৫৮ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৯ এপ্রিল, ২০২১ / ২৬ চৈত্র, ১৪২৭
এক অংশের সাংস্কৃতিক কর্মীবৃন্দ ভাবের ঘরে চুরি করছেন
গৌতম রায়
বামফ্রন্ট সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে নন্দীগ্রামে আন্দোলনের নামে অরাজকতা তৈরি করা হয়েছিল। সেই ঘটনার প্রায় একযুগেরও বেশি সময় কেটে গেছে। ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটপর্বের সময় সেই নন্দীগ্রাম পর্বকে নাটকীয়ভাবে আবার তুলে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, শিশির-শুভেন্দু অধিকারীর মদতেই নন্দীগ্রামে ২০০৭ সালে পুলিশ ঢুকেছিল। অনেকটা বাংলা প্রবাদবাক্য, ‘ঠাকুর ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি’র মতোই গোটা নন্দীগ্রাম পর্ব, আন্দোলনের নামে অরাজকতা, পুলিশের গুলিচালনা, মাওবাদী সংযোগ, একাংশের সংস্কৃতিকর্মীদের ভূমিকা - আর এই সব কিছুর পিছনে তাঁর নিজের সক্রিয় ভূমিকাটি মমতা নিজেই পরিষ্কার করে দিয়েছেন। অধিকারী পিতাপুত্রও মুখ্যমন্ত্রী মমতার স্বীকারোক্তির পাল্টা হিসেবে নন্দীগ্রামের যাবতীয় নাশকতামূলক ষড়যন্ত্রের পিছনে যে স্বয়ং মমতা আছেন, সেটা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।
নন্দীগ্রাম নিয়ে মমতা, শিশির, শুভেন্দুর এই চাপান উতোরের ভিতরেই যেসব সাংস্কৃতিক কর্মী সেদিন ওই পর্বের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত ছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগই নীরবতা পালন করলেও, সেই সময়ে প্রচারমাধ্যমে বেশি আলোকিত কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে জোরদার সওয়াল করতে শুরু করেছেন। গত দশ বছরে মমতার শাসন ঘিরে মাঝে মধ্যেই নরম গরম কথা বলে এই সব লোকেরা নিজেকে পাদপ্রদীপের সামনে মেলে ধরতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। ‘পরিবর্তন চাই’ স্লোগান ঘিরে ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে যাঁরা মুখর হয়ে উঠেছিলেন, এই নতুন করে সরব হওয়া লোকগুলি, তাঁদের ভিতর অন্যতম। কোনো কোনো বিশেষ আলোকপ্রাপ্ত সংস্কৃতিকর্মী এবং সেই সময়ে তাঁদের কিছু সহমতাবলম্বী সংস্কৃতিকর্মী বিভিন্ন পর্বে নন্দীগ্রামে গেছিলেন। মাওবাদীদের ঘনিষ্ঠ যে ছত্রধর মাহাতো তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হত্যার উদ্দেশে মাইন বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত ছিল, সেই ছত্রধরের সঙ্গে এইসব সংস্কৃতিকর্মী আলোচনা করেছিলেন সেদিন নন্দীগ্রামে গিয়ে। সেই ছত্রধর অবশ্য এখন তৃণমূল কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতা। এই পর্বেই এক অভিনেত্রী নন্দীগ্রাম পর্বের প্রথম শহিদ শঙ্কর সামন্তের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত শহিদ বেদিটি পা দিয়ে লাথি মেরে ভেঙে দিয়েছিলেন। শহিদ শঙ্কর সামন্ত হলেন সেই বামপন্থী কর্মী যাঁকে খুন করার আনন্দে একটি ভয়ঙ্কর প্ররোচনামূলক কবিতা লিখেছিলেন পরিবর্তন পন্থী এক কবি। একটি বিশেষ পত্রিকায় সেই প্ররোচনামূলক কবিতাটি প্রকাশিতও হয়েছিল। সেই কবিতায় কবি শহিদের ভাই নব সামন্তের কাটা মুণ্ডু দেখতে চেয়েছিলেন তেখালির খালে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রাম ঘিরে সর্বশেষ মূল্যায়নের পর শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ (চতুর্থ পর্ব) উপন্যাসের ‘টগর বোস্টমি’র মতো আচরণ সেই সময়ের সংস্কৃতি কর্মীরা করতে শুরু করেছেন। মমতার ছুপারুস্তম সাংস্কৃতিক বন্ধুরা, নন্দীগ্রামের সেই ঘটনাক্রমকে ‘আন্দোলন’ বলতে অভ্যস্ত। সেই ঘটনাক্রমকে কেবল কৃষক আন্দোলন বলেই তাঁরা থামছেন না। সেই ঘটনাক্রমকে এইসব সংস্কৃতিকর্মী তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে পর্যন্ত তুলনা করেছেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করবার লক্ষ্যে আর পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের রাজনৈতিক ক্ষমতা খর্ব করে জাতীয়স্তরে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে যে অরাজকতা তৈরি করা হয়েছিল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, সেই অরাজকতাকে যিনি বা যাঁরা তেভাগা আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করেন, তাঁদের বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবনী শক্তির তারিফ না করে পারা যায় না।
