৬০ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ২৩ ভাদ্র, ১৪২৯
ষোড়শ সম্মেলন শেষে মনোজগতে প্রত্যাশার ঝড় তুলে সময়োপযোগী গণনাট্য সংঘ গড়ে তোলার আহ্বান
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করছেন বাংলাদেশের উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর জাতীয় সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। মঞ্চে বিশিষ্টরা।
শক্তি সংহত করে দক্ষিণপন্থার রাজনীতি ভারতের ধারণাটাকে ধ্বংস করতে চাইছে। শ্রেণি স্বার্থে বিভাজন ঘটিয়ে বর্ণ হিন্দু ভাবনার কাঠামোর ভিত্তিতে দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে ওরা। তাই গণআন্দোলনের পাশে গণনাট্য আন্দোলনের ভূমিকা বহাল রেখেও তার পরিধিকে আরো বিস্তৃত করতে হবে। মতাদর্শের প্রশ্নে বিরোধিতা নেই এমন শিল্পীসত্তাকে বিকল্প সংস্কৃতির আন্দোলনের অঙ্গনে নিয়ে আসতে হবে। মানুষের সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্ক ও যুক্তিনিষ্ঠ উভমুখী সংযোগ গড়তে তাই আজকের আহবান - সংগঠন-সৃজন-ঐক্য-সমন্বয়। ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, পশ্চিমবঙ্গ-র ষোড়শ রাজ্য সম্মেলন থেকে উচ্চারিত হলো এমন অভিমুখের প্রত্যয়।
উত্তর কলকাতার পাইকপাড়ায় মোহিত মৈত্র মঞ্চে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩দিন ব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন উপলক্ষে পাইকপাড়ার মঞ্চ সন্নিহিত এলাকার নামকরণ করা হয় শোভা সেন-তরুণ মজুমদার-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নগর। সম্মেলনের মূল অধিবেশন সভাকক্ষ এবং মঞ্চের নামকরণ করা হয় গণনাট্য সংঘের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদকদ্বয়ের নামে শিশির সেন সভাগৃহ এবং গোরা ঘোষ মঞ্চ।
সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতিতে ১১১ জনের রাজ্য কমিটি গঠিত হয়। যার মধ্যে ১০০ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছে সম্মেলন থেকেই। পরবর্তীতে অন্যদের কো-অপট করা হবে। রাজ্য কমিটির প্রথম বৈঠক থেকে সর্বসম্মতিক্রমে ২৬ জনকে নিয়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়। সর্বসম্মতিতে হিরন্ময় ঘোষাল রাজ্য কমিটির সভাপতি, সহ-সভাপতি পীযূষ সরকার এবং কঙ্কন ভট্টাচার্য, রাজ্য সম্পাদক দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়, সহসম্পাদক অভিজিৎ ঘোষ, আশিস দেব, কোষাধ্যক্ষ ভোলানাথ মুখোপাধ্যায় এবং গণনাট্য পত্রিকার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন শ্যামল ভট্টাচার্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০বছর পূর্তি এবং ভারতের স্বাধীনতার ৭৫বছর - এই দুইয়ের মুক্তি আকাঙ্ক্ষার যোগসূত্রের আভাস ছিল মূলমঞ্চের সজ্জায়। গণনাট্য সংঘের ঐতিহ্যবাহী ৮দশকের উত্তরাধিকারকে মনে করিয়ে দিতে পতাকা উত্তোলন পর্বের পর উপস্থাপিত হয় বর্ণময় নৃত্যালেখ্য। গণনাট্যের নানা বয়সের শিল্পীদের এই প্রযোজনা রবীন্দ্রনাথের ‘ভয় ভাঙা নায়ে’ ঐক্যবদ্ধভাবে মারের সাগর পাড়ি দেওয়ার হাতছানি দিয়ে যায় উপস্থিত সকলকে।
‘অনুভব এবং মননে বিজ্ঞানমনস্কতাকে ঠাঁই দিতে না পারাটা নিজের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা’
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি হিরন্ময় ঘোষালের আহবানে রাজ্য সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর জাতীয় সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান। তিনি বলেন, এই সংগঠনের সৃষ্টির ধারাবাহিকতা সংগ্রামের ফসল। গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে বিপন্ন মুক্তিকামী মানবতার প্রেরণায় গণনাট্য সংঘের সৃষ্টি। বিশিষ্ট ফরাসি দার্শনিক রম্যাঁ রলাঁ যিনি পিপলস থিয়েটার তৈরি করেছিলেন শোষিত মানুষের লড়াইয়ের সম্পূরক নতুন নাট্য ভাবনার ভিত্তিতে, সেই চিন্তার জারন বাংলায় গণনাট্য আন্দোলন শুরুর প্রেরণা। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, হিটলারের বিরুদ্ধে সদ্যগঠিত সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন তীব্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাকে প্রতিহত-পরাভূত করছে তখন বাংলায় গঠিত হয় সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি। এই সমিতির আহ্বানে এক ফ্যাসিস্ট বিরোধী সম্মেলনের প্রতি সংহতি জানানোর মিছিলে কারখানা থেকে শ্রমিকদের সংগঠিত করে নিয়ে আসার পথে ১৯৪২ সালের ৮মার্চ নিহত হন তরুণ কমিউনিস্ট লেখক সোমেন চন্দ। তারপর ২৮মার্চ কলকাতায় তাঁর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরিস্থিতির উত্তরণের ধারাবাহিকতা থেকেই পরবর্তীকালে গণনাট্য সংঘ তৈরি হওয়ার রসদ সংগঠিত হয়। তার আগেই রবীন্দ্রনাথ থেকে মন্মথ রায়ের নাট্যধারা, দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক থেকে মুকুন্দ দাসের স্বদেশি গান বাংলা তথা দেশের প্রতিরোধের মননকে শানিত করেছে। সেই পথ ধরেই ১৯৬৮ সালে সত্যেন সেন প্রতিষ্ঠা করেন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর। তিনি বলেন, আমাদের সংগ্রাম এক মানবতার সংগ্রাম। গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ উদার শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য। চাই আত্মবিশ্লেষণ, চাই আত্মসঞ্চালন। আমরা যদি নিজেকে প্রগতিশীল না করতে পারি, বিজ্ঞানমুখী না করতে পারি, কুসংস্কারমুক্ত না করতে পারি তবে পাশের মানুষকে ইতিবাচক পথ দেখাতে পারব না। নিজের অনুভব এবং মননে বিজ্ঞানমনস্কতাকে ঠাঁই না দিতে পারলে তা নিজের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা, লড়াইয়ের অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মেহনতি মানুষের জয় হবেই। গণনাট্য সংঘ এই লড়াইয়ে তার যোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
সম্মেলনের দায়বদ্ধতার অনুভব থেকেই গণনাট্য সংঘের সহযোগী শক্তি হিসাবে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত ছিলেন এই উদ্বোধনী অপরাহ্নে। ছিলেন কুন্তল মুখোপাধ্যায়, অম্বর চম্পাটি, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, অভিনেতা চন্দন সেন, সুপ্রিয় সর্বাধিকারী, নাট্যকার চন্দন সেন, অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, সীমা বন্দোপাধ্যায়, অদ্রিজা দাশগুপ্ত, মুরারি রায়চৌধুরী, রজত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপুল চক্রবর্তী, অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণ সেনবরাট, জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী, পন্ডিত পার্থপ্রতিম রায়, রাজু বল, অমিত কালী, সুনীতি মালাকার, রাম আহ্লাদ চৌধুরী, তারক চৌধুরী প্রমুখ। মঞ্চে উপস্থিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধিত করা হয়।
কাম অন কমরেড, হোয়্যার ইউ শুড বি!
বিকল্প সংস্কৃতি পরিবেশনের ক্ষেত্রে একটা দম বন্ধ করা পরিস্থিতি চাপিয়ে দেবার পুঁজি ও সরকার নিয়ন্ত্রিত চেষ্টা চলছে। সেখানে গণনাট্য সংঘের কাছে কী প্রত্যাশা এই প্রশ্ন নিয়ে সম্মেলন মঞ্চে এরপর মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে অংশ নেন কল্যাণ সেন বরাট, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, বিপুল চক্রবর্তী, অদ্রিজা দাশগুপ্ত, জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এই পর্বের সঞ্চালনা করেন শ্যামল ভট্টাচার্য ও শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার। আলোচনা থেকে নির্যাস হিসেবে গণনাট্য সংঘের কাছে দাবি হিসেবে উঠে আসে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ সাধারণ মঞ্চের প্রশ্ন। শিল্পীরা তাঁদের আলোচনায় বলেন, আমরা বিভিন্ন হয়ে আছি। আমাদের একটা সংঘবদ্ধতায়ে আসতে হবে। আমরা হিটলারের কথা জানি। ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবীদের নিধন কারা করেছিল সেই ইতিহাস জানি। তাই প্রতিবাদী শিল্পকে সার্থক শিল্প হয়ে উঠতে হবে। বিশ্বাসের জোরটা থাকতে হবে। যদি সার্থক হয়েও ওঠে তবে পরিবেশনের জন্য তার বহিরঙ্গের আড়ম্বর লাগে না, তাকে আটকে দেওয়া যায় না। আটকালে ভিন্ন পরিসর রয়েছে। তাই সাধারণ মঞ্চ আমাদের মধ্য থেকেই গড়ে উঠুক, তার নেতৃত্বও গড়ে উঠবে। গণনাট্য সংঘের-এর কাছে দাবি থাকবে - কাম অন কমরেড হোয়্যার ইউ শুড বি!
