E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা / ৯ এপ্রিল, ২০২১ / ২৬ চৈত্র, ১৪২৭

নির্বাচকদের দরবারে-৪

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


বছরখানেক আগে মার্চের শেষ দিকে ‘গো করোনা গো’ বলে নাচতে নাচতে শেষে থালা বাজিয়েছিল ভারতবাসীর একটা বড়ো অংশ। মাননীয় শ্রী অমিতাভ বচ্চন মশাই সেই ছবি নম্বর দিয়ে ট্যুইটও করেছিলেন। যদিও করোনা যে তাতে ‘গো’ হয়নি সেটা বুঝতে অনেকেরই বেশ সময় লেগে গেছে। আর সেটা বুঝতে গিয়ে দেশের মানুষকে হারাতে হয়েছে অনেক কিছু। এই সময়েই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছেমতো কাউকে কোনো সময় না দিয়ে ৪ ঘণ্টার ঘোষণায় লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিকদের অবর্ণনীয় দুর্দশা, ১৪ কোটি মানুষের রোজগার হারানো, দেশের কিছু কর্পোরেটদের সম্পদ বৃদ্ধি এবং জনৈক বিশেষ ব্যক্তির দাড়ি বৃদ্ধি ও লুক পালটানো ছাড়া রঙ্গময় এই দেশে বাকিটুকু নিস্তরঙ্গই। শুধু গরিব মানুষ আরও আরও গরিব হয়েছে এই সময়েই। তাঁদের নিয়ে অত ভাবার সময় কোথায়? সোনা দিয়ে দেশ মুড়ে দেবার পর আপাতত তাঁরা ‘সোনার বঙ্গাল’ গড়ার স্বপ্নে বিভোর। তার জন্য ‘ডবল ইঞ্জিন’ থেকে শুরু করে ‘আর নয় অন্যায়’ জাতীয় কথা কাহিনি ঘুরে বেড়াচ্ছে বাজারময়। পণ্যকে রংচং-এ না করলে তা বিকোবে কেমনে? এত টাকা কোথা থেকে আসছে, কে দিচ্ছে - তা নিয়ে কমিশনও কোনো প্রশ্ন করেনা। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করলে কেউ উত্তর দেয় না। কারণ তাঁরা শুধু নিজেদের ‘মন কী বাত’ শোনাতেই অভ্যস্ত। এছাড়া বিশেষ কথা বলেন না। আপনি শুধুই দর্শক এবং শ্রোতা। প্রশ্ন নৈব নৈব চ। তা সে পি এম কেয়ারস নিয়েই হোক বা ইলেকটোরাল বন্ড নিয়ে, কৃষক আন্দোলন নিয়ে, দেশের বেকার সমস্যা নিয়ে, রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদের বেসরকারিকরণ নিয়ে অথবা ইভিএম নিয়ে। যা নিয়েই প্রশ্ন থাকুক না কেন, আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবার কেউ নেই। বেশি প্রশ্ন করলেই আপনি হয়ে যেতে পারেন দেশদ্রোহী, দেশ কে গদ্দার। তখন আপনার দিকে আঙুল তুলে কেউ বলতেই পারে ‘দেশ কে গদ্দারোকো, গোলি মারো শালো কো’। না সেরকম কেউ বললেও তার কোনো বিচার এই আজব দেশে হবার নেই। বোম্বাগড়ের রাজা কেন ছবির ফ্রেমে আমসত্ত্ব ভাজা বাঁধিয়ে রাখতেন সেটাই বা কেউ জানতো নাকি?