ভুল স্বীকারে কোনো দোষ নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নন্দীগ্রামপর্বে নিজেরা সংযুক্ত হয়েছিলেন - এই স্বীকারোক্তি যদি একাংশের সংস্কৃতি কর্মী, যাঁরা সেই অরাজকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, আজ তাঁরা করতেন, তাহলে তাঁরা কিন্তু নিন্দিত হতেন না। ভুল বুঝতে পারার জন্যে প্রশংসিতই হতেন। সেই ভুল স্বীকারের ধারপাশ দিয়ে না হেঁটে ধরি মাছ, না ছুঁই পানি গোছের যে অবস্থান তাঁরা নিয়েছেন, সেই অবস্থানের ফলে তাঁদের সেদিনের অবস্থানের মতোই আজকের পিঠ বাঁচানো অবস্থান ঘিরে সাধারণ মানুষের ভিতরে তৈরি হবে প্রবল ঘৃণা। এই ঘৃণা আগামীদিনে আরও লাগামহীন হবে যদি কায়েমি স্বার্থান্বেষীদের, সাম্প্রদায়িক শিবিরের রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটে।
একটি বিশেষ পত্রিকায় দুই নাট্য ব্যক্তিত্বের কথোপকথন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে নন্দীগ্রামে অরাজকতাকে মদত দেওয়া একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিজেকে নিরপেক্ষ, সমাজসচেতন মানুষ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই কথোপকথনের মূল সুর হিসেবে নন্দীগ্রাম পর্বে অতি উৎসাহী সংস্কৃতি কর্মীটি কিন্তু উগ্র, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলায় প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক শক্তির হয়ে ওকালতি করেছেন। এই সময়ের এক জনপ্রিয় কবিকে উদ্ধৃত করে নাট্য নির্মাণের সাংস্কৃতিক কলাকৌশলের ভিতর দিয়ে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকদের বিরুদ্ধতার কথা বললেও, সেই সংস্কৃতির মহৎ প্রাণ কিন্তু একটিবারের জন্যেও বলেন নি যে, নিছক পেশার দোহাই দিয়ে বিগত ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের সময় ওই কবিই তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে নির্বাচনী গান লিখে দিয়েছিলেন। নিরপেক্ষতাবাদী সংস্কৃতি কর্মীদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, সেই ভোট মিটে যাওয়ার অল্প কিছুদিন পরেই বিজেপি’র সর্বভারতীয় নেত্রী উমা ভারতী কলকাতায় এসে প্রকাশ্যে বলেছিলেন, একশোটি আসনে আরএসএস সরাসরি সাহায্য করেছে মমতাকে। তাই মমতা জিতেছেন। সে কারণেই মমতার পক্ষে সরকার তৈরি করা সম্ভবপর হয়েছে। আজ পর্যন্ত কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরএসএস’র সাহায্য প্রসঙ্গে উমা ভারতীর এই দাবি ঘিরে একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেন নি। কোনো কোনো সংস্কৃতি কর্মী কিন্তু অত্যন্ত প্রচ্ছন্নভাবে বিজেপি’র বিপদ, আরএসএস’র বিপদের মোকাবিলায়, বহু দোষ ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও মমতাতেই আস্থা রাখার কথা বলছেন। একটিবারের জন্যেও সংযুক্ত মোর্চার কথা বলছেন না। বামপন্থীদের কথা তো বলছেনই না। সেই সঙ্গেই এটাও কখনো বলছেন না যে, মমতা তাঁর বিগত দশ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে বিজেপি সম্পর্কে অনেক কথা বললেও সংসদে বিজেপি সঙ্কটে পড়লে, নিজের সাংসদদের দিয়ে বিজেপি-কে সঙ্কট থেকে বাঁচাচ্ছেন। অতি সম্প্রতি কৃষি বিল ঘিরে দলের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির প্রধান হওয়া সত্ত্বেও কমিটির মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেননি। করেছেন বিজেপি’র এক সাংসদ। কলকাতায় বসে কৃষি আইন নিয়ে মমতা যতই তর্জন গর্জন করুন না কেন, সেই বিল যাতে সংসদে ঠিক মতো অনুমোদিত হয়, সেজন্যে যে মমতার চেষ্টার ত্রুটি নেই, এই উপরে কুস্তি আর ভিতরে দোস্তি ঘিরে কিন্তু এইসব সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বা তাঁদের সহমতাবলম্বীরা একটিও কথা বলেননি।
