E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ২৩ ভাদ্র, ১৪২৯

দিল্লিতে শ্রমিক কৃষক খেতমজুরদের যৌথ কনভেনশন থেকে দিল্লিতে বিশাল সমাবেশের ডাক


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নয়া উদারনীতির প্রয়োগের মধ্য দিয়ে শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষরে উপর শাসকগোষ্ঠী যে ভয়ংকর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, তার প্রতিরোধে সংগঠিত হবে মজুর কিষান সংঘর্ষ সমাবেশ। সংসদের আগামী বাজেট অধিবেশনের সময় রাজধানী দিল্লিতে হবে এ‍‌ই সুবিশাল জঙ্গি সমাবেশ। ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে সর্বভারতীয় পর্যায়ের এক যৌথ কনভেনশন থেকে সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। স্থির হয়েছে এই কর্মসূচি সফল করতে আগামী চার মাস ধরে দেশজুড়ে নিবিড় প্রচার চলবে।

এদিনের এই কনভেনশনের আয়োজক ছিল সেন্টার অব ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস (সিআ‍‌ইটিইউ), সারা ভারত কৃষক সভা (এআইকেএস), সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন (এআইএডবলিউএ)। সংগঠনগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখনও যে সব মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়নি, তাদের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়েই যৌথভাবে প্রচার চালানো হবে।

কনভেনশনের পর নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, নয়া উদার অর্থনৈতিক পথে কেন্দ্রের শাসকদল যে শ্রমিক‍‌ বিরোধী, কৃষক বিরোধী এবং খেতমজুর বিরোধী নীতি নিয়েছে তা প্রতিরোধের ডাক দিয়েই তিনটি সংগঠনের ডাকে এই সমাবেশ হবে। তাঁরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর রাজধানী দিল্লি দেশে সম্পদ উৎপাদনকারী শ্রেণিগুলির সর্ববৃহৎ সমাবেশ প্রত্যক্ষ করবে ওই দিন। সমাবেশকে স্মরণকালের মধ্যে বৃহত্তম চেহারা দিতে আগামী অক্টোবর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রতিটি গ্রাম-শহরের কোণে কোণে নিবিড় যৌথ প্রচার চলবে।

এদিন হাজার হাজার শ্রমিক, কৃষক ও খেতমজুরের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কনভেনশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আ‍‌ন্দোলনের পথেই তিন শ্রেণি সংগঠনের ঐক্য ও বোঝাপড়া আরও মজবুত করে গড়ে তোলা হবে সারা দেশে। শাসকের অনুসৃত সর্বনাশা নীতির মোকাবিলায় যৌথ প্রতিরোধ কর্মসূচি আরও তীব্র করে গড়ে তোলা হবে। তিন সংগঠনের স্বাধীন আন্দোলনে একে অপরকে যথাসম্ভব সহযোগিতার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ যৌথ সংগ্রামে সক্রিয় সংহতির হাত বাড়িয়ে দেশের কোটি কোটি শ্রমিক, কৃষক ও খেতমজুরের কাছেও আহ্বান জানিয়েছে কনভেনশন।

সিআইটিইউ’র সভাপতি কে হেমলতা, এআইকেএস’র সভাপতি অশোক ধাওয়ালে এবং এআইএডবলিউএ’র সভাপতি এ বিজয়রাঘবনকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী এদিনের কনভেনশন পরিচালনা করেন। বক্তব্য রাখেন সিআ‍‌ইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, এআইকেএস’র সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা, এআইএডবলিউএ’র সাধারণ সম্পাদক বি ভেঙ্কট। এছাড়া কনভেনশনের যৌথ ঘোষণায় উল্লিখিত আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন দেবাশিস বসু (বিইএফআই), অভিমুন্য (বিএসএনএলইইউ), পরাশর (সিসিজিইডবলিউ), শ্রীকুমার (এআইএসজিইএফ), ভাটনগর (এআইআইইএ) সহ বিভিন্ন ফেডারেশন ও সংগঠনের নেতৃত্ব। বক্তব্য রাখেন কৃষক আন্দোলনের নেতা অমরা রাম, প্রকাশন মাস্টার, ডি রবীন্দ্রন, সুমিত দালাল ও সুনীল অধিকারীসহ খেতমজুর আন্দোলনের নেতা অমিয় পাত্র, ললিতা বালান, ভেঙ্কটশরণ, ব্রিজলাল ভারতী, বিক্রম সিং প্রমুখ।