রাজ্যে যখন নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলছে, তিন দফার নির্বাচন হয়ে গেছে তখন হঠাৎ এইসব লিখতে শুরু করলাম কেন এটা মনে হতে পারে। কারণ এই লেখা যখন আপনার হাতে গিয়ে পৌঁছবে সেদিন চতুর্থ দফার নির্বাচন কিছু জায়গায় চলছে, আবার অনেক জায়গায় হয়ে যাবে। এখন তো নির্বাচন নিয়ে লেখার কথা। হঠাৎ করোনা কেন? না। এই লেখাটা করোনা নিয়ে নয়। যদিও আপাতত করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে দিশেহারা দেশের বেশ কয়েকটা রাজ্য। ৮এপ্রিল সকালে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে দেশে শেষ ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ১,২৬,৭৮৯ জন। কাজেই এটা পরিষ্কার যে, থালা বাজিয়ে করোনা বিদায় হয়নি। করোনা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা লেখার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু করোনার নামে থালা বাজানোর পি আর ইভেন্ট হয়েছে। অনেক মানুষ থালা বাজিয়েছে, নেচেছে। ঠিক ভোটের সময়েও আরও এক পি আর ইভেন্ট ‘সোনার বঙ্গাল’ গড়ার প্রতিশ্রুতিতে, ‘ডবল ইঞ্জিন’-এর প্রতিশ্রুতিতে অনেকে নাচছেন। কেউ বলছেন ‘বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়’। তাতে অনেকে নাচছেন। ‘দিদিকে বলো’, ‘দুয়ারে সরকার’ ব্যর্থ হবার পর আরও এক ইভেন্ট। যদিও এই শত শত ইভেন্টের মাঝে মানুষের সমস্যার কথা একমাত্র বামপন্থীরা ছাড়া, সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীরা ছাড়া কেউ বলছেন না। সেখানে কোনো ইভেন্ট নেই। যেটুকু প্রচার আছে, জনসভায় ভিড় আছে, মিছিলে মানুষ আছে তার কোনো প্রভাব মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে নেই। অবশ্য থাকার কথাও নয়। তাঁরাও তো ইভেন্টে নির্ভর করেই চলেন। মানুষ কোন্‌ খবরটা ‘খাবে’ সেটা ভেবে খবর নির্বাচন করেন। তাই সেখানে মানুষের সমস্যার থেকে আকর্ষণীয় ‘শোভন-বৈশাখী’-র গল্প, আর দলবদলের কুড়মুড়ে চিপস। এয়ার ইন্ডিয়া কেন বেসরকারিকরণ হচ্ছে, ব্যাঙ্ক কেন বেসরকারিকরণ হচ্ছে তা নিয়ে শেষ ১৫ দিনে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় প্রথম পাতায় কটা খবর দেখেছেন একটু মনে করে বলুন তো। এই রাজ্যেরই কোনো এক মেইন্সট্রিম মিডিয়া কিন্তু ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে ধর্মঘটের খবর করেছে। যেখানে মূল বিষয় দু দিনের ধর্মঘটে ব্যাঙ্কের কত টাকার চেক লেনদেন আটকে গেল আর কত টাকা ক্ষতি হলো। অথচ ব্যাঙ্ক বিক্রি হলে ব্যাঙ্কের সাধারণ গ্রাহকরা কতটা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন তা নিয়ে কোনো বিদগ্ধ আলোচনা নেই। এদের তার থেকে অনেক বেশি চিন্তা বামপন্থীদের নিয়ে। বলা ভালো ‘সিপিএম’কে নিয়ে। ‘দূরবিন দিয়ে দেখতে না পাওয়া’ একটা দল কেন ‘আব্বাস সিদ্দিকির আই এস এফ’-এর সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে তাই নিয়ে। আরে বাবা, যারা নাকি আপনাদের কথায়, আপনাদের তৈরি করা বাইনারি, ন্যারেটিভে হিসেবের বাইরে তাদের নিয়ে এত চিন্তা কীসের?

