৬০ বর্ষ ৪৩ সংখ্যা / ৯ জুন, ২০২৩ / ২৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
দুঃস্বপ্নের ফেরিওয়ালা
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ঠিক এক সপ্তাহ পেরিয়েছে। যারা যারা গোগ্রাসে দুর্ঘটনার খবর গিলেছেন এবং ঘড়ি ধরে লাশের সংখ্যা গুনে গেছেন তাঁরাও আপাতত ক্লান্ত। বর্তমান দ্রুতগামী জীবনযাত্রায় সব শোকই যেহেতু স্বল্পস্থায়ী, তাই, ২ জুনের ঘটনার শোক এতদিন টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে না। অতএব বাবাসকল, পরবর্তী ইস্যুতে মনোনিবেশ করা হোক। আমরা যেভাবে সবকিছু দ্রুত ভুলে যাই, সেভাবেই বেমালুম ভুলে যাবো বালাসোর রেল দুর্ঘটনা। ২৮৮ অথবা আরও বেশি কিছু মানুষের মুহূর্তে মাংসপিণ্ড হয়ে যাওয়া। এভাবেই তো ভুলে গেছি ২৮মে, ২০১০-এর জ্ঞানেশ্বরী অন্তর্ঘাত। আজকের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা-কর্ত্রীদের সেদিনের ভূমিকা।
তৎকালীন রেলমন্ত্রী, আজকের মুখ্যমন্ত্রী এই দু’দিন আগেও বলেছেন, “২৮ মে, ২০১০ সিপিএম যখন ক্ষমতায় ছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ১৪০ জন মারা গিয়েছিল।... যেটা ডায়রেক্ট সিপিএম ও আল্ট্রা লেফটিস্টরা মিলে করেছিল। তার ডকুমেন্ট আমাদের হাতে ছিল। সেটা আমরা সিবিআই-কে দিয়েছিলাম। এটা অ্যাক্সিডেন্ট নয়, করানো হয়েছিল।” শুধু একটাই কথা। জ্ঞানেশ্বরীকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ছত্রধর মাহাতো বর্তমানে তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা। যেভাবে সুপ্রিমো ‘কাকু’ থেকে ‘বাথরুম’ - বিভিন্ন ঘটনায় আমাদের তথ্যসূত্র জোগান দিয়ে থাকেন, সেভাবেই বাকিটুকু তিনিই আবার কখনও বলে দেবেন। এ বিশ্বাস আমাদের আছে। কারণ ‘তিনি’ জানেন না এরকম কোনো ঘটনা ঘটা কার্যত অসম্ভব। তা সে গুন্ডা কন্ট্রোল থেকে কয়লা, গোরু, বালি পাচার, বা নিয়োগ দুর্নীতি - যাই হোক না কেন...
বালাসোরের সাম্প্রতিক তিন ট্রেনের একে অন্যের ঘাড়ে উঠে পড়াকে আরও একটা রেল দুর্ঘটনা হিসেবে দেখা যেতেই পারে। যা ইতিমধ্যেই বৃহত্তম রেল দুর্ঘটনার তালিকায় ঢুকে গেছে। ক্রমহ্রাসমান রেল দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান এবং কিছু তথাকথিত ঝাঁ চকচকে ট্রেন, দেশজুড়ে খবরের কাগজে পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন দেখিয়ে অবিরাম আত্মশ্লাঘা বোধ করে চলার মুহূর্তে, বালাসোরের দুর্ঘটনা নিঃসন্দেহে হাজারো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অবশ্যম্ভাবীভাবেই দুর্ঘটনার পরে আবারও প্রথম সফট টার্গেট রেলকর্মীদের গাফিলতি। যদিও যে কোনো দুর্ঘটনার পেছনে কতটা প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা থাকে আর কতটা কর্মী বাহিনীর গাফিলতি তা গুরত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করা উচিত। যা বোধহয় কখনই হয়নি বা হয়না।
স্ট্যাসিস্টা ২০২৩-এর তথ্য অনুসারে ২০১৪ সালে ভারতে ১১৭টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয় ১৩১। এরপর ২০১৬-তে ১০৬, ২০১৭-তে ১০৩, ২০১৮-তে ৭২, ২০১৯-এ ৫৯, ২০২০-তে ৫৪, ২০২১-এ ২১ এবং ২০২২-এ ৩৪টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদিও ২০১১ থেকে ২০২৩-এর মধ্যে বেশ কিছু বড়ো রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে।
ফ্যাক্টলি-র তথ্য অনুসারে ১৯৬০-৬১ থেকে ২০২১-২২-এর মধ্যে ২৯,৫৫৯টি ট্রেন লাইনচ্যুত হবার ঘটনা ঘটেছে। ৪৯৯০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে লেভেল ক্রসিং-এ। ২,৪২০টি ট্রেন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ১,৬২০টি ট্রেনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এ সবই তথ্য পরিসংখ্যানের কচকচি। আপাতদৃষ্টিতে অপ্রয়োজনীয় মনে হলেও পরবর্তী প্যারার জন্য এই তথ্যটুকুর উল্লেখ প্রয়োজন।
