E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪৭ সংখ্যা / ৯ জুলাই, ২০২১ / ২৪ আষাঢ়, ১৪২৮

জেল হেফাজতে সমাজকর্মী স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু

দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মিথ্যা মামলায় বিনাবিচারে দীর্ঘদিন ধরে আটক সমাজকর্মী অশীতিপর স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় রাজনৈতিক, সামাজিক স্তরে, বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ ধ্বনিত হচ্ছে। গত ৫ জুলাই ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হেপাজতে এভাবে মানবাধিকার কর্মী ও জেসুইট প্রচারক প্রবীণ ফাদার স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু দেশের সমস্ত বিবেকবান মানুষের হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবী-সমস্ত মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, এ স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, হেপাজতে হত্যাকাণ্ড। সিপিআই(এম) এই বিশিষ্ট সমাজকর্মীর মৃত্যুর ঘটনাকে হেপাজতে মৃত্যু বলে অভিহিত করে বলেছে, কেন্দ্রীয় সরকারকে এই হত্যার দায় নিতে হবে, সেই সঙ্গে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

৮৪ বছরের এই প্রবীণ সমাজকর্মীকে গত বছরের ৮ অক্টোবর ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এই ঘটনায় মোট ১৬ জন সমাজকর্মী ও বুদ্ধিজীবীকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এই মামলায় মিথ্যা অভিযোগ তৈরি করতে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল। স্ট্যান স্বামীই শেষ ব্যক্তি যাঁকে এনআইএ গ্রেপ্তার করে। তাঁদের বিরুদ্ধে অন্যান্য ধারার সঙ্গে ইউএপিএ ধারাও যুক্ত করা হয়। স্ট্যান স্বামীকে বন্দি রাখা হয়েছিল মহারাষ্ট্রের তালোজা কেন্দ্রীয় কারাগারে। গত আট মাস ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে আটক রাখা হয়েছিল। তিনি পার্কিনসন রোগে ভুগছিলেন এবং তা দ্রুত বাড়ছিল। তিনি দু'কানেই শুনতে পেতেন না। তাঁর হার্নিয়া অপারেশন হয়েছিল দু'বার। লাম্বার স্পন্ডেলাইসিসের জন্য তাঁর সারা শরীর জুড়ে ছিল তীব্র ব্যথা। এসব সত্ত্বেও তাঁকে হাসপাতালে চিকিৎসা করায়নি জেল কর্তৃপক্ষ। তিনি আদালতের কাছে সামান্য স্ট্র ও গ্লাসের আবেদন জানিয়েছিলেন, কিন্তু জুটেছিল ২০ দিন পর। আরও মর্মান্তিক ঘটনা হলো, কোভিড সংক্রমণের ব্যাপকতার সময়েও তাঁকে কোনো সুরক্ষা দেওয়া হয়নি। জেলে বিপুল সংখ্যায় কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পরও তাঁকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় গত ৪ জুলাই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অভিযোগ পেয়ে মহারাষ্ট্র সরকারকে জানায়। ২৮মে বোম্বে হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়।

