৬০ বর্ষ ১৭ সংখ্যা / ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ / ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
সিএএ-এনপিআর-এনআরসি চালু করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হন
অর্ণব ভট্টাচার্য
সম্প্রতি গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সিএএ-এনআরসি সংক্রান্ত বিতর্ক আবার সামনে এসেছে। এনিয়ে হুংকার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপি’র সর্বভারতীয় ও প্রাদেশিক নেতৃত্ব। কোভিড অতিমারী শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত আমাদের দেশে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে নানা স্থানে তীব্র গণবিক্ষোভ সংঘটিত হচ্ছিল। কোভিড সংক্রান্ত বিধি-নিষেধের কারণে স্বাভাবিকভাবেই এই বিক্ষোভ কর্মসূচিগুলি প্রত্যাহৃত হয়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, সিএএ-এনআরসি নিয়ে বিতর্ক মিটে গিয়েছে। হিন্দুত্ববাদী আরএসএস এবং বিজেপি নাগরিকত্বের ইস্যুতে তাদের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়িত করতে বদ্ধপরিকর এবং এর জন্য তারা নির্বিচারে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। সেজন্য বাঙালি মাত্রেই বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী বা রোহিঙ্গা এ কথা প্রচার করতেও তারা কসুর করছে না। ফলে সিএএ এবং এনআরসি সংক্রান্ত আলোচনাকে যুক্তিপূর্ণভাবে সংঘটিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। হিন্দুত্ববাদীদের অপকৌশল উন্মোচিত করা এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য ও অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য এ কাজ অত্যন্ত জরুরি।
দেশভাগের দায় জাতীয় নেতৃত্ব বহন করেননি, বহন করতে বাধ্য হয়েছেন লক্ষ লক্ষ অসহায় উদ্বাস্ত মানুষ। তবে আর্থিক অনটন, অনিশ্চয়তা থাকলেও ২০০৩ সালের আগে কখনো এই বিপুল সংখ্যক ছিন্নমূল মানুষকে নিজেদের নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়ার জন্য এতটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে হয়নি। কেননা এর আগে ভারতের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত যে আইন ছিল তাতে কোথাও উদ্বাস্তুদের বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করার বন্দোবস্ত ছিল না। হিন্দু উদ্বাস্তুদের জন্য এখন যারা কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করেন, সেই বিজেপি’র সরকার যখন কেন্দ্রে বাজপেয়ীর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছিল তখন যে নাগরিকত্ব আইন,২০০৩ প্রবর্তিত হয় তাতে প্রথম উদ্বাস্তুদেরকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন প্রবর্তনের আগে আমাদের দেশে জন্মসূত্রে নাগরিক হিসেবে গণ্য করার নিয়ম ছিল এইরকমঃ
১। ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ থেকে ১ জুলাই, ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারতে জন্মগ্রহণ করা যে কোনো ব্যক্তি ভারতীয়। সেক্ষেত্রে তার পিতামাতার জাতীয়তা বিবেচনাধীন হবে না।
২। ১ জুলাই ১৯৮৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৪ পর্যন্ত ভারতে জন্মগ্রহণ করা একজন ব্যক্তি নাগরিক হিসেবে তখনই গণ্য হবেন, যখন তার পিতামাতার অন্তত একজন সেই ব্যক্তির জন্মের সময় ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।
