E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৯ম সংখ্যা / ৯ অক্টোবর ২০২০ / ২২ আশ্বিন ১৪২৭

অসমের বিজেপি সরকারের দুর্নীতি-কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে উত্তাল রাজ্য

কমলেশ গুপ্ত


অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের ঘোষিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার নীতিকে বিদ্রূপ করে তাঁরই অধীনস্ত পুলিশ বিভাগের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিযুক্তির কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য। এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল মুখে যাই বলুক, রাজ্য প্রশাসন আপাদমস্তক দুর্নীতি-ভ্রষ্টাচারে নিমজ্জিত। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ যে, অসম পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদের জন্য ‘বাছাই করা’ প্রার্থীদের চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র হাতে পৌঁছে দিয়েছে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। শুধু তাই নয়, যারা অগ্রিম টাকা দিয়েছে তাদের গুয়াহাটি এবং রাজ্যের কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন লজ এবং হোটেলে ডেকে আগের দিন পরীক্ষার মহড়া দেওয়া হয়েছে। প্রশ্নের শুদ্ধ উত্তর কী হবে তা প্রার্থীদের বোর্ডে লিখে পাখিপড়া করে শেখানো হয়েছে। তদন্তে প্রকাশ যে, পরীক্ষার আগের দিন সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪-৩০ পর্যন্ত ৫০ জনের এক একটি ব্যাচ করে গুয়াহাটির হোটেল ভার্গব এবং থ্যাঙ্ক ইউ লজে মহড়া চলেছিল। তদন্ত এগুনোর সাথে সাথে নতুন নতুন তথ্য প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। ঘটনাচক্রে এর শেকড় বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত বলে অনুমান করতে পারা যাচ্ছে। বিস্ময়কর কথা হচ্ছে, এই প্রশ্নপত্র ফাঁস কাণ্ডে খোদ পুলিশ বিভাগের প্রাক্তন ডিআইজি-এককালের মহা প্রতাপশালী অফিসার প্রদীপকুমার দত্তর নাম জড়িয়ে আছে। তিনি এখনো পলাতক। তার মতো একজন দুর্নীতিপরায়ণ এবং মাফিয়া চরিত্রের প্রাক্তন পুলিশ অফিসারকে পরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিতে রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের ধারণা বিজেপি দলের ঘনিষ্ট হওয়াতেই এই সুযোগপ্রাপ্তি। এই প্রতাপশালী অফিসারের সীমাহীন সম্পত্তির উৎস খুঁজতে গিয়ে তদন্তকারী দল হতবাক হয়েছে। বরাক উপত্যকায় ১৪শ বিঘার চা বাগান, গুয়াহাটির পাঁচ জায়গায় পাঁচটি হোটেল, ডিব্রুগড়ে ১২০ বিঘা জমি, ফ্ল্যাট, ডিব্রুগড়েই হাইকোর্টে বিচারাধীন জমিতে বিলাসী অ্যাপার্টমেন্ট, গুয়াহাটির বাসগৃহে ৮কেজি সোনা সহ উদ্ধার হওয়া সম্পত্তির পরিমাণ ৪০০ কোটি বলে অনুমান করা হচ্ছে। এখনো আরও অনেক সম্পত্তি অপ্রকাশিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই কেলেঙ্কারির সাথে রাজ্যের শাসক বিজেপি দলের যুব সংগঠনের একাধিক নেতা সহ কয়েকজন এম এল এ’র নামও জড়িয়েছে। এদেরই অন্যতম অভিযুক্ত দিবন ডেকা বেশ কিছুদিন পলাতক অবস্থায় থেকে সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করেছেন। বিজেপি দলের এই প্রভাবশালী নেতার নাম প্রকাশ্যে আসার পর প্রথমে তো বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস, পরিমল শুক্ল বৈদ্য, হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো নেতা-মন্ত্রীরা ‘দিবনকে চিনি না’, ‘বিজেপি’র কেউ না’ ইত্যাদি বলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। অথচ দিবন ডেকা গত বিধানসভা নির্বাচনে বরক্ষেত্রী সমষ্টির বিজেপি’র প্রার্থী ছিলেন। যদিও পরাজিত হন। কোনো কোনো কাগজে নেতাদের সাথে দিবনের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর তারা মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন। আত্মসমর্পণের পর তাকে দল থেকে নিলম্বিত করা হয়েছে বলে বিবৃতি দিয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস। অসমের সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর মতে এই খলনায়ক পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আত্মগোপন করেছিলেন এবং কলকাতার এক বরিষ্ঠ বিজেপি নেতাই তাকে আত্মসমর্পণ করতে রাজি করান। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি এসে তারপর সড়কপথে অসমে প্রবেশ করেন। তারপর এক নাটকীয় পরিস্থিতিতে পাটাচারকুচির হাইওয়েতে পুলিশের হাতে ধরা দেন। তারপর এই যুব নেতাকে ভি আই পি’র মতো করে গুয়াহাটিতে নিয়ে আসা হয়।

