৫৮ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৯ জুলাই, ২০২১ / ২৪ আষাঢ়, ১৪২৮
রাজ্যে বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানালো সিপিআই(এম)
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ৬ জুলাই আইনসভার উচ্চকক্ষ অর্থাৎ বিধান পরিষদ গঠনের জন্য যে আইন পাস করিয়েছে রাজ্য সরকার তার তীব্র বিরোধিতা করেছে সিপিআই(এম)। রাজ্য সরকারের এই পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানিয়ে পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র এদিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, মঙ্গলবার (৬ জুলাই, ২০২১) পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় উচ্চকক্ষ অর্থাৎ বিধান পরিষদ গঠনের পক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। রাজ্যবাসীর স্বার্থ এবং রাজ্যের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রয়োজনীয়তাকে বিবেচনা না করে সরকারপক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই প্রস্তাব পাস করিয়েছে।
এই বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ভারতের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় স্তরে আইনসভার উচ্চকক্ষ বা রাজ্যসভা থাকার দরকার আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যস্তরে আইনসভার উচ্চকক্ষের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। বর্তমানে দেশে মাত্র ৬টি রাজ্যে বিধান পরিষদ বা উচ্চকক্ষ রয়েছে। প্রায় সব রাজ্যই বিধানসভায় প্রস্তাব নিয়ে বিধান পরিষদ তুলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও স্বাধীনতার পরে বিধান পরিষদ ছিল, কিন্তু আইনসভার কার্যপ্রণালীতে তার কোনো কার্যকর ভূমিকা ছিল না। ১৯৫২ থেকে পরবর্তী ১৭ বছরে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় ৪৩৬টি বিল পাস হয়েছিলো, তারমধ্যে মাত্র দুটি বিল সংশোধিত হয়েছিল বিধান পরিষদে। ১৯৬৯ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব নিয়ে বিধান পরিষদ তুলে দেয়। ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল সরকার গঠিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বিধান পরিষদ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তখন বিধানসভায় বামফ্রন্টের যুক্তিপূর্ণ বিরোধিতার মুখে তিনি পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিলেন। এখন পুনরায় কোনো যুক্তি ছাড়াই বিধান পরিষদ ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব পেশ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাস করালেন।
বিবৃতিতে সূর্য মিশ্র আরও বলেছেন,এই মহামারীর বিপদের সময় সরকার মানুষকে ওষুধ, অক্সিজেন, চিকিৎসা পরিষেবা দিতে পারছে না। হাসপাতালে শয্যা ও পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে পারছে না। শিক্ষাব্যবস্থা বিপর্যস্ত, মানুষের রুটিরুজির ব্যবস্থা করতে সরকার ব্যর্থ। তৃণমূল সরকার এই সব সমস্যার সমাধানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বদলে শাসকদলের কয়েকজনকে পিছনের দরজা দিয়ে পুনর্বাসন দিতে বিধান পরিষদ গঠনের নামে সাদা হাতি পোষার ব্যবস্থা করতে চাইছে, যার বিশাল খরচ জনগণের ঘাড়ে চাপবে। তাই আমরা বিধান পরিষদ গঠনের প্রস্তাবের বিরোধিতা করছি এবং এই পরিকল্পনা বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।
এদিন বিধানসভায় বিজেপি বিধায়করা এবং সংযুক্ত মোর্চার একমাত্র বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি বিধান পরিষদ গঠনের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু সংখ্যাধিক্যের জোরে ভোটাভুটিতে এই প্রস্তাব পাস করিয়ে নিয়েছে শাসক দল। এমন একটি ব্যয়বহুল পরিকল্পনার পিছনে কোনো যুক্তি দিতে না পেরে তৃণমূলের মন্ত্রীরা একদিকে বলেছেন, রাজ্যের আর্থিক সংকট এখন নাকি মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে কাটিয়ে ওঠা গেছে; অন্যদিকে তাঁরা বলেছেন, বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটকে যদি বিধান পরিষদ থাকতে পারে তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কেন থাকবে না! তাঁরা বিধান পরিষদের পক্ষে সাফাই দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প বাতিল করেননি কেন? আসলে তৃণমূল বিধায়করা যুক্তির পথে না হেঁটে বিজেপি বিরোধিতাকে ঢাল করেন।
এদিকে, এই প্রস্তাব ঘিরে সরকার পক্ষ যুক্তিহীন সাফাই দেবার পর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যে উঠে আসে বিধানসভায় এই প্রস্তাব পাস করাতে পারলেও সংসদের উভয়কক্ষে পাস করানোর পর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হবে এবং লোকসভায় তাদের দল সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেখানে তাদের অবস্থান একই থাকবে। এর ফলে এটাই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তৃণমূল বিধান পরিষদ গঠন নিয়ে রাজ্যে অতিরিক্ত তৎপরতা দেখালেও এটা এত সহজে হবে না।
তৃণমূল-বিজেপি'র অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ও রাজনৈতিক সুবিধালাভের হিসেবনিকেশের ফলে এর বাস্তববায়ন সম্ভব কি না তা ভবিষ্যতেই জানা যাবে।