এরপর প্রতিনিধি অধিবেশন পর্ব শুরু হয় ‘সংঘসঙ্গীত ‘এসো মুক্ত করো’ গানের মধ্যে দিয়ে। সম্মেলন পরিচালনার জন্য হিরণ্ময় ঘোষাল, অভয় দাশগুপ্ত, অমল গুহ ও কৃষ্ণা ভট্টাচার্যকে নিয়ে সভাপতিমণ্ডলী গঠিত হয়।
সম্মেলনে খসড়া রিপোর্ট পেশ
এরপর সম্মেলনে খসড়া রিপোর্ট পেশ করেন বিদায়ী সম্পাদক দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায়। রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে পরিচিতিসত্তার বিপদের মোকাবিলা করার প্রশ্নে সৃজনের কথা, একই ছাঁচে ঢালা মানুষ নির্মাণের রাজনীতিকে পরাস্ত করার জারি থাকা লড়াইয়ের কথা এবং তাকে পরাস্ত করার আহ্বানের অভিমুখের কথা। রিপোর্টে অতিমারীজনিত পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন জীবিকার হানি এবং নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার হাহাকারের পাশে সীমিত সামর্থ্যে বিকল্প নিয়ে লড়াইয়ের খতিয়ান রয়েছে। শারীরিক দূরত্বকে সামাজিক দূরত্বে পরিণত করার চেষ্টা এই পরিস্থিতিতেও গণনাট্যশিল্পীরা পৌঁছে গেছেন মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনে রেড ভলেন্টিয়ার্সদের অংশ হিসেবে। আবার দেশজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য গণতান্ত্রিক রীতিনীতি সাংবিধানিক সংস্থাগুলির নিয়ন্ত্রণের হিন্দুত্ববাদী চেষ্টার বিপদেরও উল্লেখ রয়েছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, গোটা সংবাদ মাধ্যম ধমক-চমকের চোটে বিসর্জন দিয়েছে সাংবাদিকতার দীর্ঘ লালিত প্রতিবাদী ঐতিহ্য। বহু প্রশ্ন নিয়ে আদালতের রায়ে ঘিরে চলছে বিতর্ক। অসহিষ্ণুতার বেপরোয়া আক্রমণ নেমে আসছে প্রতিনিয়ত। তার মধ্যেও রয়েছে প্রতিরোধের মুখে পুঁজিবাদের পিছু হটার বৃত্তান্ত- কৃষক আন্দোলনের সাফল্য। সেই আন্দোলনের সঙ্গেই তৈরি হয়েছে এক বিকল্প সংস্কৃতির গতিপ্রবাহ। রাজ্যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর ক্রমাগত অসত্য ভাষণ এবং মিডিয়ায় তার অনুরণন সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকাকে লঘু করেছে। তবুও ভুখা অসহায় মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। দুনিয়াজুড়ে ডিজিটাল মাধ্যমকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষের কাছে শিল্প-সংস্কৃতি এবং বিকল্পের বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকেনি গণনাট্য সংঘের শিল্পী-কলাকুশলীরা। ফেসবুক থেকে ইউটিউব - সর্বত্র হাজির থেকেছে গণনাট্য সংঘ। নাগরিক বিলবিরোধী আন্দোলন থেকে কোভিড- জেলায় জেলায় মানুষের হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়া গেছে সৃজন ভাবনাকে। তবুও সৃজনশীল প্রযোজনার ধারাবাহিক সমন্বয় এবং সব প্রগতিশীল শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও তা খুব বেশিদূর এগোয়নি বলে রয়েছে আত্মসমালোচনাও।
প্রতিনিধিদের আলোচনার বিষয় ধরে নাটক, সংগীত, বিবিধ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া, গঠনতন্ত্র সংশোধন ও গণনাট্য পত্রিকা প্রসঙ্গে সম্মেলনে মূল্যায়নসূচক বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে পীযূষ সরকার, কঙ্কন ভট্টাচার্য, আশিস দেব, অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শ্যামল ভট্টাচার্য।
প্রতিনিধিদের আলোচনা
কোচবিহার, জলপাইগুড়ি থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা গণনাট্যের শাখাগুলির প্রতিনিধিদের আলোচনায় যেমন স্থানীয় ইস্যু রয়েছে তেমনই রয়েছে সাধারণ বিষয়ও। সমালোচনা এবং আত্মসমালোচনা প্রসঙ্গে এসেছে প্রত্যন্ত এলাকার শাখাগুলিকে আশানুরূপ সচল না করতে পারার বিষয়। উঠে এসেছে প্রয়োজনে সংস্কৃতি বিষয়ক কাজ করেন এমন বন্ধু সংগঠনের সঙ্গে মিলে সুন্দরবনের মানুষের সমস্যা নিয়ে, জীবন জীবিকার সংগ্রাম নিয়ে কার্যকরী সাংস্কৃতিক উদ্যোগ নেওয়ার ভাবনার কথা। উঠে এসেছে গণনাট্য পত্রিকায় প্রকাশিত বিষয়কে আরও বেশি করে গ্রামবাংলামুখী করার দাবি এবং পত্রিকার গ্রাহক বাড়াতে প্রয়োজনে ইস্যুভিত্তিক প্রচারের মধ্যদিয়ে খুচরো বিক্রির কথা।
আগামী দিনে শাখাগুলিকে একেবারে ধরে ধরে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও তার ধারাবাহিক প্রয়োগ, পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে জেলা এবং রাজ্যভিত্তিকভাবে সামগ্রিক পরিকল্পনার আওতায় এনে সব শাখাকে সচল করবার উদ্যোগ নেবার কথা বলেছেন প্রতিনিধিরা। জেলা-রাজ্যের নিয়মিত সমন্বয়ের ভিত্তিতে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী জেলা গড়ার প্রসঙ্গও উচ্চারিত হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিনিধিরা চর্চা-অনুশীলন বৃদ্ধি, নিজের মান উন্নত করা এবং সমকালীন থাকা জরুরি এই বিষয়সমূহ তুলে ধরেছেন তারা।
প্রয়োজনে রাজ্য-জেলা স্তরে স্থায়ী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা, প্রথাগত সব ধরণের স্পেস-এর পাশাপাশি বিকল্প স্পেসের পূর্ণ ব্যবহার, নতুন পরিস্থিতিতে সৃজনের লড়াইয়ের নতুন প্রান্তিক মানুষদের সামনে আনার কথা গুরুত্ব পেয়েছে আলোচনায়। সুস্থ বিনোদনের সাথে সমাজ ভাবনাভিত্তিক শিল্প সৃজনের মধ্য দিয়ে গণনাট্যের পরিধি বাড়িয়ে আকৃষ্ট করতে হবে নতুন প্রজন্মকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সহ বিবিধ মাধ্যমের দ্বারা দর্শকের সামনে প্রযোজনা উপস্থিত করা খুব জরুরি। বিষয় নির্বাচন থেকে সৃজন প্রযোজনায় হবে সমকালীন। সংগঠনকে ঢেলে সাজাতে সৃজন আদর্শবোধে সমমনস্কদের সাথে কাজের ভিত্তিতে গড়ে উঠুক ঐক্য, আসুক ধারাবাহিক কাজে সমন্বয় - এমনটাই প্রত্যয় দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন প্রতিনিধিরা।
জবাবি ভাষণ
জবাবি ভাষণে দিব্যেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, সহযোদ্ধা প্রবীণদের পরামর্শ নিয়ে নবীন প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে সময়োপযোগী গণনাট্য সংঘ গড়ে তুলতে হবে। সৃজন সম্ভার নিয়ে মানুষের মনে প্রত্যাশার ঝড় তুলতে হবে, ছড়িয়ে পড়তে হবে মানুষের মনোজগতে, জয় করতে হবে আজকের সংকটময় সময়কে।
রাজ্য সম্মেলনে ২২টি জেলা থেকে ২৬২ জন প্রতিনিধি ও ২২ জন দর্শক উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের ওপর সংগঠন ও সৃজন নিয়ে ৪৬ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন। সম্মেলনে পুরুষ প্রতিনিধি ১৮৫ জন এবং মহিলা ৫১ জন।
সম্মেলনে বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবি তুলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের হাতে। সংঘ সঙ্গীত ‘এসো মুক্ত করো’ গানের মধ্যে দিয়ে ষোড়শ সম্মেলন শেষ হয়।
সম্মেলন মঞ্চে প্রতিদিনই বিভিন্ন সময়ে হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।