আসলে চিন্তা আছে। হিসেবের বাইরে রেখে দেওয়া ‘দুদুভাতু’ ভেবে নেওয়া প্রতিপক্ষ যখন প্রবল বিক্রমে গর্জন শুরু করে তখন হৃৎকম্প শুরু হওয়া স্বাভাবিক। হিসেবের গণ্ডগোল হওয়া স্বাভাবিক। চতুর অ্যাঙ্কার যখন কোনোভাবেই সাক্ষাৎকার নিতে বসে সামনে থাকা ব্যক্তিকে নাস্তানাবুদ করতে না পেরে ঠান্ডা শীতল স্টুডিওতে বসে ঘামতে থাকেন তখন নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। কারণ সবকিছুই তো চেন সিস্টেমে চলে। সেই চেন ভেঙে গেলে বিজ্ঞাপন থেকে বাইনারি - সবেতেই জোর ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা। আর করোনা আটকানোর প্রথম শর্তই তো ‘ব্রেক দ্য চেন’। যা শিখিয়ে গেছে এই দেশেরই ছোট্ট এক রাজ্য কেরালা। হ্যাঁ। অবশ্যই বামপন্থী সরকার। লড়াইটা তাই অসাধু চেন রক্ষা করার সঙ্গে ব্রেক দ্য চেনের। যে লড়াইয়ের মুখোমুখি পড়ে শেষ কটা দিনে ঘুম ছুটেছে অনেকে বাঘা বাঘা সাংবাদিক থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের।

এয়ার ইন্ডিয়া কেন বেসরকারিকরণ হচ্ছে, ব্যাঙ্ক কেন বেসরকারিকরণ হচ্ছে তা নিয়ে শেষ ১৫ দিনে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় প্রথম পাতায় কটা খবর দেখেছেন একটু মনে করে বলুন তো। এই রাজ্যেরই কোনো এক মেইন্সট্রিম মিডিয়া কিন্তু ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের প্রতিবাদে ধর্মঘটের খবর করেছে। যেখানে মূল বিষয় দু দিনের ধর্মঘটে ব্যাঙ্কের কত টাকার চেক লেনদেন আটকে গেল আর কত টাকা ক্ষতি হলো। অথচ ব্যাঙ্ক বিক্রি হলে ব্যাঙ্কের সাধারণ গ্রাহকরা কতটা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন তা নিয়ে কোনো বিদগ্ধ আলোচনা নেই। এদের তার থেকে অনেক বেশি চিন্তা বামপন্থীদের নিয়ে। বলা ভালো ‘সিপিএম’কে নিয়ে। ‘দূরবিন দিয়ে দেখতে না পাওয়া’ একটা দল কেন ‘আব্বাস সিদ্দিকির আই এস এফ’-এর সঙ্গে আসন সমঝোতা করবে তাই নিয়ে। আরে বাবা, যারা নাকি আপনাদের কথায়, আপনাদের তৈরি করা বাইনারি, ন্যারেটিভে হিসেবের বাইরে তাদের নিয়ে এত চিন্তা কীসের?

