৫৮ বর্ষ ৯ম সংখ্যা / ৯ অক্টোবর ২০২০ / ২২ আশ্বিন ১৪২৭
১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের আহ্বানে ২৬ নভেম্বর কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির প্রতিরোধে
দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক-কৃষক বিরোধী, সার্বিকভাবে জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ২৬ নভেম্বর দেশজুড়ে ঐক্যবদ্ধ সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। ২ অক্টোবর ট্রেড ইউনিয়নগুলির এক জাতীয় কনভেনশন থেকে ৭ দফা দাবিতে এই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিন ট্রেড ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে ধর্মঘটের কথা ঘোষণা করে জানানো হয়েছে, মোদী সরকার একের পর এক শ্রমিক-কৃষক ও জনবিরোধী নীতি গ্রহণ করে চলেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। মহামারীর সময়ে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন। তাঁদের আয় নেই। এই সময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে দমনপীড়নের নীতি নিয়ে চলেছে মোদী সরকার। এই আক্রমণ প্রতিহত করতে ধর্মঘটের পথে যেতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিকরা।
এদিন সি আই টি ইউ, এ আই টি ইউ সি, আই এন টি ইউ সি, এইচ এম এস, এ আই ইউ টি ইউ সি, টি ইউ সি সি, সেবা, এ আই সি সি টি ইউ, এল পি এফ এবং ইউ টি ইউ সি - এই দশটি সংগঠন যে গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তা হলো, যে সমস্ত পরিবারকে আয়কর দিতে হয় না, তাঁদের আগামী ছয় মাস প্রতিমাসে ৭,৫০০ টাকা করে নগদ দিতে হবে; আগামী ছয় মাস অভাবী পরিবারগুলিকে মাথাপিছু প্রতিমাসে ১০ কিলোগ্রাম করে খাদ্যশস্য অবিলম্বে বিনামূল্যে দিতে হবে; কাজের জোগান বাড়াতে রেগা প্রকল্পে ২০০ দিনের কাজ নিশ্চিত করতে হবে, এই প্রকল্প শহরেও চালু করতে হবে; জোরজবরদস্তি করে যে শ্রমকোড বিল পাশ করানো হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে; কৃষি ও কৃষকের স্বার্থবিরোধী সাম্প্রতিক তিন কৃষি আইন খারিজ করতে হবে; রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসংস্থার ঢালাও বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে; বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও সরকারি সংস্থায় চাপিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক অবসর প্রকল্প বাতিল করতে হবে; অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সকলের জন্য সর্বজনীন পেনশন চালু করতে হবে।
এদিন অনলাইনে এই শ্রমিক কনভেনশন শেষে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ২৬ নভেম্বর সাধারণ ধর্মঘটের মধ্যদিয়ে দেশের মানুষের আয় বাড়ানোর দাবি জানানো হবে। এই ধর্মঘট দাবি জানাবে, আয়করদাতা নয় এমন সমস্ত পরিবারকে মাসে নগদ ৭,৫০০ টাকা করে দিতে হবে। রেশনে মাথাপিছু মাসিক ১০ কেজি খাদ্যশস্য বিনামূল্যে দিতে হবে। মহামারীর সময়ে চরম আর্থিক সঙ্কটে কাজ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। মানুষের কোনো রোজগার নেই। সে সময় মোদী সরকার শ্রমিক-কৃষকের আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ না নিয়ে কর্পোরেটের আয় বিপুল হারে বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কর্পোরেটকে মুনাফার তোফা দিতে জোরজবরদস্তি বিপজ্জনক কৃষি আইন ও শ্রম আইন তৈরি করেছে। মানুষের জীবন-জীবিকার দাবি আদায়ে তাই ধর্মঘটের পথে যেতে বাধ্য হচ্ছে শ্রমিকশ্রেণি।
ধর্মঘটের আহ্বায়ক শ্রমিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, করোনার প্রকোপ দেখা দেবার আগেই মোদী জমানায় দেশের অর্থনীতিতে ধস নামতে শুরু করেছিল। করোনা মহামারীতে তা একেবারেই বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। সরকারের কর্পোরেট স্বার্থবাহী আর্থিক নীতিতে সাধারণ মানুষের আয় কমেছে। কল-কারখানায় ছাঁটাই বেড়েছে। বেকারি বেড়েছে। বিপর্যয় সামলাতে সাধারণ মানুষের আয় বাড়ানোর দাবি বারবার জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞ ও বিরোধী দলগুলি।
কিন্তু কোনো দাবি মানেনি কেন্দ্র। পরিকল্পনাহীন লকডাউনে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত লাটে উঠেছে। কাজ হারিয়ে দেশের বিপুল অংশের মানুষ এখন অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে আনলক পর্বেও অর্থনীতির হাল ফেরেনি। মানুষের আয় না থাকায় বাজারে চাহিদাও তলানিতে নেমেছে। সর্বস্তরে সঙ্কট তীব্রতর হয়েছে। মানুষের আয় বাড়ানোর দাবি আদায়ে তাই ধর্মঘটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। অক্টোবর মাস জুড়েই চলবে ধর্মঘটের প্রচার আন্দোলন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলবে প্রচার।
ট্রেড ইউনিয়নগুলি স্পষ্ট জানিয়েছে, শুধু নভেম্বরে এক দিনের সাধারণ ধর্মঘট নয়, সেদিন থেকে আরও বড়ো আন্দোলনের সূচনা হবে।