২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন প্রবর্তনের আগে আমাদের দেশে সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী ১৯৪৮ সালের ১৯ জুলাইয়ের পর ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে যারাই ভারতে প্রবেশ করবেন তারা জন্মসূত্রে না হলেও রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধীকরণ, ন্যাচারালাইজেশন বা দেশীয়করণ ইত্যাদি নির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে নাগরিক হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইনের ২(১)(খ) ধারায় বলা হলো, যেব্যক্তি ভারতে বৈধ পাসপোর্ট বা অন্য নির্দিষ্ট ভ্রমণ সংক্রান্ত নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশ করেছে বা অনুমোদিত সময়সীমার বাইরে ভারতে থেকে গিয়েছে তিনি বেআইনি অনুপ্রবেশকারী এবং এই বেআইনি অনুপ্রবেশকারীরা কোনোভাবেই ভারতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অর্থাৎ এক লহমায় ভারতের লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু মানুষ বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হয়ে গেলেন, নাগরিকের অধিকার হারিয়ে ফেললেন। ২০০৩ সালের আইনের২(১)(খ) ধারাটুকু পরিবর্তন করলেই উদ্বাস্তুদের অনিশ্চয়তা ও অস্তিত্বের সংকট দূর করা যেত। কিন্তু তা না করে সিএএ- র মতো একটি বিভেদকামী আইন তৈরি করার পথ বেছে নিল বিজেপি।
লক্ষণীয় যে, ভারতে বর্তমানে ৩১টি জেলার জেলাশাসকদের বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম শরণার্থীদের নিবন্ধীকরণ বা দেশীয়করণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দানের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৫ ও ৬ নং ধারা অনুসরণ করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী ‘‘২০২১ সালের ১এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪১৪ জনকে নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১১২০ জন ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৫ নং ধারা অনুযায়ী নিবন্ধীকরণের মাধ্যমে ও ২৯৪ জন ওই আইনের ৬ নং ধারা অনুযায়ী দেশীয়করণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেয়েছেন।’’ স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্ন উঠেই যায় যে, সিএএ তাহলে কোন্ বিশেষ উদ্দেশ্যে রচনা করা হলো যেখানে অতীতের নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমেই ধর্মীয় কারণে ছিন্নমূল মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়া যায়?
আসলে বিজেপি দেশভাগ সংক্রান্ত যে ভাষ্য আমাদের সামনে উপস্থিত করে তাতে মুসলমানরা অনুপ্রবেশকারী আর হিন্দুরা শরণার্থী। এই ভাষ্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সিএএ -তে বলা হলো যে, ২০০৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যে সমস্ত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে এদেশে এসেছেন, তারা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে গণ্য হবেন না। মুসলমান অধ্যুষিত পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের কথাই কেবলমাত্র উল্লেখ করে বোঝানোর চেষ্টা হলো যে এই দেশগুলিতেই একমাত্র ধর্মীয় কারণে মানুষ নিপীড়িত হন। কিন্তু উলটোদিকে যে, মায়ানমার বা শ্রীলঙ্কাতেও যথাক্রমে মুসলমান রোহিঙ্গা বা হিন্দু তামিলদের চরম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হতে হয় সেই তথ্য ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হলো। সবচেয়ে বড়ো বিষয় এই যে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্ম কোনোদিনও মাপকাঠি হতে পারে না। কিন্তু এক্ষেত্রে ধর্মকেই নাগরিকত্বের মাপকাঠি করে সংবিধানের ১৪ এবং ১৫ নম্বর ধারাকে লঙ্ঘন করেছে বিজেপি সরকার।
তিন বছর আগে বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মন্তব্য করেছিলেন যে, প্রথমে এনআরসি করা হবে তারপর সিএএ। এই দুই পদক্ষেপের ক্রোনোলজি বা কালানুক্রমের কথা বলে তিনি বোঝাতে চাইছিলেন যে, এনআরসি-তে যে সমস্ত হিন্দুদের নাম বাদ যাবে তাদেরকে সিএএ প্রয়োগ করে নাগরিক করে দেওয়া হবে এবং বিপদে পড়বে নাম বাদ যাওয়া মুসলমানরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই অসাংবিধানিক বক্তব্য বিজেপি’র ভয়ঙ্কর বিভেদকামী চেহারাকে সামনে আনে এবং দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
