E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৯ম সংখ্যা / ৯ অক্টোবর ২০২০ / ২২ আশ্বিন ১৪২৭

উত্তরপ্রদেশ-পশ্চিমবঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস দলের যৌথ ধিক্কার মিছিল


কলকাতায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের ধিক্কার মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বউত্তরপ্রদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ - এই দুই রাজ্যেই সরকারের অপদার্থতায় একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়তে থাকায় তীব্র ধিক্কার জানিয়ে পথে নেমেছেন বাংলার মানুষ। ৬ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারকে নারীঘাতী হিসেবে চিহ্নিত করে কলকাতা সহ জেলায় জেলায় বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের ডাকে বিশাল বিশাল ধিক্কার মিছিল হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের হাথরসে দলিত সম্প্রদায়ের এক কিশোরীকে নির্যাতন করে হত্যা করে তথাকথিত ‘উচ্চবংশের’ বর্ণহিন্দুরা। যোগী সরকারের পুলিশ এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির বদলে অপরাধীদের আড়াল করে এবং কিশোরীর মৃতদেহ ছিনিয়ে নিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের ঘিরে রেখে মুখ না খোলার হুমকি দেয় পুলিশ।

এমনই এক বর্বরতার ঘটনা ঘটেছে ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের শাসনে। মধ্যমগ্রামে এক গরিব অবাঙালি ট্যাক্সি ড্রাইভারের কিশোরী কন্যাকে শাসকদলের দুর্বৃত্তরা পর পর শারীরিক নির্যাতন করে আগুনে দগ্ধ করে দেয়। তারপর কিছুদিন হাসপাতালে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে মৃত্যু হয় সেই কিশোরীর। এই ঘটনায় দোষীদের আড়াল করতে সরকারের নির্দেশে রাজ্য পুলিশ মৃতদেহ কেড়ে নিয়ে সৎকার করার চেষ্টা করে। কিন্তু বামপন্থীরা সেই অপচেষ্টা ব্যাহত করে এবং শোকগ্রস্ত বাবা-মা’র উপস্থিতিতেই সৎকারের ব্যবস্থা করে। এই বর্বরোচিত ঘটনার বিরুদ্ধেও সেদিন প্রতিবাদমুখর হয়েছিল বাংলা।

এছাড়া সম্প্রতি জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জে শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের দ্বারা এমনই আদিবাসী কিশোরীর ধর্ষণ ও পরে অপমানে আত্মঘাতী হবার ঘটনাকে আড়াল করতে চেষ্টা করে স্থানীয় প্রশাসন। একইসঙ্গে নানাভাবে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে যে, মেয়েটি ধর্ষিতা হয়নি। এরপর পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা ও ঘাটালে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সহ অসংখ্য ঘটনা রাজ্যকে কলঙ্কিত করেছে।

এই সমস্ত জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৬ অক্টোবর যৌথ প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়েছে।

এদিন কলকাতার ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে থেকে প্রতিবাদী মিছিলের সূচনা হয়। ‘‘উত্তরপ্রদেশের হাথরস - বর্বরতার আরেক নাম’’ লেখা ফেস্টুন সামনে রেখে মিছিলে অংশ নেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম, কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান, বামপরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের বাংলা কমিটির সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়, সিপিআই(এম) নেতা কল্লোল মজুমদার, অনাদি সাহু, কনীনিকা ঘোষ সহ বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ।

এই মিছিল লেনিন সরণি, মৌলালি পার হয়ে এজেসি বোস রোড, মল্লিকবাজার হয়ে পার্ক সার্কাসে গিয়ে শেষ হয়।

শিলিগুড়িতে হাসমি চক থেকে শুরু হওয়া মিছিল হিলকার্ট রোড ধরে মহানন্দা সেতুর কাছে গান্ধী চকে এসে শেষ হয়। এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র, পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য, দার্জিলিঙ জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার, কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, কংগ্রেস নেত্রী গঙ্গোত্রী দত্ত, বামফ্রন্ট নেতা তাপস গোস্বামী, অনিরুদ্ধ বোস প্রমুখ।

এছাড়াও এদিন উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, নদীয়া, হাওড়া প্রভৃতি জেলার বিভিন্ন জায়গায় নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস দলের যৌথ প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। এই সমস্ত মিছিল থেকে উত্তরপ্রদেশের যোগীরাজ-মমতারাজের কার্যকলাপকে ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি নারীদের সুরক্ষার দাবি সোচ্চারে ধ্বনিত হয়েছে।