ফ্যাক্টলি ডট ইন-এর পরিসংখ্যান অনুসারে ২০০০-০১ থেকে ২০২১-২২ পর্যন্ত মোট রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩,১৮৬টি। যার মধ্যে দাবি করা হয়েছে ১৯৮০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে রেলকর্মীদের গাফিলতিতে। রেলওয়ে কর্মচারী ছাড়া অন্যান্যদের গাফিলতিতে রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬২৯টি এবং প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে ১৮১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব যদিও নিতান্তই ছেঁদো কথা। তাই একটু বর্তমান রেলমন্ত্রীর কথা শুনে নেওয়া যাক। যিনি নাকি দুর্ঘটনাস্থলে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন এবং যা নিয়ে বহু মিডিয়া একেবারে গদগদ। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে যে মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তা সঠিকভাবে পালন করলে হয়তো তাঁকে এইভাবে দায় ঢাকতে রাস্তায় সময় কাটাতে হতো না।
গত ৪ জুন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে রেলমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘রেল দুর্ঘটনার আসল কারণ চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করে দেখেছেন। কারা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এবং ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে তা জানা গিয়েছে।’’
রেলমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘ইলেকট্রনিং ইন্টারলকিং সিস্টেম পরিবর্তনের কারণেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। আপাতত আমাদের প্রথম কাজ এই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা এবং রেল পরিষেবা স্বাভাবিক করা। সেই লক্ষ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে।’’ যদিও তাঁর এই বয়ান কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বদলে যায় এবং সামনে উঠে আসে অন্তর্ঘাত-এর তত্ত্ব। অতএব সিবিআই তদন্ত। যাকে অনেকেই মনে করছেন ‘আই ওয়াশ’।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সমস্ত কামরাই নাকি ছিল আধুনিক এবং নিরাপদ এলএইচবি কোচ। দুর্ঘটনার পর রেলমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমনই দাবি করা হয়েছে। যে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, সব কামরাই যদি আধুনিক এবং নিরাপদ এলএইচবি কোচ হয়ে থাকে, তারপরও এমন মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটলো কীভাবে এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ কামরায় যাত্রা করেও সরকারি হিসেবমতো ২৮৮ জনকে কেন লাশ হয়ে যেতে হলো?
এর আগে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জলপাইগুড়ির দোমোহনিতে ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ঘটনাস্থল থেকে দাঁড়িয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছিলেন, ক্ষমতাশালী এলএইচবি কোচ তৈরি করা হয়েছে এবং তা সমস্ত পুরনো কোচগুলিকে শীঘ্রই প্রতিস্থাপন করবে। চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে জানানো হয়েছিল পরিকাঠামোর উন্নতিতে ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ‘আচ্ছে দিনে’র মহিমায় এ সবই কী তবে আম আদমির আঁটি চোষার কাহিনি? আম তাহলে খেল, খাচ্ছে, খাবে কোন করপোরেট বন্ধু?
