E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৯ এপ্রিল, ২০২১ / ২৬ চৈত্র, ১৪২৭

তৃণমূল-বিজেপি’র তোলাবাজি-কাটমানি রুখতে এবার সংযুক্ত মোর্চার কংগ্রেস প্রার্থীকেই বিধানসভায় পাঠাতে চায় বরানগর


বরানগরে প্রচারে প্রার্থী অমল মুখোপাধ্যায়।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ বরানগরে দপদপানি কমেছে তৃণমূলীদের। ভোটের ফলাফলের দিন যত এগিয়ে আসছে তত শরীরী ভাষা মিইয়ে যাচ্ছে ওদের। টবিন রোডের এক সবজি ব্যবসায়ী দোকানে বসেই বলছিলেন, সামান্য এক পশলা বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় বিটি রোড সংলগ্ন এই বাজার এলাকা। কারণে অকারণে রাস্তাঘাট মাঝে মাঝেই দেখি মেরামত হয়, সেসব তো শুনি কাটমানির জন্য। রাস্তায় আলো-টালো লাগানোর ব্যবস্থা হয়েছে, কিন্তু নিকাশির কোনো সুবিধা হয়নি। প্রায় প্রতিদিন তোলা তোলে ওরা (তৃণমূল), বাগজোলা খাল সংস্কার করবে বলে বাগাড়ম্বর করলেও হয়নি কিছুই। শুধু ওই ব্যবসায়ী নন, বরানগর জুড়ে নিকাশির বেহাল দশা থেকে যানজট –প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কেন এইসব সমস্যার গত ১০ বছরেও সমাধান হলো না মানুষ তার জবাব চাইছেন তৃণমূলের কাছে। জবাব চাইছেন তৃণমুলী বিধায়ক তাপস রায়ের ভূমিকা নিয়ে।

পরিস্থিতি হলো, তৃণমূল উন্নয়ন বলতে যা বোঝে সেই মাপকাঠি আর যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার ফারাক বিটি রোডের মতোই চওড়া। তাই তৃণমূল পরিচালিত বরানগর পৌরসভা আর হেভিওয়েট মন্ত্রী এড়াচ্ছেন এসব অস্বস্তিকর প্রশ্ন। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ বাম, কংগ্রেস এবং আইএসএফ কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারে গেলে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কংগ্রেসের অমল মুখোপাধ্যায়কে উদ্বিগ্ন বরানগরবাসী নিকাশি থেকে কর্মসংস্থান, যানজট থেকে বন্ধ কারখানা সব বিষয় নিয়েই প্রশ্ন করছেন। নির্বাচিত হলে সমস্যাগুলির কী সমাধান হবে প্রশ্ন করলে প্রার্থীর জবাবি বক্তব্যে উঠে আসছে সংযুক্ত মোর্চার নির্বাচনী ইস্তাহারের বিষয়গুলিই।

কী জিজ্ঞেস করছেন মানুষ? এই কেন্দ্রের বন্ধ কারখানাগুলির প্রতি কেন্দ্র আর রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় মানুষ চাপা রাগে ফুঁসছেন। বন্ধ হয়ে যাওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘বেঙ্গল ইমিউনিটি’ কারখানায় চুরি হচ্ছে দেদার। উদ্বাস্তু মানুষের পুনর্বাসন এবং কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের জমিতে গড়া আরেক কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা আরআইসি যা অনেকদিন ধরেই বন্ধ, তা খোলার প্রতিশ্রুতি বা শিল্পের জমিতে শিল্প গড়ার ভাবনা থেকে অনেক দূরে তৃণমূল। তাদের নজর যে বন্ধ কারখানার জমিতে সবাই তা জানে। বেআইনি বহুতল নির্মাণের কাঁচা পয়সায় ঘাসফুল এখন অন্ধকারের জীবেদের প্রাইভেট লিমিটেড।

‘সব সমস্যার সমাধান করে দেব’ বলে বছর দু’য়েক আগে মানুষের ভোট চাইতে আসা বিজেপি-ও পাশ কাটাচ্ছে এই প্রসঙ্গগুলির, স্পষ্ট বক্তব্য নেই। সেই প্রবল যানজট এখনও সিঁথি-ডানলপের ট্রেডমার্ক। জমা জল সরাতে আন্ডার পাস নির্মাণের জন্য বামেদের চাপে নেওয়া রেলের প্রকল্প পাস হবার পর উলটে রাজ্য সরকার রয়্যালটি চেয়ে তা ভেস্তে দিয়েছে। রাজ্যসরকারের অধিগৃহীত কার্টার পুলার সংস্থা বন্ধ। শ্রমিক সমবায় গড়ে কারখানা চালাবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বামফ্রন্টের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। তা বাস্তবায়িত করেনি তৃণমূল।

কর্মসংস্থানের বিকল্প কোনো পথ সম্পর্কে আগ্রহী নয় তৃণমূল। স্বর্ণজয়ন্তীর স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা সেল্ফ হেল্প গ্রুপগুলি তুলে দেওয়াতেই তা আরও স্পষ্ট। বাম আমলে বরানগর পুরসভার এই গ্রুপগুলির সঙ্গে যুক্ত মহিলারা রাস্তাঘাট নির্মাণের টেন্ডার সহ মাছ চাষ এবং বিভিন্ন উৎপাদনমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে স্বনির্ভর হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তৃণমূল এসেই এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ভেঙে দিয়ে গোটা প্রচেষ্টাই বানচাল করে দেয়। কর্মহীন হয়ে পড়েন বহু মহিলা। লেখাপড়া জানা অল্পবয়সীদের জন্য কর্মসংস্থানের কোনও উদ্যোগ নেই। বরানগর হাসপাতালের পরিচালনভার তুলে দেওয়া হয়েছে সঞ্জীবনী সংস্থার হাতে। সুপেয় পানীয় জলের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের অভাবে ভুগছেন মানুষ এখানে। লক ডাউনের সময় বামপন্থীদের শ্রমজীবী ক্যান্টিন সহ রুজিহীন গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে ওয়াকিবহাল তাঁরা এই সব কিছু নিয়ে চুপ করে না থেকে মোর্চার প্রার্থীর কাছে মুখ খুলছেন। বিজেপি’র চিত্রতারকা প্রার্থীও চুপ এসব নিয়ে। এই পরিস্থিতিতে সংযুক্ত মোর্চার বিকল্পকে আঁকড়ে ধরতে এবার আগ্রহী বরানগরের মানুষ।