স্ট্যান স্বামীর আইনজীবী মিহির দেশাই আদালতে অভিযোগ জানান, এনআইএ স্বামীকে যথাযথ চিকিৎসার সুযোগ দেয়নি। তাঁকে যখন জেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও তাঁর কোভিড পরীক্ষা হয়নি। আদালতের নির্দেশে বেসরকারি হাসপাতালে ভরতির পর সেই পরীক্ষা হয়েছে। এনআইএ বারবার তাঁর জামিনের বিরোধিতা করেছে। তাঁর মতো একজন অসুস্থ অশীতিপর সমাজকর্মীকে হাসপাতালের বেডে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার মতো চরম অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। আইনজীবী দেশাই স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁওয়ে দলিত সমাবেশে হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণের ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়। ছ'মাস পর থেকে ‘সরকার ফেলার চক্রান্ত’, ‘প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ষড়যন্ত্র’ ইত্যাদি মিথ্যা অভিযোগে এই মামলায় জড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাজকর্মী, বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তার শুরু হয়। মহারাষ্ট্রের তৎকালীন বিজেপি সরকারের পুলিশ প্রথমে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। পুনে, মুম্বাই, নাগপুর এবং দিল্লিতে একযোগে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় দলিত আন্দোলনের বিশিষ্ট কর্মী সুধীর ধাওয়ালে, আইনজীবী সুরেন্দ্র গাদলিঙ, সমাজকর্মী মহেশ রাউথ,অধ্যাপিকা সোমা সেন, সমাজকর্মী রোনা উইলসনকে। পরে এই ঘটনার সূত্রেই গ্রেপ্তার করা হয় সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী গৌতম নাভলাখা, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হানি বাবু, অধ্যাপক আনন্দ তেলতুম্বদে, সমাজকর্মী সুধা ভরদ্বাজ, কবি ভারভারা রাও, সমাজকর্মী ভেরনন গনজালভেজ, অরুণ ফেরেইরা, ভীমা কোরেগাঁও শৌর্য দীন প্রেরণা অভিযানের কর্মী জ্যোতি জগতপ, সাগর গোরখে, গাইচোর প্রমুখকে। এই মামলাতেই মাঝরাতে রাঁচির বাড়িতে হানা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় বয়োবৃদ্ধ স্ট্যান স্বামীকে। এই জেসুইট ধর্ম প্রচারক ও সমাজকর্মী জীবনে কখনও ভীমা কোরেগাঁও যাননি। এদের সবার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগের পাশাপাশি মাওবাদী সংযোগের অভিযোগ আনা হয়। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মহারাষ্ট্রে বিজেপি সরকার পরিবর্তনের পর কেন্দ্র এই মামলা এনআইএ-কে হস্তান্তর করে। তারপর গ্রেপ্তারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

স্ট্যান স্বামী 'বাগাইচা' নামের একটি সংগঠনের স্থপতি। ঝাড়খণ্ডে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় তিনি কাজ করতেন। এনআইএ তাঁর সাথে মাওবাদী যোগাযোগের অভিযোগ আনলেও এর সপক্ষে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করতে পারেনি। গ্রেপ্তার হবার পর আদালতে তাঁর আইনজীবী মারফত ইউএপিএ-র ধারাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, জামিন পাবার ক্ষেত্রে এই আইন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউএপিএ’র ৪৩-ডি-(৫) সংবিধানে বর্ণিত জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী। বারবার তাঁর জামিনের আবেদন অগ্রাহ্য হয়েছে। গত জুলাই বোম্বে হাইকোর্টে তাঁর জামিনের আবেদনের শুনানি ছিল। সেই শুনানির সময়ে সময়ে স্ট্যান স্বামীর আইনজীবীর আদালতে অনুমতির আবেদনের ভিত্তিতে হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চিকিৎসক স্ট্যান স্বামীর প্রয়াণের সংবাদ দেন। এই হাসপাতালেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। আগের দিনই তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। স্ট্যান স্বামীর এমন শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও গত মাসেই এনআইএ আদালতে জানিয়েছিল যে,তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। উলটে তিনি দেশে ‘অস্থিরতা’ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করে এনআইএ। স্ট্যান স্বামীর মৃত্যু সংবাদ জানার পর বিচারপতিরা ‘আমরা ব্যথিত’ বলে মন্তব্য করে প্রথম দিনই হাসপাতালে ভরতির নির্দেশ দেবার কথা স্মরণ করিয়ে সাফাই দেন। কিন্তু কেন এমন একজন মুমূর্ষু রোগীর জামিনের আবেদন বারবার ধাক্কা খেয়েছে তার উত্তর মেলেনি।