২ জুনের বালাসোর দুর্ঘটনার পরেই ভাইরাল হয়েছে ২০২২ সালের ৪ মার্চ রেলমন্ত্রীর করা এক ট্যুইট। যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন, “রেলে রেয়ার অ্যান্ড কলিসন টেস্টিং সফল হয়েছে। কবচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুখোমুখি অন্য ট্রেন এসে যাওয়ায় ৩৮০ মিটার দূরত্বে তা থামিয়ে দিয়েছে।” এই প্রসঙ্গে ‘কবচ’ সুরক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে একটু জেনে নেওয়া যাক। দাবি মতো, যখন একজন ট্রেন চালক কোনো সিগন্যাল অমান্য করলে (Signal Passed at Danger - SPAD), ‘কবচ’ সুরক্ষা সাথে সাথেই বিষয়টিতে সতর্কবার্তা দেয়। (লক্ষ করার মতো বিষয়, এখানেও কিন্তু ঘটনা ঘটার আগেই রেলকর্মীদের দায়ী করে ফেলা হয়েছে। অথচ যান্ত্রিক কারণেও সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ভুল হতে পারে।) নির্ধারিত দূরত্বের মধ্যে একই লাইনে অন্য ট্রেন এসে গেলে ‘কবচ’-এর মাধ্যমে ট্রেন চালককে সতর্ক করা যেতে পারে, ব্রেক নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে এবং ট্রেনটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে থামানো যেতে পারে বলেও দাবি করা হয়। রেলমন্ত্রীর দাবি ছিল, এই প্রযুক্তি বা পদ্ধতি প্রয়োগ করলে রেল দুর্ঘটনা নির্মূল হয়ে যেতে পারে।
এই প্রসঙ্গে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজ্যসভায় ‘কবচ’ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ১,৪৪৫টি রুটে ইতিমধ্যে পর্যায়ক্রমে ‘কবচ’ সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করা হয়েছে। মাস পাঁচেক আগে রেলমন্ত্রী জানান, ‘‘এখন দিল্লি-মুম্বই এবং দিল্লি-হাওড়া করিডরে (৩,০০০ কিলোমিটার) কাজ চলছে।” যদিও জানা যাচ্ছে দক্ষিণপূর্ব রেলের দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসে নাকি ‘কবচ’ সুরক্ষা ব্যবস্থা আদৌ ছিল না এবং মূল প্রশ্ন বোধহয় ওঠা উচিত সেখানেই। সঙ্গতভাবেই বিরোধীদের পক্ষ থেকে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
এই সম্পর্কে সীতারাম ইয়েচুরি সরাসরি রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি না করেও ৩ জুন এক ট্যুইট বার্তায় লেখেন, “অতীতে একাধিক রেলমন্ত্রীর দুর্ঘটনার পর নৈতিক কারণে পদত্যাগের নজির আছে। যদিও মোদি সরকারের আমলে এই ধরনের কোনো রাজনৈতিক নৈতিকতার অস্তিত্ব নেই।” “২০১৭ সাল থেকে বারবার রেল/ট্র্যাক পুনর্ণবীকরণ এবং রেল ওয়েল্ডিং প্রযুক্তির বকেয়া পূরণের জন্য জরুরি প্রয়োজনের বিষয়ে সতর্কবার্তা শোনানো হয়েছিল।” অন্য একটি ট্যুইটে ইয়েচুরি লেখেন, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছিল ১৪ শতাংশ। তিনি আরও লেখেন, রেলে ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান, ট্র্যাক পার্সোনেল সহ প্রায় ৩.