সংস্কৃতি জগতের কোনো কোনো মানুষ আরএসএস’র ভয়ঙ্করতা বোঝাতে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য মানিক সরকারকে উদ্ধৃত করেছেন। সেই আরএসএস আমাদের এই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে গত দশ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে এইভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সে সম্পর্কে এইসব সংস্কৃতিপ্রেমিরা একটি শব্দও বলেন নি। গত দশ বছরে বামপন্থীদের, কংগ্রেসকে এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিজেপি-কেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দেয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকার। কিন্তু এই দশ বছরে আরএসএস’র কর্মকাণ্ডের মসৃণতায় কেন একবারের জন্যে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রতিরোধ মমতা করেননি, তার জবাব তো এইসব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অদৃশ্য বন্ধুদেরকেই দিতে হবে।
মোহন ভাগবত এই দশ বছরে যেভাবে পশ্চিমবঙ্গের নিত্যযাত্রীতে পরিণত হয়েছিলেন, মমতা কি তার প্রতিরোধে একটিও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছেন? একটি বিবৃতি টুকুনিও দিয়েছেন? না। বরং আরএসএস’কে সভা করবার অনুমতি দিলেও আরএসএস’র বিরুদ্ধে বামপন্থীরা সভা করতে চাইলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মমতার প্রশাসন সভা করবার অনুমতি দেয়নি। কই, এইসব নিয়ে তো অতি উৎসাহী সংস্কৃতি সেবক বা তাঁর সহমতাবলম্বীদের কখনো টুঁ শব্দটি করতে দেখি নি। এখন তপ্ত কড়াইয়ের হাত থেকে বাঁচতে কেন এইসব সংস্কৃতিসেবীরা গরম তাও তাতে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার কথা বলছেন? আর এই বলার ভিতরে একটা তথাকথিত নিরপেক্ষতাবাদীর মুখোশ রাখছেন?
বিজেপি’র বিরোধিতা করব, অথচ বিজেপি’র মস্তিষ্ক আরএসএস সম্পর্কে নীরব থাকব - এই বোধ তো বাস্তব রাজনীতির পরিচায়ক হতে পারে না। ভারতের অন্যপ্রান্তে বিজেপি প্রসঙ্গে আরএসএস’র কথা এঁরা বলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস কি করে গত দশ বছরে এতো বাড়বাড়ন্তের পর্যায়ে এলো, কেন রাজ্যের শাসক বিজেপি’র বিরুদ্ধে বিজেপি ঘিরে অনেক নরম গরম কথা বললেও, বিজেপি’র মূল চালিকাশক্তি আরএসএস সম্পর্কে নীরব - এইসব প্রশ্নের ধারকাছ দিয়ে কিন্তু এইসব মানুষেরা বা তাঁর সহ মতাবলম্বীরা একটিবারের জন্যে হাঁটছেন না।
কেন আরএসএস’র রামনবমীর সশস্ত্র মিছিলের বিপরীতে তৃণমূল কংগ্রেস হনুমান জয়ন্তী পালন করলো, তা নিয়ে মিছিল বের করলো, এইসব প্রশ্নের ধারকাছ দিয়ে কিন্তু সংস্কৃতি কর্মীর পরিচয়ের আড়ালে মমতার বন্ধুরা একটিবারও কোনোভাবেই হাঁটছেন না। বিজেপি’র উগ্র ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িকতার পাল্টা হিসেবে মমতার প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কেন এঁরা একদম নীরবতা পালন করে চলেছেন?
কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টকে একাংশের সংস্কৃতিকর্মী বামফ্রন্টের ‘ক্রাচ’ বলে অভিহিত করেছেন। তৃণমূলকে সরাসরি ভোট দেওয়ার কথা বলছেন না, এই কথা বলেও এইসব সংস্কৃতিকর্মীরা বলেছেন, তিনি বা তাঁরা বিজেপি’র বিরুদ্ধে কোনো বিকল্প পাচ্ছেন না। কি ধরনের ভাবের ঘরে চুরি, তা ভাবলে বেশ মজাই লাগে! তৃণমূল কংগ্রেস, যাদের সরকারের বিরুদ্ধে এইসব অতি বিপ্লবী সংস্কৃতিকর্মী কামদুনির ঘটনার পর অনেক গরম গরম কথা বলেছিলেন, সেই তৃণমূলকেই ভোট দেওয়ার কথা এখন সরাসরি বলছেন না বলে এঁরা দাবি করছেন। অথচ পরের উপর নির্ভরশীল বলে বামপন্থীদের তাঁরা খারিজ করছেন - এই মোহ আবরণের আর কি দরকার আছে?