অবশ্য একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে যে, এই আইন আসলে উদ্বাস্তুদের এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকেই ঠেলে দেবে। প্রথমত প্রতিবেশী দেশে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হওয়ার কী প্রমাণ উদ্বাস্তুদের কাছে আছে? এমন প্রমাণ কতজনের থাকা সম্ভব ? আর যদি অধিকাংশের কাছেই প্রমাণ না থাকে তাহলে সিএএ-র মাধ্যমে তারা কীভাবে নাগরিকত্ব পাবেন? সিএএ প্রবর্তন নিয়ে যখন পার্লামেন্টে আলাপ- আলোচনা- বিতর্ক চলছিল, তখন স্বরাষ্ট্র দপ্তর ৭ই জানুয়ারি, ২০১৯ জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির যে রিপোর্ট বার করে সেই রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের দেশে ধর্মীয় কারণে উৎপীড়িত হয়ে আসা ছিন্নমূল সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা মোট ৩১ হাজার ৩১৩ জন। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ‘‘সিএএ-র মাধ্যমে কেউ যদি নাগরিকত্ব পেতে চান তাহলে তাকে প্রমাণ দিতে হবে যে, তিনি ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে বা নির্যাতনের ভয়ে এ দেশে এসেছেন। তবে যদি সীমান্ত পেরিয়ে আসার সময় এমন কোনো প্রমাণ না আনা হয় তাহলে এখন আর তা প্রমাণ করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যদি কেউ এজাতীয় দাবি করে তাহলে তা খতিয়ে দেখা হবে এবং দেশের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকাল উইংকে পর্যন্ত এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হবে’’। তাহলেই ভাবুন যে, গোটা প্রক্রিয়াটা কি পরিমাণ জটিল এবং সেক্ষেত্রে ওই ৩১৩১৩ জনের বাইরে বিপুল পরিমাণ উদ্বাস্তু জনতা যারা কোনক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে সীমান্ত পেরিয়েছেন তাদের কি দুর্দশা হবে! এ বছরই ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী পাকিস্তান থেকে রাজস্থানে আসা আট শতাধিক উদ্বাস্তু ভারতের নাগরিকত্ব না পেয়ে পুনরায় সিন্ধ প্রদেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অর্থাৎ বিজেপি যতই প্রচার করুক না কেন নাগরিকত্ব লাভ আদৌ কোনো সহজ প্রক্রিয়া নয়। বরং সিএএ’র পদে পদে বিপদ লুকিয়ে আছে।
ইতিমধ্যেই উদ্বাস্তুরা ভারতে কয়েক দশক ধরে বসবাস করছেন। তাদের সন্তান-সন্ততি এদেশে জন্মেছেন, বড়ো হয়েছেন। এই উদ্বাস্তু পরিবারগুলির সদস্যদের অধিকাংশই ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড পেয়েছেন। তাদের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয়েছে। হঠাৎ করে এই সমস্ত মানুষ নিজেদের বেনাগরিক ঘোষণা করে নতুন করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন কেন? সরকারের খেয়াল খুশি অনুযায়ী মানুষের রাষ্ট্রীয় অবস্থান নির্ধারিত হবে? যারা দেশের নাগরিকই নয় তাদের ভোটে যে সরকার নির্বাচিত হয় সেই সরকারও তো তাহলে বেআইনি? এই সমস্ত প্রশ্নের কোনো উত্তর বিজেপি দলের কাছে পাওয়া যাবে না। স্বাভাবিকভাবেই দেশের বুকে আওয়াজ উঠেছে ‘‘হাম কাগজ নেহি দিখায়েঙ্গে’’।
সিএএ-র পরিপূরক হিসেবে দেখা হচ্ছে যে, এনআরসি-কেও সারা দেশে রূপায়ণ করার প্রয়াস অত্যন্ত বিপজ্জনক। আসামে এনআরসি-র সময় প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে যে, এই ধরনের প্রক্রিয়া চলাকালীন সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন গরিব সাধারণ মানুষ। তাদের পক্ষে সমস্ত সরকারি নথিপত্র সংরক্ষণ করা বাস্তব কারণেই সম্ভব নয়। বন্যা, ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য তাদের অনেকসময় বাস্তুচ্যুত হতে হয়। এই অসহায় মানুষরা আসামে ব্যাপক হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাছাড়া কোন্ নথি দেখালে এনআরসি-তে অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবে তা নিয়েও ভীষণ জটিলতা হয়েছে। দেখা গিয়েছে যে, জমির দলিল, ভোটার লিস্ট, বিয়ের সার্টিফিকেট পর্যন্ত অগ্রাহ্য করা হয়েছে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে।
