E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৭ সংখ্যা / ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ / ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

গুজরাটে নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি’র বাঙালি বিদ্বেষ

জাতি-বিদ্বেষে উসকানি দেওয়ায় বক্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উগ্র সাম্প্রদায়িক বিজেপি যে শুধু অহিন্দু বিদ্বেষীই নয়, অহিন্দিভাষী বিশেষ করে বাঙালিদের প্রতিও বিদ্বেষপরায়ণ, তা সম্প্রতি গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রকট হতে দেখা গেছে। ১ ডিসেম্বর ভালসাদে বিজেপি’র এক নির্বাচনী জনসভায় চলচ্চিত্র অভিনেতা পরেশ রাওয়াল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অপদার্থতাকে আড়াল করে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনে কদর্য বাঙালি বিদ্বেষকে উগড়ে দিয়েছেন। মোদি জমানায় রান্নার গ্যাসের আকাশছোঁয়া দাম ও তীব্র বেকারত্বকে হালকা করে দিতে তাঁর এমন মন্তব্যে হাততালির বদলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। পরে বাধ্য হয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেও উলটে উদ্বাস্তু সমস্যাকে উসকে দিয়েছেন।

পরেশ রাওয়ালের কুৎসিত বিদ্বেষ-ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য ও পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে এই অভিযোগপত্রকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করেছে পুলিশ।

দেশজুড়ে এবং বিশেষকরে গুজরাটের নির্বাচনী প্রচারে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, তীব্র বেকারত্ব এবং গ্যাসের লাগামহীন দামের জন্য বিজেপি-কে প্রবল চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। তাই গুজরাটের শেষ দফার ভোটের আগে অভিনেতা পরেশ রাওয়ালকে ভালসাদে নির্বাচনী সভার মঞ্চে তুলে ফায়দা তুলতে চেয়েছিল বিজেপি। উলটে বিপাকে পড়তে হয়েছে বিজেপি-কে। পরেশ রাওয়াল দেশজোড়া সংকট, সাধারণ মানুষের জ্বলন্ত সমস্যাগুলিকে হালকা করে দেবার উদ্দেশ্যে বলেন, "গ্যাস সিলিন্ডারের অনেক দাম ঠিকই। কিন্তু কাল দাম কমে যেতেই পারে। দেশের মানুষজনের কর্মসংস্থানও হবে নিশ্চিত। কিন্তু যদি রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশীরা আপনার পাশে থাকতে শুরু করেন দিল্লির মতো, তাহলে কী হবে? তখন গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে কী করবেন? বাঙালিদের জন্য মাছ ভাজবেন?’’ জনসভার এই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই বঙ্গভাষীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সোশ্যাল মিডিয়া সহ নানা মাধ্যমে বিজেপি'র এই প্রাক্তন সাংসদ-অভিনেতার বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন তাঁরা। প্রবল সমালোচনার পর সাফাই দিতে গিয়ে রাওয়াল বলেন, "মাছ নিয়ে কিছু বলিনি, গুজরাটের মানুষও মাছ রান্না করে খায়।" তিনি টুইটারে লিখেছেন, বাঙালি বলতে তিনি রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশ থেকে আসা বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের বোঝাতে চেয়েছেন। তবুও যদি কারো অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে থাকেন তবে তিনি ক্ষমা চাইছেন। তাতে অবশ্য ক্ষোভের পারদ নামেনি।

লক্ষণীয় বিষয় হলো,জাতিগত, ভাষাগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিভাজনের রাজনীতিকে উসকে দেওয়ার মতো মারাত্মক অপরাধ করা সত্ত্বেও পরেশ রাওয়াল সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপি দলের শীর্ষ নেতারা নীরব। দিল্লির বিরুদ্ধে সদা সরব এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।বাঙালিদের প্রতি চরম অবমাননা সত্ত্বেও বঙ্গ বিজেপি'র কারো মুখে কোনো রা নেই।

প্রসঙ্গত, গুজরাট গণহত্যার পর তীব্র সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও মেরুকরণের আবহে সেখানে বিপুল ভোটে বিজেপি জিতলেও পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনে বিজেপি'র শক্তিক্ষয় হয়েছে। বর্তমানে সেখানেও বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি,ফসলের দাম না মেলা প্রভৃতিতে সংকটের মাত্রা বেড়েছে সাধারণ মানুষের। তাই গুজরাট মডেল,উন্নয়ন প্রভৃতির উপর বিজেপি'র ভরসা অনেকটাই কমেছে। এই গুজরাট নির্বাচনের উপর ওদের আগামী লোকসভা নির্বাচনের সাফল্য নির্ভর করছে বলে ওরা ভাবছে। তাই ঘৃণ্য জাতিগত, ভাষাগত বিদ্বেষমূলক প্রচারকে অবলম্বন করেছে। সেইজন্যই ওরা মানুষের জীবনজীবিকার সংকটকে গুলিয়ে দিতে এমন কুৎসিত প্রচারে মত্ত হয়েছে।

মহম্মদ সেলিম কলকাতা পুলিশের কাছে পরেশ রাওয়ালের বিদ্বেষ-ভাষণের ভিডিয়ো লিঙ্ক সহ অভিযোগ জানান। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে সেই অভিযোগপত্রকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করেছে কলকাতা পুলিশ। সেখানে পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ১৫৩এ, ১৫৩বি, ৫০৪ এবং ৫০৫ ধারায় ইচ্ছেকৃত ঘৃণা বিদ্বেষের প্রচার, দাঙ্গায় উসকানি, প্রকাশ্যে অভব্যতার মাধ্যমে সামাজিক শান্তি বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। তালতলা থানার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এফআইআর দায়ের সহ তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী ১২ ডিসেম্বর অভিনেতাকে তালতলা থানায় তলব করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বামপন্থী ও প্রগতিশীল মানুষ পরেশ রাওয়ালের কুৎসিত মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। 'আওয়াজ' সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে।