৫৮ বর্ষ ৯ম সংখ্যা / ৯ অক্টোবর ২০২০ / ২২ আশ্বিন ১৪২৭
উত্তরপ্রদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ-নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে ধিক্কার-প্রতিবাদ কর্মসূচি
ধিক্কার দেশজুড়ে
হাথরসের ঘটনায় এসএফআই’র প্রতিবাদ মিছিল কলকাতায়।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ উত্তরপ্রদেশে উগ্রহিন্দুত্ববাদী যোগী সরকারের আমলে সম্প্রতি দলিত কন্যাকে বর্ণহিন্দুদের বর্বরোচিত শারীরিক আক্রমণ সহ একের পর এক ধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে গর্জে উঠেছে বাংলা। এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এরাজ্যে তৃণমূলের জমানায় যেভাবে নানা জায়গায় মহিলাদের ওপর নির্যাতন ও খুনের ঘটনা ঘটে চলেছে তার বিরুদ্ধেও তীব্র ধিক্কার ধ্বনিত হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের হাথরস থেকে বলরামপুর, এরাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ও বানারহাটের চাবাগান, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরায় শাসকদল আশ্রিত দুর্বৃত্তদের দ্বারা একের পর এক নারী নির্যাতন ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, বামগণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত সকলেই এই সমস্ত নারীনির্যাতনের ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন।
গত ৩ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের নারীঘাতী যোগী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে পথে নামে বামপন্থী ও কংগ্রেসের ছাত্র-যুব ও মহিলা সংগঠনের কর্মীরা। এদিন কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত সুবিশাল মিছিল পুলিশ ব্যারিকেড করেও রুখতে পারেনি। প্রতিবাদীরা ব্যারিকেড ভেঙে ডোরিনা ক্রসিং দখল করে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে অবরোধ করে রাখেন। এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নরেন্দ্র মোদী ও যোগীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে।
এদিন শিলিগুড়িতেও হাথরসের ঘটনার প্রতিবাদে জনস্রোত আছড়ে পড়ে রাস্তায়। এই কর্মসূচিতে জনজীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দাবিও যুক্ত হয়। ভয়াবহ মূল্যবৃদ্ধি থেকে উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের নানা দাবিতে বাঘাযতীন পার্ক থেকে হাসমিচক হয়ে হিলকার্টরোড ধরে গান্ধীচক পর্যন্ত দীর্ঘপথে লালপতাকার স্রোত প্রবাহিত হয়।
কলকাতায় বিকাল ৫টায় মৌলালি থেকে শুরু হয় মিছিল। মিছিলের সূচনায় বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য সংক্ষিপ্ত ভাষণে উল্লেখ করেন, হাথরসে যোগী সরকার অপরাধীদের বাঁচাতে যেভাবে সক্রিয়তা দেখিয়ে তড়িঘড়ি মৃতদেহ পুড়িয়ে দিয়েছে, ঠিক একইভাবে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ এরাজ্যে মধ্যমগ্রামের নির্যাতিতা কিশোরীর ক্ষেত্রে সে চেষ্টা করেছিল।
এদিনের এই মিছিলে অংশ নিয়েছিল এআইডিডব্লিউএ, এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, এআইপিডব্লিউএ, এআইএসএ, আরওয়াইএ প্রভৃতি বিভিন্ন বামপন্থী গণ সংগঠনের সাথে কংগ্রেস কর্মীরা।
হাথরসের ঘটনায় প্রতিবাদ মিছিল শিলিগুড়িতে।
অন্যদিকে এদিন শিলিগুড়িতে বামফ্রন্টের মহামিছিলে ছাত্র, যুব, মহিলা, কর্মচারী সহ শ্রমজীবী মানুষ বিপুল সংখ্যায় অংশ নেন। এই মিছিলকে কেন্দ্র করে গত একমাস ধরে অসংখ্য পথসভা ও মিছিল হয়েছে। এদিনের মিছিলে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। এই মিছিল থেকে আওয়াজ উঠেছে বাংলা বাঁচাতে হটাতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসকে, দেশ বাঁচাতে হটাতে হবে বিজেপি-কে। এদিনের মিছিল সোচ্চার হয়েছে সর্বনাশা কৃষি বিলের বিরুদ্ধে। মিছিলে আওয়াজ উঠেছে এসজেডিএ-র ২০০ কোটি টাকা দুর্নীতির সাথে যুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে। এছাড়াও স্লোগান উঠেছে, শিলিগুড়িকে বঞ্চনার বিরুদ্ধে, নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে, কোভিড পরিস্থিতির মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উপযুক্ত ভূমিকা গ্রহণ সহ জমির পাট্টা প্রদান এবং আরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে।
এদিন মিছিলের শুরুতে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য, জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার, সিপিআই’র প্রশান্ত বকসি, ফরওয়ার্ড ব্লকের অনিরুদ্ধ বোস এবং আরএসপি’র বিকাশ সেন রায়।
উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের সর্বত্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ-মিছিল ইত্যাদি সংগঠিত হচ্ছে। ৪ অক্টোবর পূর্ব মেদিনীপুরের হেড়িয়া বাজারে সুবিশাল প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিপিআই(এম) নেতা হিমাংশু দাস। চৈতন্যপুর বাজার থেকে কুঁকড়াহাটি রোড পর্যন্ত একটি মিছিলে উপস্থিত ছিলেন পার্টিনেতা পরিতোষ পট্টনায়ক, অশোক পাত্র প্রমুখ। এদিন সামাজিক ন্যায়মঞ্চের উদ্যোগে কোলাঘাট ব্লকের সিঙ্গায় মিছিল হয়েছে।
এছাড়াও এদিন প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর, টিটাগড়, অশোকনগর, দক্ষিণ দমদমের রবীন্দ্রনগর, পশ্চিম দমদম প্রভৃতি এলাকায়। ৩ অক্টোবর বিধাননগর পৌরসভার রাজারহাট-সল্টলেক অংশে মিছিল হয়েছে। হুগলি জেলার শ্রীরামপুর, পাণ্ডুয়া, খানাকুল, রিষড়া প্রভৃতি জায়গায় প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। নদীয়া জেলার চাকদহে সামাজিক ন্যায় মঞ্চের সভায় বক্তব্য রাখেন অলকেশ দাস সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
কলকাতায় বাম-কংগ্রেস ছাত্র-যুব-মহিলাদের প্রতিবাদ মিছিল।
উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা দেশে মহিলাদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে জেলায় জেলায়। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির উদ্যোগে চণ্ডীতলা, নৈহাটিতে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। ঝাড়গ্রাম শহরে সিপিআই(এম)-র উদ্যোগে ৩ অক্টোবর মিছিল ও পথসভা হয়েছে। সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির উদ্যোগে বারুইপুরে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।
২ অক্টোবর এসএফআই কলকাতা জেলা কমিটির উদ্যোগে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি হয়। এখানে মোদী-যোগীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় থেকে রাজবল্লভ পাড়া পর্যন্ত মিছিল করেন। এদিন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির উদ্যোগে এই ঘটনার প্রতিবাদে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ-মিছিল ইত্যাদি সংগঠিত হয়েছে। এদিন হাওড়ার ডোমজুড়, শিলিগুড়ির শালবাড়ি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথির মারিশদা, লাউদা, ভাইটগড় প্রভৃতি স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সামাজিক ন্যায় মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক অলকেশ দাস এক বিবৃতিতে রাজ্যজুড়ে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছেন।