E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ২৩ ভাদ্র, ১৪২৯

তিস্তা শীতলবাদের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন

ঈশিতা মুখার্জি


গত ২ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার কর্মী তিস্তা শীতলবাদ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্তবর্তীকালীন জামিন পান। ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যায় নিহত এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরির গুজরাট হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পাশে একনাগাড়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন তিস্তা। সুপ্রিম কোর্ট জাকিয়া জাফরির আবেদন খারিজ করে ২৬ জুন। সঙ্গে সঙ্গেই গুজরাট পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। সেইদিনই সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরো এক বিবৃতিতে এই গ্রেপ্তারকে ধিক্কার জানায়। বিবৃতিতে বলা হয় যে, এই গ্রেপ্তার দেশের সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বলছে যে, রাষ্ট্র এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে মুখ খোলা যাবে না।

১৬ বছর ধরে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়েছেন তিস্তা। তাঁর লেখায় তিনি বলেছেন যে, তিনি এই রাষ্ট্রে “অপরাধীদের মুক্তি দেওয়ার সংস্কৃতির” বিরুদ্ধে লড়ছেন। গুজরাট গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাই করেছে আমাদের দেশে। এটা সঠিক যে অপরাধীকে আড়াল করার রেওয়াজও তৈরি হয়েছে সমাজে। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সঙ্গে সঙ্গে প্রেস বিবৃতিতে এই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা করেছে। মহিলা সংগঠনের কর্মীরা সারা দেশের বিভিন্ন গ্রাম শহর থেকে তিস্তা শীতলবাদকে সংহতি জানিয়ে চিঠি লেখেন। গারদের ভিতরে সেই বার্তাগুলি তিস্তার কাছে পৌঁছায় এবং এইভাবে তাঁর লড়াইয়ের সাথে মিলে মিশে যায় দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াই। তিনি এ কথাও বলেন যে, এই পোস্টকার্ড এবং চিঠিগুলি জেলের ভিতরে তাঁর চোখে জল এনে দিয়েছে এবং তিনি উপলব্ধি করেছেন যে এই লড়াই কত মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।

সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ অন্তর্বর্তীকালীন জামিনের রায় দেওয়ার পর সিপিআই(এম) এক টুইট বার্তায় এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলে যে, এই রায় গুজরাট হাই কোর্টের অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এ কথাও জানানো হয় যে, সাম্প্রদায়িক হিংসায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তিস্তা কোনো অন্যায় করেননি।

সুপ্রিম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি ইউ ইউ ললিত এই মর্মে জামিনের রায় দেন, মূলত তিস্তা একজন মহিলা। জামিন -অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তার হলেও আইন অনুযায়ী মহিলা বলেই তিনি জামিনের আবেদন করতে পারেন। মহিলাদের জন্য গ্রেপ্তার এবং বিনা বিচারে বন্দি থাকা সংক্রান্ত বিষয়েও কয়েকটি আইনের ধারা আছে যার ফলে তিনি জামিন পেতে পারেন। কিন্তু এ কথাও সত্যি যে, দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে পুলিশি এবং জেল হেফাজতে তিস্তাকে জেরা করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০২ সালের ঘটনা কেন্দ্রিক এবং এই বিষয়ে সমস্ত নথি ২০১২ সালেই জমা পড়ে যায়। তাই এই জেরায় নতুন কী জানা যেতে পারে মানবাধিকারকর্মীদের হুঁশিয়ার করে দেওয়া ছাড়া? এমনিতেই গুজরাট পুলিশ তিস্তা শীতলবাদ এবং আর পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল আর বি শ্রীকুমারকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করেছে। এই গ্রেপ্তারের পিছনে কোনো ভিত্তি ছিল না শুধুমাত্র রাষ্ট্রের প্রতিহিংসামূলক অভিসন্ধি ছাড়া। অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিলেও এর আগে এই সুপ্রিম কোর্ট জাকিয়া জাফরির আবেদন খারিজ করার সময় স্পষ্ট বলেছিল যে, কারুর (তিস্তা) নির্দেশে জাকিয়া জাফরি এই আবেদন করেছেন। কাজেই এই সুপ্রিম কোর্টের কথাই গুজরাট পুলিশকে তিস্তাকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে কার্যত ইন্ধন যুগিয়েছে। বিচার ব্যবস্থাও পরোক্ষে মাঝে মাঝেই ক্ষমতার চাপের কাছে নতিস্বীকার করছে দেখা যাচ্ছে। তবে এই জামিনের রায় নিঃসন্দেহে সাম্প্রদায়িক হিংসার বিরুদ্ধে লড়াইকেই মজবুত করবে আগামীদিনে এমন আশা করা যায়।