এখনও মনে পড়ছে যেদিন সংযুক্ত মোর্চার বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হচ্ছিল, নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে মীনাক্ষী মুখার্জির নাম ঘোষণা হবার পর এক সাংবাদিক অপার বিস্ময়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে প্রশ্ন করেছিলেন - মীনাক্ষী কেন? সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর পেয়ে গেছিলেন। কিন্তু দিবারাত্র তৃণমূল এবং বিজেপি’র মাস্টারস্ট্রোক-এর গল্প লিখে চলা ব্যক্তিরা একবারের জন্যও সংযুক্ত মোর্চার এই মাস্টারস্ট্রোক ধরতে পারেননি। যা বোঝা গেছে ক’দিন পর থেকে। এক বাম প্রার্থীকে ঘিরে হাইভোল্টেজ নন্দীগ্রাম যে এভাবে জেগে উঠবে তা তাঁদের কল্পনারও অতীত ছিল। এখন আর নন্দীগ্রামে কে জিতবেন তা আলোচ্য বিষয় নয়। কিন্তু সম্পূর্ণ প্রচার এবং ভোট পর্বে সিপিআই(এম) প্রার্থী মীনাক্ষী মুখার্জি এবারের বাকি ক’দফার নির্বাচনের যে সুর বেঁধে দিয়েছেন তাতেই ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা গোটা রাজ্যের। গেল গেল রব। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই, চোখে চোখ রেখে লড়াই-এর জন্য কোনো শতকরা লাগে না, তা মাত্র কটা দিনেই গোটা রাজ্যের মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে মীনাক্ষী। যে সুর আরও চড়িয়ে দিয়েছে সৃজন, দীপ্সিতা, প্রতীক উর, পৃথা, ঐশী, শতরূপ, অপূর্বরা। আর ময়দানে তো আগে থেকেই ছিলেন পোড় খাওয়া সেলিম, সুজন, কান্তিদের মতো অভিজ্ঞরা। সঙ্গে অবশ্যই নতুন সংযোজন আইএসএফ-এর প্রধান উপদেষ্টা আব্বাস সিদ্দিকি। গোটা নির্বাচনী প্রচার পর্বে যাঁর ভুল খুঁজতে ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে বসে থাকা ব্যক্তিরাও এখনও পর্যন্ত কিছু খুঁজে না পেয়ে ঢোক গিলতে বাধ্য হয়েছেন। ‘খেলা হবে’ আর ‘রাম কার্ড’ দেখানো হবের জনকরা এই খেলার, খেলা ঘোরার আগাম আন্দাজ যে একদমই করতে পারেননি তা তিন দফার নির্বাচন পর্বের শেষে নিঃসন্দেহে বলা যায়। যারা বামেদের খেলার বাইরে রেখে নিশ্চিন্তে নিজেরা খেলে যাবেন ভেবে বাইনারি তৈরি করে ফেলেছিলেন সেই বাইনারি আপাতত ভেঙে খানখান। রাজ্যে নির্বাচনী ফলাফল কী হতে পারে তা সত্যিই এখন খুবই অস্পষ্ট। ওপিনিয়ন পোল এবং এক্সিট পোলের হিসেব না মেলার সম্ভাবনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রবল হয়ে উঠছে।

গত ৭ এপ্রিল হাওড়াতে নির্বাচনী প্রচারে এসেছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মানিক সরকার। রাজ্যে বিজেপি’র বহুল প্রচারিত ডবল ইঞ্জিন সরকারের প্রচার প্রসঙ্গে গতকাল তিনি জানান - পশ্চিমবাংলায় জনগণ থেকে তৃণমূল কংগ্রেস বিচ্ছিন্ন। আর সেই সুযোগে বিজেপি মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এখানে ডবল ইঞ্জিন সরকারের স্লোগান তুলছে। অথচ ত্রিপুরায় এখন জঞ্জালের রাজ চলছে। সরকারের কাজকর্মের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করা যাচ্ছে না। এর থেকে সংবাদমাধ্যমও বাদ যাচ্ছে না। ত্রিপুরার মানুষ আজ বুঝতে পারছেন তারা আজ সর্বস্বান্ত। লাল ঝান্ডা নিয়ে আন্দোলন করা ছাড়া আর বাঁচার কোনো রাস্তা নেই, এই উপলব্ধি করছেন সেখানকার জনগণ।

তিনি আরও বলেন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিপুরায় সরকারে এসেছে বিজেপি। রাজ্যের মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে তারা। বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে, গরিব মানুষের মধ্যে অর্থ বিলি করে, বেকার যুবকদের কাজ দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ত্রিপুরায় সরকার গঠন করেছিল বিজেপি। আজ রাজ্যের মানুষ প্রত্যক্ষ করছে কোনো বেকারের কাজ তো হয়নি, বরং কাজ হারিয়ে বহু মানুষ নতুন করে বেকার হয়েছে। বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিন প্রচার প্রসঙ্গে গত ক’দিন আগেই এক সাংবাদিক সম্মেলনে এবারের নির্বাচনে চণ্ডীতলা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী তথা দলের পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম জানিয়েছিলেন - এখন মোদী ডবল ইঞ্জিনের কথা বলছেন। এই তিনিই আগে দু’টো লাড্ডুর কথা শোনাননি? এক হাতমে দিদি আর দুসরে হাতমে মোদীকা লাড্ডু রহেগা। সেটা কী ছিলো? ত্রিপুরায় তো ডবল ইঞ্জিন সরকার। বিহারে আছে। উত্তরপ্রদেশে আছে। ঝাড়খণ্ডে ছিলো। এখন নেই। আমরা যখন বারবার বলছি মানুষের জীবন জীবিকার প্রশ্নে, প্রান্তিক মানুষ, দুর্বল মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, তখন এই সরকার সবথেকে বিত্তশালী, সবথেকে ক্ষমতাশালীদের জন্য কাজ করছে।