‘স্ট্যান’ নামে পরিচিত হলেও তাঁর প্রকৃত নাম স্ট্যানিসলাস লরডুস্বামী। ১৯৩৭ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লির এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই জেলার খ্যাতনামা সেন্ট জোসেফ স্কুলে শৈশবে পড়াশোনা করেন। এখানেই তিনি জেসুইট পাদ্রিদের সংস্পর্শে আসেন। স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষে ১৯৫৭ সালে তিনি ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। এরপর কিছুদিন তিনি পশ্চিম সিংভূম জেলার চাইবাসায় সেন্ট জেভিয়ার্স হাইস্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি নিজেই বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রতি মঙ্গলবার তিনি ছাত্রদের নিয়ে চাইবাসার মঙ্গলহাটে যেতেন। সেখানে বাইরের ব্যবসায়ীরা এসে কীভাবে আদিবাসীদের ঠকাচ্ছে তা প্রত্যক্ষ করেন। কিন্তু তখন ছিল তাঁর হাত-পা বাঁধা। এরপরও দীর্ঘদিন ধরে চলে তাঁর লেখাপড়া। ১৯৬৭-তে তিনি ফিলিপিন্সে যান, ম্যানিলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন। পরবর্তীকালে ব্রাসেলসে পড়াশোনার সময়ে আর্চবিশপ হোল্ডার চামারার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। চামারা ব্রাজিলের গরিবদের মধ্যে কাজ করছিলেন। সত্তর দশকের মাঝামাঝি বেঙ্গালুরুর ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সস-এ মাস তিনেক স্পেশাল কোর্স করেন। বস্তুত এই দিনগুলিতেই তাঁর আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। বেঙ্গালুরুতে জেসুইটদের পরিচালিত ইন্ডিয়ান সোশ্যাল ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা হিসেবে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ১৯৯১ সালে তিনি পাকাপাকিভাবে অবিভক্ত বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে চলে এসে আদিবাসীদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রা উন্নয়নের কাজ শুরু করেন। সেইসঙ্গে পরিবেশ সুরক্ষা ও ঝাড়খণ্ডে আদিবাসী-প্রান্তিক মানুষদের অধিকার রক্ষার কাজও শুরু করেন। তিনি জড়িয়ে পড়েন ইউরেনিয়াম রেডিয়েশন বিরোধী আন্দোলনে। তিনি আদিবাসীদের নামে মিথ্যা মামলা ও আটক করার বিরুদ্ধে এবং তাদের জমি-অরণ্য রক্ষার জন্যও লড়াই করে গেছেন।

ঝাড়খণ্ডে বাগাইচার গির্জা-চত্বরে তাঁর ট্রেনিং সেন্টারে কোনো ‘ঈশ্বরের বাণী’ বা ছবি কিছুই ছিল না। দেওয়াল জুড়ে ছিল শুধুই আদিবাসীদের হয়ে লড়াইয়ের দলিল ও উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনের যাবতীয় পোস্টার-খবরের কোলাজ।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রের পুনের কাছে ভীমা কোরেগাঁওয়ে ১৮১৮ সালের ১ জানুয়ারি বালাজি বাজিরাওয়ের পেশোয়া বাহিনীকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনারা। এই বাহিনীর সেনারা ছিল দলিত। সেই থেকেই এই যুদ্ধকে দলিতদের মর্যাদার অঙ্গ বলে ধরা হয়। বি আর আম্বেদকরের সময় থেকেই এই দিনে দলিতরা ওই গ্রামে সমবেত হন। এই ঐতিহাসিক ঘটনার ২০০ বছর উপলক্ষে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর এবং ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি দলিতরা ওই গ্রামে সমবেত হলে তাঁদের উপরে আক্রমণ হয়। দলিত সংগঠনগুলির অভিযোগ, হিন্দুত্ববাদী শক্তি ওই আক্রমণ চালিয়েছিল। এই ঘটনায় একজনের প্রাণহানি ঘটেছিল। তারপরেই মহারাষ্ট্রের তৎকালীন বিজেপি সরকার ছ’মাস পর আচমকা ধরপাকড় শুরু করে। তারপর এই মামলা সাজাতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করা হয়। পুলিশের এই জঘন্য ষড়যন্ত্র পরবর্তীকালে নানাভাবে ফাঁস হয়ে যায়।