কংগ্রেসের সঙ্গে বামপন্থীদের নির্বাচনী সমঝোতা ঘিরে এইসব বিপ্লবী সংস্কৃতিকর্মীরা ভয়ঙ্কর বিরক্ত। কিন্তু এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থানই যে সেই কংগ্রেসের ভিতরেই - সেটা তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন কি করে? ’৮৪-র শিখ বিরোধী দাঙ্গার সময়কালে ভোটে জিতেই যে মমতা প্রথম সাংসদ হয়েছিলেন - এইসব একটি কথাও কিন্তু এখন এইসব সংস্কৃতিকর্মীর কি একটিবারের জন্যেও মনে পড়ছে না? আব্বাস সিদ্দিকির অতীত নিয়ে চর্চা চলতেই পারে, কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রীসভাতে প্রায় সাড়ে ছয় বছর থাকা নিয়ে নিশ্চুপ থাকাই ভালো? মুসলমানের রক্তে হাত রাঙিয়ে গুজরাট গণহত্যার পর বিধানসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদী জিতলেন। সেই মোদীকে মমতা ফুল পাঠালেন। এসব অতীত কোনো অতীতই নয়, কি বলেন এই বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবীরা? কেবল বামপন্থীদের খুঁত ধরা আর আব্বাস সিদ্দিকির অতীত খুঁজলেই তো মমতার সুবিধা। আর মমতার সুবিধা হলেই তো তাঁকে যারা ’দেবী দুর্গা‘ মনে করে সেই আরএসএস’র সুবিধা। আরএসএস সুবিধা পেলে আখেরে যে তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি’র সুবিধা। কি বলেন বিপ্লবী সংস্কৃতি কর্মীরা?
আইএসএফ নেতা আব্বাস সিদ্দিকির ‘ভোল বদল’ নিয়ে সবিশেষ চিন্তিত এক সংস্কৃতি কর্মী। আব্বাসের বিকৃত করা ভিডিয়োগুলি, যেগুলি আরএসএস-বিজেপি আর তৃণমূলের আইটি সেলের কর্মীরা পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ছড়িয়েছে বাংলার সম্প্রীতির পরিবেশকে চূরমার করতে - সেটাই এইসব বিপ্লবী ‘সংস্কৃতি বাবু’দের মতো মানুষদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য লাগছে। কারণ, আব্বাস যে ধর্মের পরিমণ্ডলের মানুষ হয়েও বিভাজনের রাজনীতি করেন না, এটাই তো এইসব ভাড়াটে বুদ্ধি ব্যবসায়ীরা যাঁদের হয়ে উঞ্ছবৃত্তি করছেন, তাঁদের কাছে খুব বড়োরকমের বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। তাই তো আব্বাসকে ভোলবদলকারী না বললে এইসব সাংস্কৃতিক কর্মীর প্রগতিবাদী সাজার অভিনয়ে খামতি থেকে যাচ্ছে। আব্বাস ধর্মের কথা না বলে, মুসলমানের কথা কেবলমাত্র না বলে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ,ভাষা, লিঙ্গ নির্বিশেষে পিছিয়ে পড়া মানুষের অধিকার বুঝে নেওয়ার কথা বলছেন। মমতা যাঁদের কৌতুকে, করুণায় দু’টো চারটে টাকা দিয়ে তাঁদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ধরে নিতে চাইছেন, আব্বাস তো তাঁদের অর্থনেতিক স্বাবলম্বনের কথা বলছেন। শিক্ষার কথা বলছেন। স্বাস্থ্যের কথা বলছেন। নাগরিক অধিকারের কথা বলছেন। তাই তো আব্বাস, এইসব ‘সংস্কৃতিসেবী’র মতো মানুষ - যাঁরা একদা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে যোগসাজশ করে বামফ্রন্ট সরকারকে উৎখাত করে বিজেপি-কে ‘স্বাভাবিক মিত্র’ বলে আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলে (বিবিসি) দাবি করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় আনা লোকেদের কাছে ‘ভোলবদল’ এর লোক হিসেবে অভিহিত হন। আর বিজেপি’কে খাল কেটে এই রাজ্যে ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্যকারী মমতা বিশেষ সহায়ক শক্তি হয়েও নিজেকে প্রগতিবাদী হিসেবে দেখাবার চেষ্টা করেন মিডিয়াকে সম্বল করে।