বিজেপি’র দুই এমএলএ বিমল বড়া এবং নারায়ণ ডেকার নামও এই কেলেঙ্কারির সাথে যুক্ত হয়েছে। এদের বাঁচাতে তদন্ত হওয়ার আগেই বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি নির্দোষ বলে ঘোষণা করেছেন। বিমল বড়া এবং নারায়ণ ডেকা নিজের নিজের সমষ্টিতে ‘প্রার্থীদের জন্য প্রশিক্ষণের’ ব্যবস্থা করেছিলেন বলে প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। এই দুই এমএলএ মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে নলবাড়ি এবং বরপেটাতেও, প্রশিক্ষণের নামে ‘বাছা বাছা’ প্রার্থীদের সমবেত করে প্রশ্নপত্র তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হোয়াটস্‌অ্যাপের মাধ্যমেও পৌঁছে গেছে তাদের কাছে।

প্রায় চার বছর আগে অসম পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিযুক্তির বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছিল। ৫৯৭টি পদের বাছাই পর্বের পরীক্ষা ছিল ২০ সেপ্টেম্বর। প্রায় লক্ষাধিক আবেদনকারীর জন্য অসমের বিভিন্ন স্থানে মোট ১৫৪টি পরীক্ষা কেন্দ্র করা হয়েছিল। এই পরীক্ষা পরিচালনার জন্য দক্ষিণ ভারতের একটি সংস্থা ‘কেন্টন’কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা আবার স্থানীয় দুটি কোম্পানি ‘মেসার্স এসেইন টেক’ এবং ‘টেলি কমিউনিকেশন’কে সাব কন্ট্রাক্ট দেয়। এই এসেইনটক সংস্থাটির বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেওয়ার অভিযোগ আছে। কী করে তারা এই দায়িত্ব আবার পেল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় বসার জন্য পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার পর পরীক্ষা বাতিল হওয়ার ঘোষণা শোনে। ফলে দীর্ঘ চার বছর অপেক্ষার পর পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা প্রার্থীদের হতাশ এবং ক্ষুব্ধ করে তোলে। তারা পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে তীব্র প্রতিবাদ করেন। বিজেপি বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচনের আগে। শাসনকাল শেষ হবার মুখে এভাবে পরীক্ষা পরিচালনায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা প্রকৃতপক্ষে বেকারদের প্রতারণা করারই শামিল বলেই প্রার্থীরা মনে করছেন।

এভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া এবারই প্রথম নয়। বিজেপি জমানায় বন বিভাগের শূন্যপদে নিয়োগের পরীক্ষায় গণ্ডগোল, যা শেষপর্যন্ত হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে, সেই নিয়োগ আজও হয়নি। সেচ বিভাগের বেশ কিছু পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এবং পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন বিভাগের ৯০০ পদের নিযুক্তির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এর আগে বিদেশি ট্রাইব্যুনালের ২০০ পদের নিযুক্তির ক্ষেত্রেও স্বজনপোষণ, টাকার লেনদেন সহ অনৈতিক নিযুক্তির অভিযোগ উঠেছে। আর এই সবক’টি ক্ষেত্রেই তদন্তের নামে প্রহসন হয়েছে। আজও তার কোনো সুরাহা হয়নি। তাই সিপিআই(এম) দাবি উত্থাপন করেছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের। এই দাবিকে সামনে রেখে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন, মিছিল হয়েছে। জীবনজীবিকার অন্যান্য দাবির সাথে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন, মিছিল চলছে। এদিকে কংগ্রেস দল এই ঘটনার দায়িত্ব স্বীকার করে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে। ওই দলের রাজ্য সভাপতি রিপুন বড়া অভিযোগ করেছেন যে, এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হওয়া দরকার। কারণ এই সমগ্র ঘটনা পরিচালিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আরএসএস-র দ্বারা, তারা পুলিশের এই দায়িত্বশীল পদে তাদের ক্যাডারদের নিয়োগ করার পরিকল্পনা করেছিল। বিজেপি দলের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে এ কাজ পরিচালনা করে তারা প্রশাসনের গেরুয়াকরণ করতে চেয়েছিল।

এই সরকারের শাসনকালে যে ক’টি নিযুক্তি হয়েছে তার সবকটিতে আরএসএস অনুগত এবং বিজেপি সদস্য-সমর্থকরাই শুধু অগ্রাধিকার লাভ করেনি, বাঁকা পথে নিযুক্তিও পেয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ট আরএএস অনুগত একজন আধিকারিকের নাম সামনে এসেছে। আরএসএস’র প্রভাব বিস্তার এবং হিন্দুত্বের আদর্শ প্রসারের জন্য সারা দেশেই তারা সরকারি প্রশাসন এবং পুলিশকে গেরুয়াকরণের কাজে তৎপর রয়েছে। এ ধরনের কাজ দেখাশোনা করার জন্য তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত নেতাকে নির্বাচিত করাই স্বাভাবিক। সেদিক থেকে দিবন ডেকার আত্মসমর্পণের পর এই কেলেঙ্কারির তদন্ত কোনদিকে মোড় নেয় সেটা লক্ষণীয় হবে। এখনো পি কে দত্তর মতো বৃহৎ হস্তিরা পলাতক। শেষে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরোবে না কিনা - এমন ভয় বিজেপি-কে তাড়া করছে।

গত ৩১ আগস্ট ক্যাগের রিপোর্ট অসম বিধানসভায় দাখিল করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ১৯ হাজার কোটি টাকা ব্যবহারের প্রমাণপত্র দাখিল করেনি। তাতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সোনোয়াল সরকার বাজেট বহির্ভূত খরচ করেছে। এবারের ক্যাগ রিপোর্টে উল্লেখ হয়নি, কিন্তু রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এর সঠিক তদন্ত হলে অনেক রাঘব বোয়াল নিশ্চিতভাবেই জালে পড়বে।

সোনোয়াল সরকারের কার্যকালে কেন্দ্রীয় সরকারের পি এম কিষান যোজনার মাধ্যমে অসমের কৃষকদের নগদ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কৃষক সম্মান নিধির এই যোজনার নামে ভুয়ো উপভোক্তার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকের নামে ভুয়ো উপভোক্তা সৃষ্টি করে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠে এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এই কেলেঙ্কারির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, এই কিষান যোজনার অধীনে মোট উপভোক্তা পঞ্জিভুক্ত হয়েছে ৩৯,৩৯,৩৯৬ জন। কিন্তু রাজ্যে মোট কৃষকের সংখ্যা হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ লক্ষের ভেতর। তদুপরি এই যোজনার টাকা রাজ্যের অধিকাংশ কেষক পাননি। ভুয়ো উপভোক্তার নামে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা সরকার প্রথমে নেয়নি। কিন্তু এর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বিভিন্ন জেলা সদরে যেমন বরপেটা, ধুবড়ি, দরং, মরিগাঁও, কামরূপ প্রভৃতি জেলা সদরে মামলা করা হয়। এই মামলা থেকে প্রায় ৬০০ কোটির বেশি টাকা লুটের ঘটনা সামনে আসে। রাজ্যজুড়ে কৃষকসভার আন্দোলনের চাপে ৯,৩৯,১৪৬ জন ভুয়ো উপভোক্তার কাছ থেকে ৯৪,২৬,৯২১ টাকা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু এখনো লক্ষ লক্ষ ভুয়ো কৃষক এই টাকা ফেরত দেননি। এই কেলেঙ্কারিতে অনেক বিজেপি নেতা এবং সরকারি অফিসার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। লোক দেখানো কিছু টাকা ফিরিয়ে নিলেও এর তদন্ত শেষ হয়নি।

