E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৭ সংখ্যা / ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ / ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮

বেহাল নিকাশি আর অপর্যাপ্ত পানীয় জলের সমস্যায় জেরবার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা পরিবর্তন চাইছেন


ভোট প্রচারে ২০ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআই(এম) প্রার্থী অজিত চৌধুরীর জনসংযোগ মিছিল।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কলকাতা পুরসভার কুড়ি নম্বর ওয়ার্ড। সাবেক উত্তর কলকাতার যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে একদা উজ্জ্বল থাকা এই ওয়ার্ড তৃণমূলের কাউন্সিলর আছে এমন ওয়ার্ডগুলোর যেমন বেহাল দশা, তার থেকে ভিন্ন কিছু নয়। অবস্থানটা বললেই স্পষ্ট হবে ব্যস্ততা আর পূর্ব গরিমার আভাস। দক্ষিণে নিমতলা ঘাট স্ট্রিট, উত্তরে বি কে পাল অ্যাভিনিউ আর আহিরীটোলা স্ট্রিট, পূর্বদিকে রবীন্দ্র সরণি, পশ্চিম দিকে গঙ্গা। ভৌগোলিক দিক থেকে কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হলেও এখন এই এলাকা পানীয় জলের অভাব, বেহাল নিকাশি, থমকে যাওয়া পয়ঃপ্রণালীর সমস্যা আর পরিবেশ দূষণের বিবর্ণ কোলাজ।

এখন শব্দটা বলতে হচ্ছে কেন? তার কারণগুলো উঠে আসছিল বাসিন্দাদের সঙ্গে টুকরো আলাপচারিতায়। না, কোনো এলাকাগত বৈষম্য নেই সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে! সে গৌর লাহা স্ট্রিট হোক বা বি কে পাল অ্যাভিনিউ। এক বৃদ্ধা শ্লেষের সঙ্গে বলছিলেন সে কথা। ‘এখন স-অ-অ-ব অভ্যাস হয়ে গেছে’। ‘স-অ-অ-ব’ মানে জল জমার সমস্যা আর পানীয় জলের অনিশ্চয়তা। উনি একটু বিশদ করলেন পরিস্থিতিটা। বাম আমলে এখানে সুপেয় জল আসত সজোরে। আর জল জমার সমস্যা ছিল না প্রায়। আর এখন লোকসংখ্যা স্বাভাবিক নিয়মে বাড়লেও সুরাহা নেই সমস্যার।

এই বাস্তব পরিস্থিতিতে উন্নত পুর পরিষেবার দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার নিয়ে কলকাতা জেলা অটো রিক্সা অপারেটরস ইউনিয়নের সম্পাদক এবং সিআইটিইউ রাজ্য কাউন্সিলের সদস্য অজিত চৌধুরী এখানে বামফ্রন্টের প্রার্থী। কলকাতার অটোচালকদের ওপর পুলিশি জুলুম সহ বিভিন্ন অবিচার অত্যাচারের ঘটনায় যাকে পাশে পান অটো চালকরা দলমতনির্বিশেষে। অটো পরিষেবা সংক্রান্ত যে কোনো আলোচনায় টিভির পর্দায় পরিচিত মুখ এলাকায় মানুষের প্রিয় অজিতদা। নিকাশির প্রশ্নে এই পুর বোর্ডের ব্যর্থতার প্রশ্নে তিনি তুলে ধরলেন জল-ছবির পেছনে থাকা পুরসভার অকর্মণ্যতার খতিয়ান। এখানে চিৎপুরের ট্রাম লাইনের নিচ দিয়ে গেছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি ভূগর্ভস্থ ইটের নিকাশি নালা। এই শতাব্দী প্রাচীন পরিখাটি বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে গেছে। আর এই ভেঙে যাওয়ার ফলে তৃণমূলের বোর্ডের অপদার্থতা সামনে এসেছে।

তাঁর কথার সায় পাওয়া গেল ওয়ার্ডের একাধিক জায়গায়। অনেকেই বলছেন সারানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থ তৃণমূল কাউন্সিলর, আর তৃণমূল বোর্ড। কারণ, প্রায় বছর তিনেক হয়ে গেল, বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জল আটকে থাকে, বের হতে পারে না। এখন অবধি সেটা ঠিক হয়নি। পুরো বর্ষাকালে একটা বিশাল পাম্প রাস্তার উপর বসিয়ে রাখতে হয় এক পাশ থেকে জল তুলে আরেক পাশে ফেলার জন্য। অর্থাৎ কোনোক্রমে জমা জল পার করে দেওয়ার অস্থায়ী ব্যবস্থা। বর্ষাকালে এই ব্যবস্থা কাজে দিলেও, মুশকিল হয় শীতকালে বা অসময়ে নিম্নচাপের বৃষ্টির সময়।

স্থানীয় এক মুদি দোকানের মালিক তাঁর দোকান সামলাতে সামলাতে বলছিলেন, নিকাশির সমস্যা আগে ছিল না এখানে। ইদানিং টের পাওয়া যাচ্ছে সেটা ভালই। ক্ষোভ বাড়ছে এলাকার নাগরিকদের বোঝা গেল আরও কয়েকজনের কথাতেই। ‘একটা ব্রিটিশ আমলের প্রযুক্তিতে তৈরি আন্ডার গ্রাউন্ড ড্রেন সেটাও এরা ঠিক করতে পারেনা’ - বেরিয়ে আসছিল এমন সব ঝাঁঝালো মন্তব্য।