গত ৩ এপ্রিল অন্য এক সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম বলেন - যত নির্বাচন এগোচ্ছে, উত্তাপ যত বাড়ছে তৃণমূল তত গলতে শুরু করেছে। আজকে দাঁড়িয়ে একথা স্পষ্ট যে, মানুষ তৃণমূলের এই অপশাসনের বিরুদ্ধে পথ খুঁজছেন। সংযুক্ত মোর্চা বিকল্প হিসেবে হাজির হয়েছে। বিজেপি একটা বিভেদকামী শক্তি হিসেবে কাজ করছে। তারা এমন কিছু বিষয় নিয়ে আসছে যার সঙ্গে মানুষের সমস্যার কোনো সম্পর্ক নেই। গত ১ বছরে করোনাকালে রাজ্য সরকার যেরকম ব্যর্থ কেন্দ্রীয় সরকার সেরকমই ব্যর্থ। কর্মহীন মানুষের জন্য কোনো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প নেই। আমরা বামপন্থীরা বারবার এই বিষয়ে দাবি জানিয়েছি।

১০, ১৭, ২২, ২৬, ২৯ এপ্রিল। তিন দফা ভোটের শেষে রাজ্যে বাকি এখনও পাঁচ দফা। ২৯৪ আসনের মধ্যে ৯১ আসনে ভোট নেওয়া হয়ে গেছে। এখনও বাকি ২০৩ আসনের ভোট। আগামী ক’দিনেও রাজ্যের আকাশে আরও অনেক হেলিকপ্টার উড়বে, আরও অনেক প্রতিশ্রুতির বেলুনও উড়বে। গত প্রায় ৭ বছর ধরে দেশ-ধ্বংসকারীদের মুখ থেকে শোনা যাবে ‘সোনার বঙ্গাল’ গড়ার প্রতিশ্রুতি। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজ্য ধ্বংসকারীদের মুখ থেকে শোনা যাবে রাজ্য গড়ার প্রতিশ্রুতি। হবে আরও কিছু দলবদল। শিবির বদলাবদলি। হোয়াটস অ্যাপে বেশ কিছু মেসেজ চালাচালি। খবরের কাগজ, ডিজিটাল মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া খুললেই চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন। আপনার ফোনে বেজে উঠবে কোন্‌ রাজনৈতিক দল আপনার জন্য কতটা ভাবেন আর কী কী করবেন সেই প্রতিশ্রুতির ফোন কল। আর বামেরা, সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থীরা একইভাবে বাকি ক’দিনও মাঠে ময়দানে গলার শির ফুলিয়ে বলে যাবে একই কথা। দেশের কথা, দেশ বাঁচানোর কথা, রাজ্য বাঁচানোর কথা, শিল্পের কথা, চাকরির কথা, বেসরকারিকরণের বিরোধিতার কথা, অর্থনীতির কথা, মানুষের রুটি রুজি অধিকারের কথা, হাল ফেরাতে লাল ফেরানোর কথা। আগামী পাঁচ বছর আপনি কেমন ভাবে বাঁচবেন, কেমন ভাবে আপনার রাজ্যকে দেখতে চাইবেন সেই সিদ্ধান্ত নেবার ভার একান্তভাবেই আপনার ওপরেই বর্তাবে। আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানো ঠিক করবে আপনি রাস্তার কোন্‌ দিক ধরে হাঁটা শুরু করবেন তার ওপরেই।