সোনোয়াল সরকারের আমলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়ার নামে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৫০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে। বিজেপি দলের মিলন রঞ্জন দাস এবং মসিনুল আয়াল প্রায় ৫০০ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে অভিযোগ করেন। ভুয়ো সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীর নামে এই টাকা লুট হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে। এই সম্পর্কে রাজ্যের ২৭টি থানাতে এফআইআর দাখিল করা হয়েছে। এর তদন্ত রাজ্যের সিআইডি শুরু করেছে, কিন্তু ওই টাকার হদিশ এখনো পাওয়া যায়নি। অভিযোগকারীদের মতে শাসক দলের নেতারাও এই কেলেঙ্কারিতে যুক্ত।

২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে ফসল বিমা যোজনার অধীনে প্রায় ৪,৭৮১ কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে। কৃষকের নামে ফসল বিমা করা হয়, যদিও কৃষক এই বিমা থেকে উপকৃত না হয়ে প্রতারিত হন। অসমে ২০২০ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত ২.০৩ লক্ষ হেক্টর জমির খরিফ শস্যের নামে ১,১৪৮.৮১ কোটি টাকা, ২০১৯ সালে ৩.৪৯ লক্ষ হেক্টর জমির রবিশস্যের নামে ২,৮০৯ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ সালে ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষির নামে ৩১৭ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ সালে ৫০ হেক্টর ভূমির নামে ২৫২ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ সালে ৪১ হাজার হেক্টর কৃষিজমির নামে ২৩৫ কোটি টাকার বিমা করা হয়েছিল। এভাবে মোট বিমার পরিমাণ ৪৭৮১ কোটি টাকা।

কিন্তু বিমা করা হলেও কৃষকরা আবেদন করে বিমার টাকা পাননি। ২০১৬-১৭ সালে অসমের মাত্র ২৩৬ জন কৃষক বিমার টাকা পেয়েছেন। ২০১৭-১৮ সালে ৫৫ হাজার কৃষকের মাত্র এক শতাংশ কৃষক বিমার টাকা পেয়েছেন। ২০১৮-১৯ সালে বিমার টাকা পেয়েছেন মাত্র ১০০ জন কৃষক। অর্থাৎ ফসল বিমার নামে ৪৭৮১ কোটি টাকার বিমা করা হয়েছিল, কিন্তু মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া কোনো কৃষক বিমার টাকা পাননি। তদন্ত ঠিকমতো হলে বেশ কয়েকজন সরকারি এবং বিমা কোম্পানির অফিসার জালে পড়বে।

এইসব কেলেঙ্কারি ‘স্বচ্ছ এবং নির্মল প্রশাসনে’র স্বরূপ খুলে দিয়েছে। ‘না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা’ স্লোগানের বিপরীতে সোনোয়াল সরকারের সময়ে একাংশ দালালশ্রেণির শাসক দলের নেতা প্রশাসনের আড়ালে কেলেঙ্কারির পর কেলেঙ্কারি করে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। মাত্র কিছুদিন আগে সেচ বিভাগের এক অফিসে ড্রয়ারের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা উদ্ধারের ঘটনা সবাইকে সচকিত করেছিল। সন্দেহ ঠিকাদারের কাছ থেকে এ টাকা উৎকোচ হিসাবে নেওয়া হয়েছিল। অসমের প্রশাসনের এই হচ্ছে আসল চেহারা! অসম সরকারের এই সমস্ত দুর্নীতি-কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে এখন তোলপাড় রাজ্য।