৫৮ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৯ জুলাই, ২০২১ / ২৪ আষাঢ়, ১৪২৮
পেট্রোপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিতে বিপর্যস্ত মানুষ
অবিলম্বে কেন্দ্রের অন্তঃশুল্ক কমানোর দাবি সিপিআই(এম)’র
পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে খাম্মামে প্রতিবাদ মিছিল।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ চলতি মাসে গত সাত দিনের মধ্যে পাঁচ দিনই দাম বাড়ানোর ফলে দিল্লি, কলকাতা সহ দেশের অধিকাংশ বড়ো শহরে পেট্রোলের দাম সেঞ্চুরি পেরিয়েছে। গত ৭ জুলাই তেল কোম্পানিগুলি পেট্রোলে লিটার প্রতি ৩৫ পয়সা আর ডিজেলে ১৭ পয়সা বাড়ানোর ফলে কলকাতার সঙ্গে দেশের রাজধানী দিল্লিতেও পেট্রোল ১০০ টাকা পার করেছে। এরফলে দেশের সমস্ত মেট্রো শহরে পেট্রোলের দাম একশো টাকার গণ্ডি পেরিয়ে গেছে। এর পরিণামে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে পেট্রোপণ্যের অন্তঃশুল্ক কমানোর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম)।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে (৭ জুলাই) দেখা যাচ্ছে, পেট্রোলের দাম কলকাতায় ১০০.২৩ টাকা, দিল্লিতে ১০০.২১ টাকা, মুম্বাই ১০৬.২৫ টাকা, চেন্নাই ১০১.০৬ টাকা, বেঙ্গালুরু ১০৩.৫৬ টাকা, হায়দরাবাদ ১০৪.১৪ টাকা, পুনে ১০৬.৩৮ টাকা দাঁড়িয়েছে। এই শহরগুলির পাশাপাশি রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, জম্মু-কাশ্মীর, ওডিশা, লাদাখ, বিহার প্রভৃতি রাজ্যে জ্বালানির দাম ১০০ টাকা পার করেছে। পশ্চিমবঙ্গসহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের জন্য মাঝে ১৮ দিন দাম বৃদ্ধি করা না হলেও, ভোটপর্ব মেটার পর থেকে লাগাতার জ্বালানির দাম বাড়িয়ে চলেছে কেন্দ্র। ৪ মে থেকে গত ৭ জুলাই পর্যন্ত ৩৭ বার দাম বেড়েছে জ্বালানির।
পেট্রোলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম। দিল্লিতে বর্তমানে গ্যাসের দাম ৮৩৪.৫০ টাকা, কলকাতা ৮৬১ টাকা, মুম্বাই ৮৩৪.৫০ টাকা, বেঙ্গালুরু ৮৩৭.৫০ টাকা, চেন্নাই ৮৫০.৫০ টাকা, হায়দরাবাদ ৮৮৭ টাকা, তিরুবনন্তপুরম ৮৪৪ টাকা, পাটনা ৯৩৩ টাকা।
দেশে বর্তমানে তীব্র আর্থিক মন্দা ও করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের আবহের মধ্যে আমজনতার আর্থিক অবস্থা এমনিতেই বেহাল। এই অবস্থায় পেট্রোলের দাম সেঞ্চুরি পার করায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সামগ্রীর দাম আকাশছোঁয়া। এমনই একটি বিপন্ন সময়ে যখন সাধারণ মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার কথা, তখন কেন্দ্রের সরকার সাধারণ মানুষের কষ্ট-যন্ত্রণার কথা বিবেচনা না করে ক্রমাগত পেট্রোপণ্যের দাম বাড়িয়ে মানুষের উপর বাড়তি বোঝা চাপিয়ে যাচ্ছে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর পেট্রোপণ্যের উপর কেন্দ্রীয় কর লাগামছাড়া ভাবে বাড়িয়ে চলেছে। পেট্রোল-ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে কেন্দ্র তার কোষাগারে অর্থসঞ্চয় বাড়িয়ে চলেছে। গত ১ বছরে অতিমারীর আবহেও এই খাতে বিপুল অর্থ সঞ্চয় করেছে কেন্দ্র। যার পরিমাণ প্রায় ২ লক্ষ ৯৪ হাজার কোটি টাকা।
পেট্রোপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির সপক্ষে সাফাই দিতে গিয়ে বিজেপি-র নেতা-মন্ত্রীরা বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির সাফাই দিয়ে চলেছেন। কিন্তু তাঁদের এই অসার যুক্তি ধোপে টিকছে না। কারণ বিশ্ববাজারে এই মুহূর্তে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭৪.৫৩ ডলার। আর ২০১৪ সালে মোদী ক্ষমতায় আসার সময় সেই দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ১০৮ ডলার। অথচ সে সময় কলকাতায় পেট্রোলের দাম ছিল লিটারপ্রতি ৭৯.৮৬ টাকা। এর মধ্যে উৎপাদন শুল্ক ছিল ৯.৪৮ টাকা। অথচ এখন ব্যারেল প্রতি দাম যখন অনেকটাই কম, তবুও পেট্রোলের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই ১০০.২৩ টাকার মধ্যে কেন্দ্রের উৎপাদন শুল্ক ৩২.৯০ টাকা। অথচ বিজেপি’র নেতা-মন্ত্রীরা সেই কর মকুবের দাবিকে নস্যাৎ করে ভ্যাট কমানোর কথা বলে পেট্রোল-ডিজেলের দামে সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেবার বল ঠেলে দিয়েছে রাজ্যগুলোর কোর্টে।
এমনই একটি অবস্থায় সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এক বিবৃতিতে (৪ জুলাই) বলেছে, পেট্রোপণ্যের প্রতিদিনের মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের জীবনধারণকে পঙ্গু করে দেওয়া ছাড়াও এর সরাসরি প্রভাবে সমস্ত ক্ষেত্রেরই মুদ্রস্ফীতি ঘটেছে ব্যাপক হারে। সমস্ত ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভোজ্য তেলের দাম আকাশছোঁয়া। গত ৭ মাসে ভরতুকিযুক্ত রান্নার গ্যাসের দাম বেড়েছে প্রায় ২৫০ টাকা।
পলিট ব্যুরো বলেছে, মোদী সরকার এরই ফাঁকে পেট্রোলে ২৫৮ শতাংশ এবং ডিজেলে ৮২০ শতাংশ অন্তঃশুল্ক বৃদ্ধি করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজস্ব বাড়াতে গিয়ে মানুষের জীবনধারণকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এমনিতেই অতিমারী মোকাবিলায় বাড়তি খরচের বোঝায় বিপর্যস্ত মানুষ। তাই পেট্রোপণ্যের অন্তঃশুল্ক ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি মূলবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।