মানুষের এত হয়রানির পরেও সিএএ,এনআরসি নিয়ে অনড় বিজেপি, কেননা এগুলি হিন্দুত্ববাদীদের রাজনৈতিক হাতিয়ার। বিজেপি’র কাছে অনুপ্রবেশ এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু, কেননা এর মাধ্যমে তারা ভারতে মুসলমানদের মূর্তিমান বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। তাই দেশের চালু আইনে অনুপ্রবেশ বন্ধ করার ব্যবস্থা থাকলেও এনআরসি-র মাধ্যমে গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করবার জন্য ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইনে সব রাজ্যেই এনআরসি করার কথা বলা রয়েছে। ঘটনাচক্রে আসামে এনআরসি- তে যে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে তাদের মধ্যে ১২ লক্ষের বেশি হিন্দু, যাদের মধ্যে বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ। এছাড়া বাঙালি মুসলমান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের নামও বাদ পড়েছে। আসামের বিজেপি সরকার এই তালিকা গ্রহণ করেনি এবং এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে যে, এনআরসি-তে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে এবং সন্দেহজনক ব্যক্তিরা ভারতীয় হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এনআরসি-তে বাদ যাওয়া ব্যক্তিরা যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে পুনরায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবেদন করবেন সেই ব্যবস্থাও এখন বন্ধ হয়ে রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই চরম অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক গ্রাস করেছে আসামের লক্ষ লক্ষ মানুষকে। অনেকে ইতিমধ্যে আত্মহত্যা করেছেন।
এখানে উল্লেখ করা দরকার,২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ‘‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’’-য় প্রকাশিত হয়েছিল আসামের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার মন্তব্য, যেখানে তিনি বলেন যে, এনআরসি থেকে বাদ যাওয়া কয়েক লক্ষ বাঙালি হিন্দুকে ২০২১ সালে নির্বাচনের আগে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। গত তিন বছরে সিএএ-র কোনো নিয়মাবলি তৈরি হয়নি, নাগরিকত্বের আবেদন করে তা অর্জন করা তো অনেক দূরের ব্যাপার। আর কেবল হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপার কি আদৌ বাস্তব,সংবিধানসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্য? ইতিমধ্যে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন বিবেচনা ও মঞ্জুর করার জন্য যে একত্রিশটি জেলার জেলাশাসককে অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্র সরকার তার মধ্যে পশ্চিমবাংলা বা আসামের কোনো জেলা নেই কেন?
এদিকে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন ও ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব (নাগরিক পঞ্জিকরণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র বিষয়ক) আইনের অনুসারে জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি (এনপিআর) তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা ভারতীয় নাগরিকদের জাতীয় পঞ্জি (এনআরআইসি) তৈরির প্রথম পর্যায়।এই এনপিআর নিয়েও তীব্র বিতর্ক হচ্ছে। এনপিআর-এ বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হবে যার অপব্যবহারের ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় এই যে, প্রত্যেককে তার বাবা-মার জন্ম সাল, তারিখ ও জন্মস্থান বলতে হবে। না বলতে পারলে তারা সন্দেহভাজন বলে চিহ্নিত হয়ে যাবেন।
সব মিলিয়ে সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি দেশের মানুষকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন করছে। তাই সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে বজায় রাখতে এবং দেশের মানুষের নাগরিক ও মানবিক অধিকারকে নিশ্চিত করতে কুখ্যাত সিএএ, এনপিআর এবং এনআরসি-কে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে।