৫৯ বর্ষ ১৭ সংখ্যা / ১০ ডিসেম্বর, ২০২১ / ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮
দেশজুড়ে সংখ্যালঘু অংশের মানুষের ওপর বাড়ছে আক্রমণ
প্রতিবাদে দিল্লিতে সিপিআই(এম)’র সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী সভা
প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন প্রকাশ কারাত।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর নতুন করে আঘাত এসে পড়েছে, বিঘ্নিত হয়েছে দেশের মানুষের শান্তি। সিপিআই(এম)’র ডাকে এই সাম্প্রদায়িক আঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হাজারও মানুষ এবং পার্টি কর্মীরা সাড়া দিয়েছেন দেশজুড়ে। ১ ডিসেম্বর দিল্লির যন্তরমন্তরে এরকমই একটি প্রতিবাদী অবস্থান বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে।
এই অবস্থানে অংশ নেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, হান্নান মোল্লা, বিভি রাঘভুলু সহ দিল্লি রাজ্য কমিটির সম্পাদক কে এম তিওয়ারি প্রমুখ।
সংখ্যালঘু অংশের মানুষের ওপর এই ধরনের আক্রমণ ও ঘৃণা এত ব্যাপকতা পেয়েছে যে, দেশের রাজধানীও এই ধরনের ঘটনা ঘটার তালিকা থেকে বাদ থাকছে না। দিল্লিতে দ্বারকা এলাকার একটি চার্চে সম্প্রতি ভাঙচুর করা হয় এবং সেখানে প্রার্থনারত মানুষের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। শতাধিক অপরাধী ওই আক্রমণ ও ভাঙচুর চালানোর সময় স্লোগান দিতে থাকে ‘গোলি মারো’। এই ধরনের ঘটনা ঘটার সপ্তাহ খানেক আগে গুরগাঁও’র একটি এলাকার বাসিন্দারা শতাধিক সংখ্যায় ধারাবাহিকভাবে একটি নামাজ স্থলে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে জড়ো হয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে ওই স্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। আবার ত্রিপুরার মতো একটি রাজ্যে যেখানে মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি জেলায়, সেখানে সাম্প্রদায়িক আক্রমণের ক্ষত এখনও দগদগে।
এই প্রতিবাদী সমাবেশে প্রকাশ কারাত বলেন, আজ মুসলিম এবং দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ রাজনৈতিকভাবে এবং সামাজিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন, রাস্তায় যারা ফেরি করেন তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হওয়ায় তাদের হিন্দু এলাকায় ব্যবসা করার জন্য ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা বিশেষত দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং আরও কয়েকটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে। প্রকাশ কারাত তাঁর বক্তব্যে হকারদের এবং পথে ব্যবসা করেন এমন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের বয়কট এবং হয়রান করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গ্রুপ হিন্দু জনবসতি অঞ্চলের তাদের ঢুকতে এবং জিনিস বিক্রি করতে দিচ্ছে না সে সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট যা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে তা এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বৃন্দা কারাত সংবিধানের প্রস্তাবনার উল্লেখ করে দেশের সংবিধানে যে সমাজবাদী এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধ দেশের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা খুব স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে আমাদের দেশ গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই প্রত্যেকটি মূল্যবোধ পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। যদি দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের উপরে আঘাত আসে, তখন তার ফলে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোও আক্রান্ত হয়। তিনি পুনরায় মনে করিয়ে দেন যে ১৯২৫ সালে আরএসএস গঠনের সময় থেকেই দেশের সংবিধানকে ধর্মীয় ভিত্তিতে গঠন করার চেষ্টা করেছে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত।
এদিনের প্রতিবাদ সভায় হান্নান মোল্লা উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর জেলার ঘটনাবলির সম্পর্কে মানুষকে ওয়াকিবহাল করেন। তিনি বলেন, লখিমপুর খেরি জেলায় বিজেপি’র মন্ত্রী বলেছেন শিখরা ভারতবিরোধী... এই দেশে কেউ যদি হিন্দু না হয় তাহলে তিনি ভারত বিরোধী! গোটা দেশকেই হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার গবেষণাগারের পরিণত করা হচ্ছে। আমি দিল্লির মানুষ যারা পথে নেমে গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধকে রক্ষা করতে এসেছেন তাদের রক্তিম অভিবাদন জানাই।
এই প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা, সিআইটিইউ, ডিএসএমএম’র সদস্যরা। এদিনের সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী এই অনুষ্ঠানে আগাগোড়াই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এবং দেশের বিভিন্ন আরএসএস’র শাখা সংগঠনগুলির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলেছেন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই’র সদস্য এবং সমাবেশে উপস্থিত যুব অংশ।
প্রসঙ্গত, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এক বিবৃতিতে লোনির বিজেপি বিধায়কের পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাতের বিরুদ্ধে “গো হত্যায় উৎসাহ দান” এবং “সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা” ইত্যাদি অভিযোগ আনা এবং পুলিসকে চাপ দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করার সর্বৈব মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগকে নিন্দা এবং খারিজ করে দিয়েছে।