E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৯ জুলাই, ২০২১ / ২৪ আষাঢ়, ১৪২৮

উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ তালিকায় বেনিয়ম

স্কুল সার্ভিস কমিশনকে প্রবল তিরস্কার হাইকোর্টের


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ এ বছর জুন মাসে প্রকাশিত তালিকা আদালতের নির্দেশ মেনে হয়নি। “কমিশন অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছে”-প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগ তালিকায় অসঙ্গতির জেরে ২রা জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে এই ভাষাতেই আবার ভর্ৎসৃত হলো রাজ্য সরকার। উচ্চ প্রাথমিকের প্রায় ১৪ হাজার শূন্যপদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত অস্বছছতার অভিযোগে করা ওই মামলায় বাড়ল অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশের মেয়াদ। সরকারের স্কুল সার্ভিস কমিশনের সমালোচনায় ‘‘সরকারি কাজে স্বচ্ছতা থাকাটা বিশেষভাবে জরুরি’’ একথাও উঠে এসেছে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণমূলক মন্তব্যে। উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ‘অপদার্থ’ বলে অভিহিত করে এদিন হাইকোর্ট কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ৯ জুলাইয়ের মধ্যে প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর সহ নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। এমনকী যাঁরা এই তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন, তাঁদের নামও তালিকায় নথিভুক্ত রাখতে হবে। প্রত্যেক যোগ্য প্রার্থীর আকাডেমিক, প্রফেশনাল এবং টেট-এর নম্বর উল্লেখ করতে হবে।

আদালতের নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, বেশি নম্বর পাওয়া প্রার্থীরা তালিকা থেকে কেন বাদ পড়েছেন, কমিশনকে জানাতে হবে তাও। রাজ্যজুড়ে এই ঘটনায় ছিছিক্কার পড়ে গিয়েছে। এদিন সরকারের বিরুদ্ধে আদালতের আগের নির্দেশ উপেক্ষা করার বিষয়টি উঠে এসেছে। আদালত বলেছে, উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা কমিশন কার্যকরী করল না কেন। সেই সময়েই আদালত নির্দিষ্টভাবে নিয়োগ তালিকা কীভাবে তৈরি করতে হবে, তার নির্দেশিকা দিয়েছিল। আদালতের সেই নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে। ফলে বারবারই এই নিয়োগ নিয়ে অস্বচ্ছতা প্রকাশ পাচ্ছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের উচিত ছিল ২০১৯ সালেই আদালতের নির্দেশ মেনে ইন্টারভিউয়ের জন্য তালিকা প্রকাশ করা।

এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট কমিশনকে নজিরবিহীন ভাষায় ভর্ৎসনা করে বলেছে, ‘‘কোন ধরনের আধিকারিকরা কমিশন চালাচ্ছেন! এই কমিশনকে অবিলম্বে খারিজ করা করা উচিত।’’ এদিন মামলার শুনানির সময়ে আদালতের নির্দেশে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান শুভ্রশঙ্কর সরকার হাজির ছিলেন। তাঁর উদ্দেশে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, ‘‘কমিশনের কাজের দেখভাল এবার হাইকোর্টকেই করতে হবে বলে মনে হচ্ছে।’’

প্রসঙ্গত, স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে গত পাঁচ বছর ধরে বহু অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি না করে ইচ্ছেমতো তালিকা তৈরির। এই অভিযোগ একাধিকবার আদালতে প্রমাণিতও হয়েছে। আদালত বারবার বলেছে, নিয়োগ তালিকায় থাকবে প্রার্থীর নাম, রোল নম্বর এবং প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর। কিন্তু কমিশন যখনই নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ হাত দেয়, তখনই গরমিল সামনে আসে এবং অস্বচ্ছতা প্রকাশ পেয়েছে এই তৃণমূল সরকারের আমলে।

কলকাতা হাইকোর্টে যে মামলা চলছে, সেখানে অভিজিৎ ঘোষ, বিশ্বজিৎ ঘোড়ুইয়ের মতো বহু প্রার্থী তাঁদের আবেদনে বলেছেন, ‘‘আমরা বেশি নম্বর পেয়েও ইন্টারভিউয়ে ডাক পাইনি। আমাদের থেকে কম নম্বর পেয়ে অনেকেই ইন্টারভিউয়ে ডাক পেয়েছেন।’’ শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি সরাসরি স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানকে বলেছেন, বেশি নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের থেকে কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের কীভাবে ইন্টারভিউয়ের তালিকায় রাখা হলো, তা আদালত জানতে চায়।

এর আগে ২০২০ সালে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের দুর্নীতি এবং অস্বচ্ছতা দেখে সেই তালিকা বাতিল করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য ২০১৬ সালের পরীক্ষার ভিত্তিতে গঠিত তালিকা সহ গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুনভাবে নিয়োগ তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশেই বলা হয়েছিল, ২০২১ সালের জুলাই মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ শেষ করতে হবে। কিন্তু এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ফের দুর্নীতি সামনে এসেছে। গত ১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেন। ২ জুলাই নির্দেশ দিতে গিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আরও মন্তব্য করেছেন, ‘‘সরকারি কাজে স্বচ্ছতা থাকাটা বিশেষভাবে জরুরি। মানুষ যেন বুঝতে পারেন, সরকার স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করছে। মানুষের মনে যেন কোনও ভুল ধারণা তৈরি না হয়, সেদিকে নজর রেখেই কাজ করতে হবে।’’ এই মামলায় পরিক্ষার্থীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, জাভেদ শামিম প্রমুখ।