরিয়া হাই স্কুলে পড়া, ভৈরব গাঙ্গুলী কলেজের ছাত্র সায়নদীপ রাজ্যের যুব আন্দোলনের অন্যতম মুখ। তাঁকে ঘিরে মানুষের উচ্ছ্বাস আর আবেগ পৌঁছে যাচ্ছিল তুঙ্গ মাত্রায়। নমস্কার প্রতি নমস্কার শুধু নয়, উপরতলার বারান্দা দিয়ে, জানালা দিয়ে ঝরে পড়ছিল রক্ত গোলাপের পাপড়ি ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপের উদ্দেশ্যে। মুষ্টিবদ্ধ উত্তোলিত হাতে সাথীকে লাল সেলাম জানাচ্ছিলেন এমনকি প্রবীণরাও। দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগা এক প্রৌঢ়ও জেদ করে সায়নদীপের মিছিলে হাঁটছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমি রাস্তায় পড়ে যাব কিন্তু বাকি পথটুকু হাঁটবোই সায়নদীপের পাশে পাশে। থাকবো ওর পাশে। তাঁকে কোনরকমে নিবৃত্ত করে বাড়িতে পাঠালেন রাজ্যের বামপন্থী যুব আন্দোলনের অন্যতম আইকন। কিন্তু টুকরো টুকরো ঘটনার কোলাজে বেলঘরিয়া সহ কামারহাটি জুড়ে মানুষ যে তাঁর পাশে আছেন সেই বার্তাটাও পেয়ে গেলেন সংযুক্ত মোর্চার সিপিআই(এম) প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র।