স্ট্যান স্বামীর জেলহেপাজতে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো গভীর শোক জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, ৮৪ বছর বয়সি জেসুইট ধর্মপ্রচারক ও সমাজকর্মী ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষা ও কল্যাণে কাজ করতেন। গত অক্টোবরে ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় ফেলে তাঁকে দানবীয় ইউএপিএ -তে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি পারকিনসনে আক্রান্ত ছিলেন। কিন্তু জেলে কোনো ধরনের চিকিৎসাই তাঁকে দেওয়া হয়নি। পরে বিভিন্ন মানবাধিকার ও প্রতিবন্ধী অধিকার রক্ষা সংগঠন দেশজুড়ে জোরালো প্রচার চালানোর পর তাঁকে জলপান ও অন্য পানীয়ের জন্য স্ট্রয়ের ব্যবস্থাও করতে দেওয়া হয়নি।

পলিট ব্যুরো বলেছে, অপরাধীভরা তালোজা জেলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর ওখান থেকে তাঁকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বহু আরজি জানানো হলেও কান দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এমনকী তাঁকে জামিন দিয়ে ঘরে পাঠানোর আরজিও খারিজ করে দেওয়া হয়। তবে ধন্যবাদ প্রাপ্য বম্বে হাইকোর্টের। কারণ, কোভিড আক্রান্ত হয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের ফলেই তাঁকে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। তবে হেপাজতে মৃত্যু ঠেকাতে তা অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।

পলিট ব্যুরো এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, যারা তাঁকে সাজানো মামলায় ফাঁসালো, জেলে আটক রাখলো, অমানবিক ব্যবহার করলো তারা যেন দায় এড়াতে না পারে। আরও যাঁরা ভীমা কোরেগাঁও মামলায় জেল খাটছেন এবং যাঁদের ইউএপিএ-তে বা দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ফাঁসিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আটক করে রাখা হয়েছে, তাঁদের অবিলম্বে ছাড়তে হবে। সিপিআই(এম)-র পক্ষ থেকে মানুষের ক্ষোভকে প্রতিবাদে পরিণত করার ডাক দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার রক্ষার দাবি জানানো হয়েছে।

সিপিআই’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এই মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলা হয়েছে, জেলে তাঁর চিকিৎসা ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন আছে। দেশবাসীকে এই ক্ষোভকে প্রতিবাদে পরিণত কারার ডাক দিয়েছে সিপিআই।

সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এক ট্যুইট বার্তায় স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুতে গভীর শোক জানানোর পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এক জেসুইট ধর্মপ্রচারক ও সমাজকর্মী প্রান্তিক মানুষের সহায়তায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছেন। দানবীয়ভাবে ইউএপিএ-তে জেল হেপাজতে, কোনো চার্জ গঠন না করেই অমানবিকভাবে তাঁকে আটক রাখা হয়। হেপাজতে এই হত্যার দায় নিতেই হবে।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ‘বিচারের নামে অবিচারের কোনো জায়গা নেই গণতন্ত্রে’। কেরালায় রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে বিজেপি বাদে সব দলই স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুতে শোক জানানোর পাশাপাশি ক্ষোভ জানিয়েছে।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য একে ‘প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা’ বলে অভিযোগ করেছেন।

সারা ভারত কৃষক সভার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে স্ট্যান স্বামীর মৃত্যুকে হেপাজতে হত্যা ছাড়া কিছু নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, অসুস্থ জেনেও তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি, এমনকী যথাযথ চিকিৎসা করা হয়নি। তাঁর হত্যার জন্য যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।