এদিনের এই কনভেনশনে শ্রমজীবী মানুষের যে দাবিগুলি পুনরুচ্চারিত হয়েছে সেগুলি হচ্ছে - প্রতি মাসে সব শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৬ হাজার টাকা নিশ্চিত করতে হবে; সি২+৫০ শতাংশ নীতি মেনে সব কৃষকের সব ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দি‍‌তে হবে; উৎপাদিত সব ফসলের সরকারি সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে; বিদ্যুৎ সংশোধনী বিলঃ ২০২০ বাতিল করতে হবে; এমএনরেগা’য় ২০০ দিনের কাজ এবং দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি নিশ্চিত করতে হবে; শহর অঞ্চলে কর্মসংস্থান নিশ্চ‌য়তা আইন প্রণয়ন করতে হবে; গরিব ও মধ্য কৃষক এবং খেতমজুর‍‌দের সব ঋণ এককালীন মকুব করতে হবে; ৬০ বছরের বেশি বয়সিদের সকলকে পেনশন দিতে হবে; রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ বন্ধ করতে হবে; ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপ লাইন (এনএসপি) এবং অগ্নিপথ প্রকল্প খারিজ করতে হবে; গণবণ্টন ব্যবস্থা জোরদার ও সর্বজনীন করতে হবে; ১৪টি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশনের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে; ট্যাক্স দেয় না এমন সব পরিবারে খাদ্য ও আয় নিশ্চিত করতে হবে; খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য রেশনরে মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে; কেন্দ্রীয় কর কমিয়ে পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, রান্নার গ্যাসের দাম কমাতে হবে; অরণ্য অধিকার আইন (এফআরএ) কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে; বাসিন্দাদের না জানিয়ে বনাঞ্চল ধ্বংসের অনুমতি দেওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি বন (সংরক্ষণ) আইনের যাবতীয় সংশোধনী ও বিধি প্রত্যাহার করতে হবে; প্রান্তিক অংশের মানুষের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়ন বন্ধ করে সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করতে হবে; সকলের জন্য উচ্চমানের এবং সর্বজনীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করতে হবে; সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে; অতি ধনী ও কর্পোরেটদের ওপর কর বাড়িয়ে‌ এবং সম্পদ কর চালু করে সব শ্রমিককে মাসে ১০ হাজার টাকা করে পেনশন দিতে হবে ইত্যাদি।

এদিন কনভেনশন থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জীবনজীবিকা ও কাজের পরিবেশের আশু দাবিগুলিই শুধু নয়, আজকের সংগ্রাম বিজেপি-আরএসএস জমানার সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী আক্রমণ থেকে দেশের অর্থনীতি এবং আমাদের সমাজের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোটিকে রক্ষার জন্যও। তাই বিজেপি-আরএসএস’র উদারনৈতিক, সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী শাসনকে পর্যুদস্ত করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে দে‍‌শের সমস্ত শ্রমিক, কৃষক এবং খেতমজুরের কাছে আবেদন জানিয়ে‍‌ছে কনভেনশন।

নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, অক্টোবরের মধ্যেই তিন সংগঠনের রাজ্য পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যুক্ত বৈঠক করতে হবে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রাজ্য স্তরে কনভেনশন করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে হবে জেলা স্তরে যৌথ কনভেনশন। যে মানুষদের কাছে এখনও পৌঁছানো যায়নি, তাঁদের কাছে পৌঁছাতে আগামী চার মাসে লিফ্‌লেট বিলি, পোস্টার, দেওয়াল লেখা, গ্রুপ সভা, জাঠা, মিছিল, সভা-সমাবেশ হবে। স্থানীয় দাবিগুলিও প্রচারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরতে হবে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ২০২৩ সালের সংসদের বাজেট অধিবেশনের সময় দিল্লিতে হবে দ্বিতীয় মজদুর কিষান সংঘর্ষ সমাবেশ।