E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৫ সংখ্যা / ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ / ২৩ ভাদ্র, ১৪২৯

চমৎকার! ধরা যাক দু’একটা ফাইল এবার...

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


‘হেড আফিসের’ শান্ত বড়োবাবুর মাথার ব্যামোর কথা কেউ বিশেষ জানতো না। তবে তিনি যখন হঠাৎ ক্ষেপে গেলেন তখন লোকে মালুম পেল কিছু একটা ব্যামো নির্ঘাত আছে। তা না হলে আচমকা কেউ এরকম ‘গোঁফ গিয়েছে চুরি!’ বলে লাফালাফি শুরু করে? দিব্যি তো খোশমেজাজে ছিলেন। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। পোশাসনিক বৈঠক থেকে শুরু করে দলীয় তথা সরকারি সমাবেশ, কার্নিভালে বড়োবাবুর ভাষণ-টাসন তো বেশ চলছিল। তিনি হঠাৎ করে এমন ‘রেগে আগুন তেলে বেগুন’ কেন? হঠাৎ কেন তিনি বলতে শুরু করেছেন, ‘কাউকে বেশি লাই দিতে নেই, সবাই চড়ে মাথায়।’? তবে কি সত্যিই ডাল মে কুছ কালা? এমন কিছু ঘটলো যাতে বড়োবাবুর মনে হয়েছে চুরি হয়ে গেছে গোঁফ?

ইদানীং কেউ কেউ বলেছেন, আমার লেখায় নাকি বড়ো বেশি রূপক। তাই রুটে পৌঁছাতে একটু অসুবিধে হয়। পাঠকের কথা শিরোধার্য। ভেবেছি এবার থেকে আর রূপক-টুপক কিছু নয়। যা লিখব তা চাঁচাছোলা ভাষাতেই। যাতে শব্দ বাক্যেরা একেবারে ধাঁই ধাঁই করে গিয়ে সকলের বুকে বেঁধে। যদিও ওই বিড়ালের স্বভাবের মতো আড়াই পা গেলেই যেহেতু সব ভুলে যাই তাই এবারেও লিখতে বসে সুকুমার রায়কে টেনে আনার লোভ সামলাতে পারলাম না। নিজের দৈন্য ঢাকতে বঙ্কিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগর, সুকুমার, রবীন্দ্র, নজরুল নিয়ে একটু টানাটানি না করলে চলে? আসলে ওনাদের লেখা না থাকলে কী করে এত সহজে বোঝানো যাবে যে ‘মোটেও গোঁফ হয় নি চুরি, কক্ষনো তা হয় না।’

‘দুর্নীতি’ শব্দটা নাকি বেশ পুরনো। পুরনো অর্থাৎ এর ব্যবহার নাকি বহুদিন থেকেই। সেই কবে নাকি অ্যারিস্টটলও ব্যবহার করেছিলেন। আমি যদিও সত্যি মিথ্যে জানিনা। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুসারে দুর্নীতি (‘করাপশন’) শব্দের অর্থ - অসৎ বা বেআইনি আচরণ, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন মানুষদের। কেমব্রিজ ডিকশনারি দুর্নীতির (করাপশন) সংজ্ঞা হিসেবে জানাচ্ছে - বেআইনি, খারাপ, বা অসৎ আচরণ, বিশেষ করে ক্ষমতার অবস্থানে থাকা ব্যক্তিদের দ্বারা। বাঙলা অভিধান অনুসারে দুর্নীতি = দুর্ (নিন্দিত) যে নীতি (নিয়ম), কুনীতি; কুরীতি; অসদাচরণ, অসদাচারী; দুরাত্মা; দুর্বৃত্ত। এই শব্দ নাকি যখন বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন সমূলে বিনষ্ট হওয়াকে নির্দেশ করে। স্টিফেন ডি মরিস তাঁর ‘ফর্মস অফ করাপশন’-এ বলেছেন, ‘দুর্নীতি একটি বিস্তৃত পরিসরের আচরণকে বোঝায়। ব্যক্তিগত লাভের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার হিসাবেও একে সংজ্ঞায়িত করা হয়।’ তবে দুর্নীতি সম্পর্কে চারপাশে যেটুকু লেখাজোখা আছে তার সারবস্তু তুলে আনলে যা দাঁড়ায় তা অনেকটা এরকম - ‘স্নেহ অতি বিষম বস্তু’র মতোই দুর্নীতিও অতি বিষম বস্তু। ছোটো থেকে বড়ো - বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি হতে পারে। দুর্নীতি একধরনের অসৎ উপায়, যা কোনো ব্যক্তি অথবা সংস্থা করতে পারে। যাকে পদ দেওয়া হয় তিনি অবৈধ সুবিধা অর্জন বা ব্যক্তিগত লাভের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করলে সেটাও দুর্নীতি। দুর্নীতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ঘুষ, প্রভাব খাটিয়ে প্রভাব বিস্তার করা এবং সম্পদ বা অর্থ আত্মসাৎ করা। দুর্নীতি বিষয়ে অনেক ঘ্যানঘ্যানানি হয়ে গেছে। থামার আগে একবার শুধু দেখে নেওয়া যাক, দ্য ইকনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দুর্নীতি সম্বন্ধে যা বলা হয়েছে সেটা। যেখানে বলা হচ্ছে - ‘দুর্নীতি তখন ঘটে যখন কেউ ব্যক্তিগত লাভের জন্য তাদের উপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে। ক্ষমতার এই অপব্যবহার দুই বা ততোধিক দলের মধ্যে আস্থা নষ্ট করে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। এছাড়াও, দুর্নীতি একটি জাতির অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং দারিদ্র্য ও বৈষম্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এটা বোঝা খুবই জরুরি যে, কীভাবে দুর্নীতিকে উন্মোচিত করা যেতে পারে এবং দুর্নীতিবাজদের একটি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থা তৈরির জন্য দায়ী করা যেতে পারে।’

একটু আগে বেড়ালের আড়াই পা বলেছিলাম। অভ্যেস যাবে কোথায়? যতই ভাবি চাঁচাছোলা ভাষায় দু’চারটে কড়া কড়া কথা বলব ততই ঘুরে ফিরে একটু ঘেঁটে দিতে ইচ্ছে করে। দুর্নীতি নিয়ে যেমন সামান্য একটু বলতে গিয়ে বেমক্কা কতগুলো ফালতু কথা বলা হয়ে গেল। আসলে আমরা তো কবেই ভুলে গেছি যে - ‘চুরি করা বড়ো দোষ। যে চুরি করে, তাহাকে চোর বলে। চোরকে কেহ বিশ্বাস করে না। চুরি করিয়া ধরা পড়িলে, চোরের দুর্গতির সীমা থাকে না’। ১৮৫৫ থেকে ২০২২ - সময় অনেকটাই। বিগত ১৬৭ বছরে বর্ণপরিচয় যেমন ‘বন্নপরিচয়’ হয়ে গেছে তেমনই ‘চোর’-এর সংজ্ঞা, সামাজিক অবস্থান বদলে গেছে। এমনকী তরলীকৃত, লঘু হতে হতে দুর্নীতি শব্দটাও এখন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। তাই তৃণমূলের প্রভাবশালী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের ঘর থেকে কোটি কোটি নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত হলেও আমাদের তেমন কিছু মালুম হয়না। ঠিক যেমন সারদা দুর্নীতি, নারদা ঘুষকাণ্ড-র মতো ঘটনা আমাদের জীবনে তেমন কোনো উত্তাল ঢেউ আনতে পারেনা। চিটফান্ড দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষ ভুক্তভোগী মানুষের যন্ত্রণার আঁচে বিদ্ধ হয়নি পরোক্ষে থাকা মানুষজন। বাস্তব এটাই। যদিও দুর্নীতি তাতে থেমে থাকেনি। বরং সাধারণ মানুষের একটা বড়ো অংশের নির্বিকল্প নীরবতায় একটু একটু করে আষ্টেপৃষ্ঠে গিলে ফেলেছে গোটা রাজ্যটাকেই।

তখনও রাজ্যে পালাবদল হয়নি। বামফ্রন্টের শেষ সরকারের আমলের শেষদিক। প্রায়শই তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যেত বিভিন্ন জনসভায় এক বান্ডিল ফাইল নিয়ে যেতেন এবং বলতেন সিপিএম-এর সব দুর্নীতির হিসেব নাকি ওইসব ফাইলে বন্দি আছে। তিনি ক্ষমতায় এলেই ওইসব ফাইল খোলা হবে এবং দোষী সিপিএম নেতাদের শাস্তি হবে। যদিও দশ বারোটা কমিশন, কোটি পঞ্চাশেক খরচ করেও বিগত ১১ বছরে একজনও সিপিআই(এম) নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খাড়া করা যায়নি। এটা যদিও খবর নয়। আসল খবর সম্পূর্ণ অন্য। সম্প্রতি হঠাৎ করেই রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় বলতে শুরু করেছেন, ‘সিপিএম সব কাগজ পুড়িয়ে দিয়েছে’। সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, ‘সিপিএম আমলের একটা কাগজও খুঁজে পাইনি, ফাইল পাইনি, আলমারি পাইনি। আমরা কিছু দেখতে পাইনি।’ ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশেও তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, ‘আমার কাছে ফাইল আছে। খুলব?’ আবার সেই তিনিই বলেছিলেন, ‘ফাইল পোড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে আমার কাছে খবর আছে।’ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন একটাই - সত্যি কোনটা? আপনি যে ফাইলের বান্ডিল নিয়ে মিটিং- এ যেতেন সেগুলো, নাকি আপনার কাছে সব ফাইল আছে সেই কথাটা, নাকি সিপিআই(এম) সব ফাইল পুড়িয়ে দিয়েছে সেটা। রাজ্যবাসী হিসেবে এটা জানতে চাওয়ার নৈতিক অধিকার বোধহয় আমাদের আছে।

এবারের ঘটনাটা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল কিংবা রাজু সাহানি গ্রেপ্তারের অনেক আগে। এরা প্রত্যকেই তৃণমূলের প্রভাবশালী মন্ত্রী, নেতা, পুরসভার চেয়ারম্যান। এদের গ্রেপ্তারের অনেক আগে ৩০ মে, ২০২২ পুরুলিয়ার এক প্রশাসনিক বৈঠকে দুর্নীতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ‘আমার পার্টির লোক হলে টেনে চারটে থাপ্পড় মারতাম’। ঘটনাচক্রে যে যে প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীরা হালে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁরা সকলেই বিভিন্ন দুর্নীতি কাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন। সেখানে যেমন আছে এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি, তেমনই আছে গোরু পাচার, কয়লা পাচার, বেআইনি বালি খাদান, তোলা আদায়, প্রভাব খাটিয়ে অন্যের জমি নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়া, চিটফান্ড কেলেঙ্কারি। এর আগেও চিটফান্ড দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রাজ্যের তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৃঞ্জয় বোস, কুণাল ঘোষ, তাপস পাল প্রমুখ। রাজ্যবাসী কি এতদিনে একটাও চড়ের শব্দ শুনেছেন? এগুলো সবই তো বোধহয় বেশ কয়েক বছর আগের কথা।

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে মুখ থুবড়ে পড়ে সারদা চিটফান্ড। যে সংস্থায় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭ লক্ষ। যে সংস্থা বাজার থেকে তুলেছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য অনেকের সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়, মিঠুন চক্রবর্তী, আহমেদ হাসান, অর্পিতা ঘোষের। নাম জড়িয়েছিল তৃণমূল নেতা মুকুল রায়, শঙ্কুদেব পণ্ডা, রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপদ মুখার্জির। প্রায় একই সময় মুখ থুবড়ে পড়েছিল রোজভ্যালি। ইডি সূত্র অনুসারে যে সংস্থা বাজার থেকে তুলেছিল ১৭,৫২০ কোটি টাকা। একইভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আইকোর চিটফান্ড। যে ঘটনায় নাম জড়ায় তৃণমূল নেতা মানস ভুঁইয়া, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র সহ একাধিক ব্যক্তির। গত ২৬ জুলাই বঙ্গভূষণ সম্মান দেবার মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সারদা, নারদা হলো সিপিএম-এর আমলে, আর ধরলেন আমাদের লোকেদের। আর এই মুখ্যমন্ত্রীই সারদা কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর জানিয়েছিলেন, তিনি আগে কিছুই জানতেন না। যদিও সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে ২০১২ সালের ১ মার্চ দার্জিলিং-এর রিচমন্ড হিল থেকে বিকেল চারটে নাগাদ কালিম্পং-এর ডেলোয় পৌঁছান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওইদিনই রাত বারোটা নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হয় সারদা কর্ণধার সুদীপ্ত সেন-এর। কতগুলো চড় কোনদিন কবে কোন নেতাকে মেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী? বা নিদেনপক্ষে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা? এরপরে রাজ্যবাসী যদি কাউকে দুর্নীতির প্রকট প্রশ্রয়দাত্রী হিসেবে ভেবে নেয় তা কি খুব দোষের হবে?

