৫৮ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৯ এপ্রিল, ২০২১ / ২৬ চৈত্র, ১৪২৭
দমদম
বেকারদের রুটিরুজির স্বার্থে দমদম কেন্দ্রে এবার নাগরিকদের প্রথম পছন্দ লালঝান্ডার প্রার্থী পলাশ দাশ
দমদমে ভোটারদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রার্থী পলাশ দাস।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বামপন্থী আন্দোলনের দীর্ঘলালিত ঐতিহ্যকে বজায় রেখে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী সিপিআই(এম)’র পলাশ দাশকে নিয়ে প্রচারে ব্যাপক উদ্দীপনা দমদমজুড়ে। বহু শহিদের রক্তে ভেজা দমদমের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চান। দমদম বিধানসভা কেন্দ্রের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ এ প্রসঙ্গেই বলছিলেন, দমদমের মানুষ এবার আলোর পথে হাঁটতে চান। তরুণদের সামনে কোনো কাজের সুযোগ নেই। শিক্ষায় বেসরকারিকরণের জন্য এরা বঞ্চিত হয়েছেন। যোগ্যতা থাকলেও মনমতো বিষয় পড়ার সুযোগ পাননি। দমদম জুড়ে জেশপ,এইচএমভি’র মতো বড়ো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার মানুষের নিয়োগের সম্ভাবনা কমে গেছে। কেন্দ্র রাজ্যের নীতি এবং উদাসীনতা এর জন্য দায়ী। আবার মন্দার কবলে পড়ে জেট এয়ারওয়েজ বন্ধ হয়ে গেছে। দমদমের বহু মানুষ এখানে চাকরি করতেন। আজ তারা কর্মচ্যুত হয়েছেন। তাই আমরা বলছি বিকল্পের কথা। বিকল্প নীতির কথা। বিকল্প সরকারের কথা।
অভিযোগ,দমদমের মধ্যে দু’টি পুরসভাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। যার মাথার উপর রয়েছেন বিধায়ক। সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে দখল হয়েছে ক্লাবগুলি। তার পরিণতিতে মাঠগুলিকে দখল করা হয়েছে। সেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা হাত বদলে অবৈধ নির্মাণ চলছে। প্রকৃতপক্ষে অ্যাসেট বা স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি করতে পারেনি এরা। রাস্তা করা বা আলো লাগানোর মতো প্রসাধনী পরিবর্তন হয়েছে। তৈরি ড্রেনকে ভেঙে আবার গড়া হয়েছে কাটমানির স্বার্থে। বাম আমলে দু’টি হাসপাতাল তৈরি হয়েছিল এই দমদম পৌরসভার অধীনে। আজ সেগুলো মাল্টি স্পেশালিটি সুবিধা যুক্ত করার নামে ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। সেখানে গরিব মানুষের চিকিৎসার সুযোগ বন্ধ এখন। নাগরিকদের এসব প্রশ্নের সামনে স্রেফ কেটে পড়ছেন তৃণমূলের নেতারা।
লকডাউনের সময় গরিব খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থে দমদমের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড জুড়েই শ্রমজীবী ক্যান্টিন গড়ে তোলা হয়েছিল বামপন্থীদের নেতৃত্বে। আজ যারা ভোট চাইতে দাদা-দিদির প্রতিনিধি হয়ে দুয়ারে দুয়ারে হানা দিচ্ছেন, তাদের টিকি-দাড়ির দেখা মেলেনি তখন। শুধু গরিব মানুষ নন, অসুস্থ বা করোনা আক্রান্ত মানুষের কাছেও পৌঁছে গেছিলেন বামপন্থীরা। তাঁদের কাছে নিয়মিত খাবার-ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন। প্রয়োজনে চিকিৎসাকেন্দ্রেও নিয়ে গিয়েছেন জীবনের ঝুঁকিকে অগ্রাহ্য করে। এসবই কৃতজ্ঞ চিত্তে মনে রেখেছেন মানুষ।
এখানে সারা বছরই খেলা-মেলা এবং উৎসব চলে। নেতারা খেলা-মেলা নিয়েই মশগুল থাকেন, যুবকদের ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন চাকরি না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে। কিন্তু কর্মহীন যুবরা এবার আর ভুলছেন না। মাইকের দাপটে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোনো প্রতিকার নেই। সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীর কাছে সেসব বলছেন মানুষ।
নিয়োগ নিয়েও ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার যুবরা। কিছুদিন আগে পুরসভায় নিয়োগ হলো। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে নিয়োগের পরীক্ষায় যোগ দেবার সুযোগ পেলেন না এলাকার বেকার যুবক-যুবতীরা। দেখা গেল মুর্শিদাবাদ থেকে বহু যুবক এখানে চাকরি পেয়েছেন। দমদমের নাগরিকদের অনেকেরই সন্দেহ সেসব টাকার বিনিময় করা হয়েছে। ১৮ থেকে ৪০-র বেকার যুবরা এ প্রসঙ্গে পলাশ দাসের কাছে তাঁদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেছেন।
অন্যদিকে, এখানকার বিজেপি প্রার্থী বিমল শংকর নন্দকে নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ বিজেপি’র মধ্যে। এখানকার মানুষ দেখছেন যিনি এতদিন টিভির পর্দায় সারদা-নারদার চুরি এবং ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে কাটমানি নেওয়াকে বৈধতার সার্টিফিকেট দিয়ে তৃণমূলের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তিনি এখন তৃণমূল বিরোধী হয়ে গেছেন রাতারাতি। আবার তৃণমূলের ভরাডুবি আঁচ করে বহু তৃণমূল কর্মী যেভাবে বিজেপি’তে গিয়ে নেতা হয়ে যাচ্ছেন তা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিজেপি’র পুরনো কর্মীরা। তারাও এমনকি পলাশ দাসের কাছে এসে বলছেন, তারা ওই পার্টিতে থাকতে চান না। বহু বিজেপি কর্মী দল ছাড়তে চান।
এই পরিস্থিতিতে যৌবনের ঢল নেমেছে প্রার্থী পলাশ দাস-এর সমর্থনে। প্রায় প্রতিটি পাড়াতেই সাতের দশকের শহিদের স্মরণে নির্মিত বেদিগুলির পাশ দিয়ে প্রচার পরিক্রমা যাবার সময় প্রবীণরা নবীনদের বোঝাচ্ছেন এবারে আর ভুল করা যাবেনা। তারা ১০ বছর ধরে ঠেকে শিখেছেন।
গরিবের রুটি রুজির স্বার্থে, বেকার যুবকের কাজের স্বার্থে তাঁরা ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চান না। ভুল শুধরোতে তাই এবার পলাশকেই নির্বাচিত করতে হবে।