১২ লক্ষ শূন্যপদ আছে। রেল সুরক্ষার সঙ্গে সমঝোতা করে মোদি প্রতিদিন বন্দে ভারতের যাত্রার সূচনা করছেন। তড়িঘড়ি সিবিআই তদন্তের ঘোষণা সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য অনুসারে, “বালাসোরের কাছে রেল দুর্ঘটনায় মোদি সরকার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সিবিআই তদন্ত হয় ফৌজদারি মামলায়। কিন্তু রেলের সুরক্ষা বিশেষত যাত্রী সুরক্ষার ক্ষেত্রে কী ঘাটতি আছে বা ত্রুটি আছে, তা কীভাবে দূর করতে হবে, সেটা নিয়ে দেশের মানুষের যে দুশ্চিন্তা রয়েছে তার থেকে নজর সরানোর চেষ্টা হলে তা বিরাট বিপদ হবে।” আর মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো জানায় - “এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণগুলো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। রেলওয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে গুরুতর প্রশ্নগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, যা মোদি সরকারের ‘আধুনিকীকরণ’ পরিকল্পনায় উপেক্ষা করা যায় না।”
বালাসোর দুর্ঘটনার দু’দিন আগে ৩১ মে ‘দ্য হিন্দু’তে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয়, রেলে বর্তমানে ৩ লক্ষ ১২ হাজার পদ খালি রয়েছে। বালাসোর দুর্ঘটনার ঠিক ৩ মাস আগে ২ মার্চ ২০২৩-এ আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, তথ্য জানার অধিকার আইনে করা এক প্রশ্ন থেকে জানা গেছে - “গ্রুপ সি-তে মোট পদের সংখ্যা ১৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬২৩। তার মধ্যে শূন্য ৩ লক্ষ ১১ হাজার ৪৩৮টি পদের মধ্যে রয়েছে ট্র্যাকপার্সন, পয়েন্টসম্যান, বিদ্যুৎকর্মী, সিগনাল এবং টেলিফোন অপারেটরের পদ।” “প্রায় ১৯ হাজার গেজেটেড আধিকারিক পদের মধ্যে খালি রয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি পদ।” যে কোনো রেল দুর্ঘটনায় রেলকর্মী নন্দ ঘোষদের সব দোষে দোষী করা যেতেই পারে। কিন্তু তাতে রেল সুষ্ঠুভাবে চালাতে সরকারের ইচ্ছার অভাব, যাত্রী সুরক্ষায় যথাযথ নজর না দেওয়ার মনোভাব কোনোভাবেই ঢাকা যায় না।
আরও একটা কথা বাকি থেকে যায়। যা না বললেই নয়। যে কোনো দিন, যে কোনো সময় হাওড়া শিয়ালদহ সহ দেশের বড়ো বড়ো যে কোনো রেল স্টেশনে গেলে দেখা যায় জেনারেল ডিব্বায় ওঠার বিশাল লাইন। যে লাইন নিয়ন্ত্রণ করে রেলেরই সুরক্ষা বাহিনী আরপিএফ। এঁদের বেশিরভাগই গরিব, প্রান্তিক মানুষ। অভিবাসী শ্রমিক। পেটের তাগিদে ভিন রাজ্যে ছোটেন। অসংরক্ষিত কামরাই যাদের ভরসা। সংরক্ষিত কামরায় যেখানে গড়ে মোটামুটি ১০০ জন যাত্রী থাকেন সেখানে এইসব অসংরক্ষিত কামরায় ঠিক কতজন যাতায়াত করেন সে হিসেব বড়ো গোলমেলে। হয়তো রেলও জানেনা। অথচ দুর্ঘটনা ঘটলে এই মানুষগুলোই হিসেবের বাইরে চলে যান সবার আগে। কারণ এঁদের টিকিটে না থাকে নাম, না থাকে অন্য কোনো তথ্য। কোনো বড়োসড়ো দুর্ঘটনা ঘটলে এরা আদৌ সংখ্যার হিসেবে ঢোকেন কিনা, ক্ষতিপূরণের হিসেবে ঢোকেন কিনা তা আজও স্পষ্ট নয়।
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা প্রতিদিন রঙবেরঙের পোশাক পরে পতাকা নেড়ে চলেছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। পরিকাঠামো, যাত্রী সুরক্ষা দেখে লাভ কী। এখন একটা পিআর ইভেন্ট মানেই লাভের ঝুলি ভরে ওঠা। চকচকে চোখে ২০২৪ দেখা। জনগণ? সে তো কবেই আব্বুলিশ! তাই আসুন, মৃতদের আত্মার শান্তির জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা শেষ হলে আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে ঘুরে RIP লেখা শেষ হলে একবার গলা তুলে প্রশ্ন করি - মানুষে মানুষে ধর্মের ভিত্তিতে জাতের ভিত্তিতে লড়িয়ে না দিয়ে সরকার কবে আম আদমিকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে?