৫৯ বর্ষ ১৭ সংখ্যা / ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ / ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮
'জনগণকে বাঁচাও, দেশ বাঁচাও' স্লোগানে শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের ডাকে দেশব্যাপী ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ‘জনগণকে বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ - এই আহ্বানকে সামনে রেখে আগামী ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি দুই দিন দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ এবং সর্বভারতীয় কর্মী ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন সমূহ। ৬ ডিসেম্বর যৌথ মঞ্চ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগামী বাজেট অধিবেশনের মধ্যেই হবে দু’দিনের এই ধর্মঘট।
কেন্দ্রের নীতিতে দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতির মধ্যে করোনার মহামারীর দাপটে অর্থনীতি আরও বেহাল হয়েছে। বেড়েছে বেকারি, ছাঁটাই চলছে নির্বিচারে। বহু শ্রমিক কাজ হারিয়ে গভীর সংকটে পড়েছেন। অনেক শ্রমিকের বেতন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। এই সময়ে শ্রমিকের কাজ, মজুরির দাবি সহ সামাজিক সুরক্ষার কোনো দাবিই মানেনি কেন্দ্র। অথচ সরকারের বদান্যতায় কর্পোরেটদের মুনাফা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। তার উপর কেন্দ্র অকাতরে তাদের আর্থিক প্যাকেজ বিলিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত কিছুর অভিঘাতে গরিব শ্রমজীবী মানুষসহ সমস্ত অংশের মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ নভেম্বর দিল্লির যন্তর মন্তরে শ্রমিকদের জাতীয় কনভেনশন থেকে কেন্দ্রের এই জনবিরোধী, শ্রমিক বিরোধী, দেশবিরোধী পদক্ষেপ রুখতে এবং শ্রমিক ও কৃষকদের ১২ দফা দাবিতে দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। গত ৩ ডিসেম্বর যৌথ মঞ্চের বৈঠকে সেই ধর্মঘটের দিন স্থির হয়। ৬ ডিসেম্বর তা ঘোষিত হয়।
শ্রমিকদের ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার সংগঠিত করবে কৃষক সংগঠনগুলিও। সংযুক্ত কিষান মোর্চা ও শ্রমিকসংগঠন মঞ্চের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন রাজ্যে জনসভা ও প্রচারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
যে ১২ দফা দাবির ভিত্তিতে ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে দু’দিনের ধর্মঘট হতে চলেছে, তাতে কৃষকদের বিভিন্ন দাবিও রয়েছে। এই দাবিগুলো হলো -
(১) শ্রম কোড বাতিল করো,
(২) সংযুক্ত কিষান মোর্চার ৫ দফা দাবি কার্যকর করো,
(৩) ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পলিসির (এন.এম.পি.) নামে ঢালাও বেসরকারিকরণ চলবে না,
(৪) মহামারীতে বিপর্যস্ত অবস্থায় আয়করের আওতার বাইরে থাকা সকল নাগরিককে মাসে নগদ ৭,৫০০ টাকা ও বিনামূল্যে খাদ্য সরবরাহ করতে হবে,
(৫) রেগায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে, শহরে রেগা প্রকল্প চালু করতে হবে,
(৬) সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করতে হবে,
(৭) অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ন্যূনতম বেতন ও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করতে হবে,
(৮) মহামারীতে সামনের সারিতে থেকে রোগীর চিকিৎসার কাজে যুক্তদের যথার্থ নিরাপত্তা ও বিমার ব্যবস্থা করতে হবে,
(৯) কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পে সরকারের বরাদ্দ বাড়াতে হবে,
(১০) পেট্রোল, ডিজেলে কর কমিয়ে দাম কমাতে হবে,
(১১) বিভিন্ন প্রকল্পের ঠিকা কর্মীদের স্থায়ীকরণ করতে হবে, স্থায়ী কর্মীদের হারে তাঁদের বেতন বাড়াতে হবে,
(১২) ন্যাশনাল পেনশন প্রকল্প (এন.পি.এস.) বাতিল করে সকলের জন্য সর্বজনীন পেনশন চালু করতে হবে।
শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ জানিয়েছে, ধর্মঘটের সমর্থন দেশজুড়ে ‘জনগণকে বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ - স্লোগানকে সামনে রেখে প্রচার চালাবে শ্রমিক ইউনিয়ন। যৌথ মঞ্চও নিবিড় প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রচারের কর্মসূচি হিসেবে বিভিন্ন রাজ্যে যৌথ কনভেনশন মানবশৃঙ্খল, মশাল মিছিল, সই সংগ্রহ ও সভা সমাবেশ সংগঠিত হবে। কেন্দ্রের কর্পোরেট তোষণ নীতিতে কীভাবে দেশের সম্পদ লুঠের কারবার চলছে। তা প্রচারে তুলে ধরা হবে।
যে সমস্ত রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে, সেসব রাজ্যে সংযুক্ত কিষান মোর্চা বিজেপি-কে হারাতে যে ‘মিশন ইউপি’ এবং ‘মিশন উত্তরাখণ্ড’ শীর্ষক প্রচার কর্মসূচি নিয়েছে, সেখানেও ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার করবেন কৃষকরা।
দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের আগে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর দু’দিন বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে হবে ব্যাঙ্ক ধর্মঘট। এছাড়া ১ ফেব্রুয়ারি হতে চলেছে বিদ্যুৎ শিল্পে ধর্মঘট। শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ব্যাঙ্ক ও বিদ্যুৎ শিল্পের ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছে।
৬ ডিসেম্বর সাধারণ ধর্মঘটের দিন ঘোষণা করে যৌথ মঞ্চ জানিয়েছে, শ্রমিক কৃষকের লাগাতার অটুট যৌথ আন্দোলন দাবি আদায়ে সক্ষম হতে পারে, আজকের কৃষক আন্দোলন আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছে। কৃষক আন্দোলনকে অভিনন্দন জানিয়ে মঞ্চ বলেছে, কৃষকের আন্দোলনের চাপে কেন্দ্র কালা নয়া তিন কৃষি আইন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। তবে সব দাবি আদায় হয়নি। যে নীতি মানুষের জীবন জীবিকা ধ্বংস করে দিচ্ছে, দেশের সম্পদ লুঠের ব্যবস্থা করেছে, তা রুখতে হবে। তারজন্য আরও দীর্ঘ আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। মঞ্চ সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে কাজের অধিকার রক্ষা, ন্যূনতম মজুরি, বিনামূল্যে চিকিৎসা, সকলের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার দাবিকে তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে রাখার দাবি জানিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের যে সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে নাগরিকদের, তা রক্ষায় বিরোধী রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসার আবেদন জানিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ।
দেশব্যাপী দু’দিনের সাধারণ ধর্মঘটে ডাকা দেওয়া যৌথ মঞ্চে রয়েছে সিআইটিইউ, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি, এইচএমএস, এআইইউটিইউ, টিইউসিসি, সেবা, এআইসিসিটিইউ, এলপিএফ, ইউটিইউসি প্রভৃতি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মচারী ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন সমূহ।