২০১৬ সাল। রাজ্যের চিটফান্ড কাণ্ডের মতই আরও এক দুর্নীতি কাণ্ড নারদ। যে স্টিং অপারেশনে প্রকাশ্যে টাকা নিতে দেখা যায় রাজ্যের একাধিক তৃণমূল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদকে। যে তালিকায় ছিল তাবড়ো তাবড়ো নাম। সেখানে যেমন ছিলেন প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়, তেমনই ছিলেন সৌগত রায়, অপরূপা পোদ্দার, ফিরহাদ হাকিম, মদন মিত্র, কাকলী ঘোষ দস্তিদার, মুকুল রায়, প্রসূন ব্যানার্জি, শুভেন্দু অধিকারী, সুলতান আহমেদ, ইকবাল আহমেদ প্রমুখ। এই বিষয়ে সংসদে লালকৃষ্ণ আদবানির নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল এথিক্স কমিটি। যদিও কোনোদিনই এই এথিক্স কমিটি কোনো বৈঠক করে উঠতে পারেনি। তেমনই আজ পর্যন্ত এই বিষয়ে তৃণমূলের দলীয় তরফে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অথবা কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যায়নি। নিন্দুকেরা যে দল সম্পর্কে বলেন একটাই পোস্ট আর বাকি সবই ল্যাম্প পোস্ট এই দুর্নীতিতে নীরব থাকাও কি তবে দুর্নীতিতে প্রছন্ন মদত?

সারদা, নারদ দুর্নীতি বাদ দিলেই যে রাজ্যে পালাবদলের পর আর কোনো দুর্নীতি হয়নি এমনটা ভাবা ভুল। রাজ্যে অধ্যাপক শিক্ষক শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি হাইকোর্টের রোজনামচার দিকে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে দুর্নীতির শিকড় কত গভীরে। সংবাদমাধ্যমের দৌলতে অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পদ, সম্পদ সংগ্রহের যে বিবরণ প্রকাশ্যে আসছে তা খুব একটা কম ভয়ংকর নয়। এরপরেও বাকি থেকে যায় রাজ্যজুড়ে কাটমানি, তোলাবাজির হাজারো ঘটনা। পঞ্চায়েত নিয়ে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। রেগা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ। বেআইনি কয়লা পাচার, গোরু পাচার, বালি খাদান। বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে টাকা পাইয়ে দেবার নামে দুর্নীতির অভিযোগ। যার সম্পূর্ণ বিবরণ এত অল্প শব্দে লিখে ওঠা সম্ভব নয়। আর এই দুর্নীতি থেকে পিঠ বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী যতই সিপিএম সমস্ত ফাইল পুড়িয়ে দিয়েছে বলে সুর চড়াবার চেষ্টা করুন তাও আর সম্ভব নয়।

দুর্নীতি এমনই একটা বিষয় যেখানে দুর্নীতির সাথে যুক্ত পক্ষরাই লাভবান হয়। রাজ্যে যেহেতু প্রায় এগারো বছর ধরে ক্ষমতায় তৃণমূল, তাই দুর্নীতির প্রাথমিক সূত্র অনুসারে তার সব দায়ই বর্তায় তৃণমূলেরই ওপরে। আর বাম আমল প্রসঙ্গে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তো নিজে মুখেই স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘আমরা খুঁজে পাইনি’। আর এই মুখ্যমন্ত্রীই ৮ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় কর্মীদের সভায় দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘কেষ্টকে বীরের সম্মান দিয়ে ফিরিয়ে আনবেন’। আসলে দিনের শেষে সত্যি এটাই যে- ‘গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা।’