স্থানীয় বস্তির বাসিন্দাদের সমস্বরে অভিযোগ, পানীয় জলের সরবরাহ কম। কাছেই টালা প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও আগে জলের যে চাপ বা ফোর্স ছিল এখন এই আমলে তা কমে গেছে। ক্ষোভ সর্বস্তরেই। ক্ষোভ শোনার সময় নেই পুরপ্রতিনিধির। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। আবার মাঝেমাঝেই নোংরা জল ঢুকে পড়ছে পানীয় জলের মধ্যে, সেটাও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে এখানে। অবধারিতভাবেই ডায়রিয়া, পেটের রোগ আর চর্ম রোগের বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে এলাকায়। সেখানেও অমিল পুর স্বাস্থ্য পরিষেবা। বেআইনি নির্মাণ এখানে আছে তবে সেটা বামফ্রন্টের নজরদারির জেরে বড়ো আকারের নয় এবং সংখ্যায় বেশি নয়। তবে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের অভিযোগ হলো, তিনি বাহুবলী। তাই জনমতের তোয়াক্কা করেন না। অভিযোগ, গাছ লাগিয়ে সুপরিবেশ বজায় রাখার পরিবর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাছ পড়ে গেলে আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এখানে আরও দশটি গাছ লাগানোর নিদান মানা হয়না। উল্টে সেখানে টিপিকাল তৃণমূলের সৌন্দর্যায়নের পদ্ধতিতে কোথাও ফোয়ারা বা কোথাও মূর্তি বা ছোটোখাটো নির্মাণ করে পরিবেশের বারোটা বাজানো হয়। তা দেখাও গেল বেশ কিছু জায়গায়। ফলে গাছ কমছে তো কমছেই এই এলাকায়। গত পাঁচ বছরে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় একাধিক বড়ো ঝড় হলেও পড়ে যাওয়া গাছের কাঠ কী দরে বিক্রি হচ্ছে, সে টাকাটা যাচ্ছে কোথায় কোনো হদিশ নেই। কলকাতা কর্পোরেশনের কাছে সামগ্রিক হিসেবে দেখানো নেই। অর্থাৎ, আইন মেনে বিক্রি হয়নি। এই ওয়ার্ডে এটাও দুর্নীতির অন্যতম উৎস।

ওয়ার্ড এলাকায় চাপা সন্ত্রাস রয়েছে। রুট চলতি অটোর গায়ে জোর করে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেবার স্টিকার-ব্যানার। তাই এলাকায় সুস্থ পরিবেশের দাবিতে মানুষ অবশ্যই এগিয়ে আসছেন সিপিআই(এম) প্রার্থী অজিত চৌধুরীর দিকে। তিনি এলাকার পরিচিত বামপন্থী মুখ। তার কাছে পৌঁছতে সমস্যা নেই একথা মানছেন বিরোধী দলের সমর্থকরাও। তাই বহুতল থেকে বস্তি সর্বত্রই বাড়তি সমাদর পাচ্ছেন বামফ্রন্টের প্রার্থী অজিত চৌধুরী।

এই ওয়ার্ডের অন্যতম সমস্যা হলো, সরকার অনুমোদিত প্রকল্পের টাকাও অধরা বিভিন্ন বর্গের মানুষের কাছে। তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন অধিকার থেকে। বছরের পর বছর যারা বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, এমনকি হাল আমলের লক্ষীর ভাণ্ডারে নাম নথিভুক্ত করে বসে আছেন কিন্তু টাকা পাচ্ছেন না ঘটছে এমন ঘটনাও। নাগরিকরা বলছেন, অজিত চৌধুরীরা শুনছেন এই সব কথা। বলছেন, বামফ্রন্টের পুর বোর্ড ক্ষমতায় এলে এই সমস্ত অসহায় মানুষের কাছে সাহায্য পৌঁছবে নিয়ম মেনে, কোনো মুখ দেখে বা রাজনৈতিক পরিচিতির জোরে নয়।

এই ওয়ার্ডে অজিত চৌধুরীরা বলছেন শুধুমাত্র পৌরসভার ক্ষেত্রে নয়, সরকারের ঘোষিত নীতিকে যথাযথ রূপায়ণের দাবিতে ১০০ দিনের প্রকল্পের সঙ্গে কাজের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক ছাড়াও বেসরকারি ক্ষেত্রে ধার্য ৩২৭ টাকা মজুরি দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে যা বামপন্থীদের বোর্ড গঠিত হলে রূপায়ণ করা হবে, পুরসভার ২৮ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ হবে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত সমস্ত শ্রমিকের জন্য বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত স্কিম যা চালু করতে অবহেলা করা হচ্ছে এবং উদাসীনতা দেখাচ্ছে মোদি-মমতার সরকার তা অবিলম্বে চালু করতে হবে। উষ্ণায়ন রুখতে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ বাঁচাতে হবে। বন্ধ করতে হবে তোলাবাজি। পুরসভার মুখ থুবড়ে পড়া স্কুলগুলোকে চালু করতে হবে। নিম্নবিত্ত মানুষ এবং তাদের পরিবারগুলি থেকে পড়ুয়াদের স্কুলে আসা নিশ্চিত করা হবে শিক্ষার অধিকারকে নিশ্চিত করার জন্য। বস্তির মানুষের সার্বিক উন্নয়নের দাবিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য নিয়ে অজিতরা মানুষের কাছে যাচ্ছেন, সাড়া পাচ্ছেন।